
সাপাহার উপজেলায় আনন্দ বিনোদনের জন্য তেমন কোন উলে¬খযোগ্য স্পট নেই। আছে প্রাকৃতিক মাছে ভরপুর প্রায় ১ হাজার একর জলার এক বিশাল ঐতিহ্যবাহী বিল। বিলটির ঐতিহাসিক আদিনাম হলো দামুর মাহিল বিল। শিরন্টি ইউপির জবাই গ্রামের পাশে অবস্থিত এ বিলের নামকরণ হয়েছে ঐতিহ্যবাহী জবাই বিল নামে। প্রাকৃতিক মাছে ভরপুর থাকে এই বিল। বিলে পাওয়া যায় বিশাল বিশাল বোয়াল, গজার,শৌল, চিতল, আইড, বাইম মাছ। এছাড়াও পাবদা, পুঁটি, টেংরা, খলিশা, চাপিলা, গাগরসহ প্রভৃতি মাছ।

বর্ষা এলেই প্রাকৃতিক মাছে ভরে ওঠে এই বিল। সরকারি হিসেব অনুযায়ী বিলের আয়তন ৯শ’৯৯ একর। তবে বর্ষাকালে এর আয়তন বেড়ে প্রায় ৩ হাজার একরে দাঁড়িয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এই বিলের জলসীমা দক্ষিনের পোরশা উপজেলার সীমানা পেরিয়ে চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলা এবং উত্তরে সাপাহার উপজেলার শেষ প্রান্ত ভারতের পশ্চিম দিনাজপুর জেলার তপন থানার সীমান্ত পর্যন্ত। বিলের মূল অংশ টুকু সাপাহার উপজেলার মধ্যে রয়েছে। জনশ্র“তি রয়েছে শীতকালে সুদুর সাইবেরিয়া থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে অথিতি পাখি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এই বিলে এসে আশ্রয় নিত। সে সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সৌখিন পাখি শিকারীরা এই বিলে পাখি শিকার করতে আসত।

নলখাগড়া, পদ্ম, সিঙ্গরা, কচুরী পানান সাথে সাথে মিলে মিশে প্রাকৃতিক মাছে বিলটি পরিপূর্ণ ছিল। বর্তমানে বিল এলাকায় গেলে মনেই হবে না যে এটি একটি ঐতিহ্যবাহী বিল। সংস্কারের অভাবে হাজার হাজার বছরের পুরোনো এই বিলে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা কাদা-বালি ও পাহাড় থেকে নামা মাটির ধ্বসে বিলটি এখন পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। কালের আবর্তের কোথায় হারিয়ে গেছে সেই কাঁটা যুক্ত কচুরী পানা, হারিয়ে গেছে সেই বিশাল ওজনের বোয়াল, চিতল, শৌল মাছ, হারিয়ে গেছে প্রকৃতিতে পাওয়া সেই পাবদা পুাঁট, টেংরা , খলিসা। মাত্র কয়েক মাস বিলে পর্যাপ্ত পানি থাকলেও খরা মৌসুমে বর্তমানে সারা বিল জুড়ে চলছে ধানের চাষ। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিলে এখন প্রকৃত জলার দুই তৃতীয়াংশ জমিতেই ধান চাষ করা হয়।

মাঝখানের যায়গায় একটু পানি নিয়ে জবাই বিলের পুরানো স্মৃতি বহন করছে মাত্র। ইতিমধ্যেই অনেকেই সরকারি ওই সম্পত্তির কিছু অংশের ভূয়া কাগজ তৈরি করে তা দখনে নিয়ে আছে। এই বিলের কারনে উপজেলার আইহাই, পাতাড়ী, ও শিরন্টি ইউনিয়নের মানুষ সদরের সাথে বিচ্ছিন্ন ছিল। অতিকষ্টে তাদের সদরে আসতে হত।
উপজেলাবাসি বিলটি পুন:সংস্কার করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সু-দৃষ্টিকামনা করেছে। উপজেলায় আনন্দ বিনোদনের তেমন কোন ব্যবস্থা না থাকায় উপজেলার মানুষ প্রতিবছর দুই ঈদে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসেন এই বিলের পাড়ে। একটু হলেও বিল পাড়ের আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে ভ্রমন পিয়াসীগন। বিলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রীজে দাঁড়ালে মনের অজান্তেই প্রকৃতির শান্তির ছোঁয়া লাগে মনে প্রাণে। উপজেলাবাসির দাবী বিলটি পু:সংস্কার করে তার নাব্যতাকে পুন:উদ্ধারের। বিলের ধারে দর্শনার্থীদের জন্য বিশ্রামাগার, বসার স্থান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হলে এই বিলটি হয়ে উঠত এলাকার আনন্দ বিনোদনের একমাত্র স্পট ও পর্যটন কেন্দ্র।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


