somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কালিমার পতাকা উড়বেই ( তিহানের কথন) পর্ব-০১

১১ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৭:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রখর উত্তাপ। বৃষ্টিতো দূরে থাক, কোথায় এক টুকরো মেঘের ছিটে ফোঁটাও নেই। এমন ভয়াবয় গরমের সাথে বাংলাদেশের মানুষ পরিচিত না। তবুও রিকশাচালক মামা এক চিলতে হাসির সাথে হাতের গামছা দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে বললো, মামা ৫ টাকা বাড়ায়া দিয়েন। তেমন অবাক লাগলো না। কেননা, এতো বেশী গরম এবং সূর্যের প্রখরতার মধ্যেও সারাদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে হালকা বাতাস বইলেও মনে হচ্ছে যে, কেউ যেন আগুনের চুলায় ফুকঁ দিচ্ছে। আর সেই গরম বাতাস গা ঝলসিয়ে যাচ্ছে। লোকাল বাসে চাড়ার কথা ভাবতেই গা শিউরীয়ে ওঠে। উচ্চবিত্তরা হয়তো এসি গাড়ী-বাড়ীতে থাকতে থাকতে গরমের তীব্রতা অনুভব ই করতে পারে না। ফার্মগেট মোড়ে রিকশা থেকে নামতে নামতে বললাম, মামা ২০ টাকাই বেশী দিলাম, ঠান্ডা কিছু খেয়ে নিও। মুখে কিছু না বললেও তার চেহারায় আনন্দের প্রতিচ্ছবি দেখার মত ছিল।

তিহান আগে থেকেই আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। ওর বড় মামার একটা কোচিং সেন্টার রয়েছে। সেখানে একজন ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ের শিক্ষক লাগবে। তাই এত গরমের মধ্যেও এতদূর এসেছি। ছাত্র জীবনে টিউশনির পাশাপাশি একটা কোচিং সেন্টারের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলে সমস্যা কি? বরং হাত খরচের টাকাটা একটু বৃদ্ধি পায়। আর বেশী বেশী বই কেনা যায়। তিহান আমাকে দেখেই সালাম দিয়ে বললো, দ্রুত চল, এমনিতেই গরমে হাসফাস খাচ্ছি।

বেশ বড়সড় জায়গা নিয়েই কোচিং সেন্টার। পুরোটা এয়ারকন্ডিশন করা। রিসিপশনটা অনেক রকমের ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো। কক্ষটাও বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। দেখে মনে হচ্ছে তিহানের মামা খুবই গোছালো একজন মানুষ। যদিও এর আগে তার কথা অনেক শুনেছি। জেনারেল শিক্ষিত কিন্তু কোচিং সেন্টারের পাশেই আহলে হাদীস নামের একটা মসজিদে নিয়মিত জামাআতের সাথে নামাজ আদায় করে। আগে প্যান্ট শার্ট পড়লেও মসজিদে নিয়মিত যাতায়াতের দরূন লেবাস সূরত অনেক পরিবর্তন হয়েছে। পায়জামা-পাঞ্জাবী, টুপিই তার এখন ফেবারিট ড্রেস। ইসলামী বই পুস্তকে নাকি তার অগাধ জ্ঞান রয়েছে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সর্বদাই বই নিয়ে ব্যাস্ত থাকে। জাকির নায়েকের লেকচারগুলো তার সবচেয়ে প্রিয়। সেটা যাইহোক, এই গরমে এসির বাতাসে একটু আরাম করে বসেতে পেরেছি, এটাই অনেক।

আজ বন্ধের দিন। শুধু আমার জন্যই মামা অফিসে এসেছে। যেহেতু ইসলামীক স্টাডিজ বিভাগের টিচার নিয়োগ দিবে। তাই তিনি একটু সময় নিয়েই নাকি যাচাই করে শিক্ষক নিয়োগ দিবেন। যথা সময়ে ভিতরে গিয়ে সালাম দিয়ে বসলাম। পুরোটা রুম একটা লাইব্রেরী বললে ভুল হবে না। রুমের চারপাশেই নানান ধরনের বাংলা কিতাবের সমারোহ। বেশীর ভাগই তাওহীদ পাবলিকেশন্স এর বই। তিহানও পাশের চেয়ারে বসে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল।

