somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বীফ খাবেন তো অরগানিক খান, না খেলে আরো ভালো

২০ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“গরু জগতের সবাই খায়, স্টুপিড হিন্দু ছাড়া। যেসব দেশে আমাকে যেতে দেয়, সব গরু খাওয়া। যেসব দেশে সম্মান দেয়, সব গরু খাওয়া। গরু খেলে দোষ নেই। ব্রেইনটা মানুষের না হয়ে গরুর হলে প্রবলেম।“ ফেসবুকে নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনের আজকের লেখা এই স্ট্যাটাস টি হঠাৎ করেই আমার চোখে পড়ে ! যে কোন হিন্দুর গায়ে এই ধারালো মন্তব্য একটু করাতের মতই কাটবে, তবে আমি বিস্মিত অন্য কারণে ! আমি জানি তিনি একজন ডাক্তার এবং কাঊকে গরুর মাংস খাওয়ার ব্যাপারে অন্তত একটা বিজ্ঞানসম্মত যুক্তি ছাড়া স্টুপিড বলে গালি দিতে পারেন না ! আশ্চর্য ব্যাপার ডজন খানেক অনুসারী তার মন্তব্য কে লাইক করলেন ! অনেকটা হোঁচট সামলে নিয়েই লিখলাম- “ ‘স্টুপিড হিন্দু’ ! ‘গরু খেলে দোষ নেই’ ! কাঠ-হিন্দু আর কাঠ-মোল্লাদের ঠেলায় এসব রচনা করেই আপনি বিখ্যাত হয়েছেন শুনেছি ! হিন্দুরা গরু খায় না বলে (অনেকে অবশ্য লুকিয়ে লুকিয়ে খান) এই বক্রোক্তি ?? নাকি ইন্ডিয়ায়ও জায়গা পাচ্ছেন না বলে? শুনেছি আপনি নাকি ডাক্তারও ! ধর্মীয় মূল্যবোধ আপনার নেই, সেটা আপনার স্বাধীনতা ! কিন্তু পরিবেশ বা স্বাস্থ্য জ্ঞান ? এক কেজি গরুর মাংসভোজী যে ১৯ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন ঘটায় যা পরিবেশের জন্য নিরাপদ নয় ! স্বাস্থ্যের জন্য তো নয়ই। যদিও এক কেজি শুকরের মাংস নির্গমন ঘটায় মাত্র ৪ কেজি CO2, যাকিনা আপনার জন্য অনেক সেইফ! আপনার কথাগুলো যে ফ্যালাসিয়াস তা বিজ্ঞানই প্রমান দেয় ! আরেকটু পড়াশুনা করুন !”
দেখলাম আরো অনেকে আসতে শুরু করলেন তাঁর স্ট্যাটাসের প্রতিপক্ষে ! আমি আবারো ফিনিশিং টানলাম এই বলে- “ ম্যাদাম, শুনেছি ইউরোপিয়ানরা নাকি 'মেড-কাঊ' এর ভয়ে এখন 'অরগানিক গরু' খাওয়া শুরু করেছেন (যদিও তার উৎপাদন খুবই সামান্য ,আনুমানিক ৫% বা তার কম)! আপনিও খান ! তা না হলে ‘মেড কাঊ’ আপনার মগজ কে গরু নয় শূকরের মগজেও রাখবে না ! আর এন্থ্রাক্স ? এক সময় এটি জিবাণু অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো বিশ্বে ! বাংলাদেশে ইদানিং তার খবর রাখেন ? সো, খাবেন তো অরগানিক খান ভাই ! আমরা আপনাকে হারাতে না চাই !আমরা জানি আপনি স্টুপিড না !”
আমার জীবনে অনেক বন্ধু-বান্ধব সহপাঠী সহকর্মী চেনা-অচেনা লোকের কাছ থেকে ‘গরু কেন খাই না’ এই নিয়ে মন্তব্যের ঝুড়ি বয়ে আসছি ! কিন্তু কেহই কিন্তু তসলিমার মত স্টুপিড বলে নি ! শুধু ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রশ্নেই নয়, ব্যক্তি পরিবার বা সামাজিক মূল্যবোধের প্রেক্ষাপটেও কেহই তাঁর মত অনাড়ি মন্তব্য করে নি ! তবুও তসলিমার মত কিছু কিছু মানুষ “গরুর মাংস হিন্দু কেন খায় না” এই নিয়ে এক ধরণের কাজিয়া বা চুলকানি বা এলার্জি আছে ! আমার তো মনে হয় এই সমাজে আমার মতো অনেকেই এই মন্তব্য শুনে এসেছেন যে “আরে ইমুকে তো খাচ্ছে, তমুকে তো খাচ্ছে” । খাক ! এটা তাঁদের ব্যক্তিগত রুচী বা ব্যক্তিগতভাবে তাঁর আত্মার চাহিদা । এ দেশ বা সমাজে কখনই গরুর মাংস খাওয়ার ব্যাপারে বাধা নিষেধ নেই ! আর এটা কোন সামাজিক সমস্যাও না ! বরং আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় দারুণ সহায়ক ! কারণ যে দেশে চাউলের কেজি পাঁচ টাকা বাড়লে সরকার পতন ঘন্টা বেজে যায় ,সে দেশে গরুর মাংসের কেজি দ্বিগুণ হলে কী অবস্থা হবে ?
