somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

স্বরচিতা স্বপ্নচারিণী
অবসরে বই পড়তে পছন্দ করি, মুভি দেখতেও ভালো লাগে। ঘোরাঘুরিও পছন্দ তবে সেটা খুব একটা হয়ে উঠে না। বাকেট লিস্ট আছে অনেক লম্বা। হয়তো কোন একদিন সম্ভব হবে, হয়তো কোনদিন হবে না। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে জানি, প্রত্যাশা করতে জানি। তাই সেটাই করে যাচ্ছি।

দুলকার সালমান – এক মুগ্ধতার নাম (মুভি রিভিউ – প্রথম পর্ব)

১৩ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একটা সময় ছিল যখন ভারতে অনেক সুন্দর সুন্দর বাংলা চলচ্চিত্র বের হত। আমাদের দেশের পুরানো বাংলা চলচ্চিত্রের মত ভারতের বাংলা চলচ্চিত্রও খুব প্রিয় ছিল। অজয় কর, সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক দের মত বিখ্যাত সব পরিচালকদের ছবি দেখে বিমোহিত হতাম। এখনও রুপালী পর্দায় উত্তম-সুচিত্রা জুটি দেখে বিমুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকি। কালক্রমে বাংলা চলচ্চিত্রের সেই সময়টা চলে গেল। এরপরে নব্বইয়ের দশকের মুভিগুলোর ভিতর পছন্দ ছিল হিন্দি ফিল্মগুলো। ঐ সময়টা আর তার পরবর্তী দশকে বেশ কিছু ভালো ভালো হিন্দি মুভি পেয়েছি। আমরা বড়ই হয়েছি এগুলো দেখে তাই এগুলো আলাদা স্থান দখল করে থাকবে সব সময়। কিন্তু এখনকার হিন্দি মুভিগুলো দেখার জন্য তেমন একটা আগ্রহ বোধ করি না। তাই সেইভাবে আর দেখা হয়ে উঠে না। বেছে বেছে বছর শেষে জাতীয় পুরস্কার আর ফিল্মফেয়ার জিতে নেওয়া অল্প কয়েকটা ফিল্ম দেখি। কারণ হিন্দি মুভি গুলোর ক্ষেত্রে এখন আর আইএমডিবি রেটিং এর উপর ভরসা করা যায় না। বেছে বেছে অল্প কিছু দেখলেও সেখানেও মাঝে মাঝে খুব হতাশ হতে হয়। তবে এখনও একটা ইন্ডাস্ট্রি আছে ভারতে যাদের ফিল্মের বাজেট খুব বেশি হয় না ঠিকই, কিন্তু সেই লেভেলের মুভি দিয়ে যাচ্ছে প্রতি বছর বছর যেটা আগে বাংলা আর হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে পেতাম। চোখ বন্ধ করে আইএমডিবি রেটিং এর উপর ভরসা করে তাদের মুভি দেখা যায়। মাঝে মাঝে এভারেজ রেটিং এর ফিল্মগুলো দেখতেও বেশ ভালো লাগে। হ্যাঁ, বলছিলাম মালায়ালাম চলচ্চিত্রের কথা। কেরালা রাজ্যের কোচিতে গড়ে উঠেছে এই ইন্ডাস্ট্রি। যারা থ্রিলার এবং আর্টফিল্ম পছন্দ করেন তাদের মালায়ালাম মুভিগুলো ভালো লাগবে। অনেক সুন্দর সুন্দর ড্রামা ফিল্মও বানিয়ে থাকে তারা। এই মূহুর্তে ভারতের এই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দের।

বলতে গেলে এক বছরও পুরো হয়নি আমি মালায়ালাম ফিল্ম দেখা শুরু করেছি। কিন্তু ইতিমধ্যে আমি এই ইন্ডাস্ট্রির ফ্যান হয়ে গিয়েছি। এই ইন্ডাস্ট্রি তে আমার অন্যতম প্রিয় অভিনেতা দুলকার সালমান। যারা নিয়মিত মালায়ালাম মুভি দেখেন তাদের কাছে অতি পরিচিত একটি নাম। যারা দেখেন না তাদের ভিতরও অনেকে চিনেন ফেসবুকে মুভি রিলেটেড বিভিন্ন গ্রুপের কল্যাণে। তাকে নিয়ে নতুন করে বলার আসলে কিছুই নেই। পুরানো কথা গুলোই নতুন করে বলার জন্য এই পোস্ট। ১৯৮৬ সালে ২৮ জুলাই কেরালা রাজ্যের কোচিতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মলিউডের মেগাস্টার মাম্মুতি এবং সুলফাত এর দ্বিতীয় সন্তান দুলকার। ভক্তদের মাঝে ডিকিউ (DQ) এবং কুঞ্জিক্কা (Kunjikka) নামেও পরিচিত তিনি। পড়ালেখা করেছেন কোচিতে এবং পরবর্তীতে চেন্নাইতে। স্নাতক করেছেন বিজনেস ম্যানেজমেন্টে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারডু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপরে কিছুদিন আমেরিকাতে চাকুরী ও দুবাইতে ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু সবকিছুতেই একটা একঘেয়েমি টের পাচ্ছিলেন। যার জন্য বাবার মত ফিল্মজগতে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন।

