somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পঃ নাম বিভ্রাট

২১ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেতারহাট বাজার থেকে আমাদের পলাশবাড়ি স্কুলের দুরত্ব চার মাইল। ক্লাসের আমরা সতেরো জন ছেলে এই বাজার থেকেই যাই। শিপন, আলম আর সজীব যায় সাইকেলে। আর আমরা বাকী সবারই একটাই মাধ্যম-ভ্যান গাড়ি।
সবাই চাইতো পুরো ভ্যানটায় শুধু আমরাই থাকি। এতে বেশ হৈ-হুল্লোড়, আড্ডা আর খুনসুটি চলতো হরদমে। কিন্তু আমাকে ঐ সবে খুব একটা টানতো না। আমি সবসময়ই চাইতাম এমন একটা ভ্যানে চড়ে যেতে যেখানটায় দু-একজন বয়স্ক লোক থাকেন। বয়স্ক লোকদের কথা শুনতে আমার ভালো লাগতো। ত্রিশ মিনিটের এই পথযাত্রায় ওনাদের মুখে অনেক গল্প শুনতাম।

একদিন ভ্যানে ষাটর্ধ্বো এক লোক উঠেছেন। এই পথে নিয়মিত যাওয়া-আসার সুবাদে অনেককেই এখন আমি চিনি। কিন্তু এই লোকটাকে এর আগে কখনও দেখিনি। ভ্যানে চড়েই অন্য সব যাত্রীর সাথে আড্ডা জমিয়ে তুলছেন। কথার মাধ্যমে বুঝতে পারলাম, উনি ওনার এলাকার মাতব্বর গোছের একজন। এলাকায় নানাবিধ সালিশ বৈঠকের মুরব্বি। পরক্ষণে ওনার সালিশ বৈঠকের একটা গল্প শুরু করলেন।
এক লোকের তিন ছেলে। মৃত্যুর পূর্বে তার সম্পত্তি ছেলেদের নামে লিখে দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু ছেলেরা এক-একজন একাধিক নামে পরিচিত। মেজো ছেলের কাগজে নাম আমজাদ মন্ডল, তবে এলাকার সবাই তাকে আবদুল কাদের নামেই ছিনতো। নামটা তার দাদার দেওয়া। কিন্তু লোকটা মেজো ছেলের দুই নামেই দু’খন্ড জমি রেজিষ্ট্রি করে গেছেন। মৃত্যুর পর বড় ছেলে এতে বাদ-সাধছে। দাবি করছে আবদুল কাদের তার নাম। বাবা তার নামেই জমিটা রেজিষ্ট্রি করে গেছেন। এই নিয়ে দুই ভাইয়ের মাঝে ঝামেলা শুরু হয়। খন্ড খন্ড সালিশ হয়েছে। কিন্তু কোন সমাধানে পৌঁছা যায়নি। এলাকার মানুষ মেঝো ছেলের নাম কাদের বলে সাক্ষ্য দিলেও তাদের মা বড় ছেলের পক্ষেই কথা বলেছেন। এতে দু’মুখী সাক্ষ্য হওয়ায় সমস্যা আরো ঘন হতে লাগলো। আমি সেই সালিশে উপস্থিত ছিলাম। সালিশ শেষে মেজো ছেলে ঢেকে বললাম, “তুমি একটা উপায়ে জমিটা পেতে পারো। তবে এতো তোমার সামান্য পরিমাণে ক্ষতি হবে। ছোট ভাইয়ের নামে তোমার একটা জমির পাঁচ শতাংশ লিখে দাও। ওখানে তোমার নাম উল্লেখ করবে আমজাদ মন্ডল ওরফে আবদুল কাদের। এতে তোমার কাদের নামটার কাগজে-কলমে স্বীকৃতি মিলবে।” এই কাজটা করে ছেলেটা তার জমিটা পেয়ে গেছে।

আমাদের পরিবারটা বড়সড়। নয় ভাই-বোনের মাঝে আমি সবার ছোট। বাবা এখন গৃহমুখী। পলাশবাড়ি কাপড়ের ব্যবসাপাতি এখন ভাইরা’ই দেখ-ভাল করেন। তিন ভাই’ই বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। বোনদেরও বিয়ে হয়ে পরের ঘরে চলে গেছেন। বাবার বয়স বেড়েছে তাই আমাদের সব ভাই-বোনকে আলাদা ভাগ করে জমি রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছেন। সেই সুবাদে আমাদের পুরাণ বাড়িসহ ফসলি কিছু জমি আমার নামে লিখে দিয়েছেন।
লোকটার মুখে গল্পটা শুনে ঐদিন আমি বাড়ি এসে বাবাকে বললাম। পরদিনই বাবা সব ভাই-বোনকে বাড়িয়ে ঢেকে পাঠিয়েছেন। এই পুরাণ বাড়ির প্রবেশ পথের জমিটা এখনও বাবার নামে। বাবা সব ভাই-বোনদের সম্মতিক্রমে এটা আজকেই আমার নামে লিখে দিতে চান। দলিলে আমার নামটা হবে রবিউল ইসলাম উরফে রুহুল আমিন।

২১০৩১৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×