somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধুর জন্মদিনে কিঞ্চিৎ স্মৃতিচারণ। ('স্মৃতি তুমি বেদানা' টাইপ পোষ্ট)

২৩ শে মে, ২০০৯ রাত ৩:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চিটাগাঙের পতেঙ্গায় যেখানে, যে কলোনীতে আমার বাসা, সেখানে অনেকগুলো পরিবারের বাস। সব পরিবারের কর্তাই একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। কলোনীতেই আছে একটা স্কুল। মোটামুটি সব পরিবারের সন্তানেরাই সে স্কুলে পড়ে। ফলে, সবার মাঝেই বেশ একটা হৃদ্যতাপূর্ণ ভাব। দু'টো খেলার মাঠ, দু'টো পুকুর, শ'দেড়েক নারকেল গাছ মিলিয়ে বেশ একটা স্বর্গীয় পরিবেশ। তার উপর ছাদে দাঁড়ালেই সাগর দেখা যায়, হেঁটে গেলে আধাঘন্টার পথ। এ সব কথা শোনালে, অনেকেই অবিশ্বাস করে বসে আর যারা বিশ্বাস করে তাদের চোখে হিংসা খেলা করে। "এত সুন্দর, এত ভাল!"বলতে নেই, শুনতে খারাপ লাগে না। কলোনীর জন্য গর্ব হয়।

যাই হোক, এরকম একটা খোলামেলা পরিবেশেই বেড়ে উঠেছি আমি, বিগত দুই দশক এখানেই শিকড় গেড়ে শাখা-প্রশাখা মেলে বসেছি।

যে জন্য এত কথা। কলোনীর স্কুলে আমার পড়া হয় নি, আমি পড়েছি একটু দূরে আরেকটা স্কুলে। কিন্তু, সমবয়েসি বন্ধু-বান্ধব কিংবা খেলার সাথী সব কলোনীতেই। এখানেই একটা ছেলের সাথে পরিচয় হলো, খুব ভাল ছাত্র, ভীষন ছটফটে, অনর্গল বকতে পারে আর বলার সময় ডানে-বামে না দেখেই মন্তব্য ছুঁড়ে দেয়; আমাদের স্থানীয় ভাষায় যাকে বলে "এক্সট্রা কাবিল"! স্বভাবতইঃ আমার পছন্দ হল না। এর মধ্যে নাইনে পড়াকালীন সময়ে ছোকরা বিএনসিসি হতে শ্রীলংকা ট্যুর মেরে দিল। তখনো পর্যন্ত আমার একবারই চিটাগাঙের বাইরে যাওয়া হয়েছে, তাও ঢাকা পর্যন্ত। সুতরাং, সে বয়সে একটু হিংসা করাটাও অস্বাভাবিক ছিলো না।

মেট্রিক দেবার আগে আগে কেমন করে যেন সামান্য খাতির হয়ে গেল। ততদিনে কপাল দোষে আমার গায়ে ভালো ছাত্রের তক্‌মা সেঁটে গিয়েছে আর ও তো ছোট্ট বেলা থেকেই ভালো ছাত্র। মজা হলো, মেট্রিক পরীক্ষার সময়। দু'জনে দুই স্কুলের হলেও পরীক্ষা কেন্দ্র একই। আমাদের দুই স্কুলের সিট পড়েছে একই রুমে এবং আমি আর ঐ বেচারা সামনাসামনি বেঞ্চে! আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে পরীক্ষা খারাপ দিই নি। আদানের চেয়ে প্রদান বেশী হওয়াতে ওর চেয়ে সামান্য বেশী নম্বর নিয়ে পাস করেছিলাম।

এরপর দু'জনেই চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হলাম; ভাগ্যগুণে একই সেকশনে। সে দু'বছর কাটিয়েছিলাম আর কী! প্রাইভেটের নাম দিয়ে ভোর বেলা বাসা থেকে বেরুতাম; কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এদিক-ওদিক ঘুরে আর আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরতাম সন্ধ্যার পর। হ্যাঁ, আমি আমার কথা বলছি। ঐ বেচারা তো জাস্ট টাইম, নো কমপ্লেইন। নিয়ম করে ক্লাস, নিয়ম করে পড়া। ফলাফল ও হাতে-নাতে পেয়েছিল। আমার চেয়ে অনেক বেশী নম্বর নিয়ে ইন্টার পাস।

এরপর শুরু ভর্তি যুদ্ধ। ততদিনে 'সামান্য খাতির', 'জিগিরি দোস্তি'তে পরিণত হয়েছে। বিকাল কে বিকাল ক্রিকেট খেলে আর আড্ডা দিয়ে পার করছি। পরবর্তীতে, সিলেটে দুজনে একই বিভাগে চান্স পেয়েও যে কোন কারণেই হোক, আমি রয়ে গেলাম চিটাগাঙেই আর ও চলে গেলো সিলেটে।

তখনো মোবাইলের যুগ পুরোপুরিভাবে জাঁকিয়ে বসে নি। আমাদের চিঠি-পত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ হোত। শাবিপ্রবি তে না পড়েও ওদের ক্লাসের প্রায় সবার কথা আমার জানা হয়ে গেলো। একইভাবে, আমার বন্ধুরা ও হয়ে গেলো ওর বন্ধু।

একসময়, দু'জনেই পাস করে বেরুলাম। দুম করে ওর ঢাকায় চাকরি হয়ে গেল। আমি বেকার বসে রইলাম। তাই বলে, বন্ধুতায় ছেদ পড়েনি।

আজ যখন সম্পর্কটাকে বিশ্লেষন করি তখন কয়েকটি মজার ব্যাপার চোখে পড়ে-
১. জীবনের বেশীরভাগ বিষয়েই আমাদের মতের অমিল রয়েছে!
২. যেসব বিষয়ে মতের মিল রয়েছে, সেসব বিষয়ে ও আমাদের কর্মপন্থা ভিন্ন!
৩. এত মতের অমিল থাকা সত্ত্বেও আমাদের মাঝে বিগত এক দশকে কোন ঝগড়া হয় নি!
৪. বন্ধু-বান্ধবকে আমি সাধারণতঃ তুই-তোকারি করি। এই ভদ্রলোকের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। দুই পক্ষেই "তুমি-তুমি" সম্পর্ক বিদ্যমান।

তারপরেও, শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে, এখনো বন্ধুই আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো আশা করি!


যাইহোক, উপসংহারে আসি। এতক্ষন যে বেচারার গুষ্ঠি উদ্ধার করলাম, সে আর কেউই নয়, ব্লগের সনামধন্য ছোটগল্পকার আহমেদ রাকিব
আজকে বেচারার জন্মদিন, সাতাশে পা' দিল।

প্রিয় রাকিব, শুভ জন্মদিন।
ব্লগীয় রীতি অনুযায়ী কেক-কুক খাইতাম চাই।
বয়সও তো কম হলো না; চাকরির বয়স ও দুই পেরিয়ে গেল। তার উপর পরিবারের বড় ছেলে। বুঝতেই পারছ, তোমার মায়ের এখন একটা হেল্পিং হ্যান্ড(Helping Hand) দরকার।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০০৯ রাত ৮:২১
৩০টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×