somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জায়গা কোথায়? ইতিহাসের আস্তাকুঁড় নাকি স্বর্ণখচিত অধ্যায়?

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাঙ্গণের শুরু কিন্তু ১৯০৫ থেকেই। এই বঙ্গপ্রদেশ ভাগ হওয়ার নিয়তি তখন থেকেই ছিল। যদিও বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়েছিল ১৯১১ তে। তবে এই রদ এখনো যদি টিকে থাকত, আবারও হয়তো বঙ্গভঙ্গের জন্য আমাদের আন্দোলন করতে হতো। কেননা ওপার বাংলার কৃষ্টি-কালচার, মন-মানসিকতার সাথে আমাদের যায়না। আর শোষণের ব্যাপারটা তো মূখ্য.. সেটা না বললেও হয়।

যাই হোক, ১৯৪৭ এর আগে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান বলে আলাদা কিছু ছিলনা। তখন এই গোটা এলাকার সবাই "ভারতীয়" ছিল। লাহোর প্রস্তাবকে সম্ভবত কোন এক সাংবাদিকের "পাকিস্তান প্রস্তাব" হিসেবে আখ্যায়িত করার পরেই কিন্তু পাকিস্তান নামটির প্রবর্তন।
র‌্যাডক্লিফ সাহেবের দ্বারা সীমান্ত নির্ধারণের পরে ভারত এবং পাকিস্তান আলাদা হলো। মূলত ১৯৪০-৪৬ সালে ইংরেজদের উস্কানিতে লাগা হিন্দু-মুসলমানের ভয়াবহ দাঙ্গার কথা বিবেচনা করেই ধর্মের হিসাবেই ভারত-পাকিস্তানকে আলাদা করা হয়েছিল। ধর্ম যুদ্ধের ডামাডোলে এ.কে.ফজলুল হকের লাহোর প্রস্তাবের "রাষ্ট্রসমূহ" বাদ দিয়ে শুধু "রাষ্ট্র" প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই পূর্ব-বাংলা যেহেতু মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা, তাই এটাকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের মাঝে ঢুকিয়ে দিয়ে পূর্ব-পাকিস্তান বানিয়ে দেওয়া হলো।

পূর্ব-বাংলার "বাংলা" রিপ্লেস করে "পাকিস্তান" করে দেওয়া হলো। তাও মেনে নিলাম আমরা। তারা আমাদের থেকে অনেক দূরে থাকায় তাদের কোন কিছুর সাথেই আমাদের মিলত না। কিন্তু আমরা তো তখন পাকিস্তানের একটা অংশই ছিলাম। শোষণ আর অত্যাচারের কারণে আর টিকতে পারলাম না। পরে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলাম। এখন যেটা আছে, পুরোটাতে যেসব মানুষ থাকে, বসবাস করে, তাদের সবার মন-মানসিকতা অনেকটাই একইরকম।

এখনকার যে বাংলাদেশ, তাতে কোন নির্দিষ্ট এলাকার মানুষ চাইলে অন্যায়ভাবে অন্য কোন এলাকার মানুষজনকে ওভাবে শোষণ করতে পারবেনা। এজন্য ইতিহাসের এত এত যুদ্ধ এবং এত ভাগ হয়েছে, সেরকম কিন্তু এখন আর বাংলাদেশের মাঝে হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা সবাই এক। এক মাটি, এক দেশ, বাংলাদেশ।

যাই হোক, এই যে এতবার ভারত উপমহাদেশের ভাঙ্গন, তার কারণ কিন্তু একটাই—শুধু একটাই--- "শোষণ"।
আমরা কিন্তু এখনো শোষিত হচ্ছি। শোষণের হাত থেকে এই অঞ্চলের মানুষজনের নিস্তার সহজে নেই। তবে এবার অন্য কোন অঞ্চলের মানুষদের দ্বারা নয়। নিজেদের মানুষদের দ্বারাই আমরা শোষিত হচ্ছি। ঘরের শত্রু বিভীষণ। আজ আমাদের দেশটা আমাদের থেকেও আমাদের নেই। দেশটা হয়ে গেছে রাজনীতিবিদদের খেলার মাঠ। সরকারি-বিরোধী সব দল আজ জনগণ নিয়ে খেলছে। জনগণের লাশের সংখ্যা হিসাব করে তারা বুঝতে এবং বুঝাতে চাইতেসে আন্দোলনের তীব্রতা।

