somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তান্ত্রিক ও মৃত্যু রহস্য (শেষ খন্ড )

০৬ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(রতন আলীর
কথা গুলো গ্রাম্য ভাষায় লেখা হল, আমি যখন
গল্পটা শুনছিলাম তখন জাবেদও রতন আলীর কথা গুলো গ্রাম্য
টানেই বলছিল। এটা একটা রহস্য। কারন জাবেদ ঐ গ্রামে মাত্র
২দিন ছিল। তার পক্ষে এত ভালো ভাবে ভাষাটা রপ্ত করা সম্ভব
নাহ। যাকগে, আমরা গল্পে ফিরে যাই)
জাবেদ কিছুটা অবাক হয়ে বলল, “কিন্তু সবাই যে বলে মন্নান
মিয়াঁর মৃত্যুর কারন কেউ জানে নাহ!”
রতনঃ “তারা জানে নাহ। কারন মন্নান তাগর কাউরেই কইতাম চায়
নাই।”
জাবেদঃ “তাহলে তুমি কিভাবে জানো?”
রতনঃ “মন্নান আমার খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড আছিল।”
“মরার আগে কি তোমার সাথে তার কথা হয়?”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে রতন বললঃ “আপনি আসল ঘটনা জানে চান?”
জাবেদের এই প্রথম গায়ে একটু কাঁটা দিয়ে উঠলো। তবুও
সে উত্তর দিলো, “হ্যাঁ, তুমি যদি জানো তাহলে বলতে পারো।
আমার নিজেরও এটা জানার খুব ইচ্ছে।”
(এরপর রতন আলী জাবেদকে যা বলল তা আমি একটু
সাজিয়ে লিখার চেষ্টা করলাম)
যেদিনের ঘটনা সেদিন সকালে মন্নান মিয়াঁ তার সপ্তাহের বাজার
করতে যায়। বাজারে পরিচিত মানুষজনের সাথে দেখা সাক্ষাত
করে এবং নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে সে রওনা হয়
বাসার দিকে। পথিমধ্যে একটা কবর পড়ে ঐ রাস্তায়। অনেকেই
বলে ঐ কবরে নাকি মাঝে মাঝে এক বৃদ্ধকে দেখা যায়। আবার
অনেকে বলে ঐ কবর থেকে রাতের বেলা নানা রকম আওয়াজ আসে।
কে বা কারা কান্না করে, সেই আওয়াজ নাকি পাক
খেয়ে খেয়ে বাতাসে ভাসে। মন্নান মিয়াঁ এইশব ব্যাপারে তেমন
পাত্তা দিতো নাহ। সেদিন আসার পথে হটাৎ তার ভীষণ
তৃষ্ণা পায়। তার বাজারের ব্যাগ থেকে বোতল বের
করে পানি খাওয়ার জন্য রাস্তার পাশেই বসে পড়ে সে। এমন
সময়ে একটা কালো কুকুর এসে তার পাশে বসে। কুকুরটা দেখে একটু
অবাক হয় মন্নান মিয়াঁ। গ্রামে অনেকদিন যাবত আছে সে কিন্তু
আগে কখনো এতো বড় কালো কোন কুকুর দেখেনি।
কুকুরটা মন্নানকে এক দৃষ্টিতে দেখতে থাকে। হটাৎ
মন্নানকে অবাক করে দিয়ে বলে উঠে, “আমার কবরের
পাশে বসে আছিস। তোর সাহস তো অনেক বেশি দেখছি।”
মন্নান প্রথমে ভাবল তার শোনার ভুল। সে ব্যাগ থেকে পানি বের
করে চোখে মুখে পানি দিলো। এইবার সে আর স্পষ্ট
শুনতে পেলো কুকুরটা বলছে, “কিরে, ভয় পেলি নাকি?”