তার প্রথম মুভি Second Show মুক্তি পায় ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তে। এই ফিল্মে গ্যাংস্টার হরিলাল চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি তার প্রথম ফিল্মফেয়ার জিতে নেন বেস্ট ডেব্যু (মালায়ালাম) ক্যাটেগরি তে। এরপরে আর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১২ থেকে এখন পর্যন্ত এই ছয় বছরে একের পর এক কাজ করে গেছেন মোট ২২ টি চলচ্চিত্রে। পেয়েছেন একটি কেরালা স্টেট অ্যাওয়ার্ড এবং তিনটি ফিল্মফেয়ার সহ অসংখ্য পুরস্কার, কুড়িয়েছেন ভক্ত এবং সমালোচকদের অজস্র প্রশংসা। মূলত মালায়ালাম অভিনেতা হলেও তামিলে কাজ করেছেন অল্প কয়েকটি। এ বছর তেলুগু তেও তার প্রথম ফিল্ম রিলিজ পেল এবং আর কয়েকদিন পর হিন্দিতেও ডেব্যু হতে যাচ্ছে। অন্য ইন্ডাস্ট্রি তে ভালো মুভির অফার পেলে করবেন, কিন্তু মূল ফোকাস মালায়ালামই থাকবে সবসময় বলে জানিয়েছেন তিনি।

অভিনয়ের পাশাপাশি ছয়টি ফিল্ম এবং একটি বিজ্ঞাপনের জন্য মোট আটটি গান গেয়েছেন। এর ভিতর চারটি তার নিজের অভিনীত চলচ্চিত্র ছিল। একজন সফল ব্যবসায়ীও তিনি। তার প্রথম ফিল্ম রিলিজ পাওয়ার আগেই ২২ ডিসেম্বর ২০১১ তে পরিবারের পছন্দে বিয়ে করেন স্থপতি অমল সুফিয়া কে। গত বছর ৫ মে এই দম্পতির প্রথম সন্তান মারিয়াম আমীরাহ সালমান পৃথিবীতে আসে। সফল অভিনেতা এবং ব্যবসায়ী ছাড়াও একজন সন্তান, স্বামী এবং বাবা হিসেবে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি।

তার জন্মদিনকে সামনে রেখে আমার সবচেয়ে পছন্দের ৭টি চলচ্চিত্র নিয়ে লিখছি। যদিও মুভি নিয়ে আমি কখনও কিছু লিখি না, তাই ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করছি। তার আগে বলে রাখি, এগুলোকে ঠিক রিভিউ বলা যায় কিনা জানিনা। আর রিভিউ দেওয়ার প্রয়োজনও মনে করছি না। কারণ ফিল্মগুলো হয়ত অনেকেরই দেখা। আর যাদের দেখা নেই, তারাও হয়তো মুভি রিলেটেড গ্রুপ গুলোতে এর সুন্দর সুন্দর রিভিউ পড়ে ফেলেছেন। আমি অল্প কয়েকটি লাইনে শুধু ভাললাগা ব্যক্ত করার চেষ্টা করেছি। সাথে প্রতিটি মুভির একটি করে গানের ইউটিউব লিংক দিয়ে দিয়েছি। যদি কারও দেখতে বা শুনতে ইচ্ছা হয় সেজন্য।

প্রথমে আইএমডিবি রেটিং অনুযায়ী তার সেরা সাতটি চলচ্চিত্রের নাম দিয়ে দিচ্ছি –

১) Mahanati (রেটিং ৯/১০)
২) Parava (রেটিং ৮.৪/১০)
৩) Ustad Hotel (রেটিং ৮.৩/১০)
৪) Bangalore Days (রেটিং ৮.৩/১০)
৫) Kammatipaadam (রেটিং ৮.১/১০)
৬) Charlie (রেটিং ৭.৮/১০)
৭) Neelakasham Pachakadal Chuvanna Bhoomi (রেটিং ৭.৭/১০)

