somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিজিটাল রঙ্গ -লেখকঃ জন রাসেল, ইহা একটি সু লেখা।

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জনপ্রিয় অভিনেত্রী তারানা হালিম নিজ গৃহে বসে টিভি দেখছিলেন। তাঁর টিভিটি ৩২ ইঞ্চি ওয়ালটন কালার টিভি। ছবি কাঁচের মত পরিস্কার। দেশপ্রেম দেখানোর জন্যই তিনি এই টিভিটি কিনেছেন। নাহলে দেশী পণ্য কোন পাগলে কিনবে? সরকারী দলে থাকলে দেশপ্রেম টুকটাক দেখানো লাগে। তবে তাঁর ফ্রিজটি এলজি। এলজির লোগো মুছে সেখানে তিনি ওয়ালটনের লোগো লাগিয়েছেন। দেশপ্রেম ফ্রিজে নয়, লোগোতে।
তারানা হালিম দেশের পরিস্থিতি জানার জন্য বিটিভি ধরলেন, সংবাদ দেখবেন। সংবাদ শুরু হল। যিনি সংবাদ পাঠ করছেন তাঁর চেহারায় কোন আবেগ নেই, মুখের চামড়া শক্ত হয়ে আছে। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে পেছন থেকে কেউ তাঁর মাথায় একে-৪৭ ঠেকিয়ে রেখেছে। পাথরের মত মুখ নিয়ে তিনি সংবাদ পাঠ শুরু করলেন। তারচেয়েও আশ্চর্যের বিষয়, শুধু তাঁর ঠোট নড়ছে, চোখের মণি স্থির হয়ে আছে। তারানা হালিম চমকে উঠলেন।
বিটিভির সংবাদে তেমন কোন বিরতি থাকেনা। পুরো আধাঘন্টা সংবাদ দেখে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যাপার জানা গেল। যা যা জানা গেল – দেশের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক এবং থমথমে। জংগিরা জায়গায় জায়গায় পটকা নিয়ে বসে আছে। বিএনপি নেত্রী লন্ডন থেকে ফেরার পথে ব্যাগে করে কিছু পিংক কালার পটকা এনেছেন। পটকার বিস্ফোরণ ঘটাটা এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র। এই বিস্ফোরণ অনলাইনেও ঘটতে পারে। এতকিছুর পরেও দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বুলেট ট্রেনে করে। পটকা দিয়ে দেশের অগ্রগতি থামিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। দেশে শান্তি ‘চুইয়া চুইয়া’ পড়ছে।
সংবাদ শেষে একটি নাটক শুরু হল। নাটকটি আদিম আমলের বিটিভির নাটক। এই নাটকে তিনি নিজেও আছেন। বিটিভির নাটকে দুঃখ ছাড়া কিছু থাকেনা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খালি হাউমাউ কান্না। তারানা হালিম নিজের কান্না দেখে মুগ্ধ হলেন নিজেই। নিজেকেই নিজে অটোগ্রাফ দিতে ইচ্ছে করলো।
নাটকে সিরিয়াস মোমেন্ট এসে গেছে। নায়ক রবি সিমে পাঁচ টাকা রিচার্জ করে গোল্ডেন কয়েন পেয়েছে এবং সেটি দিয়ে আংটি বানিয়ে নায়িকাকে প্রস্তাব দিচ্ছে। তারানা হালিম মুগ্ধ হয়ে নাটক দেখছেন এমন সময় তাঁর দরজায় কে যেন টোকা দিল। তার মেজাজ সপ্তমে উঠলো। এমন ভয়াবহ সময়ে যে দরজায় টোকা দেয় তাকে বস্তায় ভরে তুরাগ নদীতে নিয়ে ফেলা উচিত।
গেট খুলে দেখলেন তাঁর সেক্রেটারি ফজলু এসেছে লুংগি পড়ে। লুংগিওয়ালা লোক তিনি দেখতে পারেন না। লাথি দিতে ইচ্ছা করে। তাঁর ধারণা ব্যাপারটা ফজলুও জানে। জেনেও ইচ্ছে করেই কাজটা করে। লোকটার গিড়ায় গিড়ায় শয়তানি।
ফজলু বলল, ম্যাডাম আপনি নাকি ফেসবুক বন্ধ রেখেছেন?
‘অবশ্যই বন্ধ রেখেছি। একটু আগে বিভিটির সংবাদ দেখনি? সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে দেশের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। সরকারে চেষ্টায় দেশটা কোনমতে টিকে আছে, নরমালী টেকার কথা না।’
‘ফেসবুক বন্ধ রাখার কারণেই ম্যাডাম দেশের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। ফেসবুক বাদে অন্য সব কিছু স্বাভাবিকই আছে।
‘ফেসবুকে কারা থাকে জান তুমি কিছু? সব জংগী। ভালো মানুষ একটাও নেই। জংগীবাদের মূল চাষাবাদ হয় ফেসবুকে। এই জিনিস বন্ধ থাকাই ভালো। দেশ ও জাতির প্রয়োজনেই এটি বন্ধ আছে।’
‘কিন্তু ম্যাডাম আমি তো দেখলাম পোলাপান সব ফেসবুকেই বসে আছে। এমনকি আমাদের কিছু মন্ত্রী এমপিও দেখলাম ফেসবুকে।’
‘বল কী! এটা কীভাবে হচ্ছে?’
‘ভিপিএন দিয়ে।’
‘জিনিসটা কী?’
