somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবোল-তাবোল -৬ (একজন অ-আস্তিকের জীবনচক্র!)

২৯ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অষ্টপ্রহরের যাপিত জীবনের গল্প!

সারাটি রাত ধরে মিটমিটিয়ে নিঃস্বার্থ আলো বিলিয়েছে যে তারার দল, সেসব একটু আগেই নিভে গিয়েছে। দিগন্তের পূব দিকে আলোর রেখা। আড়মোড়া ভাঙছে প্রকৃতি; পুরো রাতের বিশ্রামের পর ধীরে ধীরে জেগে উঠছে সমস্ত চরাচর। আসন্ন প্রভাতের আগমনধ্বনি ঐকতান তুলেছে সদ্য ঘুম ভাঙা পাখিদের কলতানে। দূর-দূরান্ত হতে ভেসে আসছে মুয়াযযিনের উদাত্ত আহবান; ছড়িয়ে পড়ছে ইথারে ইথারে।

সৌম্য দর্শন বৃদ্ধ তিনি-পক্ককেশ; হেঁটে চলেছেন। শেষ রাতের প্রার্থনা (তাহাজ্জুদ) শেষে প্রভাতের উপাসনার (ফযর) সে উদাত্ত আহবান তাঁকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে মসজিদের পানে; অনিবার্য নিয়তির মত। তাঁর অশক্ত স্নেহমাখা হাতে ধরা এক ছোট্ট শিশু। সম্পর্কে পৌত্র; স্বভাবে তাঁর খুব ন্যাওটা। একে অসম্ভব ভালবাসেন তিনি। জানেন, এদিকে প্রভাত হয়ে এলেও , ওদিকে তাঁর সন্ধ্যা ঘনিয়েছে! গোধুলীর রঙ মিলিয়ে যাবার আগেই স্বীয় সুদীর্ঘ জীবনের অর্জিত শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও চেতনার উত্তরাধিকার তিনি ছড়িয়ে দিয়ে যেতে চান আপন রক্তের মাঝে; পরবর্তী প্রজন্ম যেন বয়ে চলে অতীতের সংস্কার।

এক সময় সত্যি সত্যি রাত্রি ঘনায়। পিতামহ চলে যান দূর অজানার দেশে। আর এদিকে শিশু বেড়ে ওঠে; প্রচলিত অর্থে বড় হয়। চারপাশের পরিবেশ তাকে আত্ম প্রতিকৃতি গড়তে সাহায্য করে। সে দেখে, ঠেকে, শেখে এবং অর্জন করে। প্রয়াত পিতামহের প্রদত্ত শিক্ষা তার ভেতরে কাজ করে চলে। কিন্তু, প্রচলিত কলুষিত সমাজ তো সে রাস্তা ধরে চলে না! পিতা-পিতৃব্যের মাঝে সে খুঁজে পায় না পিতামহের ছায়া। সে অবাক বিস্ময়ে দেখতে পায়, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তার আজন্ম লালিত তত্ত্ব, তার সংস্কারের বিপরীত স্রোত ধাবমান! এক অসম্ভব টানাপোড়েনে তার অন্তর্জগৎ বিপ্লবের পদধ্বনি শোনা জেতে থাকে।

অনেক দিনের বিশুষ্ক রোদ্দুর যেমনি করে ফাটল ধরিয়ে দেয় মাঠের মাঝে; তেমনি করেই যেন ফাটল ধরে যায় তার বিশ্বাসে-সংস্কারে। তৃষিত নয়নে সে দেখতে চায় এক পশলা বৃষ্টি; ভিজে যেতে চায় প্রবল বর্ষণে। ছাতী ফেটে যাবার উপক্রম হলে কয়েক বিন্দু জল ও হয়ে ওঠে সোনার চেয়ে দামী!

