শাহবাগ এখন বাংলার ব্যাপক সম্ভাবনার কেন্দ্রে পরিণত হইছে। ম্যালা বছর ধইরা আমরা কুকুর-বিড়ালের মত জীবন-যাপন করতাছি; নানা নিপিড়ন মুখ বুইঝে সইতে সইতে আমাগো গায়ের চামড়া গন্ডারের মত মোটা হইয়া গেছে, চামড়ার নিচে থলথলে শুয়রের মত চর্বির মোটা স্তর জমছে; এখন এই উত্তাপে যদি সেই চর্বি গলে আর চামড়া পুইড়া যন্ত্রনার অনুভূতি সতেজ হয়—সেই ভরসায় আছি। তারপরেও শাহাবাগে মানুষের এই উত্তাপ এই ফোর্স, তার কেন্দ্রবিন্দুকে সঠিক লক্ষ্যে চালিত করতে না পারলে 'নতুন' কিছু হাসেল হওয়ার সম্ভবনা নাই। বরং যা কামিয়াব হইবো তারে সোজা বাংলায় কইতে গেলে কয়, ‘নতুন বোতলে পুরানা মদ।' মোদ্দাকথা, আমাগো বাস্তবের মাটিতে নাইমা আসা ছাড়া বিকল্প নাই।
ইতিমধ্যেই টের পাওয়া গেছে, এই সম্মিলিত উত্থানরে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার বিভিন্ন লোকজন লিড দেয়ার চেষ্টা করতাছে। আহমদ ছফা আমাদের দেখাইছেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ক্যামনে গণমানুষের কাছ থিকা বেহাত হইয়া বিশেষ শ্রেনী ও তাদের প্রতিনিধি দলের হাতে গেছে। এবং এই বিপ্লব যে বেহাত হইছে, সেইটা বগত বছরগুলোতে রাষ্ট্রের যে ভাবমূর্তি গইড়ে উঠছে তাতেই পরিস্কার। সুতরাং আমাগো বুঝতে হইবো কোনটা ‘নতুন’, আর কোনটাই বা নতুনের মোড়কে ‘পুরানা’।
আমরা যে পরিস্থিতির ভেতরে বাইচা আছি, তার কোনটাই বিচ্ছিন্ন না। সবগুলিই মাকসার জালের মত এটার সাথে আর একটা জড়াইয়া-প্যাচাইয়া আছে। আওয়ামিলীগ যেমত বিগত ৪ বছরের অধিক কাল ধইরা নিজেদের সকল ব্যর্থতা ও দূর্যোগ পরিস্থিতির আগুনে পানি দিতে যুদ্ধাপরাধী বিচারের প্রচেষ্টা বানচালের ঢোল নামক ষড়যন্ত্র আবিস্কার কইরা সজোরে পিটায়া রাজনীতি মাত করছে—এই ক্ষেত্রে শ্রমিকদের বেতন ভাতা বৃদ্ধির আন্দোলন থেকে শুরু করে পদ্মা সেতু, সোনালী ব্যাংকের কেলেংকারি, বিশ্বজিৎয়ের খুন, বিদ্যুৎ-তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ, তেল-নুন-চালের দাম বৃদ্ধিতে জনজীবনের বেদাশ পর্যন্ত সকলই না কি যুদ্ধাপরাধী বিচার বানচালের প্রচেষ্ট ছাড়া অন্য কিছু না, এই যে আওয়ামী প্রচার—তারে কইষা গোনায় নিতে হইবো। এইটা গোনায় না নিয়া আমরা যদি বাস্তবের মাটিতে না খাড়াই তো আমাগো আগুয়ান পদক্ষেপ টলোমলো হইবো, দিক ভ্রান্ত হইবো।
ধর্মিও রজানীতিরে প্রগতিশীলতার মাটি থিকা যেমত নানা মাত্রার নিপীড়নের স্বপক্ষে ঢাল স্বরুপ কইয়া চিহ্নিত করা হয় সেমত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিতেও—আমাগো অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি—নানান ঐহিতাসিক কি অনৈতিহাসিক উপাদানকে রাস্ট্রিয়-দলিয়-শ্রেনীগত নিপীড়নের স্বপক্ষে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করা হইতাছে। ভূত তো খালি ধর্মিও রাজনীতির মধ্যেই না; ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির মধ্যেও লুকাইয়া আছে। তাই ধর্ম-রাজনীতি-নিরপেক্ষতা; এইগুলির প্রত্যেকটারে নতুন কইরা বুঝা ও বিচার করার প্রয়োজন হাজির হইছে।
শাহবাগের গতিমূখকে মার্কমারা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রপাগন্ডা থিকা রক্ষার প্রচেষ্টা কোন আরাজনৈতিক প্রচেষ্টা না; বরং বিদ্যমান রাজনীতি প্রত্যাখান কইরা নয় রাজনীতি কায়েমের প্রচেষ্টাই। ইহা কোন মতেই একঝাক শহুরে তরুনের রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা নয়। এইটার ভিতরে খুব গোপনে নতুন রাজনৈতিক আকাঙ্খা সুপ্ত আছে। এইটা ঝলশাইয়া উঠতে পারে, এই ভয়ে ক্ষমতা ভাগা/ভাগি করা দলগুলো তৎপর। এতদিনে তারা সত্যি সত্যি পায়ের নিচে জমিন খুজে না পাইয়া বাতাসে খাবি খাইতাছে।
তো শাহবাগের সম্ভাবনার শলতে নয়া রাজনীতি আগুনে জ্বইলা উঠুক। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৯