‘আমি সঠিক জানিনা। সম্ভবত জংগীদের বিশেষ নেটওয়ার্ক। রাউটার দিয়ে ওয়াইফাই করে দিয়েছে মনে হয়। দেশে আইএস জঙ্গী তো এখন রাস্তার মোড়ে মোড়ে। সাধারণ মানুষও এখন এই নেটওয়ার্ক দিয়ে ফেসবুক চালাচ্ছে।’
‘তুমি এখন যাও।’
ফজলু চলে গেল। তারানা হালিম দেশের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তিনি তাঁর দলের সর্বকনিষ্ঠ এমপি জুনাইদ আহমেদ পলককে ফোন দিলেন। বুড়াগুলোকে ফোন দিয়ে লাভ নেই। এরা প্রযুক্তি কিছুই বুঝেনা, খামোকা চিল্লায়। জুনায়েদ আহমেদ পলক ফোনটি রিসিভ করলেন।
‘স্লামালিকুম হালিম আপা।’
‘পলক, তুমি এখন কোথায়?’
‘ফেসবুকে আপা। সেলফি আপলোড দিচ্ছি। ছবিটা মাত্র ফটোশপে ইডিট করলাম। পঞ্চাশ হাজার লাইক আশা করছি।’
‘তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।’
‘ফেসবুকে আসেন আপা।’
‘ফেসবুক তো বন্ধ।’
‘ফেসবুক তো আমারও বন্ধ। তবে সিষ্টেম আছে ঢুকার। সফটওয়্যার লাগলে বলেন। ডাউনলোড লিংক দেই।’
‘ছি ছি তুমি শেষ পর্যন্ত চোরাই পথে ঢুকলে?’
‘আপা নীতির কথা মিডিয়ার সামনে বলবেন। এইখানে বইলা লাভ নাই। সব মন্ত্রী এম্পিই ফেসবুক চালাইতাসে। একটু আগে বাকের ভাই এর সাথে ফেসবুকে চ্যাট হইল। অতি অমায়িক লোক। উনি একটা গানও শোনাইলেন। হাওয়া মে উড়তা যায়ে......। উনার নিজের কম্পোজিশান। কী জন্য ফোন দিসেন তাড়াতাড়ি বলেন। আমি ছবি আপলোড দিব। ফেসবুকে আমি একজন সেলিব্রেটি। একদিন আমি ফেসবুকে না বসলে বিশ হাজার লাইক কমে যাবে। এই ক্ষতি কোনদিন পূরণ হবার নয়।’
তারানা হালিম ফোন কেটে দিলেন। পিচ্চি ছেলে তার সাথে মুখে মুখে কথা বলে, সাহস কত! এই প্রজন্ম আসলে নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি একবার ভাবলেন বাকের ভাইকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করবেন ঘটনা কি। পরক্ষণেই তিনি এই চিন্তা বাদ দিলেন। বাকের ভাই গাতক মানুষ। নির্ঘাত নতুন কম্পোজিশানে ব্যস্ত। তারচেয়ে তিনি নিজেই ‘ভিপিএন’ সফটওয়্যার দিয়ে ফেসবুকে ঢুকছেন না কেন? তাহলেই তো জানা যায় আসল ঘটনা।
তারানা হালিম গুগল থেকে সার্চ করে Hotspot Shield নামক একটি সফটওয়্যার নামালেন। সেটি পিসিতে ইন্সটল দেয়ামাত্র ফেসবুক চালু হয়ে গেল। তারানা হালিম তাঁর আইডি এবং পাসওয়ারড দিয়ে লগিন করলেন। কিন্তু হায়, অ্যাকাউন্টে ঢুকেনা।
একটি ম্যাসেজ দেখাচ্ছে, You are pretending to be someone you are not. Since it violated our community standards, we removed it.
তারানা হালিম ম্যাসেজের মানে কিছুই বুঝলেন না। তিনি দ্রুত জুনাইদ পলককে ফোন দিয়ে ব্যাপারটি বললেন।
জুনাইদ পলক সব শুনে বললেন, হালিম আপা, আপনার আইডিতে সব জংগী মিলে রিপোর্ট করেছে মনে হয়। আইডি ব্লক হয়ে গেছে।
‘শোনো পলক, আমার ধারণা তুমিও রিপোর্ট করেছ।’
‘আপনার ধারণা সত্য আপা।’
তারানা হালিম প্রচন্ড রাগে ফোন কেটে দিলেন। তিনি ফোন দিলেন আরেক এম্পি ফোক সম্রাজ্ঞী মমতাজকে। মমতাজ আপার দিলটা পানির মত টলটলা।
মমতাজ ফোন ধরেই বললেন, কাইন্দা বুক ফাটাইস নারে বইন।
তারানা হালিম অবাক হয়ে গেলেন। সবাই-ই দেখি জানে যে তার আইডি ফেসবুক কতৃপক্ষ ব্যান করে দিয়েছে। তার মানে এরা সবাই-ই তলে তলে ফেসবুক চালাচ্ছে। তারানা হালিম বুঝতে পারলেন, তার আইডিটি জংগীরা নয়, এরাই সবাই মিলে রিপোর্ট করেছে।
এই লেখাটি ফেইস বুক আমার প্রিয় পেইজ ''বই লাভরস পোলাপান'' থেকে নেয়া, লেখক জন রাসেল।
জন রাসেলকে ধন্যবাদ সুন্দর একটা লেখার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১০
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×