বাংলাদেশের সাহিত্যের শেষ এবং সফলতম প্রমিথিউজ হুমায়ূন আহমেদ এখন ঘুমিয়ে আছেন নুহাশ পল্লীর শ্যামল কোমল নীল নির্জনে। তাকে আমার বাংলাদেশের সাহিত্যের সম্রাট বলে সম্বোধন করতে হচ্ছে হতো। তিনি তা জানতেন। কিন্তু এই ধরনের বিশেষণ প্রয়োগ তার মতো মার্জিত, শিক্ষিত, শিল্পিত, মানবিক বোধসম্পন্ন, বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক মানুষ একেবারেই পছন্দ করতেন না। যেমন তিনি সব সময় এড়িয়ে চলেছেন কোলাহল, কাদা ছোড়াছুড়ি এবং সংঘবাদিত্ব, সভা-সেমিনারে চোয়ালবাজি করে বেড়ানো। অন্তহীন আনন্দ দিয়ে গড়া ছিল তার জীবন ও অবদান। এজন্যই প্রিয়জনদের নিয়ে আনন্দ করে বেড়ানো, সেই আনন্দ পাঠকের কাছে পৌঁছে দেয়া, জম্পেশ আড্ডা, নির্জনতা, প্রকৃতির সান্নিধ্য ছিল তার প্রিয় বিষয়।
সেই হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু নিয়ে নিউইয়র্কে যা ঘটে গেছে, পত্র-পত্রিকায় যতটুকু এসেছে—সেটুকু পাঠ করেই স্তম্ভিত হয়ে গেছে পুরো জাতি। হৃদয়বিদারক যেসব বর্ণনা পত্র-পত্রিকায় এসেছে, তা থেকে জন্ম নিয়েছে হাজার প্রশ্ন। তার মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে মেনেই নিতে চাইছেন না অনেকে। তারা একথা বলার জন্য মুখিয়ে আছেন, হুমায়ূন আহমেদ ষড়যন্ত্রের শিকার। তাকে হত্যা করা হয়েছে। জাতির বেদনা ও কষ্ট দূর করার জন্য এখন হুমায়ূন আহমেদের পরিবার ও সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। এ প্রসঙ্গে পরে আসছি।
খোদ ঢাকায় ১৬ কোটি মানুষের চোখের ওপর তাদের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির লাশ দাফন নিয়ে যে অবাঞ্ছিত, অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুর্ভাগ্যজনক টানাহেঁচড়া হয়ে গেল, সেই দুঃখই বা দেশবাসী ভুলবে কেমনে? হুমায়ূনের মা, ভাইবোন ও সন্তানরা চাইলেন ঢাকার বুদ্ধিজীবী গোরস্তান কিংবা বনানীতে তাকে দাফন করতে। যাতে সর্বস্তরের মানুষ সহজেই তাদের স্বপ্নপুরুষের কবরটি জিয়ারত করতে পারে। নুহাশ পল্লীকে তারা গোরস্তান বানাতে চাননি। সন্তানরা বললো, তাদের পিতারও এই মত ছিল। তাছাড়া নুহাশ পল্লী একটা প্রাইভেট প্রপার্টি, স্বাভাবিকভাবেই তা কিছুটা সংরক্ষিত থাকবে। যা সাধারণ মানুষের গমনাগমনের ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে।
শাওন মানে হুমায়ূনের দ্বিতীয় স্ত্রী নুহাশ পল্লীতে দাফনের পক্ষে অটল হয়ে রইলেন। তিনি বললেন, তার কাছেও প্রমাণ আছে, হুমায়ূন তাকে মৃত্যুর আগে একথা বলে গেছেন। তিনি এখানে শান্তি নিকেতনের মতো প্রতিষ্ঠান গড়তে চান।
পারিবারিক গণ্ডি পার হয়ে বিষয় গড়ালো রাস্তায়। শেষ পর্যন্ত আইন, সরকার, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির ভয় দেখিয়ে হুমায়ূন সন্তানদের কাবু করতে চাইলেন শাওনের পিতা মোহাম্মদ আলী এবং মা তহুরা আলী এমপি। সরকারও হাত লাগালো। শাওন বলেছিল, কথায় কাজ না হলে তিনি কোর্টে যাবেন। এর জন্য লাশ ৭ দিন বারডেমে থাকলে থাকবে। দরবারের পর দরবার। আলোচনার পর আলোচনা। সমস্যার সমাধান নেই। দু’পক্ষই নিজ নিজ অবস্থানে স্থির। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা তো থেমে থাকে না। লাশ পড়ে আছে বারডেমের হিমঘরে। স্তব্ধ হয়ে। সকাল বেলা দাফন করতে হবে। উপায় কী?