মামা একটু কাশি দিয়ে বললো, তিহানের কাছ থেকে তোমার কথা শুনেছি। কিন্তু যেহেতু এটা একটা প্রতিষ্ঠান তাই কিছুটা ফরমালিটিজ রক্ষা করেই তোমাকে নিয়োগ দিতে হবে। এরপর মামা আমাকে অনেক কিছুই জিজ্ঞাসা করলেন, আমার চিন্তাভাবনা, ভবিষ্যতে কি করার ইচ্ছা, কতদিন কোচিং করাতে পারবো ইত্যাদী ইত্যাদী। কথার মঝে আমার চোখ আটকে গেল মামার পিছনে বইয়ের আলমারী উপরে লাগানো একটি স্টিকারের দিকে। সেখানে শুধু “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” লিখা রয়েছে। তার দুইটি তাক নিচে আরেকটি স্টিকার লাগানো, সেখানে রয়েছে “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”।

আমার ভ্র কুঁচকানো অবস্থা মামা লক্ষ্য করে বললেন, কি হলো? তিহান বুঝতে পেরে আমাকে চিমটি দিয়ে বুঝাতে চাইলো যে, এ ব্যাপারে যেন কোন কথা না বলি। তাহলে নির্ঘাত চাকরী হবে না। কিন্তু আমি নাছোড় বান্দা। বললাম, মামা উপরে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” আর দুই তাক নিচে “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” লিখা কেন? একসাথে কি লিখা থাকবে না? মামা একটু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, এটাইতো সঠিক নিয়ম। অথচ আমাদের দেশের মৌলভীরা একসাথে লিখে সর্বদা শিরকে লিপ্ত থাকে।

– কেমন শিরক? (একটু আগ্রহের ভাব নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম)
– তুমিতো মাদরাসার ছাত্র তাই বুঝাতে কষ্ট হবে না। যদি আমি পাশাপাশি লিখি তাহলে এখানে “আল্লাহ” মুবতাদা এবং মুহাম্মাদ নাম খবর হয়। আর মুবতাদা-খরব তো একই হয়ে যায়। মানে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর সমকক্ষ বুঝা যায়। তাই একসাথে লিখা যাবে না। আর তাছাড়া এই কালিমাতো কোন সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত নয়। যা আছে তা সব জাল হাদীস। (খুব জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব নিয়ে কথাগুলো বললেন)

এইবার আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম। তিহানের চেহারাও ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। ও হয়তো বুঝে ফেলেছে আর যা-ই হোক কালিমার ব্যাপারটা নিয়ে আমি কথা না বলে এখান থেকে উঠবো না। বরাবরই তিহান আমাকে চিমটি কাটতেছে। আমিও ওকে একটি চিমটি দিয়ে বুঝালাম, চিমটি কাটাকাটি বন্ধ কর, একটু শান্তিকে কথা বলতে দে আমাকে।

– মামা আমি কি আপনাকে এই বিষয়ে কিছু বলতে পারি? যদি কিছু মনে না করেন। (যেহেতু তিনি মুরুব্বী তাই একটু আদব রক্ষার জন্য কথাটা বললাম)
– অবশ্যই। কেন নয়?

এর মধ্যেই কেউ একজন চা নিয়ে দরজায় টোকা দিল। তিহান দরজায় গিয়ে চা নিয়ে আসলো। মামা আবার ডায়বেটিক রোগী। তিনি ড্রয়ার থেকে ফ্রি সুগার বের করে তার চায়ের মধ্যে দিতে দিতে আবার বললেন, চুপ কেন বলে যাও, চায়ের সাথে কথা জমবে বেশ।

– আপনি যে চায়ের মধ্যে ফ্রি সুগার দিলেন। এটা কেন দিলেন মামা?
– আরেহ এটাতো সবারই জানার কথা। ডায়াবেটিক রোগীরা চিনি বিহীন চা পান করে অথবা ফ্রি সুগার (যে চিনির কারণে ডায়াবেটিক এর কোন ক্ষতি হয় না) গ্রহণ করে।
– এ·াক্টলি রাইট মামা। তবে এই নিয়মটা কি আপনি নিজে নিজেই বানিয়েছেন নাকি ডাক্টার আপনার চেকআপের রিপোর্ট দেখে আপনাকে এভাবে চলতে বলেছে? (চায়ে চুমুক দিতে দিতে জিজ্ঞাসা করলাম)
– অফকোর্স ডক্টর বলেছে। কিন্তু তুমি কি যেন বলবে বলেছিলে। তা রেখে একথাগুলো কেন জিজ্ঞেস করছো? এগুলোতো একটা রূলস। ডাক্টার যে রুটিনে চলতে বলবে সেভাবেই চলতে হবে। এর পরিবর্তে নিজের রুটিনে চলতে গেলে তো আমি এই রোগের কারণে মারা যাব।