মন্নান মিয়াঁ এইবার পুরো ঘাবড়ে গেলো। অনিশ্চিত বিপদের
আশঙ্কায় সে তার হাতের পাশে পড়ে থাকা একটা গাছের ডাল
নিয়ে ছুড়ে মারল কুকুরটার দিকে।
ডালটা সরাসরি গিয়ে লাগলো কুকুরটার মুখে। একপাশ
কেটে গিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো। প্রচণ্ড
রাগে গর্জে উঠলো কুকুরটা। স্পষ্ট ভাষায় মন্নান কে বললঃ “তুই
আমাকে আঘাত করেছিস। এর পরিনাম তুই ভোগ করবি।” এই
বলে কুকুরটা ভয়ঙ্কর গর্জন করে মন্নান কে কামড়াতে আসলো।
কুকুরটার সাথে ধাক্কা লাগার সাথে সাথে মন্নান জ্ঞান
হারিয়ে ফেলে।
জ্ঞান হারান অবস্থায় মন্নান স্বপ্নে দেখে এক বুড়ো লোককে।
লোকটি প্রবল ঘৃণা নিয়ে তাকিয়ে আছে মন্নানের দিকে। মন্নান
কে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো, “তুই আমার গায়ে হাত
তুলেছিস। আমাকে আঘাত করেছিস। এর পরিনাম মৃত্যু।”
মন্নান ভয়ে জড়সড় হয়ে বললঃ “আমি জানি না আপনি কে।
আপনাকে আমি আমার জীবনে আগে কখনো দেখিনি।
আমি কিভাবে আপনাকে আঘাত করবো?”
তখন লোকটি নিজের বর্ণনা দিল।
“তান্ত্রিক” এই ব্যাপারটার সাথে হয়তো আমরা অনেকেই
পরিচিত। তান্ত্রিক তাদের বলে যারা তন্ত্র মন্ত্র নিয়ে থাকে।
এরা প্রায়ই গোরস্থান, শ্মশানঘাটে রাত্রি বেলা কালো জাদু
চর্চা করে। তান্ত্রিক মূলত খারাপ প্রকৃতির হয়। এরা ক্ষমতার
লোভে, বলতে পারেন অমরত্তের লোভে এমনকি মানুষ খুন
করে তা দিয়ে তপস্যা করে। ঐ লোকটি একজন তান্ত্রিক ছিল।
একবার মানুষ খুন করার অভিযোগে তাকে গাছের সাথে ফাঁস
দিয়ে মারা হয়। এরপর তাকে কবর দেয়া হয় গ্রাম
থেকে দূরে একটা বধ্য এলাকায়। সেই কবরটির কথাই একটু
আগে আমরা বলেছিলাম। যাই হোক, সেই তান্ত্রিক মারা যাওয়ার
পরও তার আত্মা এখনও মানুষের ক্ষতি করার জন্য ঘুড়ে বেড়ায়।
তান্ত্রিকটা মন্নানের সামনে কুকুর বেশে এসে বসেছিল
এবং মন্নান তাকে আঘাত করায় সে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়।
এরপর হটাৎ মন্নানের ঘুম ভেঙ্গে যায়। সে খুব খারাপ অনুভব
করতে থাকে। তার নিঃশ্বাসে সমস্যা হতে থাকে। সেখান
থেকে কোনোরকমে বাসায় যায় মন্নান। এরপর
আস্তে আস্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
রতন আলী এতটুকু পর্যন্ত বলার পর হটাৎ কর্কশ শব্দে কাছেই
কোথাও একটা পেঁচা ডেকে উঠে। ঠিক
সাথে সাথে চমকে উঠে জাবেদ শুনতে পায়, রতন আলী তাকে পিছন
থেকে ডাকছে। “ঐ ভাইজান, জলদি লন। মুত্তে অতখন লাগায়
নি কেও?”
জাবেদ ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে অস্থির
চিত্তে অপেক্ষা করছে রতন আলী। আর সে নিজেকে আবিষ্কার
করে সেই গাছটার নিচে, যেখানে সে প্রকৃতির
ডাকে সাড়া দিতে এসেছিলো।
আমাদের গল্প এখানেই শেষ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×