এই রকম একটি মারাত্মক সঙ্কটকালে সত্যিকারের কল্যাণ ও মমতার প্রতিমূর্তি হয়েই যেন অনেক দূর থেকে আবির্ভূত হলেন গুলতেকিন খান। হুমায়ূনের চার সন্তানের মা। তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী। সবার কাছে তার ভূমিকা হয়ে ওঠে উদ্ধারকারীর। তিনি সন্তানদের সুদূর আমেরিকা থেকে ফোনে বোঝালেন। সমঝোতা ও সম্প্রীতির কথা বললেন।
বললেন, দেরি যত হবে, ততই কষ্ট পাবে তোমাদের আব্বুর আত্মা। শোকাতুর সন্তানরা মায়ের আদেশ মেনে নিল। নুহাশ পল্লীতেই লাশ দাফনে তারা রাজি হলো। সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। রক্ষা পেল হুমায়ূনের লাশ। শাওন এবং শাওনের মা আওয়ামী লীগের এমপি তহুরা আলী হয়তো খুশি হলেন। আমরাও অনেকে খুশি হলাম। কিন্তু আসলে বিজয়ী হলেন গুলতেকিন। ৩০ বছর সংসার করে যে গুলতেকিনকে হুমায়ূন-শাওন ঠেলে দিয়েছিলেন সংসারের বাইরে, সেই গুলতেকিন আবারও তার সেকরিফাইজ দিয়ে জয় করে নিলেন সবার অন্তর। গুলতেকিন ছিলেন হুমায়ূনের উত্থানের কারিগর। বিদায় বেলায় সেই গুলতেকিনেরই দায়িত্বশীল মমতামাখা করস্পর্শ লেগে রইল হুমায়ূনের দেহে ও আত্মায়।
জাতীয় কবি নজরুল বলেছেন, ‘কোনোকালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারী/ প্রেরণা দিয়াছে শক্তি দিয়াছে বিজয় লক্ষ্মী নারী।’ গুলতেকিন ছিলেন হুমায়ূনের সেই বিজয় লক্ষ্মী নারী। অসাধারণ সম্ভ্রান্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তিনি। দাদা প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর নাম সারা উপমহাদেশে। সচ্ছলতা তার পায়ে পায়ে। সেই অবস্থায় মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি সম্পূর্ণ নিজের দায়িত্বে, পাগলের মতো ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন প্রায় কপর্দকশূন্য, নামযশহীন ৮০০ টাকা বেতনের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষককে।
হুমায়ূন আহমেদের নিজের বর্ণনায় আছে, ‘আটশ’ টাকা বেতন। শহীদ পরিবার হিসাবে পাওয়া সরকারি বাসাটি ১৫ দিনের মাথায় ছেড়ে দেয়ার নোটিশ মাথায় ঝুলছে। মাসের শেষ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পয়সা থাকে না। হেঁটে হেঁটে ফিরি। ঠিক এমন অবস্থায় ১৫ বছরের বালিকা গুলতেকিনকে বিয়ে করে ফেলি। মা তার শেষ সম্বল বাবার দেয়া হাতের বালা বিক্রি করে বিয়ের বাজার করলেন। ভাইবোনরা পাশের বাসা থেকে জিনিসপত্র এনে আমার বাসর সাজালো। সকালে পুলিশের গাড়ি এসে হাজির। বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। পাশের বাড়ির লোকেরা এসে সাজানো বাসর ঘরের চাদর, বেতের চেয়ার, ক্যাসেট প্লেয়ার, ফ্যান সবই নিয়ে গেল। গুলতেকিন প্রশ্ন করেছে। আমার মানসিক অবস্থা নেই উত্তর দেয়ার। তাকে নিয়ে বেরিয়ে যাই বাসা থেকে।’ [ঘরে বাইরে হুমায়ূন আহমেদ : হাজার প্রশ্ন, মাহফুজ আহমদ, পৃষ্ঠা-৮১]।
এই অবস্থা থেকে তিনি ৩০ বছর ধরে একটু একটু উপরে তুলে ধরেছেন হুমায়ূনকে। নিজের সমস্ত অস্তিত্বকে উত্সর্গ করে নির্মাণ করেছেন হুমায়ূনের পথ। হুমায়ূন যত উপরে উঠেছেন তত নেপথ্যে নিয়ে গেছেন নিজেকে। তারপর এলো খ্যাতি, প্রতিপত্তি, অর্থ, বিত্ত সব। যখন হাত-পা ছড়িয়ে কেবল জীবনকে উপভোগ করার সময়, সেই সময় কালবৈশাখী ঝড়ের মতো শাওনের আগমন। তছনছ হয়ে গেল সাজানো সংসার। অন্য কোনো মেয়ে হলে ভেঙে পড়তো। কিন্তু গুলতেকিনের শরীরে বইছে প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর রক্ত। তিনি প্রাথমিক ধাক্কা এবং চূড়ান্ত অপমানের জ্বালা কাটিয়ে বুক দিয়ে আগলে নিলেন সন্তানদের। তাদের মানুষ করলেন সম্পূর্ণ একলা লড়াই করে। তার কষ্ট, তার দুঃখের ভার তিনি একাই বহন করেছেন, কারও করুণা ভিক্ষা করে বেড়াননি।
শাওনকে আমি কোনো দোষ দিচ্ছি না। তারপরও তো একথা সত্য, গুলতেকিন জীবনদাত্রী আর শাওন সেই জীবনের শেষাংশের লাবণ্যের অংশ ভাগী। সেজন্যই মনে করিয়ে দিতে চাই, যে ‘দখিন হাওয়া’য় বসে তিনি হুমায়ূনের সন্তান ও ভাইবোনদের সম্পর্কে কটূ কথা বলেছেন, সেই দখিন হাওয়া বাড়ির মালিক কিন্তু প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ। ‘দখিন হাওয়া’ নামটাও গুলতেকিনের দাদারই দেয়া। শাওনের উচিত হবে গুলতেকিনকে অন্তরভরা সম্মান জানিয়ে আসা। কারণ গুলতেকিন চেয়েছেন হুমায়ূন বড় হোক, আর শাওন চেয়েছেন হুমায়ূনকে জড়িয়ে বড় হতে। দৃষ্টিভঙ্গির এই পার্থক্যটুকু গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো তাই শেষ বেলায় আমার আমিতে হুমায়ূন লেখেন, গুলতেকিনই তার জীবনের শ্রেষ্ঠ নারী। তার লেখক হয়ে ওঠা এবং প্রেরণার উত্সও সেই তিনিই।
লাশ এবং মরদেহ
হুমায়ূন আহমেদ ভারতীয় বাংলা সাহিত্যকে পরাজিত করেছিলেন। গতিরোধ করেছিলেন ভারতীয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের। নির্মাণ করেছিলেন খাঁটি বাংলাদেশী সাহিত্য। জীবন যন্ত্রণায় দগ্ধ মধ্যবিত্তকে তিনি বিলিয়ে গেছেন সৌন্দর্য ও আনন্দমাখা রূপকথা।
বাংলাদেশের পাঠক, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে, তিনি ঘরে ফিরিয়ে এনেছিলেন। তাদের মধ্যে বুনে দিয়েছেন স্বপ্ন। লজিক ও এন্টি-লজিকের পৃথিবী। শুভ্রের অনাবিল আবহ। তিনি এই পোড়া দেশের তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে উঠেছিলেন মডেল।