প্রথমটি বাদে বাকি ছয়টিই মালায়ালাম ফিল্ম। এবার আসি আমার সব থেকে পছন্দের সাতটি তে –


১) Bangalore Days:

আমার দেখা প্রথম মালায়ালাম ফিল্ম। অঞ্জলি মেননের কাহিনী আর পরিচালনা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। আর সাথে রয়েছে প্রযোজনায় আনোয়ার রশীদ। তিনজন কাজিন আজু, কুঞ্জু আর কুট্টান এর গল্প এটি। ছোটবেলা থেকেই ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব তাদের ভিতর। ব্যাঙ্গালোরে তাদের জীবনের আনন্দ বিধুর কাহিনী নিয়ে গড়ে উঠেছে ফিল্মের কাহিনী। যারা মালায়ালাম ফিল্ম আগে কখনও দেখেননি, তাদের আমি এটা দিয়েই সবসময় শুরু করতে বলি। যেহেতু এটি একটি মাল্টি-স্টারার ফিল্ম, তাই অনেকজনকে একসাথে চেনা হয়ে যায়। অনেকের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে এই মুভিটি। যারা মালায়ালাম দেখতে চান না, কিন্তু বন্ধুত্ব আর সম্পর্কের কাহিনী পছন্দ করেন তাদেরও এটি দেখতে সাজেস্ট করি।

যারা এই মুভিটি এখনও দেখেন নি, তারা প্লিজ অরিজিনাল মালায়ালাম ভার্সন টাই দেখবেন। শুধু এই মুভি না অন্যান্য মালায়ালাম মুভিও (যেমনঃ চার্লি, প্রেমাম ইত্যাদি) মালায়ালাম ভার্সন টা না দেখলে মুভি গুলোর আসল সৌন্দর্য বুঝতে পারবেন না। এই মুভি গুলো অন্য ইন্ডাস্ট্রি তে রিমেক হয়েছে। বলিউডেও রিমেক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায় অরিজিনাল টার মত কোনটাই এত ভালো লাগবে না।

মুভিটি মোট তিনটি ক্যাটেগরিতে কেরালা স্টেট পুরস্কার এবং চারটি ক্যাটেগরিতে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করে। আর অন্যান্য অ্যাওয়ার্ড তো আছেই।

মুক্তির তারিখ – ৩০ মে ২০১৪
আইএমডিবি রেটিং – ৮.৩/১০
ব্যক্তিগত রেটিং – ১০/১০
গানের ইউটিউব লিংক – Maangalyam





২) Charlie:

“A film is never really good unless the camera is an eye in the head of a poet.” – Orson Welles

কিছু কিছু মুভি দেখে মনে হয় যেন অসম্ভব সুন্দর একটি কবিতা পড়া হল যার রেশ কোনদিন শেষ হবার নয়। নির্মাতার কাব্যিক চোখে মুভিটি যেন ফুটে উঠেছে এক অনন্য রূপকথার পৃথিবী হয়ে। হ্যাঁ, চার্লি দেখে আমার ঠিক এমনটাই মনে হয়েছিল যেটা আমার দেখা চতুর্থ মালায়ালাম ফিল্ম ছিল। কিন্তু ব্যাঙ্গালোর ডেইজ এর পর দেখা দুলকারের দ্বিতীয় মুভি। টেসা নামের একটি মেয়ে একটি বাসা ভাড়া নেওয়ার পর দেখে যে তার ঘরটিতে আগে যে যুবকটি থাকতো, তার সমস্ত জিনিসপত্র ফেলে গিয়েছে। এই জন্য শুরুতে টেসার তাকে চরম বিরক্তিকর মনে হয়। ঘরটি গোছানোর সময় টেসা তার বানানো একটি স্কেচবুক খুঁজে পায় যেখানে বিগত থার্টি ফার্স্ট নাইটের কাহিনী স্কেচ করা হয়েছে। স্কেচবুকে কাহিনীটি অর্ধ সমাপ্ত থেকে যায়। এরপরে কি ঘটে সেটা জানার কৌতূহল থেকে টেসা বেরিয়ে পড়ে সেই যুবকের খোঁজে।

“তোমার আঁখি ভাণ্ডারে লুকিয়ে ছিল পথিকের রত্নাকর,
আর তোমার হৃদয় ভাণ্ডারে ছিল সেই দরিয়ার লবণাক্ততা।”


