৫০ বছর । মিলডুরা হয়ে লিটন এর দিকে গাড়ি যাচ্ছে । গাড়ী তে টিটু ভাইয়া ।ফোনে কথা হচ্ছিল, টিটু ভাইয়া র সাথে । এমন ভাবে ৫০ বছর বললেন-- শুনতে ভালো লাগলো না । আচ্ছা যাদের আমরা ভাইয়া ডাকি তারা বুড়ো হয়ে যান কেন? বোকার মত একটা প্রশ্ন করলাম। টিটু ভাইয়া আমার কাছে -- সেই রকম একজন যাকে আমি মনে করি , এই ব্যক্তি টি সব সময় তরুন থাকবে । কেন থাকবে-- সেটা পরে বলব।
সাল টা ঠিক মনে নেই, ১৯৯০ হবে । দারুন একটা সময় । আমি তখন দশম শ্রেনী তে পড়ি । একদিকে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন-- আর এক দিকে তারুন্যের ভারে ভরপুর হৃদয় । স্কুলের পড়ালেখা ভালো লাগে না । একদিকে উচ্ছাস, নতুন নতুন অ্যাডভেন্চার এ সময় কাটছে আর অন্য দিকে সামাজিক, পারিবারিক, রাজনৈতিক পরিমন্ডলের একটা অলিখিত বলয় প্রভাবিত করছিল সেই সময়কে । অদ্ভুত একটা সময় ছিল -সেটা ।
সেই সময়ে টিটু ভাইয়া আমাদের বাসায় বেড়াতে এলেন সস্ত্রীক । তিনি তখন সদ্য বিবাহিত । সবে মেডিক্যাল কলেজ এর পড়া শেষ করেছেন। পড়ার বই বাদে অন্য সব বই পড়া হয়, পল্টনের রাস্তার পুরোনো বই গুলো তখন যেন আকাশ হাতে পাওয়ার মত ব্যাপার । ভাইয়া-ভাবী , আমাদের জন্য অন্য অনেক কিছুর সাথে একটা বই আনলেন । রমাপদ চৌধুরী র "বাড়ি বদলে যায়" । এত ভালো লেগেছিল। এরপর রমাপদ চৌধুরী র সব কিছু গোগ্রাসে গিললাম।
যেটা বলতে চেয়েছিলাম । সেই অদ্ভুত সময় টা তে দেখতাম - সবাই কথা বলছে- কেউ কারো কথা শুনতে চাচ্ছে না । এখনও তাই । অফিসে, আদালতে, রাস্তা-ঘাটে, রেস্টুরেন্টে, চায়ের দোকানে, পাড়ার ক্লাবে, বাড়িতে, হাসপাতালে--সবাই বলে যাচ্ছে । কেউ অন্য জনের কথা শুনতে চাইছে না ।
টিটু ভাইয়া তখন যুবক । তাকে দেখলাম - উনি শুনছেন বেশী । আমরা অনেক প্রশ্ন করলে ২/১টা উত্তর দিচ্ছেন । এখনো যদি আপনাদের কারো সাথে তার দেখা হয়, তাহলে বুঝতে পারবেন। কারন টা জানি না, হয়তো প্রচুর বই পড়েতেন এবং এখনো পড়েন--সেই জন্য । আমরা যারা বেশী কথা বলতাম---- তাদের কথা শুনে , উনি হয়তো অবাক হতেন-- বেশী কথা বলার ফলে, আমরা হয়তো খুবই কনফিউজিং কথা বলতাম ।
তখন আমাদের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে একটা বিশাল চাপ ছিল- ডাক্তার বা ইন্জিনিয়ার হতেই হবে-- না হলে-- অমানুষ বা পানিতে পড়ে যাব । ভাইয়া , আমাদের উপদেশ দিলেন কেন ডাক্তারী পড়বে না--একদম সহজ যুক্তি-- "তোমার পড়াশুনার বিষয়টা হবে -অসুস্হতা---নিয়ে " --এই জিনিসটা তুমি ডিল করতে প্রস্তুত কি না"-- যুক্তিটা মনে ধরে গেল । বাঁচা গেল ডাক্তারী পড়তে হবে না । !
যে কারনে এই লেখাটার অবতারনা--টিটু ভাইয়া আমার দেখা অন্যতম কিছু বিনয়ী মানুষদের মধ্যে একজন । চারিদিকে এত বিশাল বিশাল মানুষ কে দেখছি ( বাংলাদেশ প্রেক্ষিত), কেউ বিশাল ডাক্তার, কেউ বিশাল ইন্জিনিয়ার , কেউ উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, ডকটরেট, পিএইচডি ধারী,সেলিব্রেটি, বুদ্ধিজীবি--- সবার মধ্যে "বিনয়" ব্যাপারটা এতই কম-- যে আশাহীন লাগতো, লাগে । যে বিনয়ী নয়, সে কিভাবে আমাদের সমাজের একজন হবে--আমার ছোট মাথা তে আসে না । আমার মতে বিনয়ী হওয়াটাই তরুন হবার প্রথম শর্ত । তাই ৫০ বছর বয়সী টিটু ভাইয়া কে আমি এখনো তরুন বলে মানি ।
টিটু ভাইয়ার জন্য অনেক দোয়া রইলো ।