বাংলাদেশের নিভু নিভু প্রকাশনা শিল্পকে তিনি দিয়েছেন প্রাণ, দিয়েছেন প্রতিষ্ঠা। কলকাতার কৃত্রিম ভাষা ও ভঙ্গির বিরুদ্ধে খাড়া করেন খাঁটি বাংলাদেশী ভাষাকে। সব ধরনের নেগেটিভ বিষয়-আশয় পরিহার করে তিনি উচ্চকিত করেন বাংলাদেশের আত্মাকে, তার আত্মার ভাষাকে। লোকসংস্কৃতি ও মরমী গানকে দিয়েছেন নতুন মাত্রা। ঐতিহ্যের করেছেন নবায়ন। জীবন থেকে দূর করেছিলেন হীনম্মন্যতা, ফিরিয়ে এনেছিলেন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সাহস।
এই ভারত ও ভারতীয় বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে হুমায়ূন আহমেদ বলে গেছেন, ‘... ভারতের প্রতি আমার কোনো মমতা নেই। কারণ ভারত আমাদের দীর্ঘ সময় শোষণ করেছে। এখনও করছে। আমাদের সাহিত্যকেও ঠিকমত মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেয়নি। কাজেই এদের প্রতি কোনো মোহ থাকার কারণ নেই। ... তবে তাদের দিন শেষ। বর্তমান ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদের। বাংলা সাহিত্যে ভবিষ্যতে কোনো মহত্ সৃষ্টি এদেশের লেখকদের দ্বারাই কেবল সম্ভব এবং তারা সেই দায়িত্ব পালন করবেন বলে আমার বিশ্বাস। বাংলা ভাষাকে এদেশের লেখকরাই এগিয়ে নিয়ে যাবেন। মহত্ সাহিত্য সৃষ্টি হওয়ার মতো উপকরণ এদেশে আছে। ওয়ার অ্যান্ড পিস লেখা হয়েছে নেপোলিয়ন যখন রাশিয়া আক্রমণ করলেন তারপর। এ দেশের মানুষ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। মুখের ভাষা ফিরিয়ে এনেছে। স্বৈরাচার হটিয়েছে। কাজেই মহত্ সাহিত্য সৃষ্টি হবে এদেশে, না কি কলকাতায়? যেখানে হিন্দু আগ্রাসনের কাছে সমস্ত মনুষ্যত্ব বিকিয়ে দেয়া হয়েছে?’ [ঘরে বাইরে হুমায়ূন আহমেদ : হাজার প্রশ্ন, মাহফুজ আহমদ, পৃষ্ঠা-৬৬]।
সেই হুমায়ূন ছিলেন বিজয়ী নায়ক। কিন্তু আমরা আমাদের নায়ককে সামনে নিয়েও ভারতীয় বাংলা ভাষার কাছে পরাজিত হলাম। হুমায়ূনের কোনো বইয়ে ‘মরদেহ’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। ব্যবহার করেছেন বাংলাদেশী শব্দ ‘লাশ’। কিন্তু ভারতীয় বাংলা শব্দ মরদেহের কাছে বাংলাদেশী বাংলা শব্দ লাশ হেরে গেল আমাদের সচেতনাহীন সংবাদপত্র ও বিভিন্ন চ্যানেলের বদৌলতে। তারা ৭ দিন ধরে হুমায়ূনের লাশকে মরদেহ বানিয়ে কবরস্থ করলো নুহাশ পল্লীতে।
লাশ এবং মরদেহ দুটোই নিষ্পাপ শব্দ। বাংলা অভিধানে দুটোর অর্থই এক। দুটোই বাংলা ভাষায় বহুল ব্যবহৃত। তারপরও পার্থক্য আছে। এই পার্থক্য কোনো সাম্প্রদায়িক পার্থক্য নয়। হিন্দু-মুসলমানের কোনো সমস্যাও নয়। এই পার্থক্য সম্পূর্ণরূপে সাংস্কৃতিক পার্থক্য। ঢাকা এবং কলকাতার মধ্যে যে পার্থক্য, বীরভূম এবং বরিশালের মধ্যে যে পার্থক্য, দুলাভাই এবং জামাইবাবুর মধ্যে যে পার্থক্য, মাসি এবং খালার মধ্যে যে পার্থক্য, উত্পল দত্ত এবং খলিলের মধ্যে যে পার্থক্য, নির্মলেন্দু গুণের সঙ্গে হর্ষ দত্তের যে পার্থক্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়ার যে পার্থক্য, অজয় নদীর সঙ্গে বুড়িগঙ্গার যে পার্থক্য—এ হলো সেই পার্থক্য। এই পার্থক্য বোঝার ক্ষমতা হুমায়ূনের ছিল। তাই তিনি বড় হতে পেরেছিলেন। অন্যদের এই বোধশক্তি নেই। তাই তারা ‘বনসাই’ হয়েই জীবন কাটিয়ে যাচ্ছেন।
আওয়ামী সাংস্কৃতিক লাঠিয়ালদের কাণ্ড-কারখানা
হুমায়ূন আহমেদ বার বার বলেছেন, দেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় আমাকে নিয়ে কী ভাবছেন তা জানার কোনো প্রয়োজন মনে করি না। আমি জানতে চাই একজন সাধারণ মানুষ, যে আমার বই পড়েছে, নাটক দেখছে—সে আমাকে নিয়ে কী ভাবছে। ওদের ভাবনা আমি জানি। আর জানি বলেই বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর ভাবনা-চিন্তা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই।
বিশেষ করে দলবাজ বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক লাঠিয়ালদের তিনি শত হস্ত দূর থেকেই বিদায় করে দিয়েছেন সব সময়। এদের মূর্খতা, ভণ্ডামি ও স্বার্থপরতার ব্যাপারে তিনি পুরো মাত্রায় সচেতন ছিলেন।
অবাক হওয়ার মতো বিষয়, সেই সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ক্যাডাররাই দখল করে নিয়েছিল তার লাশ। নিজেদের বীরত্ব, মমত্ব ও দায়িত্ববোধ দেখানোর এত বড় সুযোগ কীভাবে হাতছাড়া করে তারা। তো সরকারের পূর্ণ সাহায্য নিয়ে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ক্যাডাররা শকুনের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাদের হুলুস্থুল কাণ্ড-কারখানা ও মুষলধারে কান্নাকাটি দেখে দেশের মানুষের আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেছে। হয়ে পড়েছিল বাক্যহারা, সম্বিতহারা। দেশের মানুষের অবস্থা যাই হোক, আমার ধারণা—হুমায়ূনের কীর্তিমান ভাই ড. জাফর ইকবালও হয়তো বোধ করেছেন অস্বস্তি।
তো ক্যাডারদের মোটেই অজানা নয়, হুমায়ূন তাদের সম্পর্কে বরাবর কী মনোভাব পোষণ করেছেন। তাদের নেতানেত্রী সম্পর্কেই বা কী বলে গেছেন। তারপরও তারা হুমায়ূনের লাশ আঁকড়ে ধরে দল ও ব্যক্তিস্বার্থ আদায় করতে চেয়েছেন।
যাতে এরা আমার ওপর পুলিশ বা র্যাব লেলিয়ে দিতে না পারে, সেজন্য নিজের নয়, হুমায়ূন আহমেদের কথা থেকেই উদ্ধৃত দিচ্ছি—“মহাত্মা গান্ধী মৃত্যুর আগে বলে গেছেন, ভগবান তুমি ভারতকে দেখো। পাকিস্তানের লিয়াকত আলী খান মৃত্যুর আগে শেষ কথা বলেছেন, আল্লাহ পাকিস্তানকে হেফাজত করো। পৃথিবীর বিখ্যাত নেতারা মৃত্যুর আগে শেষ কথাটি বলে গেছেন দেশ ও দেশের মানুষ সম্পর্কে। দেশের কল্যাণ কামনা করেই তারা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। আমাদের এক নেতা গুলি খাওয়ার পর দেহরক্ষীর নাম ধরে বললেন, ‘আমাকে শেষ করে ফেলেছে, আমাকে বাঁচা।’
