somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগে বিবাহ-পাগলের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাইয়াছে! আতংক লইয়া ঘুমাইতে গেলাম!

১৩ ই জুলাই, ২০০৯ ভোর ৬:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত্রিকালে সমস্ত চরাচর যেই মুহুর্তে আরামের ঘুম ঘুমাইয়াছে, আমি সেই মুহূর্তেও জাগিয়া ছিলাম। সঙ্গী হিসাবে কতিপয় মুখচেনা ব্লগার ও জাগিয়াছিলেন ব্লগীয় তাড়নায়। কিন্তু, সেই তাড়নার চাইতেও আমার নিকট বেশী ছিল দাপ্তরিক তাড়না । অর্থাৎ কীনা অফিসেই নিশিবাসপূর্বক ইহাকে পাহারা প্রদানে বাধ্য হইয়াছিলাম। ভদ্রজনের ভাষায় ইহাকে অবশ্য "নাইট শিফট" বলা হইয়া থাকে!

যাহা হউক, মূল প্রসঙ্গে চলিয়া আসি। গতকল্য, সমস্ত দিন ব্যাপীয়া ব্লগভর্তি বিবাহপ্রত্যাশী ব্লগারদিগের অত্যধিক আনাগোনা পরিলক্ষিত হইয়াছে। উহাদিগের ভারী ভারী দীর্ঘশ্বাস আর হাহুতাশে আকাশে-বাতাসে হায় হায় রব উঠিয়ায়ছিল। স্বীয় কপালে বিবাহ নামক দিল্লীকা লাড্ডু না জুটিল তো পরোয়া নাহি, অপরের বিবাহের দাওয়াত না পাইয়া এই হাহুতাশ পায় রোনাজারির পর্যায়ে উন্নীত হইতে যাইতে ছিল।
কতিপয় উদাহরণ প্রদান আবশ্যক মনে করিতেছি।

হঠাৎ করিয়া বিবাহের শখ জাগিলো, যেই কারণে... পোষ্টে জনৈক আরাফাত তাঁহার বন্ধু ত ও স এর বিবাহ হইয়া গিয়াছে বলিয়া নিজেরও ঐ শখ জাগিয়াছে বলিয়া অক্ষম আক্রোশে দাঁত চিবায়াছেন!
অপরের বেদনার কথা জানিলে শুনিয়াছি নিজের বেদনা প্রশমিত হয়। আমারও এখন সেই দশা। সপ্তাহ দুয়েক আগে প্রানের বন্ধুকে (যাঁহার সাথে দোস্তীর ইহা ২১ তম বৎসর চলিতেছে!) তাঁহার মন পছন্দ বালিকার সহিত বিবাহ করাইয়াছি। বিবাহ করিয়াই বন্ধু চক্ষের উপর দিয়া কক্সবাজারে হানিমুন করিতে গেল। বলিয়া গেল এখন হইতে আর আমাদের সহিত কোথাও বেড়াইতে যাইবে না। বউ একা থাকিবে যে! বুকের বেদনা বুকেই চাপা দিলাম। কিন্তু, আরেক বন্ধু যে কীনা মাস ছয়েক পূর্বে কোরবানী হইয়াছে সে যখন সস্ত্রীক, এই সদ্য বিবাহিত দম্পতিসকাশে পিজা হাটে বসিয়া খোশগল্পে মাতিয়া ওঠে এবং স্ত্রীদিগকে দিয়া ফোন করাইয়া ৩২ পাটি দন্ত বিকশিত করিয়া কহে, "এই আসরে তোমারে বড়ই মিস করিতেছি", তখন আমার কেবলই ফাঁসি খাইতে মন চায়!

অপর একখানা পোষ্টে সনামধন্য ব্লগার অনন্ত দিগন্ত বলিয়াছেন, বন্ধু খায় বৌ এর ঝাড়ি আর আমি খাই টাটকা চেরী। ছোট্ট একখানা ঘটনাকে যে কত প্রকারের বিবিধ রস মাখাইয়া পরিবেশন সম্ভব, তাহা ইঁহার নিকট হইতে শিখিয়াছি।
বৌয়ের ঝাড়ির কথা শুনিয়া আরেক বেচারা বন্ধুবরের কথা ইয়াদ হইয়া গেল। তখন, বন্ধুর বিবাহের এক বৎসর পূর্ণ হইয়াছে। এই উপলক্ষ্যে তাহারা কক্সবাজারে ঘুরিতে গেল। ফিরিবার পথে চিটাগাঙে বৌয়ের খালার বাসায় বৌকে রাখিয়া সোজা আমার গৃহে উপস্থিত। দুই ঘন্টার ম্যারাথন আড্ডা হইয়াছিল, পুরাণ দিনগুলার স্মৃতিচারণ জমিয়া উঠিয়াছে, এমনি সময় বন্ধুর মুঠোফোনে যমদূতের ডাক! "কোথায় তুমি? এত দেরী কেন? জলদি আইস।" বন্ধুর কাচুমাচু চেহারা দেখিয়া আমি ফোনটা হাতে নিয়া বালিকাকে অভয় দিলাম যে, উহার পবত্র আমানত আমার জিম্মাতেই রহিয়াছে, চিটাগাঙ আসিয়া বখাটেদিগের পাল্লায় পড়ে নাই! কথা দিতে হইল যে, বন্ধুকে তাড়াতাড়ি ছাড়িয়া দিব। ফোন রাখিবার পরে, বন্ধু কেবলই একখান বাক্য বলিল আর তাহা হইল, "জীবনেও বিবাহের পথ মাড়াইবার অপচেষ্টা করিও না!"

