যাই হোক, এরকম একটা খোলামেলা পরিবেশেই বেড়ে উঠেছি আমি, বিগত দুই দশক এখানেই শিকড় গেড়ে শাখা-প্রশাখা মেলে বসেছি।
যে জন্য এত কথা। কলোনীর স্কুলে আমার পড়া হয় নি, আমি পড়েছি একটু দূরে আরেকটা স্কুলে। কিন্তু, সমবয়েসি বন্ধু-বান্ধব কিংবা খেলার সাথী সব কলোনীতেই। এখানেই একটা ছেলের সাথে পরিচয় হলো, খুব ভাল ছাত্র, ভীষন ছটফটে, অনর্গল বকতে পারে আর বলার সময় ডানে-বামে না দেখেই মন্তব্য ছুঁড়ে দেয়; আমাদের স্থানীয় ভাষায় যাকে বলে "এক্সট্রা কাবিল"! স্বভাবতইঃ আমার পছন্দ হল না। এর মধ্যে নাইনে পড়াকালীন সময়ে ছোকরা বিএনসিসি হতে শ্রীলংকা ট্যুর মেরে দিল। তখনো পর্যন্ত আমার একবারই চিটাগাঙের বাইরে যাওয়া হয়েছে, তাও ঢাকা পর্যন্ত। সুতরাং, সে বয়সে একটু হিংসা করাটাও অস্বাভাবিক ছিলো না।
মেট্রিক দেবার আগে আগে কেমন করে যেন সামান্য খাতির হয়ে গেল। ততদিনে কপাল দোষে আমার গায়ে ভালো ছাত্রের তক্মা সেঁটে গিয়েছে আর ও তো ছোট্ট বেলা থেকেই ভালো ছাত্র। মজা হলো, মেট্রিক পরীক্ষার সময়। দু'জনে দুই স্কুলের হলেও পরীক্ষা কেন্দ্র একই। আমাদের দুই স্কুলের সিট পড়েছে একই রুমে এবং আমি আর ঐ বেচারা সামনাসামনি বেঞ্চে! আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে পরীক্ষা খারাপ দিই নি। আদানের চেয়ে প্রদান বেশী হওয়াতে ওর চেয়ে সামান্য বেশী নম্বর নিয়ে পাস করেছিলাম।
এরপর দু'জনেই চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হলাম; ভাগ্যগুণে একই সেকশনে। সে দু'বছর কাটিয়েছিলাম আর কী! প্রাইভেটের নাম দিয়ে ভোর বেলা বাসা থেকে বেরুতাম; কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এদিক-ওদিক ঘুরে আর আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরতাম সন্ধ্যার পর। হ্যাঁ, আমি আমার কথা বলছি। ঐ বেচারা তো জাস্ট টাইম, নো কমপ্লেইন। নিয়ম করে ক্লাস, নিয়ম করে পড়া। ফলাফল ও হাতে-নাতে পেয়েছিল। আমার চেয়ে অনেক বেশী নম্বর নিয়ে ইন্টার পাস।
এরপর শুরু ভর্তি যুদ্ধ। ততদিনে 'সামান্য খাতির', 'জিগিরি দোস্তি'তে পরিণত হয়েছে। বিকাল কে বিকাল ক্রিকেট খেলে আর আড্ডা দিয়ে পার করছি। পরবর্তীতে, সিলেটে দুজনে একই বিভাগে চান্স পেয়েও যে কোন কারণেই হোক, আমি রয়ে গেলাম চিটাগাঙেই আর ও চলে গেলো সিলেটে।
তখনো মোবাইলের যুগ পুরোপুরিভাবে জাঁকিয়ে বসে নি। আমাদের চিঠি-পত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ হোত। শাবিপ্রবি তে না পড়েও ওদের ক্লাসের প্রায় সবার কথা আমার জানা হয়ে গেলো। একইভাবে, আমার বন্ধুরা ও হয়ে গেলো ওর বন্ধু।
একসময়, দু'জনেই পাস করে বেরুলাম। দুম করে ওর ঢাকায় চাকরি হয়ে গেল। আমি বেকার বসে রইলাম। তাই বলে, বন্ধুতায় ছেদ পড়েনি।
আজ যখন সম্পর্কটাকে বিশ্লেষন করি তখন কয়েকটি মজার ব্যাপার চোখে পড়ে-
১. জীবনের বেশীরভাগ বিষয়েই আমাদের মতের অমিল রয়েছে!
২. যেসব বিষয়ে মতের মিল রয়েছে, সেসব বিষয়ে ও আমাদের কর্মপন্থা ভিন্ন!
৩. এত মতের অমিল থাকা সত্ত্বেও আমাদের মাঝে বিগত এক দশকে কোন ঝগড়া হয় নি!
৪. বন্ধু-বান্ধবকে আমি সাধারণতঃ তুই-তোকারি করি। এই ভদ্রলোকের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। দুই পক্ষেই "তুমি-তুমি" সম্পর্ক বিদ্যমান।
তারপরেও, শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে, এখনো বন্ধুই আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো আশা করি!
যাইহোক, উপসংহারে আসি। এতক্ষন যে বেচারার গুষ্ঠি উদ্ধার করলাম, সে আর কেউই নয়, ব্লগের সনামধন্য ছোটগল্পকার আহমেদ রাকিব ।
আজকে বেচারার জন্মদিন, সাতাশে পা' দিল।
প্রিয় রাকিব, শুভ জন্মদিন।
ব্লগীয় রীতি অনুযায়ী কেক-কুক খাইতাম চাই।
বয়সও তো কম হলো না; চাকরির বয়স ও দুই পেরিয়ে গেল। তার উপর পরিবারের বড় ছেলে। বুঝতেই পারছ, তোমার মায়ের এখন একটা হেল্পিং হ্যান্ড(Helping Hand) দরকার।