জীবনের প্রতিটি মোড়কে মোড়কে ড্রামা। যেকোন বয়সেই মানুষের জীবনে অপ্রত্যাশিত আঘাত আসতে পারে। একটা মানুষের মৃর্ত্যুর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত হতাশার স্ফুরণ গায়ে জড়াতে পারে। একবারও হতাশ হননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। হতাশার মাত্রা আছে। হতাশার সর্বনিম্ন স্তরের মানুষের সংখ্যা নেহায়েত। হতাশা এবং সুখ, পাল্লায় সমান বা একটু বেশি-কম মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি-যারা অনেকবার হতাশায় ভুগছে আর বেশ আত্মতৃপ্তিতেও হাসছে। তারা বোধ হয় সবকিছুর একটা ব্যালেন্স করতে পারে। যে কোন আঘাত বা হতাশায় কাঁদে আবার সুখে হাসে। আবার খুব কম সংখ্যক মানুষ পারে হতাশায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। নিজেকে ভাবতে পারে ইস্পাতসম। বেশিরভাগ মানুষের অবচেতন মন হতাশায় ভেঙ্গে পড়ে। এর মাঝে অনেকেই একবার হলেও দুনিয়া থেকে পালানোর ভাবনা ভাবে।
হতাশা রূপভেদ ভিন্ন ভিন্ন। অর্থজনিত হতাশার মাঝে আশা নিহিত থাকে। তাই বেশিরভাগ মানুষ এর থেকে পরিত্রাণ পাবার আশা নিয়ে সামনের পথ হাঁটে। কিছু অপ্রত্যাশিত আঘাত বা হতাশা বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের মতন। হুট করে বাতাস এসে পুরো পরিবেশটাকে এলোমেলো করে দিয়ে যায়। এই ধরনের হতাশার চার্টে টপ লিষ্টে আছে-রিলেশন ব্রেকআপ। বর্তমানে তরুণ সমাজে এই ঘটনা অহরহ। এর প্রভাব ব্যাপক। দুজন মিলে তিল তিল করে গড়ে তোলা ছোট্ট স্বপ্ন বাগান হুট করে একজন পুরো ধ্বংস করে দেয়। যার প্রভাবে অন্যজন হতাশায় নুয়ে যায়। এর প্রভাবে মাদক গ্রহণ করছে অনেকে। আবার অনেকেতো মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসে।
চোখ বুজে ভাবুন একটু, আপনার বাবা-মার কথা, কি কষ্টই না তারা আপনার জন্য করেছেন। তাদের হাসিমুখ আপনার কাছে এতোই কমদামি হয়ে গেছে। আপনার ভাই-বোনের কথা, যারা ভাইয়া-আপু বলে গলায় জড়িয়ে ধরত ছোটবেলায়, যাদের সাথে হাজারো খুনসুটির স্মৃতি আপনার বুকের আয়নায় জমিয়ে রাখছেন, যা আপনি মাঝে মাঝে আপনি দেখেন। ওদের দোষ কি? আপনাকে ঘিরে ওদের স্বপ্নের বাগান ধ্বংস করতে চাচ্ছেন কেন নিজের কষ্ট দিয়ে?