এমনি সময়ে একটি নতুন তত্ত্ব, নতুন সংস্কারের মুখোমুখি হয় সে। এ মতবাদ অভিনব; এতটাই আলোকোজ্জ্বল যে চোখে ধাঁধা লেগে যায়। সব মানুষকেই এক সমান করে দিতে চায় – এ তত্ত্ব। জাগতিক জীবনের ইন্দ্রিয় বহির্ভূত জগতকে এটি স্বীকার করে না।

তৃষ্ণার্ত যুবকের পিপাসা মেটে। এবার, সে নিজেকে এতোদিনের সংস্কার ও বিশ্বাসের বিপরীত বৃতে দাঁড়িয়ে থাকা একজন নতুন মানুষ হিসেবে আবিষ্কার করে। যুদ্ধ শুরু হয় নতুন মাত্রায় (Dimension)। আশৈশবের লালিত চেতনা-বিশ্বাস তাকে এক স্থানে স্থির করতে চায় আর নতুন নতুন যুক্তির ঢলে বারেবারে টলমল হয়ে ওঠে সে স্থিতি। এমতাবস্থায়, কেউ কেউ হয়ে ওঠেন বিনয়ী আর বাকি বেশীর ভাগই ঔদ্ধত্য-অমার্জিত রূপ নিয়ে মাথা জাগিয়ে তোলেন। আর গুটি কতক তলিয়ে যায় ভন্ডামির চরম অতলে!

এদিকে সময় কিন্তু ঠিকই তার কাজ করে চলে। সে অমোঘ গতিতে বয়ে চলে; নির্মম কষাঘাতে টেনে নিয়ে যায় আপন রথ। শিশু যেমনি করে যুবকে পরিণত হয়েছিল , যুবক ও তেমনি করে বৃধে রূপান্তরিত হন । অন্তরের যুক্তি-বিশ্বাসের দোলাচলে পেরিয়ে যায় তাঁর সময়। কেউ কেউ জয়ী হন। হয়ে ওঠেন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞানের সাধক।
আর অন্যেরা? "সব জেনেছি, সব বুঝেছি"র স্তরে থেকে যান। আপন অহমের (Ego) সুউচ্চ পাহাড়ে চড়ে নিঃসঙ্গতায় কাটে দিন। যুক্তি-কুযুক্তির ফানুস উড়িয়ে সময় ফুরিয়ে আসে। তারপর, একদিন চলে যান অজানার দেশে যেখানে ইতিমধ্যেই পাড়ি দিয়েছেন আপন পিতা-পিতামহ।
ছেড়ে যাওয়া পরবর্তী প্রজন্ম সমাজে প্রচলিত পন্থাতেই তাঁর সৎকার করে। সারা জীবন ধরে যে সংস্কারের বিরোধীতা তিনি করেছেন, সে সংস্কার অনুসারেই তাঁর অন্ত্যেষ্টিকৃয়া-কর্ম সম্পন্ন হয়। পারলৌকিক মুক্তির আশায় প্রদত্ত দক্ষিণা-দানে বেতনভূক পুরোহিতের অন্ন সংস্থান হয়! নিকট জনেরা কেউ কেউ দুঃখ করে; অনেকেই আবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে! আর রেখে যাওয়া পরবর্তী প্রজন্ম আপন অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানে আপন পথের সন্ধান করতে থাকে।

এদিকে যথারীতি এগিয়ে যায় পৃথিবীর দিন। এতো বয়স হলো বুড়ীর; তবু তার রহস্য করার স্বভাবটা গেলো না! কার জন্য যে সে কোন বাঁকে কোন চমক (Surprise) নিয়ে বসে আছে, তা একমাত্র সেই জানে!


বিঃদ্রঃ উপরের লেখাটুকুর পুরোটাই লেখকের অনুর্বর (গ্রীষ্মের অতি-উত্তাপে সিদ্ধ) মস্তিষ্কের কল্পনা মাত্র! কারো ব্যক্তিগত জীবনী বলে ভুল করলে লেখক দায়-দায়িত্ব নেবেন না! এর পর ও কেউ দুঃখ পেয়ে থাকলে লেখকের ক্ষমাপ্রার্থনা রইলো তার প্রতি।
আবোল তাবোল-৫ (বৌদি)
আবোল তাবোল-৪ (লুঙ্গী)
আবোল তাবোল-৩ (নাস্তিকতা)
আবোল তাবোল-২ (নববর্ষ)
আবোল তাবোল-১ (নোয়াখাইল্লা)
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×