মৃত্যুর সময় তার কাছে দেশ নয়, দেশের মানুষ নয়, তিনিই বড় হয়ে রইলেন।
আমাদের দেশে সেই নেতা প্রয়োজন যিনি মৃত্যুর সময় নিজের কথা ভাববেন না। দেশের মানুষের কথা ভাববেন। এরকম নেতা তৈরি করতে হবে। এ দেশের মানুষ একদিন সেই নেতা তৈরি করবেই। এটা আমার বিশ্বাস।” [ঘরে বাইরে হুমায়ূন আহমেদ : হাজার প্রশ্ন, মাহফুজ আহমেদ, পৃষ্ঠা-৬৬]।
আমাদের তিন জাতীয় নেতা মওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান এবং জিয়াউর রহমান সম্পর্কে তার বক্তব্যও প্রণিধানযোগ্য—‘মওলানা ভাসানী অসাধারণ নেতা। স্বপ্নদ্রষ্টা। শেখ মুজিবুর রহমান জাতির পিতা। জিয়াউর রহমান ‘বাংলাদেশ স্বপ্নে’র রূপকার। স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক তিনিই দিয়েছিলেন। বেতারে তার ঘোষণায় রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম।’ [ঘরে বাইরে হুমায়ূন আহমেদ : হাজার প্রশ্ন, মাহফুজ আহমেদ, পৃষ্ঠা-৩০]।
আবার আওয়ামী লীগের সোনার ছেলে ছাত্রলীগের-যুবলীগের বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের সম্পর্কেও উচিত কথা বলে গেছেন হুমায়ূন। বলেছেন এরা অনুকূল বাতাসে বেড়ে ওঠে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে গর্তে ঢুকে পড়ে। এরা নেতার লাশ সিঁড়িতে ফেলে রেখে শপথ নিতে যেতে পারে।
হুমায়ূনের ভাগ্য, দেশেরও ভাগ্য—এসব লেখালেখি কোনো মনজিল মোরশেদের নজরে পড়েনি। পড়লে হয়তো হুমায়ূনকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতো। তবে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। সেই পরিকল্পনার নাম কি ‘দেয়াল’?
যাই হোক। লাশকে সামনে নিজেদের ব্যক্তিগত ও দলগত কৃতিত্ব জাহির করতে করতে এরা মেতে উঠে কারবালার মাতমে। যদিও লোক দেখানো। এজন্যই এরা এতটা অন্ধ, চক্ষু লজ্জাহীন, মতলববাজ। সিরিজ ধরে নিজেদের নানা মহাপুরুষ, সরকার, মন্ত্রী, আলতু-ফালতু নেতাকর্মীর শ্রদ্ধা নিবেদনের কথা ফলাও করে বিরতিহীনভাবে ঘোষণা করলেও, বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের শ্রদ্ধা জানানোর ঘোষণাটি দিল না। ছোটলোক আর কাকে বলে!
প্রধানমন্ত্রী প্রসঙ্গে
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হুমায়ূন আহমেদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি হুমায়ূন আহমেদকে দেখার জন্য নিউইয়র্কে তার বাসায় গিয়েছেন। তাকে দশ হাজার ডলার সাহায্য দিয়েছেন অনেকটা জোর করেই। যদিও হুমায়ূন তা পরে ফেরত দিয়েছেন বিনয়ের সঙ্গে। বলেছেন, এই টাকা যেন কোনো জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে আমাদের স্থায়ী প্রতিনিধি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই ড. মোমেনের উপদেষ্টা করে দিয়েছেন। উদ্দেশ্য, এর ফলে তিনি যে বেতনটা পাবেন তা দিয়ে তার নিউইয়র্কে থাকা-খাওয়ার খরচটা হয়তো উঠে যাবে। এগুলো খুবই ভালো পদক্ষেপ। এজন্য তাকে ধন্যবাদও জানাই।
কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, সুস্থাবস্থায় হুমায়ূন এই সরকারের কোনো আনুকূল্যই পাননি। এমনকি নিজ গ্রামে তার নিজস্ব অর্থায়নে যে ‘শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ’টি তিনি গড়ে তুলেছিলেন, সেই বিদ্যাপীঠকে এমপিওভুক্ত করার জন্য বিগত তিন বছর ধরে অনেক চেষ্টা-তদবির করেও জীবদ্দশায় তা পারেননি। ব্যক্তিগতভাবে ধরনা দিয়েছেন মন্ত্রী, সচিব এবং মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে। যা ছিল তার স্বভাববিরুদ্ধ।
সরকারের নির্দেশিত সব শর্ত যথাযথভাবে পূরণও করেছেন তিনি। কিন্তু কেবল আওয়ামী লীগের এমপি, স্থানীয় অশিক্ষিত নেতা-ফেতাদের কোনো সুপারিশ না থাকায় নেত্রকোনায় তার শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এমপিও হাসিল করতে পারেনি।
এখন হুমায়ূন আহমেদের জন্য সরকারের কান্নাকে সেজন্য মায়াকান্না বলেই মনে হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ সাহেবকে হুমায়ূনের কফিনের পাশে দেখে কিছুটা রাগও হয়েছে, বিরক্তিও লেগেছে। বেঁচে থাকতে হুমায়ূন আহমেদ সরকারের কাছে এই একটিমাত্র জিনিস চেয়েছিলেন। আর কোনো কিছুর জন্যই তিনি তাদের মুখাপেক্ষী ছিলেন না। সেই কাজটি এই সরকার করেনি।
হুমায়ূন আহমেদের লাশের পাশে সরকার ও তাদের লোক-লস্করদের আহাজারি দেখে আমার নাটকই মনে হয়েছে। কারণ হুমায়ূনের প্রতি যদি এই সরকারের ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ থাকতো, বা কিছুটা দরদ থাকতো, তাহলে তার মৃত্যুর পর অন্তত একটা দিন রাষ্ট্রীয় শোক দিবস ঘোষণা করতে পারতো। তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করতে পারতো। করেনি।
একবারের জন্যও তো এই সরকারের মনে হয়নি, জীবদ্দশায় একমাত্র নজরুল ছাড়া এক হাজার চারশ’ বছরের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে হুমায়ূনের মতো জনপ্রিয়তা নিয়ে আর কেউ জন্মাননি। ভবিষ্যতেও জন্মাবেন কিনা সন্দেহ। এই জাতির জন্য এটা কত বড় গৌরবের একটা বিষয়। অথচ সরকারের কাছে মহত্ব নয়, বড় হয়ে উঠলো দলবাজি, স্ট্যান্টবাজি। পদ্মা সেতুর পঙ্ক থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর একটা মওকা হিসেবে তারা ব্যবহার করতে চাইলো হুমায়ূনের লাশকে। এ লজ্জা রাখি কোথায়?