মুভিটিতে যেটা খুব ভালো লেগেছে সেটা হল এর সিনেমাটোগ্রাফি। লোকেশন গুলো সবুজে ভরপুর। মালায়ালাম ফিল্মগুলোতে এটা অবশ্য কমন। স্কেচ আর পেইন্টিং দেখেও মুগ্ধ হয়েছি। আর হ্যাঁ, দুলকারের গাওয়া একটি গানও (Chundari Penne) আছে। অনেকে দুলকারের এই চরিত্রের সাথে হিমুর হালকা মিল খুঁজে পায়। কিন্তু আমি সেটা মানতে নারাজ। আমার কাছে কোন মিল লাগে নি। দুইজনের ভিতর কমন যেটা ছিল, সেটা হচ্ছে দুইজনই ভবঘুরে। এক অর্থে ব্যাঙ্গালোর ডেইজ এর আজুও কিছুটা ভ্যাগাবন্ড থাকে। কিন্তু এই তিনটি চরিত্র সম্পূর্ণ আলাদা।

ফিল্মটি দেখার সময় একটা জিনিস দেখে মজা পেয়েছিলাম। (স্পয়লার অ্যালার্ট) দুলকার আর পার্বতী দুইজনই ছিলেন ব্যাঙ্গালোর ডেইজ আর চার্লি তে। ব্যাঙ্গালোর ডেইজ এ পার্বতী যেখানে যেখানে যেত, দুলকারের কাজ ছিল সেখানে সেখানে তাকে ফলো করা। আর চার্লি তে ঠিক উল্টো। মানে যেখানে যেখানে পার্বতী জানতে পেরেছে দুলকার আছে, ঠিক সেখানে সেখানে গিয়ে তাকে খুঁজে বেড়িয়েছে।

জীবনকে যদি নতুন করে ভালবাসতে চান তাহলে চার্লি দেখুন। আমার মন মেজাজ যখন অনেক বেশি খারাপ থাকে, কোনভাবেই ঠিক হতে চায় না, তখন চার্লি দেখি। ম্যাজিকের মত সব ঠিক হয়ে যায়। এই ফিল্মের সবকিছু আমার এত বেশি প্রিয় যে যত কিছুই লিখি না কেন, লেখা শেষ হবেনা। শুধু একটা জিনিস নিয়ে সমস্যা আমার। প্রথমবার যখন দেখতে বসেছিলাম মনে হয়েছিল দেখা শুরু করার সাথে সাথেই শেষ হয়ে গেল। আমি চেয়েছিলাম ফিল্মটা আর একটু যদি বড় হত ! মি. ডিসুজা, পাথরোজে, কুইন মেরিদের মত এমন আরও দুই-তিনটা চরিত্র যদি বেশি থাকতো !

ব্যাঙ্গালোর ডেইজ দেখার পর সেটি অনেক প্রিয় ফিল্ম হয়ে গিয়েছিল আর সবাইকেই অনেক ভালো লেগেছিল। কিন্তু ওটা দেখার আগে আমি এই ইন্ডাস্ট্রির কাউকেই চিনতাম না, তাই ফিল্মটি দেখার পর সেভাবে কারো ডাই হার্ড ফ্যান হতে পারিনি। ব্যাঙ্গালোর ডেইজে সবার অভিনয় অনেক ভালো লাগলেও, তাদের অভিনয়ের বিশেষত্ব প্রথমবার দেখে ভালো মত বুঝতে পারিনি। যেহেতু ফিল্মটাতে অনেক প্রতিভাবান অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সমাহার ছিল, কাকে রেখে কার ফ্যান হব বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু চার্লি দেখার পর আমি সত্যিকার অর্থে দুলকার এবং পার্বতীর ভক্ত হয়ে যায়। পরিচালক মার্টিনের সাথে এটা দুলকারের দ্বিতীয় মুভি ছিল।

মালায়ালাম ফিল্মের ভিতর কোনটি আমার সব থেকে বেশি প্রিয় এটা বলা আসলেই মুশকিল। এই ইন্ডাস্ট্রিতে এত এত ভালো মুভি হয়। তবে ব্যাঙ্গালোর ডেইজ আর চার্লি আমার সব থেকে বেশি বার দেখা মালায়ালাম মুভি। এই দুটোর ভিতর একটা বেছে নিতে বলা হলে তখন মুশকিলে পড়ে যাবো। দুটোই সবথেকে বেশি পছন্দের।

চার্লি সেই বারের কেরালা স্টেট অ্যাওয়ার্ডে আটটি ক্যাটেগরিতে পুরস্কার অর্জন করে। যার একটি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে দুলকার জিতে নেন।

মুক্তির তারিখ – ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫
আইএমডিবি রেটিং – ৭.৮/১০
ব্যক্তিগত রেটিং – ১০/১০
গানের ইউটিউব লিংক – Oru Kari Mukilinu





৩) Neelakasham Pachakadal Chuvanna Bhoomi:

নীল আকাশ, সবুজ সমুদ্র, লাল পৃথিবী !!

