somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী "

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৮:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই তো মাত্র কয়েক দিন আগেরই কথা।
আমি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলাম। মাষ্টার আপা
সেদিন ক্লাসে এসেই মেয়েদের উদ্দেশ্য করে
বললেন তোমরা এখনো কেন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ'চ্ছ না।
সহপাঠীরা যার যার মতো করেই উত্তর দিতে লাগল।
কেউ কেউ বলল এই তো কথা বার্তা চলছে।
কেউ কেউ আবার বলল তাদের তো বিবাহের কথা ফাইনাল, শুধুমাত্র সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
মাস্টার আপা সবার মধ্যেই আমাকে দাঁড় করিয়ে
দিলো।কি রেহ্। তুমি কিছু বললে না যে?
কোথাও ঠিক করে রেখেছ না কি আগেই নিজের থেকে।
আমি কিছুই বলতে পারি নি সেই মুহূর্তে।
কিন্তু নিজেকে মেনে নিতে পারেনি কিছু তেই এই কথার সাথে।
মাস্টার আপার এই কোথায় সেই দিন রাগ, ঘৃণা
লজ্জা, অপমান কি না বোধ হয়ে ছিলো আমার।
বাড়িতে এসে খুব কেঁদে ছিলাম একা একা।
মা হারা মেয়ে আমি। চারটা বোন আমার ছোট।
ছোট বোনটাকে ভাইয়ের আশায় মাকে হারাতে হয়।
আশা ছিল নিজে যদি একটু পথ খুঁজে পাই তবে
হয় তো ছোট্ট বোন গুলোকে একটু আলোর পথ
দেখাতে পারব। কয়েক দিন ধরে আমার আর কলেজে যাওয়া হয় নি।
তারপর থেকে বেশ কিছু দিন ধরেই খুব অসুস্থ অবস্থায় ছিলাম।
সেই কথা খানা এখন বাপজানের ও কানে গেছে।
বাপজান কইলো,মা,রে চিন্তা করিসনা না রে।
আমরা গরীব। লোকে আমাদের নানান কথাই
তো কইবে।তাই বলে কি আমাদের মতো মানুষের
মন খারাপ করলে চলবে? আমাদের জীবনতো
জলে ভাসা খড়কুটোর মতো। যাকে জড়িয়ে ধরে
বাঁচতে চাই সেই তো সরে দাঁড়ায়।
কয়েক দিন বাদেই বাপজান আমার বিবাহ ঠিক
করলেন। বিদায় বেলায় খুব কেঁদে ছিলাম।জামাই
খুব বয়সী ছিলো। ছোট ছোট বোন গুলো কে ও
ছেড়ে যেতে মনে চাইছিল না। বাপজান ছাড়া যে
ওদের পাশে আর কেউ রইলো না।
স্বামীর বাড়ির নতুন জীবন কেমন হবে জানা নাই।
শ্বাশুড়ি,ননদ,দেবর সবার সাথে কেমন করে মিলব আমি।
স্বামী, শ্বাশুড়ি,ননদ,এমন কি পাশের বাড়ির লোকজন ও এখন নানান রকমের কথা বলে।
বাপজান কে সে সব কথা বলেই বা এখন কি আর লাভ হবে।
আমাদের যে নুন আনতে পান্তার অভাব।
এখন তো দিন বাদে দিন জামাই আমার গায়ে হাত তোলে।
বছর ঘুরতে আমি মাও হলাম। বাচ্চাটা সব সময় অনাদরেই ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকে।
ঠিক মতো দুধ ও খেতে পারেনা।বাড়তি খাবার নাইবা হোক।
নিজের শরীরটাও এখন বেশ দুর্বল।স্বামীর একটা ভালো ডাক্তার দেখানোর অভাবে
কয়েক মাস ধরে শয্যাশায়ী হয়ে আছে। হার্ট ব্লক হয়ে গেছে।
কোন রকম আয় নাই তার উপর ঔষধ আবার সংসার।
উপায় না দেখে আমি লোকের বাড়িতে বাড়িতে
একটা কাজ নিলাম।থালা বাসন মাজা ঘসার।ঘরোয়া সব ধরনের কাজ।
ওদের পঁচা বাসি খাবার আমি নিয়ে আসতাম। কখনো পরিমাণ এ
একটু বেশি রান্নার জন্য ওদের মাইরও খেতাম।
তাতেইবা কি বাড়তি একটু খাবার তো আনতে