বেগম খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বেগম জিয়া ছিলেন হুমায়ূনের একজন গুণগ্রাহী। হুমায়ূন আহমেদ এটা জানতেন। এ বিষয়ের ওপর কয়েকটি তথ্য দিতে চাই। দিতে চাই এই কারণে যে, হুমায়ূনকে আওয়ামী লীগের নৌকায় তোলার জন্য মরিয়া তত্পরতা চলছে। সরকারের সাংস্কৃতিক লাঠিয়ালরা এজন্য আগ বাড়িয়ে দখল করে নিতে চাচ্ছে সব। মুছে দিতে চাইছে অন্য সব পরিচিতি। যা খুবই দৃষ্টিকটূ হিসেবে প্রতিভাত হচ্ছে।
শুরুটা করতে চেয়েছিলাম আমার সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে। কিন্তু আপাতত সে প্রসঙ্গ থাক। অন্য একদিন এ বিষয় নিয়ে লেখা যাবে। তবে যেটুকু বিষয় যুক্ত কেবল সেটুকুই বলছি।
আমি তখন বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘কথামালা’ নামে একটি সাহিত্য-সংস্কৃতিনির্ভর ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান করি। ৫০ মিনিটের প্রোগ্রাম। মাসে একবার প্রচার হয়। বলে রাখা ভালো, তখন বিটিভিই দেশের একমাত্র চ্যানেল।
মনীষী আহমদ ছফা একদিন রাগ করলেন আমার ওপর। কী করে বেড়াচ্ছেন? ইতিহাসে নাম লেখানোর জন্য কিছু করুন। দেশের স্বার্থে হুমায়ূনকে নিয়ে এগিয়ে যান। আমি প্রস্তাবটা লুফে নিলাম। কিন্তু সমস্যা হলো বিটিভিকে নিয়ে। জীবন্ত একজনের ওপর এককভাবে পঞ্চাশ মিনিটের একটা ডকুমেন্টারি প্রোগ্রাম করার যৌক্তিকতা নিয়ে তারা চিন্তায় পড়লেন। আমি গেলাম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মরহুম মোজাম্মেল হক তখন প্রেস সচিব। তাকে বললাম। তিনি নিজেও হুমায়ূনের মুগ্ধ পাঠক ছিলেন। আমাকে নিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সব শুনে বললেন, হুমায়ূন আহমেদের মতো একজন অসাধারণ গুণী লেখকের জন্য ৫০ মিনিটের একটা ম্যাগাজিন করা আর এমন বেশি কী? করুন।
আমি ছুটলাম হুমায়ূন ভাইয়ের কাছে। কবি আতাহার খান আর আমি হাজির হলাম। হুমায়ূন ভাই সানন্দে সম্মতি দিলেন। নানা দৌড়ঝাঁপ করে ২০ দিনের মধ্যে শেষ করলাম ডকুমেন্টারির কাজ। প্রচার হলো যথারীতি ‘কথামালা : হুমায়ূন পর্ব’, হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে নির্মিত ও প্রচারিত বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ম্যাগাজিন। সময়টা ১৯৯৩ সাল, ৯ মার্চ।
৫৫ মিনিটের ওপর ছিল প্রোগ্রামটা। আজকের জিটিভির প্রধান নির্বাহী আমাদের প্রিয় শিল্পী রওশন আরা মুসতাফিজের স্বামী, মুসতাফিজুর রহমান তখন সম্ভবত অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান। তিনি আমার প্রযোজক আলাউদ্দিন আহমদকে বলে দিয়েছিলেন, ভালো প্রোগ্রাম হয়েছে। অতিরিক্ত সময় কোনো সমস্যা নয়।
অনুষ্ঠান শেষ হয়েছিল রাত ১১টায়। মোজাম্মেল ভাইয়ের ফোন, শিকদার, প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানটা দেখেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে বলেছেন।
ততদিনে মোজাম্মেল ভাইয়ের সঙ্গেও হুমায়ূন ভাইয়ের একটা ভালো সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। দু’জনই আমুদে মানুষ। মিল হয়ে গেল দ্রুত। মোজাম্মেল ভাই ও সে সময়কার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সৈয়দ আবদাল আহমদের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হুমায়ূনের এক-দুবার সাক্ষাত্ও হয়ে গেল।
হুমায়ূন আহমেদ তখন ‘আগুনের পরশমণি’ নির্মাণ নিয়ে মেতে উঠেছেন। সরকারি অনুদানের জন্য আবেদন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ছবি। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিষয়টা জেনে তত্কালীন তথ্যমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে বলে দিলেন, যদি একটা ছবিকেও অনুদান দিতে হয় তাহলেও সেটা যেন হুমায়ূন আহমেদের ছবিকে দেয়া হয়। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা সানন্দে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করলেন।
সরকারি অনুদানের পরিমাণ সে সময় ছিল মাত্র ১৮ লাখ বা ২৪ লাখ টাকা। আমার ঠিক মনে নেই। হুমায়ূন ছবি নিয়ে মাঠে নেমে গেলেন। দরকার সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর সাহায্য। কারণ মুক্তিযুদ্ধের ছবি, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাজার হাজার সদস্য, ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান ইত্যাদি না হলে চলবে কেন? সে ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তার মিলিটারি সেক্রেটারি আজকের আওয়ামী লীগের এমপি মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী করে দিলেন।
