# মৌসুমের প্রথম নিলামে ৩২ ভাগ চা অবিক্রিত
# বছরে সাড়ে ৫ কোটি কেজি চা লেনদেন : গড়মূল্য বৃদ্ধি কেজিপ্রতি ৩৭ টাকা
# উত্তরাঞ্চল ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বিস্তৃত হচ্ছে চায়ের আবাদ
শফিউল আলম ও এম সাইদুর রহমান তালুকদার
অর্থকরি চা শিল্প এখন ফিকে। অনেকটাই অবহেলিত। ঐতিহ্যবাহী ও প্রচলিত রফতানি এই পণ্য আর বিদেশে যায় না। তবে সময়োপযোগী উদ্যোগ নেয়া হলে বনেদি চা শিল্প অচিরেই ঘুরে দাঁড়াবে। জাতীয় অর্থনীতিতে রাখবে আরও ব্যাপক অবদান। এমন উজ্জ্বল সম্ভাবনা ধারণ করে আছে চা শিল্পখাত। অতীতে এদেশের মসলিন কাপড় কিংবা নিকট অতীতে পাট, চামড়া শিল্পের মতোই সুপ্রাচীন খাত চা। এতে রয়েছে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ। কালের বিবর্তনে চা শিল্প হারাচ্ছে সুখ্যাতি। দীর্ঘদিন এ খাত উপেতি। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে সামান্যই। দেশ-বিদেশে চা পানের চাহিদা বাড়লেও বাংলাদেশে বাড়ছে না উৎপাদন। রফতানি সংকুচিত হতে হতে এখন প্রায় শূণ্যের কোটায়। রফতানি পণ্যের তালিকা চা বাদ যেতে বেশীদিন বাকি নেই। বাংলাদেশী চায়ের বাজার নীরবে আয়ত্ত করে নিয়েছে অন্যান্য দেশ। স্থানীয়ভাবে চা পানের চাহিদা বার্ষিক ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। উৎপাদন খরচ ও চাহিদা বৃদ্ধির সমানুপাতে অভ্যন্তরীণ বাজারদর সারাবছরই থাকে বেশ চাঙ্গা। কিন্তু চায়ের আবাদ ও উৎপাদনে স্থবিরতা কাটেনি। তাছাড়া চা উৎপাদন কম-বেশী সাড়ে ৫ কোটি কেজিতে সীমিত রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী প্রচলিত পণ্যটির রফতানি ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে এখন মাত্র ১.৮৫ ভাগে নেমেছে। আর ৯৮.১৫ শতাংশ চা কিনছেন স্থানীয় ভোক্তাগণ।
এদিকে ২৬ এপ্রিল মঙ্গলবার বন্দরনগরী চট্টগ্রামে দেশের একমাত্র ও পৌনে একশ’ বছর ধরে চলমান এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন আন্তর্জাতিক চা ইন্ডেন্ট ট্রেডিং মার্কেটে চলতি মৌসুমের প্রথম নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এতে আনীত মোট ১১ হাজার ৪৪১ ব্যাগ পাতা চা এবং ১ হাজার ৩৮৯ ব্যাগ গুঁড়ো চায়ের মধ্যে শতকরা ৬৮ ভাগ চা ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। অবিক্রিত থেকে যায় ৩২ ভাগ চা। ট্রেডে পুরনো মৌসুমের ৪৮৬ ব্যাগ গুঁড়ো চা বিক্রির জন্য ফের আনা হয়। শুরুর সেলে চায়ের গুণগত কিছুটা নিম্নমানের কারণে প্রত্যাশিত দরের চেয়ে কেজিতে গড়ে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে বিক্রি হয়। স্থানীয় পাইকার, প্যাকেটিয়াররা এবারও ট্রেডিংয়ে ছিলেন তৎপর।
কিন্তু বিদেশী আমদানিকারক কিংবা তাদের প্রতিনিধিরা কেউই অংশ নেননি। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরান, রাশিয়ার মতো বাংলাদেশে উৎপাদিত চায়ের প্রধান সবক’টি ক্রেতাদেশ দীর্ঘদিন বাজার থেকে প্রায় উধাও। এর পেছনে প্রধানত চারটি কারণকে দায়ী করা হয়। তা হলো- চায়ের স্থানীয় বাজার দর চড়া থাকা, হাইব্রিড জাতের চায়ের আবাদ প্রসার আধুনিক যুগোপযোগী প্রযুক্তি ও গুণগত মানের উৎকর্ষতা বৃদ্ধির (রঙ, ঘ্রাণ ও স্বাদ) অভাব, উৎপাদনে স্থবিরতা এবং বাংলাদেশে উৎপাদিত চায়ের আন্তর্জাতিক বাজারে আকর্ষণ বা ভাল অবস্থান তৈরি ল্েয ‘ব্রান্ড নেইম’ (যা রফতানিমুখী গার্মেস্টস খাতের অনুরূপ) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রফতানি মূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে সমন্বিত উদ্যোগের অভাব। এেেত্র বাংলাদেশ চা বোর্ড সম্পূর্ণ নির্বিকার। তদুপরি চায়ের রাজধানীখ্যাত বৃহত্তর সিলেট তথা শ্রীমঙ্গলকে পেছনে ফেলে চা শিল্পখাতের প্রধান এই প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রামে রাখার কারণে কাজ-কর্ম চলে ঢিমেতালে। কর্তাব্যক্তিদেরও গাছাড়া ভাব। চট্টগ্রামে চাবোর্ডের হেডঅফিস আদৌ বাস্তবসম্মত ও যৌক্তিক কিনা তা নিয়েও সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন রয়েছে সংশ্লিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তাদের মাঝে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এর নিয়ন্ত্রিত চা বোর্ডের সার্বিক অদতা, অব্যবস্থাপনা ও নির্লিপ্ততা এবং দীর্ঘ উপোর শিকার হচ্ছে দেশের অন্যতম প্রধান শ্রমনিবিড় খাত চা শিল্প। বোর্ডের আওতায় চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) চাশিল্পের আধুনিকায়নে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করলেও লোকবল স্কংটে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। যদিও এককালে বিটিআরআই উদ্ভাবিত উন্নততর চা বিক্রি হয় সর্বোচ্চ দু’ হাজার টাকা কেজিতে। তাছাড়া বিশ্বের বেশক’টি দেশে বাংলাদেশের উৎপাদিত চায়ের প্রায় ৫০ বছরের পুরনো ও স্থায়ী বাজার এখন প্রায় হাতছাড়া হয়ে গেছে। কারণ হিসেবে মান সম্মত চা উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব, লিজকৃত ভুমিতে নতুন প্ল্যান্টেশন না করা, ছায়াবৃ নিধন সর্বোপরি সরকারী বাগান গুলোর আভ্যন্তরিন সমস্যা নিরসন না করা ইত্যাদি। এছাড়া দেশের ৪৩টি চা বাগান লিজ নবায়ন না করায় সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত। এদেশের শতাব্দী প্রাচীন চা শিল্পখাত টিকে আছে এর সাথে জড়িত বনেদি উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতা ও পেশাদারী উদ্যমী মনোবলের পাশাপশি কয়েক লাখ চা শ্রমিকের হাঁড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের বিনিময়ে।
বাকি অংশ পড়তে হলে প্রবেশ করুন :- http://www.dailyinqilab.com
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৮