তিহান আগা মাথা কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। ঢ্যাব ঢ্যাব করে
তাকিয়ে শুধু চা পান করে যাচ্ছে।

– ইয়েস। এ·াক্টলি মামা। আপনি যেমন আপনার রোগের উপকারের জন্য ডক্টরের আইনের বাহিরে চলতে পারেন না। তেমনিভাবে যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তার রাসূলকে আমাদের হেদায়েতের জন্য প্রেরণ করেছেন, তিনিও আমাদের জন্য কিছু নিয়ম নীতি নির্ধারণ করেছেন। যদি আমরা নিজেদের মনের চরিতার্থের উদ্দেশ্যে এ নীতি মেনে না চলি, তাহলে আমাদের ঈমান, আমলের ক্ষতি তো হবেই। মৃত্যুর পরে জাহান্নামেও যেতে হবে।
– কথা ঠিক। কিন্তু এ কথা কেন? ( বিস্ময়ের দৃষ্টিতে মামা জিজ্ঞাসা করলো

তিহানের বিস্ময়ভরা মুখের দিকে একটু তাকিয়ে আবার বলতে লাগলাম,

– মহান আল্লাহ তায়ালাও আমাদের জন্য নির্দিষ্ট একটি কালিমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যদি আমরা সেই কালিমা আল্লাহ যেভাবে চেয়েছেন সেভাবে না বুঝে আমাদের নিজেদের মত করে বুঝে নেই তাহলে আমাদের ঈমান কি অদৌ থাকবে?

– বুঝলাম না । ( মামা এবার কৌতুহলী হয়ে বললেন)
– পবিত্র হাদীস শরীফে এই কালিমা এভাবে রয়েছে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” অর্থাৎ পবিত্র হাদীস শরীফেই মধ্যে আল্লাহ তায়ালা এবং তার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম মুবারক পাশাপাশিই রয়েছে। শুধুই কি তাই! এই কালিমা মহান আল্লাহ তায়ালা তার আরশে আযীম এর পায়ার সাথে ঠিক এভাবেই লিখে রেখেছেন। যেভাবে আল্লাহ এবং মুহাম্মাদ নাম পাশাপাশি লিখা রয়েছে। আর এটাই আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা। এটাই আইন, এটাই রুটিন, এভাবেই কালিমা পাঠ করে এবং লিখে ঈমানদারের পরিচয় দিতে হবে। নিজেদের বানানো কোন নিয়মে নয়। ঠিক ডক্টরের মত!

– মামা একটু হেসে বললেন, এগুলোতো জাল হাদীস। তবে আরশে আযীমের পায়ায় লিখা রয়েছে, এটাতো জানতাম না! একটু ক্লিয়ার করো তো? এটা কি সহীহ হাদীস?
তিহানের চা পান ইতিমধ্যেই শেষ। তাই হাত পা এদিক সেদিক ছড়াচ্ছে। কেননা ও নিজেই মামার সাথে একমত। মামার আর তিহানের বিশ্বাস একই রমক। তাই চুপ করে শুনছে।
চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বললাম, মামা সীহাহ সিত্তাহর বাহিরেও সহীহ হাদীস গ্রন্থ রয়েছে। সেটা কি জানা আছে আপনার।

– মামা হ্যা সূচক জবাব দিয়ে মাথা নাড়ালো।
– যে সকল হাদীস ইমাম বুখারী ও মুসলিম (র.) এর শর্তানুযায়ী সহীহ ছিল। কিন্তু তারা হয়তো কোন কারণে সেই হাদীসগুলো তাদের কিতাবে উল্লেখ করেন নাই । অধিকাংশ সেই হাদীসগুলোই বিশ্ব বিখ্যাত হাফিজুল হাদীস ইমাম হাকিম নিসাপুরী (র.) তার কিতাবে স্থান দেন। তার কিতাবের নাম হচ্ছে, “আল মুসতাদরাক আলাস সহীহাইন” । সেখানে তিনি একটি হাদীস শরীফ উল্লেখ করেছেন। হাদীসটির র্অথ হচ্ছে

