somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্যাকটাসের প্রত্যাবর্তন!!!

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



:)অনেক দিন পর ব্লগে এলাম। খুব ভাল লাগছে। মনে হলো অনেকদিন পর আপন দেশে এলাম। পুরোনো বন্ধুদের অনেককেই দেখতে পাচ্ছি। আরে! নতুন আরও অনেক বন্ধুও দেখি এসেছে। সবাইকে আমার অনেক শুভকামনা!
ক্যাকটাস বুকে ধারণ করে আগে অনেক পোষ্ট দিয়েছিলাম। অনেকেই জানিয়েছিল তাদের সেগুলো ভাল লেগেছে। এই অধম তাই সেই কিঞ্চিত দুঃসাহসে আবার শুরু করছে ক্যাকটাস পর্ব। তবে আজ নতুন পোষ্ট দিচ্ছি না। পুরোনো বন্ধুদের মনে করিয়ে দেয়ার জন্য এবং নতুন বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানাতে আগের একটা পোষ্ট দিয়ে দিলামÑ


...মাঝে মাঝে পুরো আকাশটাই অভিমানে কেমন যেন নীল হয়ে যায়।
গাঢ় নীল?
ফ্যাকাশে নীল?
লালচে নীল?
কালচে নীল?
জানি না। যারা এতণে এটুকু পড়ে নীলের ব্যাপারে বিড়ম্বনায় পড়ে গেছেন সেই সব রং-বাদী লোকেদের আমার কিচ্ছু বলার নেই; কিন্তু ‘নীল’ শব্দটা যাদের মনের অজান্তে একটু করে হলেও দুঃখ, বেদনা কিংবা মন খারাপের খোঁচা দিয়ে গেছে তাদের বলছি... সেই সব নীল পিপাসুদের বলছি... আজ আমি আবার ক্যাকটাস হয়ে গেছি!
জানেন তো... কিছু দুঃখ আছে যাকে ভোলার মত দুঃখ আর হয় না। তেমন কিছু দুঃখ কাঁটা হয়ে বিধে আছে আমার সর্বাঙ্গে। আজ আরও একটা কাঁটা বাড়লো আমার ক্যাকটাস দেহে। আর তাতে... আমার পুরো আকাশটা আজ নীল হয়ে গেছে।
কাল কাস শেষে বাড়ি ফেরার জন্য নীলেেতর মোড়ে বাসের জন্য অপো করছিলাম। হতভাগা বাসটা যাও আসলো তাও লোকে লোকারণ্য। বাসটা চলে যেতেই আবারও পরের বাসের জন্য অপো। মধ্য-দুপুরের চিড়বিড়ে রোদ গায়ের সোয়েটারটাকে অসহনীয় করে তুলছিল। হাসফাস করতে করতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিÑ তখনই চোখে পড়লো বাচ্চাদুটো। ফ্রকপরা। একজনের লাল ফ্রক, অন্য জনের সাদা। আলথালু চেহারা। লাল ফ্রক পরা বাচ্চাটা বয়সে বড় হতে পারে। ওর ডান হাতেটা কব্জি থেকে উড়ে গেছে। বা হাতের কনুই থেকেই নেই! অন্য বাচ্চাটা সভয়ে লাল ফ্রক পরা বাচ্চাটার আধেক কাটা কুনুই জড়িয়ে রেখেছে। ভীতু ভীতু চোখে এর কাছে ওর কাছে ভিে চাইতে চাইতে ওরা এগিয়ে আসছিল। মায়াভরা দুটো বাচ্চা।
না না। ভুল বলেছি। ধনীদের বাচ্চারাই বাচ্চা হয়। সন্তান হয়, বেবি হয়, কিডস হয়। তাদের তফাৎ থাকে না। কিন্তু গরীবদের তফাৎ থাকে। গরীবের বাচ্চা মানেইÑ মেয়ে বাচ্চা আর ছেলে বাচ্চা। ছেলে বাচ্চারা টাকার ঝোলাÑ টাকা বয়। মেয়ে বাচ্চারা বোঝার ঝোলাÑ অসহায়তা বয়। জন্মের পর মুহূর্ত থেকেই বিভেদ, অবহেলা, নিরাপত্তাহীনতা, লজ্জা আর একটা ভাঁজভরা দেহ মিলে সমাজে নিরেট মেয়ে মানুষ হিসেবেই এরা পরিচিত হয়। সে হিসেবে বাচ্চাদুটো মেয়ে বাচ্চা।
আমার সামান্য দূরেই ভার্সিটির কয়েকটা ছেলে বাসের অপোয় দাঁড়িয়ে ছিল। বাচ্চা দুটো লোকজনের কাছে হাত পাততে পাততে ছেলেগুলোর কাছে এসে দাঁড়ালো। ভিে চাইলো। কে জানে? একঘেয়ে পড়াশুনা, ইন্টারনেট, ফেইসবুক, আড্ডা, মুভি, আপডেটেড রিংটোন এসবের কারণে ক্রমশ নিরস হয়ে যাওয়া ছেলেগুলো নতুন মজায় মেতে উঠলো বোধহয়। একটা ছেলে লাল ফ্রকপরা মেয়েটার মাথায় চাটি দিয়ে বলল,
এই নাম কী রে তোর?
রহিমা।
আর তোর নাম?
রহিমা নামের মেয়েটাই উত্তর দেয়Ñ হের নাম সালমা।
দাবড়ানি দেয় আরেকটা ছেলেÑ ওই? তুই বলিস ক্যান?
হে চোহে দ্যাহে না।
আরে দেখছস কাণ্ড! ওর চোখ দেখলে তো বোঝাই যায় না!
ভিরে নতুন ফন্দি বোধহয়Ñ হলুদ টি-শার্ট পরা ছেলেটা বলল।
এই বলতো আমার হাতে কয়টা আঙুল। পারলে টাকা দিব। দুই টাকা! পাক্কা!
হে চোহে দ্যাহে নাÑ আগের পিচ্চিটার আবারও উত্তর। বলার পর ওরা এবার আর দাঁড়ায় না। ওদের কাছ থেকে ভিরে আশা ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসে।
আফাগো দুইটা টাকা দেন। কী মনে করে সাথে সাথে আরেকটা বাক্যও যুক্ত করলোÑ হে চোহে দ্যাহে না।
কেন করলো কে জানে? হতে পারে অন্ধত্বের ব্যাপারটা বলে ওর কাটা হাতটার মতই করুণা পেতে চায়। কাটা হাত দেখা যাচ্ছে। অন্ধত্ব দেখা যাচ্ছে না।
জিজ্ঞেস করলামÑ ও কী জন্ম থেকেই অন্ধ?
জ্বে না। হাত কাটা মেয়েটা বলল। বুমা ফাটছিল। হের চুখে কী জানি কী হইল। হের পর থেইকা চুখে দ্যাহে না। আর আমার হাতও গ্যাছে।
কী! বোমা পড়েছিল তোমাদের গায়ে!!
না, বুমা পড়ে নাই। আমার ভইন আর আমি পথের পাশে একটা বল পাইছিলাম। বলটা কালা আর ময়লা ছেল। আমি পরিষ্কার করতে গেছি আর বল গ্যাছে ফাইট্টা। তহন বুঝলাম বুমাÑ বলতে বলতে মেয়েটা হেসে ফেলে। যেন হাত উড়ে যাওয়াটা কোন আসল ব্যাপার না, বলটা বোমা হয়ে ফেটে যাওয়াটাই বড় আশ্চর্যের। মেয়েটা খিল খিল করে হাসছে। কাটা কনুই আকড়ে ধরা অন্ধ মেয়েটা হাসছে না। কোন ধরণের বিকার নেই ওর মুখে। কে জানে? অন্ধকার জগতে হাসি কান্নার মত ব্যাপারগুলো থাকে না। সেখানে শুধুই অন্ধকার। অন্ধরা নিজেরাও একটা জীবন্ত অন্ধকার।