নামটা আমার অনেক পছন্দের। নামটা দেখেই মুভিটি দেখতে ইচ্ছা হয়েছিল। কে আছে অত কিছু জানতাম না। পরে দেখি ব্যাঙ্গালোর ডেইজ এর আজু আছে এতে। তাই নামিয়ে ফেলেছিলাম। এটি ভারতের প্রথম পূর্ণ রোড ট্রিপ ভিত্তিক মুভি । বিপ্লবী চে গেভারা’র জীবনী নিয়ে নির্মিত স্প্যানিশ মুভি The Motorcycle Diaries দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে পরিচালক এই মুভিটি বানিয়েছিলেন। তবে কাহিনীর দিক দিয়ে এই দুটো চলচ্চিত্রের মাঝে কোন মিল পাবেন না।

“দূরে বহুদূরে, আকাশের ওপারে
যাই আমি চলে, অন্তবিহীন পথ ধরে।”


কাসি নামের একটি যুবক তার বন্ধু সুনিকে নিয়ে কেরালা থেকে নাগাল্যান্ডে যাওয়ার প্ল্যান বানায়। হ্যাঁ, নাগাল্যান্ড!!! উত্তর-পূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টার্স এর একটি। এই ৩,৬৬৮ কিলোমিটার বা তার চেয়ে বেশি পথ তারা প্লেন, ট্রেন কিংবা বাসে করে যাওয়ার চিন্তা করেনি। তারা বাইকে করে পাড়ি জমায়। পথিমধ্যে বিভিন্ন ঘটনা আর তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে মুভিটির কাহিনী। অবশ্য কিছু ফ্ল্যাশব্যাক সিনও আছে যেটা কাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু মুভিটি রোড ট্রিপ নিয়ে তাই শুটিং হয়েছে ভারতের সাতটি রাজ্যে – কেরালা, কর্ণাটক, অন্ধ্র প্রদেশ, উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, নাগাল্যান্ড এবং সিকিম। ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে – মালায়ালাম, হিন্দি, ইংরেজি, তামিল, বাংলা এবং নাগাল্যান্ডের কোন একটি ভাষা (যেহেতু নাগাল্যান্ডে কয়েকটি ভাষার প্রচলন আছে, এই ফিল্মে কোনটি দেখিয়েছে সেটা সম্পর্কে আমার ভাল ধারণা নেই)। বাংলাভাষীদের ফিল্মটি দেখতে ভালো লাগবে হয়ত, যেহেতু অল্প কিছু বাংলা সংলাপ এবং দুইটি বাংলা গান রয়েছে। যার একটি উপরে দিয়েছি আর অন্যটি অতি জনপ্রিয় “তোমায় হৃদ মাঝারে রাখিব ছেড়ে দেব না”

ফিল্মটির পরিচালনায় ছিলেন সামীর তাহির। এই মুভির পর দুলকারের সাথে তিনি একটি থ্রিলার ফিল্মে (Kali) কাজ করেছেন। কালিও বেশ ভালো লেগেছিল।

*** মুভিটি দেখার পর আমারও এভাবে পুরো বাংলাদেশ ঘোরার শখ জেগেছিল।

মুক্তির তারিখ – ৯ আগস্ট ২০১৩
আইএমডিবি রেটিং – ৭.৭/১০
ব্যক্তিগত রেটিং – ৯/১০
গানের ইউটিউব লিংক – Chuvanna Bhoomi





বাকি চারটি মুভি সম্পর্কে পরের পর্বে ডিকিউ এর জন্মদিনে লিখছি।


দ্বিতীয় পর্বের লিংক – দুলকার সালমান – এক মুগ্ধতার নাম (মুভি রিভিউ – দ্বিতীয় পর্ব)


বি:দ্র: - মালায়ালাম মুভির সাধারণত ডাব হয়না। দেখতে চাইলে সাবটাইটেল দিয়ে দেখতে হবে। দুলকারের প্রতিটি মুভির ইংরেজি এবং বাংলা সাবটাইটেল আছে। যার যেটা পছন্দ সেটা দিয়ে দেখতে পারেন। সাবসিনে সবগুলো মুভির দুটো ভাষার সাবটাইটেলই পেয়ে যাবেন।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:০৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×