পারতাম।সবাই মিলে একবেলা খেয়ে নিতাম।
কিন্তু তাতেও যেন কাউকে খুশি করাতে পারছি না।
হঠাতই একদিন বাপজান আসলো আমার শ্বশুর
বাড়িতে। আমি বাপজানের বুকের সাথে ধাক্কা খাই।
আমাকে তো ওরা ঘর থেকে বেরিয়ে দেয়।
শুধু বাপজানের অনুরোধে বহুকষ্টে যেন আমি
আবার এই বাড়িতে থাকতে অনুমতি পেলাম।
আমার বাড়িতে বাপজান এক দুপুর ছিলো। আমি
বলে ছিলাম বাপজান ছোট বোন টা কে তোমার
সাথে করে নিয়ে আসলে না কেন। কয়েক টা দিন
আমার কাছে থেকে যেতো। খুব ইচ্ছে করে বাবা,
ছোট বোন গুলো কে দেখতে। বাপজান রে ওরা কি আমারে ভুলে গেছে না কি!
বাপজান কইলো নারে মা, তোকে ভোলে নি।
তোকে সামনের ফাগুন মাসে নিতে আইবো।
তখন তোর সংসারের সব অভিযোগ মেনে নিব।
তোর আর কোনো জিনিসের জন্য কারো খুটা
শুনতে হবে না মা। তখন কয়েক দিন থেকে আসবি ওদের কাছে।
বাপজান রে কইলাম তোমার জামাই বাজারে যেতে পারে নাই তাই তোমার জন্যে একটু ভালো
কিছু রান্না করতে পারলাম না। বাপজান কইলো
মারে আমি তোর হাতের রান্না কতো দিন ধরে খাই না।
তোর হাতের রান্না শাক ভাতও যে আমার
গোশ ভাত খাওয়ার হার মানায়।
কয়েক ফোঁটা চোখের পানি আর বৃষ্টির পানি এক
হয়ে বাবার খাওয়ার থালায় মিশে গেল কারণ
ঘরে তো আর ভালো ছাউনি ছিল না। বাবা আর
মেয়ে অনেক কেঁদে ছিলাম তখন।
আমার বাড়ি থেকে বাপজানের আসার সময়
অনেক বলে ছিলাম আমারে নিয়া যাও বাপজান।
আমারে এই খানে থুইয়া যাইয়ো না। আমারে নিয়া
যাও‌।আমারে থুইয়া যাইয়ো না। থুইয়া যাইয়ো না।
আমারে নিয়া যাও।কবে আইবা আবার। বাপজান
রে কবে আইবা আবার! বাপজান একটা কথা ও
কইলো না। বাপজান চলে গেল আমারে রেখে।
চলে গেলো তো গেলোই।
বাপজান আর কোনো দিন ও এলো না আমার
বাড়িতে।এলো না আর আমারে নিতে ফাগুন মাসে।
কি করে বুঝবো এটাই ছিলো আমার বাপজানের শেষ আসা।
বাপজানের মৃত্যুর খবর টা দু বছর পরেই জানতে
পারি। বাপজানের শুয়ে থাকা মাটির স্তম্ভটা
দেখতে আসলাম। সেদিন আর আরো কথা কারো বাঁধা মানিনি।
তারপর থেকেই বাপজানের বাড়ি থেকে আমার
শশুর বাড়িতে আর যাওয়া হয়নি।কেউ কোনো
দিন খোঁজ খবর ও নিতে আসে নাই।
এখন আর মাস্টার আপার কথা মনে পড়েনা।
মনে পড়েনা কোনো সহপাঠীর কথা যারা খুব
অপমান করত আমায়।
সুখে আছি কি দুঃখে আছি আমি জানি না।
শুধু মনে হয় এটাই কি জীবন!
এই পরিণতির জন্য কার দোষ
ভাগ্যের না কি আমার?
"কবে আইবা আবার"

এক অসহায় ছাত্রীর ব্যাকুলতা / সংকলিত
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৩৫
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

পঁচে যাওয়া বাংলাদেশ আর্মি

লিখেছেন রিয়াজ হান্নান, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:২৫


একটা দেশের আর্মিদের বলা হয় দেশ রক্ষা কবজ,গোটা দেশের অব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে বহিরাগত দুশমনদের আতংকের নাম। ছোটবেলা থেকে এই ধারণা নিয়ে কয়েকটা জেনারেশন বড় হয়ে উঠলেও সেই জেনারেশনের কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×