বন্ধুত্ব : শৈশব এর পর
গত পর্বে বলেছিলাম আমার বন্ধু ভাগ্য নেই, গতকয়েক দিনে আমি তার প্রমান পেলাম আবারও। সে কথা আগামী কোনো পর্বে বলবো।
গত পর্বে শেষ করেছিলাম আমার শৈশবের বন্ধু ভাবনা। প্রাইমারীতে পড়া পর্যন্ত এরকমই ছিলো। ক্লাস সিক্সে প্রাইমারী ছেড়ে হাই স্কুলে ওঠার আগেই বাবাকে ইংল্যান্ডে এগারো মাসের একটি ট্রেনিং নিতে যেতে হয়। মা একা আমাদের দুই ভাই বোনকে সব সময় আগলে রাখতো, বাইরে তেমন বের হতে দিতো না আর পড়ালেখাতে জোড় দিতে লাগলো। এ জন্য ক্লাস ফাইভে বৃত্তিও পেয়ে গেলাম। এতে পড়ালেখার আগ্রহ আরও বেড়ে যাওয়াতে বাইরেই বের হতে চাইতাম না। যাদের সাথে খেলতাম তারা এসে ডেকে গেলেও যেতাম না। ক্লাস সিক্সে আমার প্রাইমারীর কিছু বন্ধু সহ হাই স্কুলে ভর্তি হলাম। যারা হাই স্কুলে আসলো তারা বন্ধুর চেয়ে বরং আমার পড়ালেখার প্রতিদ্বন্দী হয়ে গেলো বেশি। এমন একজন ছিলো যে বাইরে থেকে ক্লাস সিক্সে এসে আমার বন্ধু হয়ে গেলো কিন্তু ক্লাস সেভেনে তার বাবা ট্রান্সফার হওয়াতে সে বরিশালের বাইরে চলে গেলো। অনুপম ছিলো আমার স্কুলের সব সময়ের সঙ্গী। এটাকে অবশ্য ট্রেডিশনাল ফ্রেন্ডশীপও বলা যায় কারন আমাদের মায়েরাও একই স্কুলে দুজনে বান্ধবী ছিলো। অনুপম থাকতো হস্টেলে। আমার সাথেই সব সময় বসতো ক্লাস সিক্স থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত কারন আমারা প্রায় একই সাইজের ছিলাম। কিন্তু ক্লাস টেনে এসে ও আমার চেয়ে অনেক খানি বেশি লাম্বা হয়ে যাওয়াতে পিছনে বসতো।
ক্লাস এইট-নাইনে মানে কিশোর বয়সের পাগলামী গুলো যখন মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার সময় তখন আমরা কিছু বন্ধুরা ঠিক করলাম শহরের অদূরেই দূর্গা সাগর দীঘি, সেখানে সাইকেলে করে বেড়াতে যেবো। রুবেল, মারুফ, সঞ্জয় (রানা) এবং আমি সাইকেল নিয়ে এক ছুটির সকালে বেড়িয়ে পড়লাম। বরিশাল শহর থেকে ১০ কি ১২ কি: মি: এর পথ। আস্তে ধীরে গিয়ে সেখানে দৌড়-ঝাঁপ-হৈ হল্যা করে কাটালাম। তারপর গোসলে নামলাম। গোসল থেকে উঠে দেখি আমার গলার চেইন পুকুর ঘাটে রাখা ছিলো সেটা নেই, রুবেল আর মারুফের কি হাড়িয়ে ছিলো মনে নেই তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো রানার লক করা সাইকেল গায়েব ! অনেক খোঁজাখুঁজির পর ঝোঁপের আড়ালে সাইকেল পাওয়া গেলো। বাসায় ফিরে এসে আমার জ্বর হলো, এমনিতেই ছোটবেলা থেকে আমার রিউমেটিক ফিবার ছিলো, তারপর মা এই ঘটনা জানার পরে সব বন্ধু বান্ধবের সাথে মেলামেশা বন্ধ করে দিলো। এমনই ভাগ্য আমার। সেই টার্মে এই জ্বরের জন্য প্রথম স্হান হাড়ালাম। । তাই সিদ্ধান্ত নিলাম বন্ধু বিষয়ক কোনো ঝামেলায় জড়াবো না। তারপরও আমি মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে সাইকেল নিয়ে নদীর পাড়ে বিকেলে ঘুড়তে যেতাম। মাঝে মাঝে বাদশাহদের বাড়িতে আড্ডা দিতাম। সত্যিই সুন্দর ছিলো দিন গুলি।
( হয়তো চলবে.... )
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১০ দুপুর ২:৫৪