***আমীরুল মু’মিনীন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন আদম আলাইহিস সালামের দ্বারা ভুল বশতঃ আল্লাহর নির্দেশ ভঙ্গ হলো। তখন আদম আলাইহিস সালাম তার মাথাকে আরশের দিকে উত্তোলন করলেন এবং বললেন, হে আমার প্রভু! আমি আপনার নিকট মুহাম্মাদ ﷺ এর উসিলা দিয়ে আরজ করছি, আপনি তার উসিলায় আমাকে ক্ষমা করুন। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি ওহী নাযিল করলেন, হে আদম! তুমি কিভাবে মুহাম্মাদ ﷺ কে চিনলে? আদম আলাইহিস সালাম বললেন, হে আমার প্রভু! নিশ্চয়ই যখন আপনি আমাকে সৃষ্টি করার পরে আমি আরশের দিকে আমার মাথাকে উচু করলাম এবং আমি আরশের পায়ার মধ্যে এ কথা লিখিত দেখতে পেলাম যে, لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ । তখন আমি এটা বুঝতে পারলাম যে, আপনি আপনার শ্রেষ্ঠ কোন বান্দা এর নাম ব্যাতীত অন্য কারো নাম আপনার নিজের নামের সাথে লিখে রাখবেন না। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি ওহী নাযিল করলেন, হে আদম! নিশ্চয়ই সে তোমার সন্তানদের মধ্যে সর্বশেষ নবী এবং তোমার সন্তানদের মধ্যে তার উম্মত হচ্ছে সর্বশেষ উম্মত। আর যদি আমি তাকে সৃষ্টি না করতাম, তাহলে তোমাকেও আমি সৃষ্টি করতাম না।

*** আল-মুসতাদরাক আলাস সহীহাইন গ্ধ ومن كتاب آيات رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم التي في دلائل النبوة গ্ধ استغفار آدم عليه السلام بحق محمد صلى الله عليه وآله وسلم গ্ধ হাদীস নং- ৪২২৮

শুধু ইমাম হাকেম ই নয়, “ইমাম ত্ববরানী (র.)” তার “মু’জামুল আওসাত্ব এবং মু’জামুস সগীর” এর মধ্যে, “ইমাম বায়হাক্বী (র.)” তার “দালায়েলুন নবুওয়াত” এর মধ্যে, “ইমাম দায়লামী (র.)” তার “মুসনাদিল ফেরদাউস” এর মধ্যে এবং “ইমাম ইবনে কাছীর (র.)” তার “আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া” এর মধ্যে সহীহ সনদে উল্লেখ করেছেন। আর তারা হাদীসখানা র্বণনা করার পরে হাদীসটকিে সহীহ বলছেনে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ টিরও অধিক কিতাবে এই হাদীস শরীফটি বণিত হয়েছে।

এরপরে ইমাম হাকমি নসিাপুরী (র.) আরো একটি হাদীস র্বণনা করনে:
– হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা ঈসা আলাইহিস সালাম এর প্রতি ওহী নাযিল করে বললেন, হে ঈসা তুমি মুহাম্মাদ ﷺ এর প্রতি ঈমান আন ও তোমার উম্মতদেরক আদেশ দাও তারা যেন আমার নবীকে দেখা মাত্র ঈমান আনে। কেননা, যদি মুহাম্মাদ ﷺ কে না সৃষ্টি করতাম তাহলে আমি আদম কেও সৃষ্টি করতাম না। আমি যদি মুহাম্মাদ ﷺ কে না সৃষ্টি করতাম তাহলে জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করতাম না। আর নিশ্চয়ই যখন আমি পানির উপরে আরশ সৃষ্টি করলাম তখন ইহা নড়াচড়া করছিল। অতঃপর আমি ইহার উপর লিখে দিলাম “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” ফলে আরশ থেমে গেল।

*** আল মুসতাদরাক আলাস সহীহাইন গ্ধ ইমাম হাকিম নিসাপুরী (র.) গ্ধ كتاب تواريخ المتقدمين من الأنبياء والمرسلين গ্ধ ومن كتاب آيات رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم التي في دلائل النبوة গ্ধ হাদীস নং- ৪২৮৬
এই হাদীসটি বর্ণনার পরে ইমাম হাকিম নিসাপুরী (র.) বলেন, هذا حديث صحيح الإسناد অর্থাৎ এই হাদীসের সনদ সহীহ।

ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী (র.) তার খাসায়েসুল কুবরা এবং আল্লামা নূরুদ্দিন আলী ইবনে আহমাদ সামহুদী (র.) তার ওয়াফাউল ওয়াফা এর মধ্যে বলেন, وأخرج الحاكم وصححه অর্থাৎ হাকিম হাদিসখানা বের করেছেন ও ইহাকে সহীহ বলে সমর্থন করেছেন।

এখানেই শেষ নয়। আপনি যেই হাদীসগুলো কে জাল বলছেন ওইগুলো মূলত হাসান থেকে দূর্বল সনদের হাদীস। তবে একাধিক দূর্বল সনদ একত্রিত হলে তা আর দূর্বল থাকে না। এরকম দূবল হাদীসের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয় মামা। আমার কাছে ১৮ টি দূবল সনদের হাদীস রয়েছে। যেখানে স্পষ্টভাবেই এই কালিমা একত্রে লিখা রয়েছে। ১৮ টি হাদীস একত্রিত হয়ে একটি শক্তিশালী ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত করে। আমার বাসায় আপনি কোন এক সময় তাশরীফ আনলে হয়তো কিতাব থেকে দেখাতো পারবো।

এতটুকু বলে আমি চুপ করলাম। তিহানের মুখে কোন কথা নেই। এসির ঠান্ডা হাওয়ার মধ্যেও মনে হচ্ছে বাহিরের গরম মামার কুঁচকানো কপালে এসে আঘাত করে ঘাম ঝড়াচ্ছে। আমি টিস্যু বাড়িয়ে দিয়ে বললাম মামা পানি দিব?

মামা একটি চাপা হাসি দিয়ে বললেন না না দরকার নেই। টিস্যু দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে মামা বলতে লাগলো, এসিটা হঠাৎ কমে গেল কেন? (সাথে সাথে এসির রিমোট হাতে নিয়ে ঠান্ডা আরো বাড়ালেন)। তিহান মামার অবস্থা দেখে মুচকি মুচকি হাসতেছে। এর মধ্যেই যোহরের আযান হলো। বললাম মামা আজকে উঠতে হবে। ৩ টার দিকে আবার টিউশনি রয়েছে। মামা বললো ঠিক আছে, তবে সাবধানে যেও। সালাম দিয়ে বিদায় নিয়ে বের হলাম।

বাইরে এসে তিহান বললো, এই কোচিং এ তোর আর চাকরী হবে না মনে হয়। আমি হাসি দিয়ে বললাম, আল্লাহ চাইলে এর থেকে ভালো কোথাও চাকরি হতে পারে।

১ মাস পরে অসময়ে হঠাৎ তিহানের কল। রিসিভ করে সালাম দিলাম

– সালামের প্রত্যুত্তর দিয়ে বললো, মামা আহলে হাদীস মসজিদে আর নামাজ পড়তে যায় না। তোকে সামনের মাসের ১ তারিখ থেকে কোচিং ক্লাস নিতে বলেছে।
– আলহামদু লিল্লাহ। যাক অবশেষে আল্লাহ তাকে সঠিক বুঝ দান করেছে।
– ঠিক আছে এখন রাখি পরে কথা হবে। (এই বলে মোবাইল কেটে দিল তিহান)

বিছানায় শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতে লাগলাম, মামা সত্যিই জ্ঞানী এবং পরহেজগার মানুষ। কেননা, একটি মিথ্যাই মানুষের আদালাত তথা বিশ্বাস যোগ্যতা নষ্ট হওয়ার জন্য যথেষ্ট। আর যদি তা হয় কালিমার মত গুরুত্বপূণ বিষয়। আর কালিমার ব্যাপারটাতো শুধু মিথ্যাই নয়, এটা ঈমানের সাথে সম্পৃক্ত। আবু জেহেলও আল্লাহকে এক হিসেবে মান্য করতো, কথায় কথায় আল্লাহর কসম করতো। কিন্তু সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মান্য করতো না। এটাইতো মুমিন এবং বেঈমানের মধ্যে প্রধাণ পাথক্য। হয়তো মামা সেটা বুঝেছেন।

– তাহমিদ হাসান

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১:৩৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×