আমি মু্ক্তিযুদ্ধ দেখিনি। আমি ভাষা আন্দোলন দেখিনি। তবুও আমার ভেতরে আমি সেই সময়কার একধরণের অনুরণ টের পাই। এই কবিতাটি লেখার সময় তেমনই অনুরণ হচ্ছিল আমার প্রতিটি কোষে। রফিক সালাম বরকতসহ বেশ কিছু ছায়া ছায়া মুখ ভেসেছে আমার চোখের সামনে। আমি তাদের অনুভব করেছি। রাজপথে তাদের সেদিনের চলার শব্দ শুনতে পেয়েছি। আমি পরম শ্রদ্ধায় তাদের পা ছুঁয়ে একবার... শুধু একবার তাদের সালাম করতে চেয়েছি।
কিন্তু পারিনি! আধুনিকতার চর্চায় আর রেডিও স্টেশনগুলোর হাল ফ্যাশানের বিকৃত বাংলার কারণে বাংলা ভাষার বর্তমান দুরবস্থার কথা মনে হতেই আমি লজ্জায় মিশে যাচ্ছিলাম মাটিতে। আমি আপাদমস্তক লজ্জা আর নীরবতায় ম্লান হয়ে দূর থেকে সালাম জানিয়ে ধৃষ্টতা দেখিয়েছি।
হে ভাষা শহীদেরা...
আপনারা আমার ধৃষ্টতা ক্ষমা করুন। আপনাদের রক্তের মূল্য আমরা অধম বাঙালি দিতে পারিনি। পারিনি...
ভাষার ফুল ফুটুক বোধের বাগানে
এইমাত্র যে শিশুটি মা বলে ডেকে উঠলো
চমকে উঠলো সে নিজেই
আবার কি যে বলল ভুলে গেল পরক্ষণেই
অবুঝ শিশু! কিচ্ছু বোঝেনি!
আজ যে তার মুখে প্রথম বুলি ফুটেছে
ফুটেছে ভাষার ফুল!
এই ফুল ফুটবে বলেই
একদিন, বায়ান্নয়
প্ল্যাকার্ডগুলো ভরে গিয়েছিল
অক্ষরে অক্ষরে।
এই ফুল ফুটবে বলে
সেদিন তীব্র বেগে ছুটে এসেছিল
ষড়যন্ত্রী বুলেট
আর...
প্ল্যাকার্ড ধরে থাকা হাতগুলো
ভিজে গিয়েছিল রক্তের ভাষায়।
পলাশের লাল রঙ দেখে এখনও সে রক্ত দেখি
শিশুর মুখের প্রথম বুলিতে এখনও শুনি
ভাষাশহীদদের সেই উল্লসিত কণ্ঠস্বর
রাষ্টভাষা বাংলা চাই! রাষ্টভাষা বাংলা চাই!!
পেন্সিল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে
অ আ ক খ লেখার অদম্য চেষ্টায়
আমি দেখতে পাই
অক্ষর নয়
যেন একটি একটি করে ফুল ফুটছে ক্রমাগত।
হে শিশু!
তোমাকে বলছি,
যে বুলি ফুটেছে আজ তোমার মুখে
তাকে প্রাণপণে আকড়ে ধরো
ও বুলি যেন লোকঠকানো বুলি না হয়
রাজনৈতিক কোন নির্লজ্জ বুলি না হয়
পাপ বাড়ানোর কোন মিথ্যে বুলি না হয়
এ বুলি...
ভাষার ফুল হয়ে ফুটুক তোমার বোধের বাগানে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