ছবি রিলিজ করা যাচ্ছে। এফডিসিতে বকেয়া পড়ে গেছে ২০ লাখের ওপর টাকা। আবারও এগিয়ে এলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বললেন, ছবি বানাচ্ছেন হুমায়ূনের মতো নন্দিত কথাশিল্পী। ছবিটার উপজীব্য মুক্তিযুদ্ধ। এ ছবি তো পুরোটাই রাষ্ট্রের টাকায় হওয়ার কথা। এফডিসির পুরো পাওনা মওকুফ হয়ে গেল।
রিলিজের আগেই ছবি নিয়ে হৈ চৈ পড়ে গেল সর্বত্র। প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে উত্সাহ দেখালেন। হুমায়ূনও চাইলেন ছবিটা প্রধানমন্ত্রীকে দেখাবেন। তড়িঘড়ি ব্যবস্থা হলো। দ্রুত ডিএফপি’র ছোট প্রেক্ষাগৃহটির মেশিনপত্র, প্রজেক্টর, স্ক্রিন ঝাড়-পোছ হলো। বেগম খালেদা জিয়া হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে ছবিটা দেখলেন। ছবির শেষে দেখি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া চোখ মুছছেন।
সে বছর আগুনের পরশমণি ৮টি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেল। আমার আনন্দ ধরে না। সহায় হলেন তত্কালীন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম ও মরহুম মোজাম্মেল হক। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের গলায় পরিয়ে দিলেন ‘একুশে পদক’। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান।
‘দেয়াল’ কী ষড়যন্ত্র
হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুকে ঘিরে বিশ্বজুড়ে বাংলাভাষীদের মধ্যে চলছে তোলপাড়। সন্দেহ-সংশয়ের মেঘ ঘনিয়ে উঠছে আকাশে। গুনগুন, ফিসফাস, ক্ষোভ আর অসন্তোষের ব্যথিত বাতাস হয়ে পড়ছে গুমোট। হাজার হাজার প্রশ্ন চারদিকে। নানা অসঙ্গতির কারণে সেই সন্দেহ এখন ঘনীভূত হচ্ছে অতি দ্রুত। সরকারের কিছু কর্মকাণ্ড বিশেষ করে তাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বরকন্দাজদের আচরণ এই সন্দেহকে আরও প্রকট করেছে। সন্দেহের তীর থেকে সদ্য স্বামীহারা স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম কিংবা নিউইয়র্কের মুক্তধারার কর্ণধার বিশ্বজিত্ সাহা কেউই বাদ পড়ছেন না।
সন্দেহ, ষড়যন্ত্র ও সংশয়—এগুলো এখন আমাদের জাতীয় অসুখে পরিণত হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি এমন যে, কেউ একজন চাইলেই এই বিষয়গুলোকে নাকচ করে দিতে পারছেন না। কারণ ক্ষেত্রবিশেষে দেখা গেছে, যা রটে তার কিছুটা সত্যও বটে। এই গুজবের গায়ে জোর হাওয়া লাগিয়ে দিয়েছে পত্র-পত্রিকার কিছু প্রতিবেদন। কোনো কোনো পত্রিকা তো লিখেই ফেলেছে, হুমায়ূনকে হত্যা করা হয়েছে। ঘাতক আর কেউ নয়, তার প্রিয়তমা স্ত্রী শাওন এবং ভক্ত প্রকাশক মাজহারুল।
আবার অনেকে এর মধ্যে আরও একটি দিক নিয়ে কথাবার্তা বলা শুরু করেছেন। সেই দিকটার নাম ‘দেয়াল’। দেয়াল হুমায়ূনের শেষ উপন্যাস। সেজন্য তারা এ উপন্যাসকে ঘিরে যেসব প্রশ্ন উঠছে তাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন ‘দেয়াল ষড়যন্ত্র’ নামে।
সামান্য কোনো তদন্তও কোথাও হয়নি। তদন্ত করার কথা এখনও কেউ বলেনি। হুমায়ূনের কোনো পোস্ট মর্টেমও হয়নি। বেলভ্যু হাসপাতালের ডিসচার্জ বা ডেথ সার্টিফিকেটও আমরা দেখিনি। তাই কী ঘটেছিল তা নিয়ে মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। সে সময়ও এখনও আসেনি। ডা. মিলারের মতে, শ্বাস-প্রশ্বাসে জটিলতা, হৃদযন্ত্রের বৈকল্য এবং কিডনির ক্রমব্যর্থতাতেই তার মৃত্যু হয়েছে। ক্যান্সারে তিনি মরেননি। তার রক্তে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়েছিল। এই ইনফেকশন হাসপাতাল থেকে হয়নি। হয়েছে বাসায়। খাদ্যের ভেতর দিয়ে। কোন খাদ্যে এই ইনফেকশনের জীবাণু ছিল তা তো তদন্ত ছাড়া বলা মুশকিল।
আমরা এসব সন্দেহ-সংশয় থেকে উত্থিত হাজার প্রশ্ন নিয়ে কথা বলতে চাই না। শুধু প্রশ্নগুলো উত্থাপন করতে চাই। যাতে সঠিক অনুসন্ধানে সত্য বেরিয়ে আসে। আমরাও উদ্ধার চাই অন্তরগত দহন ও চাপ থেকে। তবে আজ শুধু ‘দেয়াল’ নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন তুলে ধরতে চাই। যা জনমনে জন্ম দিয়েছে নানা জিজ্ঞাসা।
হুমায়ূন আহমেদের গ্রহণযোগ্যতা সর্বস্তরে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের এক অনন্য ভাষ্যকার। শিল্পী। বিশেষ দলের ডগমা তার গায়ে নেই। এজন্যই শেখ মুজিবকে কথাসাহিত্যে মহিমান্বিত করে রাখার জন্য বেছে নেয়া হলো তাকে। আবার তিনি যে শেখ মুজিবের কিছুটা ক্রিটিক তাও শাসকরা জানে, জানে বলেই তার হিমালয়স্পর্শী জনপ্রিয়তাকে শেখ মুজিবের নামে ভোটের কাজে ব্যবহারের দুষ্টু বুদ্ধি থেকেই শাসকরা দেয়াল নিয়ে মেতে ওঠে। সত্য-মিথ্যা আল্লাহ জানেন। আমরা শুধু প্রশ্নের বয়ান করতে পারি।
প্রশ্ন-১. দেয়াল যাতে তিনি প্রেসক্রিপশন মোতাবেক লেখেন, সেজন্য তাকে কৃতজ্ঞ করার জন্যই কি জাতিসংঘের টিমে অদ্ভুত এক পদ সৃষ্টি করে তাকে চাকরি দেয়া হয়েছিল?