ও, ওরা নিছক মানুষ? আপনার সেই চলে যাওয়া মানুষটা, মানুষটার স্মৃতি অমুল্য। আরে যিনি আপনাকে ছুঁড়ে ফেলে গেছেন, উনি ভাবছেন আপনি হচ্ছেন সস্তার সাদা ভাত, ওনি এখন পোলাও ঘ্রাণ পেয়েছেন। তবে মনে রাখুন সাদা ভাত পঁচে গেলেও পান্তা হিসেবে বেশ মজা করে খাওয়া যায় ডিম ভাজি, ইলিশ ভাজি দিয়ে। আর পোলাও, পোলাও পঁচে গেলে ফেলে দিতে হয়। খাওয়া যায় না। কেন নিজেকে ছোট করবেন। কেন নিজের স্বপ্নটাগুলোকে নিজ হাতে হত্যা করবেন। আপনার স্বপ্নগুলো আপনার একার, সেগুলো বাস্তবায়ন আপনার হাতেই। কিন্তু আপনাকে ঘিরে আরো অনেক মানুষের চাওয়া আছে--আপনার বাবা-মা,পরিবারের সবাই, আত্মীয়-স্বজনরা, সমাজের কিংবা আপনার সামনের জীবনের সহযাত্রী শুদ্ধ মানুষটি পর্যন্ত আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। কেন হতে পারে না আপনি আবার প্রেমে পড়বেন? কেন ভাবছেন না শুদ্ধ মানুষ আপনার জীবনে আসার কথা? কেন ভাবছেন না আপনি আবার হাতে হাত রেখে বৃষ্টিতে ভিজতে পারবেন, কেন ভাবছেন না আপনার হাসি দেখে কারো প্রাণ জুড়িয়ে যাবার কথা।
ও, ভাবছেন, আপনার প্রথম প্রেম-এখন আমি অন্য কাউকে ভালোবাসলে আমার প্রেমের অসম্মান হবে। তাই আপনার বাগানের মরে যাওয়া গাছগুলোকে পরম মমতায় একা একা গাছের গোড়ায় পানি ঢালছেন। কেন ভাববেন না, ঐই বাগানের নতুন গাছ রোপন করতে। ওদের পরিচর্যা করতে। কেন কষ্টগুলো লালন করছেন, কষ্টগুলোকে মনের একপাশে রেখে শক্তি সঞ্চার করুন। জেনে রাখুন, গাছের সবচেয়ে মিষ্টি ফলতেই মানুষ পাথর নিক্ষেপ করে। আপনি সেই মিষ্টি ফলটাই, কেন ব্যাথা মনে লাগাবেন। কেন ব্যাথাকে প্রতিদিন প্রলেপ দিবেন। একটু কেঁদে ঝেড়ে ফেলুন ব্যাথাটাকে। স্বপ্ন দেখতে শিখুন। আপনার আলোতে কাছের মানুষদের স্বপ্ন দেখাতে শিখুন।
আলো আসবেই। নীলাভ্রের কালো মেঘ সরে সূর্য হাসবেই। জঙ্গলের ভিতর দিয়ে বাবা আর মেয়ে গাড়িতে এক সাথে যাচ্ছেন। গাড়ির স্টিয়ারিং মেয়ের হাতে। বাবা পাশে বসা। হঠাৎ চারদিক আঁধার হয়ে এল। প্রচন্ড ঝড় শুরু হল। সে কি তুমুল ঝড়। মেয়ে বলল, বাবা গাড়ি থামাই, আমি আর চালাতে পারছিনা। বাবা বলছেন না, তুমি শক্ত হাতে স্টিয়ারিং ধরে চালাও। ঝড়ের বেগ আরো বেড়ে গেল, আশেপাশের গাছের ডাল গাড়ির উপরে এসে পড়তেছে। ভয়ে, আতঙ্কে মেয়ে ভেঙ্গে পড়ছে, কাঁদতেছে। বাবা বললেন, গাড়ি থামাও না। শক্ত করে ধরে চালিয়ে যাও। আত্মবিশ্বাসে কিছুদূর যাবার পর জঙ্গলের সীমানা থেকে বের হয়। গাড়ি একটি ক্ষেতের কিনারায় এসে পড়ে। এখানে ঝড় নেই। সূর্য আলো ছড়াচ্ছে। জীবনটা এমনি। দাঁত কামড়িয়ে শত ঝড়ে টিকে থাকতে পারলেই আপনি আলোর দেখা পাবেন। টিকে থাকতে আমরা পারবই। পারতেই হবে। আমরা করব জয়, আমরা করব জয় একদিন।
১১০৭২০১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