অনেক দিন পর আমার ভেতরের ক্যাকটাসটা নড়ে উঠলো। খচ করে আমার দেহে বিঁধে গেল একটা কাঁটা। এই ছোট্ট মেয়ে দুটো রাজনৈতিক রেষারেষির শিকার। এই একটা বোমাফাটায় কোন দলের কিছু যায় আসে নি। শুধু নষ্ট হয়েছে দুটো জীবন। অন্ধত্ব আর পঙ্গুতার অভিশাপ নিয়ে এরা কিছুদিন মা বাবার বোঝা হয়ে কাটাবে। কিন্তু তারপর? এদের বিয়ে হবে? এরা খেয়ে পরে বাঁচতে পারবে? কিভাবে?
আফা হে চোহে দ্যাহে না। আমাগো খিদা লাগছে।
আমি তাড়াতাড়ি ব্যাগের ভেতর থেকে ফটোকপির গাদা সরিয়ে একটা পাঁচ টাকার নোট তুলে আনলাম। টাকাটা পেয়েই কী খুশি মেয়ে! অন্ধটাকে ঠেলা দেয় সামনে এগোনোর জন্য। একটা হাসিহীন আর একটা হাসি মাখা মুখ ধীরে ধীরে পথের আড়ালে মিলিয়ে যায়। আর আমার জন্য রেখে যায় একটা কাঁটা।
আমার লেখা পড়ে কেউ কেউ দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলছেন। ওদের কষ্ট হয়তো গুটি কয়েককে ভাবাচ্ছে। কিন্তু তারপর... তারপর সেই ভাবনগুলোও হারিয়ে যাবে সবার বিস্মৃতির অতলে। লাল ফ্রক পরা মেয়েটার হাত গজাবে না। অন্ধ মেয়েটাও চোখে দেখবে না। বরং দলদলির বোমায় পরবর্তীতে আরও দুটো চোখ রং হারাবে।
বড় কষ্ট কষ্ট লাগে। বোমাটা ফাটার কারণে মেয়ে দুটোর যে তি হয়েছে না ফাটলেও তেমন কিছু অ-তি হতো না। হয়ত আর দশটা মেয়ের মতই হাত-পা-চোখ ওয়ালা মেয়ে হয়ে ওরা গার্মেন্টস বা যে কোন কারখানায় কাজ খুঁজে নিত। এক টুকরো আশ্রয়হীনতা আর জ্বলন্ত পাকস্থলীটা তাদের থেমে থাকতে দিত না। আর দশটা অসহায়ের মতই হয়ত দিনমজুর হত, ভিুক হত। কামলা হত। দেহপসারীণি হত। এই সব ছিন্নমূল শিশুদের কোন জীবন থাকে না। মেয়ে শিশুদের তো নয়ই। ওদের প্রাপ্তি কেবল করুণা ভরা একটা দীর্ঘশ্বাস।
বড় কান্না কান্না লাগে। ওদের দিকে হাত বাড়ানোর মত হাত আমাদের নেই। আমরা কেবলই কাঁদতে পারি। ওদের দেখে কেবল দুঃখই পেতে পারি। বিদ্ধ হই দুঃখ কাঁটায়। কিন্তু আমাদের কিচ্ছু করার থাকে না। আমরা সবাই একেকটা বোবা ক্যাকটাস। চিৎকার করে ওদের কথা আমরা কাউকে বলতে পারি না।

১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×