আজ পর্যটন হোটেল ব্যবসায়ীরা পথের ফকির হবার দশা, সাধারণ দোকানদার, যাদের এই ব্যবসাতেই রোজগার, তারা তাদের দোকান খুলতে পারেনা। তার পরিবার চালাবে কি করে? এখন অবস্থা এমন হয়েছে যে, কিছুদিন পরে তাদের কর্মচারীদেরকে মাস শেষে টাকা না দিতে পেরে তাদের সবাইকে আত্মগোপন করতে হবে!
যারা অটোরিক্সা, সিএনজি, বাস চালিয়ে দিনাতিপাত করে, তারা তাদের গাড়ি বের করতে পারেনা। ভয়ে ভয়ে একদিন বের করলে লাশ হয়ে বাসায় ফেরৎ আসতে হয়। দিনমজুরেরা ক্ষেপ মারার সুযোগ পায়না। হোটেল মালিক থেকে শুরু করে সাধারণ মুদি দোকানদার সবাই আজ তাদের বাড়াবাড়ির জন্য মাথা চাপড়াচ্ছে।
টানা হরতাল আর অবরোধ। মানুষ মারা যাচ্ছে একের পর এক। কারও কোন নিরাপত্তা নেই। চাকরির তাগিদে বাসে উঠে নিশ্চিন্তে কেউ যেতে পারেনা। তা হরতাল-অবরোধ হোক, আর নাই বা হোক.. মানুষ আজ মরবেই!
ভোট কেন্দ্র হবে বলে ছোট ছোট শিশুদের স্কুল বোমা মেরে উড়িয়ে দিচ্ছে.. এভাবে আর কতদিন??

আবার অন্যদিকে বাংলাদেশের আমজনতাকে অন্ধ ভেবে করা নাটকের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ৬০০ কোটি টাকা খরচ হবে। এই নির্বাচন তো আজ হোক-- কাল হোক, বাতিল হবেই। যদি আবার নতুন নির্বাচন হয়, তাহলে জোর করে জনগণের এই টাকাগুলো খরচ করানোর দায়ভার কে নিবে?? এই টাকা তো আমাদের সাধারণ জনগণের, তাই না??
যেখানে টাকার অভাবে এলাকার প্রয়োজনীয় একটা সেতু করা যায়না, রাস্তার সংস্কার করা যায়না, সেখানে এমনি এমনি ৬০০ কোটি টাকা আমাদের চোখের সামনে অপচয় হবে???

তাছাড়া, যখন ৮-১০ জন মন্ত্রী এমপি'র দেয়া হলফনামা অনুসারে দেখি তাদের মোট বৈধ জমির পরিমাণ ঢাকার ১০ ভাগের ১ ভাগ, (অবৈধ জমির হিসাব না হয় বাদই দিলাম) তখন কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলি। দেশের দুর্নীতি নাকি একেবারে কমে গেছে। তাহলে এই মন্ত্রী-এমপিরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হলো কি করে?? আমরা জনগণ কি ভূষি খাই??
এরশাদের স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি পাবার পর আমরা স্বৈরগণতন্ত্রে পদার্পণ করেছি, যে গণতন্ত্র আমাদের অধিকার ছিল, তা আমরা পাইনা। কেননা, এখানে জনগণের কথামত কোন কিছু হয়না। যদি কিছু হয়, তা ওই ক্ষমতায় থাকা লোকদের চাহিদা মতই হয়। প্রতি নির্বাচনের আগে অন্তত নির্বাচনী প্রার্থীরা এসে এলাকার জনগণের পা চেটে যায়, তারপরে জেতার পরে পেছনে সমানে লাথি মারে। এবার পা না চেটেই পেছনে লাথি মারার সুযোগ পেয়ে গেল।
থাক গে ওসব কথা… তা, রাজনীতির নাম বিকিয়ে প্রতিদিন যে হারে মানুষ মারা হচ্ছে, (নিরীহ হোক বা নাশকতাকারী যাই বলে হোক, মানুষ তো মরছে) ইতিহাস কিন্তু তার সাক্ষী হয়ে থাকবে। জোর করে কোন কিছু করা যায়না। তাই জোর করে কেউ ক্ষমতায় থাকতেও পারবেনা, আবার যেতেও পারবেনা। যতই এখন সিমপ্যাথি অর্জনের চেষ্টা করা হউক না কেন, নিকট ভবিষ্যতেই এদের কাউকে ক্ষমা করা হবেনা। মুসলীম লীগের মত দলও একসময় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, তাই এই দু’টো দল বাংলাদেশের অস্তিত্ব যতদিন আছে, ততদিন থাকবে, এমন ধারণা করা ঠিক হবেনা। জনগণ যদি একবার সত্যিকার অর্থে নিজেদের অধিকারের জন্য জেগে উঠে, তাহলে এরাও ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।

……এভাবে আর চলতে পারেনা। সম্ভবত এভাবে যদি আর এক-দুই মাস চলে, তাহলে হয়তো সর্বস্তরের জনগণের বাসা থেকে বের হয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা। মানুষ যখন সর্বহারা হয়ে যাবে, তখন তার হারানোর কিছু থাকবেনা। রাজনৈতিক দলের জন্য জনগণ নয়, জনগণের জন্যই রাজনৈতিক দলের সৃষ্টি হয়। তাই কাউকে সাপোর্ট করার কিছু নেই। যদি একদম নতুন কোন দলও ক্ষমতায় আসে, তাতেও আমজনতার কোন ক্ষতি নেই। কেননা তখন আমজনতার আর হারাবার কিছু থাকবেনা। ক্ষতি যা হবার, তখন তা শুধু রাজনীতিকদেরই হবে। এখন তাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে স্থান পেতে চায় নাকি স্বর্ণখচিত অধ্যায়ে নিজেদের রাখতে চায়!!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:০১
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×