প্রশ্ন-২. কিন্তু শেষ পর্যায়ে জানা গেল, সরকারের প্রত্যাশা মোতাবেক কাজ হয়নি। সরকারের কাছে এরকম তথ্য কে পরিবেশন করেছিল?
প্রশ্ন-৩. প্রত্যাশিত রাস্তায় হুমায়ূনকে আসতে বাধ্য করার জন্যই কি বিশেষ বিশেষ পত্রিকায় দেয়ালের অংশবিশেষ ছাপানোর ব্যবস্থা করা হয়?
প্রশ্ন-৪. পরিকল্পিতভাবেই কি সিন্ডিকেট দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছিল বিতর্ক?
প্রশ্ন-৫. পূর্বপরিকল্পিতভাবেই কি বিষয়টি উচ্চ আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়?
প্রশ্ন-৬. আদালত দেয়ালকে সংশোধন করে সত্যি ইতিহাস লেখার আদেশ দিল কেন? দেয়াল তো ইতিহাস নয়, দেয়াল উপন্যাস—তারপরও রেহাই পেল না কেন?
প্রশ্ন-৭. এই রকম অবস্থায় দেশে বেড়ানোর নাম করে আরেকটি জটিল অপারেশনের আগে তাকে দেশে নিয়ে আসা হলো কেন? কারা কারা এর পেছনে?
প্রশ্ন-৮. সরকারের কোন কোন পর্যায়ের লোক এসময় হুমায়ূনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন?
প্রশ্ন-৯. সরকারের কার কার কাছে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়? কে নিয়ে যান?
প্রশ্ন-১০. সরকারের কোনো পর্যায় থেকে কি তার ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল? সরকার তার জন্য কী কী করেছে তার ফিরিস্তি কি তাকে শোনানো হয়েছিল?
প্রশ্ন-১১. হুমায়ূন আহমেদ কী বলেছিলেন, তিনি কোনো কথাই বানিয়ে বলেননি। বাজারে এবং বিদগ্ধ মহলে যেসব গ্রন্থাদি চালু আছে তার ওপর ভিত্তি করেই তিনি দেয়াল লিখেছেন? অনুরাগ বা বিরাগবশত তিনি কিছু লেখেননি?
প্রশ্ন-১২. আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার পর তাকে আর স্নোয়ান ক্যাটেরিং মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো না কেন?
প্রশ্ন-১৩. কেন তাকে বেলভ্যুর মতো অবিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করা হলো?
প্রশ্ন-১৪. কেন তাকে অপারেশনের ৮ দিনের মাথায় তড়িঘড়ি করে বাসায় নিয়ে আসা হলো?
প্রশ্ন-১৫. হুমায়ূন আহমেদ হাসপাতালে থাকতেই হঠাত্ করে কাউকে না জানিয়ে আরেকটি বাসায় তাকে তোলা হলো কেন?
প্রশ্ন-১৬. হাসপাতাল ছাড়ার পরদিনই বাসায় পার্টি দিয়ে নানা ধরনের পানীয় ও গোস্ত কেন হুমায়ূনকে খাওয়ানো হলো?
প্রশ্ন-১৭. কারা হুমায়ূনকে খাইয়েছিলেন?
প্রশ্ন-১৮. সেদিনকার অতিথি কারা ছিলেন?
প্রশ্ন-১৯. চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়ার ঘটনা কি দুর্ঘটনা না পরিকল্পিত দুর্ঘটনা?
প্রশ্ন-২০. কেন দু’দিন চিকিত্সাহীনভাবে ঘরে ফেলে রাখা হলো তাকে?
প্রশ্ন-২১. কেন কারও কাছে হুমায়ূনের ডাক্তার ও হাসপাতালের টেলিফোন নাম্বার ছিল না?
প্রশ্ন-২২. কেন তাকে জ্যামাইকার একটি সাধারণ মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হলো?
প্রশ্ন-২৩. কেন চেয়ার-ঘটনা চেপে যাওয়া হয়েছিল?
প্রশ্ন-২৪. কেন নিউইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিকদের এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছিল?
প্রশ্ন-২৫. সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অতি আবেগ ও আগ্রহ প্রদর্শন কি একটি ধারাবাহিক কর্ম পরিকল্পনার ফল?
প্রশ্ন-২৬. দেয়ালের পাণ্ডুলিপি এখন কোথায়?
প্রশ্ন-২৭. হুমায়ূন কি তার গ্রন্থ সংশোধনের জন্য দিয়ে গিয়েছিলেন?
প্রশ্ন-২৮. হুমায়ূন বা তার পরিবারের সম্মতি ছাড়াই কি দেয়ালকে সংশোধন করার জন্য আওয়ামী বুদ্ধিজীবী ড. আনোয়ার হোসেনকে দেয়া হয়েছে?
প্রশ্ন-২৯. ড. আনোয়ার কি কোনো সৃজনশীল লেখক? হুমায়ূনের গ্রন্থ সংশোধনের তিনি কে?