অনন্তের উক্ত পোষ্ট পাঠ করিয়া নাঈম নামক আরেক সুপরিচিত ব্লগার অস্থির হইয়া উঠিলেন এবং অনন্ত দিগন্ত-র চেরী খাওয়ার কাহিনী পইড়া আফসুসিত হইবার পরে একটি আফসুসমিশ্রিত পুষ্ট- শিরোনাম দিয়া একখানা বোমা পোষ্ট ছাড়িলেন। উল্লেখ্য, ফল-ফলাদির প্রতি আমার ব্যক্তিগত আসক্তি শূণ্যের কোঠায় হইবার কারনে স্বভাবতঃই আমি চেরী ফলটিকে চিনিতে পারিলাম না! শুনিয়াছি বড়ই সুস্বাদু এই ফল!

ইতিমধ্যে অসুস্থতার কারনে গৃহ হইতে বাহির হইতে অক্ষম মাতা-পিতা-ভ্রাতার অতীব স্নেহের ব্লগার ইউটার্নের (আমি উনাকে শ্রদ্ধেয় আম্মাজান বলিয়া ডাকিতে অভ্যস্থ) উদাসী স্বপ্নের বিয়া খাইতে মন চায় মাগার দাওয়াত পাইলাম না দেখে খুব বোরহানী খেতে মনে চাইছে....... মার্কা আরেক খান উদাসী পোষ্ট ছাড়িলেন! ইহার পশ্চাতের কাহিনী হইলো এই যে, প্রিয় ব্লগার উদাসী এর একটু আগেই বলিয়া গিয়াছিলেন, বিয়া খাইতে মন চায় মাগার দাওয়াত পাইলাম না!
দাওয়াতের কথা শুনিয়া আবার নিজের কাহিনী মনে আসিয়া গেল। দুই না-লায়েক বন্ধুর কোরবানী হইবার দুঃসংবাদ তো পূর্বেই দিয়াছি। বাকি যে তিনজন অর্বাচীন লইয়া এখন চলিতেছি, উহারা ও কোরবানী হইবার নিমিত্তে মনস্থির করিয়াছে এবং সেই সব চলতি বৎসরের মধ্যেই সমাপ্ত হইবে! কী করিবে? প্রেম করিয়াছে, এখন বিবাহের হ্যাপা তো সামাল দিতেই হইবে! বেচারা! আমার প্রেম ও নাই, বিবাহের হাঙ্গামা ও নাই। থাকিল কেবল উহাদের বিবাহে সক্রিয় অংশগ্রহন! এই জনকল্যানমুখী বিষয়ে আমি সর্বদাই অগ্রে অবস্থান করি। অতএব, যাঁহারা বিবাহের দাওয়াতের অভাবে ভুগিতেছেন, তাঁহারা অতিসত্বর যোগাযোগ করুন (আগে আসিলে আগে পাইবেন ভিত্তিতে)। তিন খানা নিশ্চিত বিবাহের দাওয়াত এবং সেই সাথে গায়ে হলুদ ও বৌ-ভাত ফ্রী.........

সবশেষে, চরমরূপে টাশকিত হইবার একখান কাহিনী দিয়া ইতি টানিব। বৎসর পাঁচেক পুর্বের কথা। ভার্সিটিতে তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলাম। এমনি সময়ে এক কুক্ষনে স্বীয় কলেজ চিটাগাঙ কলেজে যাইতে হইল। প্যারেডের কোণায় এক শুশ্রুমন্ডিত লককে দেখিয়া কেমন জানি, পরিচিত ঠেকিতে ছিল। ভাল করিয়া পর্যবেক্ষন করিয়া নিশ্চিত হইলাম, ইহা আর কেউ নহে, জহির, এই কলেজেই একত্রে অধ্যয়নরত ছিলাম। সেও চিনিল। কুশলাদি শেষে কলেজে পদার্পনের হেতু জিজ্ঞাসা করিলাম। জানিতে পারিলাম, সেইদিন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আর তাহার বৌ(!) সেইখানে পরীক্ষার্থিনী! আমি ভাবিলাম, আজিকালের বালকের চক্ষু-লজ্জা উঠিয়া গিয়াছে‌ প্রেমিকাকে বৌ বলিয়া সম্বোধন করিতেছে। যাহা হউক, কিয়ৎক্ষন পরে উহাকে উশখুশ করিতে দেখিয়া পুনরায় হেতু জানিতে চাহিলাম। উত্তরে জানিলাম, "কন্যাটিকে উহার মাতামহীর নিকট রাখিয়া আসিয়াছি, বড়ই চিন্তা হইতেছে!" আমি বাক্যহারা হইবার প্রাক্কালে সম্পুরক প্রশ্ন করিলাম, "উহার বয়স কত? " উত্তর আসিল, "নয় মাস"! আমি প্রথমে হতবাক, সবশেষে নির্বাক হইয়া গিয়াছিলাম। মাস ছয়েক পূর্বে জানিতে পারিয়াছি, উক্ত অর্বাচীন আরেকখানা কন্যা সন্তানের গর্বিত পিতা হইয়াছে! আমাদিগের কী হইবে!!

অনেক কথা বলিলাম যাহার সার কথা এই যে, জীবনের আসল রূপ বুঝিতে বিবাহের বিকল্প নাই। তবে, উহা যত দেরীতে সমাধা হইবে, ততই জীবন উপভোগ্য হইয়া উঠিবে!
ঘুমাইতে গেলাম!
শুভ সকাল!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০০৯ ভোর ৬:৫৩
৪৩টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×