আমাদের দেশে কত লোক নির্বিচারে গরুর মাংস খেয়ে আসুস্থ্য হন বা অকাল ‘গত’ হন তার কোন গবেষণামূলক পরিসংখ্যান নেই ! আর আমাদের দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ডাক্তারই সাইলেন্ট বুচার ! তাঁদের কাছে ডাক্তার গেলে তাঁরা তাঁদের এক মেকি প্রফেসনাল ভাবটা ভালই দেখান ! ডায়াগনসিস রিপোর্ট ভিত্তিক ভেটেরিনারীর মুরগী’র মত চিকিতসা সারেন ! হাই-প্রেশার, হার্ট-ট্রাবল, হাই-এলার্জি ইত্যাদি দেখলে বলেন গরুর মাংস খাবেন না ! কিন্তু কেন ? খেলেও কোন ধরণের কতটুকুই বা খাবেন ? হাই-ফ্যাট, হাই-এলার্জন ও হাই-ক্যালরি’র এই মাংস খেলে শরীরের জৈব কোষ গুলো কতটা তারাতাড়ি বুড়িয়ে যেতে পারে এবং কেন ? কিন্তু কোন রোগী যদি ব্যাংকক কিংবা সিংগাপুর যান, তখন তাঁদের গায়ে লাগে ! তাঁদের কাছে গেলে রোগী অর্ধেক ভাল হয়ে যায় শুধু তাঁদের কথায়ই!
শুধু মাত্র খাদ্য ব্যবস্থাপনা, মেডিটেশন আর যোগ-ব্যায়াম দিয়েই যে ৯৯ শতাংশ নন-ভাইরাল রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ্য হয়ে যান তার প্রমাণ দেশেই আছে - " কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন”। এই প্রতিষ্ঠানটি সাফল্যের অসংখ্য দৃষ্টান্ত নিয়ে এগিয়ে চলেছে ! বিদেশে চিকিতসায় ব্যর্থ বহু রোগী’র সফল মেডিটেশন ও সফল পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাসের মধ্য দিয়ে নতুন জীবন পেয়েছেন এবং পাচ্ছেন ! কোয়ান্টাম গুরু প্রমাণ করছেন মানুষের দেহ-মনেই রয়েছে মানুষের ডাক্তার আর দিসপেন্সারী ! সেই ডাক্তার কখনই গরুর মাংস কে সুবিধার খাবার বলে প্রেসক্রাইব করে না ! বরং এই মাংস নন-ভাইরাল ডিজিজের অন্যতম উস্কানীদাতা !
সাপ্রতিক আন্তর্জাতিক ALL TIME TEN’র গবেষণায় জানা যায় বিশ্বের শীর্ষ দশটি ওভার ওয়েট দেশের বিবরণ, যাদের মধ্যে মা.যু.রাষ্ট্র তৃতীয় ( ৬৬.৭% লোক), জার্মানী চতুর্থ ( ৬৬.৫%), মিশর পঞ্চম (৬৬%), নিউজিল্যান্ড সপ্তম ( ৬২.৭%), ইসরায়েল অষ্টম ( ৬১.৯%) এবং যুক্ত রাজ্য দশম ( ৬১%) শীর্ষ ওভার ওয়েট দেশ। এবং তাঁদের সনাক্তকৃত মূল কারণ মাত্রাতিরিক্ত ফ্যাট যা সিংহভাগই আসে বীফ থেকে ! মার্কিনিরা এখন তাদের নতুন প্রজন্ম কে বীফ বার্গারের কবল থেকে রক্ষার জন্য রীতিমত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে !
এই ঢাকা’র শহরে আমরা প্রতি দিন যদি কম করে হলেও মাথাপিছু প্রশ্বাস থেকে আধা কেজি করে কার্বন নির্গমন ঘটাই, তাহলে মোট ১ কোটি ৩০ লাখ লোক কার্বন দিচ্ছি সাড়ে ছ’হাজার টন কার্বন ! আমাদের কত গাছ লাগানো আছে যারা পর্যাপ্ত এই কার্বন শোষণ করার জন্য ? আর যদি কোন ব্যাক্তি হাই ক্যালরির মাংস খান তখন তার কার্বন ছাড়ার হার দ্বিগুণ হয়ে যায় ! এক কেজি গরুর মাংসভোজী যে ১৯ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন ঘটায় তার ১১ কেজি তারতম্যের নির্ণায়ক হচ্ছে অরগানিক ম্যাটার !
যদি কোন গরু সম্পূর্ণ তৃণ-লতা-গুল্ম ভোজী হয় তখন এই অরগানিক মাংসের কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমান হয় প্রতি কেজি থেকে অন্যূন ১৯ কেজি ! আর যদি গরুটি সর্বোচ্চ পরিমান আমিষ বা অন্য প্রাণীর বাই-প্রোডাক্ট খাওয়ানো হয় তখন তার এই নন-অরগানিক মাংস থেকে CO2 নিঃসণের পরিমান সর্বোচ্চ ৩২ কেজি ! অতএব, বীফ খাবেন তো অরগানিক খান, দেহ বাঁচান, পরিবেশ বাঁচান ! আর যদি নাই খান তো আরো ভালো ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:৫২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর এজেন্ট

লিখেছেন ধূসর সন্ধ্যা, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২



জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর একজন এজেন্ট। এই তথ্য কেউ জানতো না। তার ফ্যামিলিও জানতো না। ১৯৪১ সালে বর্ডার ক্রস করে সে ঢুকেছিল পাকিস্তান। তারপর আস্তে আস্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×