প্রশ্ন-৩০. ড. আনোয়ার তো কর্নেল তাহেরের ভাই। কর্নেল তাহের সম্পর্কে হুমায়ূন পরিষ্কার বলে গেছেন, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু তিনি কোনো সুপারম্যান ছিলেন না। তিনি সেনাবাহিনীর নিরপরাধ অফিসার হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী। তিনি তো জীবন ভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনও করেছিলেন। এই মন্তব্য ড. আনোয়ার হোসেন জানেন। (্এরপর ৭-এর পৃষ্ঠায়)
তারপরও কেন তাকে বেছে নেয়া হলো।
প্রশ্ন-৩১. রবীন্দ্রনাথ বা নজরুলের বই সংশোধনের অধিকার ও যোগ্যতা কি কারও আছে? তাহলে হুমায়ূনের গ্রন্থ সংশোধন করবে কে এবং কোন যোগ্যতায়?
প্রশ্ন-৩২. সারা পৃথিবীর কোনো মিশনে শোকসভা হলো না। শুধু ভারতের কলকাতায় কেন?
প্রশ্ন-৩৩. যে কলকাতার কোনো চ্যানেল বা পত্রিকা হুমায়ূনের মতো যুগস্রষ্টা লেখকের ওপর একটা প্রতিবেদন প্রচার করার গরজ দেখায়নি, সেই কলকাতার লেখকদের ভাড়া করে আনা হলো কেন?
প্রশ্ন-৩৪. হুমায়ূন তো কলকাতার ধার ধারেননি। তাহলে তাদের দিয়ে সার্টিফিকেট আনানো কি হুমায়ূনকে গ্লোরিফাই করার জন্য, নাকি তাকে অপমান করার জন্য?
প্রশ্ন-৩৫. কলকাতাকে বেছে নেয়া কি একথা দেশবাসীকে বোঝানোর জন্য যে, ভারতের চ্যানেল ও পত্র-পত্রিকাগুলো যাই করুক, ভারত আমাদের ভালোবাসে? আর দ্যাখো সরকার হুমায়ূনকে নিয়ে কত কি করছে বোঝানোর জন্য?
প্রশ্ন-৩৬. বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের বাইরে, সেখানকার লেখক-কবিদের উদ্যোগে দশজনের একটা শোকসভাও তো হয়নি? তাহলে সেসব লেখককে ডেকে এনে দাওয়াত খাওয়ানো কেন?
প্রশ্ন-৩৭. হুমায়ূন পরিবারের বিরোধ যে দাফন নিয়ে তাও কি সরকারি পরিকল্পনার অংশ?
প্রশ্ন-৩৮. দাফন নিয়ে শাওন নিউইয়র্কে বললেন এক কথা। দেশে ফিরে বললেন অন্য কথা। কেন? আসলেই কি তার কাছে হুমায়ূনের অছিয়ত ছিল? নাকি পিতামাতার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এ কাজ করেছেন? নাকি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কোনো হাত আছে? কেন শাওন আদালতের ভয় দেখালেন? কেন শাওন মানবিক দিকটা উপেক্ষা করে হুমায়ূনের সন্তানদের ওপর ক্ষেপে গেলেন?
প্রশ্ন-৩৯. দাফন সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য হুমায়ূন আহমেদের সন্তানদের বাধ্য করার জন্য শাওন, শাওনের পিতা মোহাম্মদ আলী এবং মা তহুরা আলী এমপি সরকারি হস্তক্ষেপ চাইলেন কেন? কেন এই অশোভন কাজটি করা হলো?
প্রশ্ন-৪০. এই চাওয়াটাও কি শুধুই পারিবারিক কলহের জের? নাকি হুমায়ূন আহমেদের কবর নিয়ে ভাবিষ্যত্ বাণিজ্য লাভের পথ সুগম করা? নাকি এটাও সুদূরপ্রসারী অন্য কোনো পরিকল্পনার অংশ?
প্রশ্ন-৪১. নিউইয়র্কে হুমায়ূন আহমেদের অভিভাবক কারা ছিল? কে তাদের নিয়োগ দিয়েছিল?
প্রশ্ন-৪২. উত্তরাধিকার নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগাতে চেষ্টা করছে কারা?
প্রশ্ন-৪৩. কোন শক্তি কী অবাঞ্ছিত সঙ্কট তৈরি করে হুমায়ূনকে বাংলাদেশের মানুষের সম্মুখ থেকে সরাতে চাচ্ছে?
এরকম হাজার প্রশ্ন। আমি মাত্র ৪৩টি প্রশ্ন উত্থাপন করলাম আজ। ভবিষ্যতে যদি আমার দেশ জায়গা দেয় আর যদি বেঁচে থাকি, তাহলে হাজার প্রশ্ন নিয়েই একটা লেখা লিখতে চাই।
আমি আবারও বলি, গুলতেকিনকে খুশি করা বা শাওনকে বিব্রত করা আমার উদ্দেশ্য নয়। সারা জাতির সঙ্গে আমরাও চাইছি সত্যের সন্ধান।
শেষ কথা
বাংলা সাহিত্যে হুমায়ূনের স্থান চিরকালের জন্য নির্ধারিত হয়ে গেছে। তিনি যুগস্রষ্টা। তিনি অমর। দেহগতভাবে তিনি হয়তো কবরে ঘুমিয়ে আছেন, কিন্তু আত্মিকভাবে, আধ্যাত্মিকভাবে তিনি চিরকাল আমাদের অন্তরের অন্তস্থলে অক্ষয় আসনে সমাসীন থাকবেন। সেখান থেকে তাকে সরানোর ক্ষমতা কোনো শক্তির নেই, শাসকদের তো নেই-ই।
অতএব মনে রাখা ভালো, হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে পানি ঘোলা করার অর্থ বাংলাদেশের আত্মাকে পীড়ন করা। এই অপকর্ম থেকে সবাইকে বিরত থাকতে বলি জাতীয় স্বার্থেই।
আমাদের সামনে কোনো মডেল নেই। জাতি যাকেই মডেল হিসেবে দেখতে চেয়েছে, তাকেই হয় আমরা খুন করেছি অথবা গালি-গালাজ দিয়ে চেপে ধরেছি। এমন ঘটনারই তো অসহায় শিকার ড. ইউনূস।
কোনো গ্লানির কাদা যেন বাংলাদেশের স্বপ্নের সওদাগর, কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদকে মলিন করতে না পারে, সেদিকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, সেটা সরকার, বিরোধী দল এবং জনগণ—সব তরফ থেকেই, বিশেষভাবে পরিবারের তরফ থেকে।
লেখক : কবি আবদুল হাই শিকদার
হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যু : ঘরে-বাইরে হাজার প্রশ্ন