somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমারও তো একদিন মৃত্যু হবে

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলায় এক রাখালের গল্প শুনেছিলাম। সে রাখালি করার সময় বাঘ আসছে, বাঘ আসছে বলে চিৎকার করত। মানুষ গিয়ে দেখত যে, সব মিথ্যা। সে মানুষের সঙ্গে কৌতুক করার জন্য এভাবে মিথ্যা চিৎকার করত। মানুষ তাকে বাঁচানোর জন্য দৌড়ে আসত, কিন্তু মিথ্যা প্রহসন দেখে আবার ফিরে যেত। আখের একদিন সত্যি সত্যিই বাঘ তাকে আক্রমণ করে বসল। আর সে বাঘ বাঘ বলে চিৎকার করতে থাকল। কিন্তু আজ আর কেউ তার ডাকে সাড়া দিল না। বাঘ তাকে সত্যি সত্যিই খেয়ে ফেলল।
আমার বিষয়টিও কি অনেকটা সেরকমই হয়ে যাচ্ছে? বছর দুয়েক আগের কথা। আমার এক ছাত্র মঞ্জুর এসেছিল আমার সাথে দেখার করার জন্য। সে বলল, গত সপ্তাহে তার মাদরাসায় হঠাৎ খবর এল যে, ঢাকার ইসহাক ওবায়দী সাহেব মৃত্যুবরণ করেছেন। সে বলল, কথাটা শুনে আমি নির্বাক হয়ে গেলাম। হায়রে! হুজুরের সাথে তেমনভাবে কথাবার্তাও বলতে পারলাম না, হুজুরের কাছ থেকে কোনো স্মৃতিও রাখা হল না। এভাবে ভাবতে ভাবতে অশ্রুসজল চোখে বড় হুজুরের কাছে গেলাম ছুটি নেওয়ার জন্য। খবর শুনে তিনিও খুব মর্মাহত হলেন এবং মাগফেরাতের দুআ করে বললেন, এখন রাতের বেলায় না গিয়ে সকালেই যাও। মঞ্জুর আমারই গ্রামের ছেলে। তার মরহুম পিতা আমার ছোটবেলার সহপাঠী। আর চৌমুহনী নরউত্তমপুর মাদরাসার বড় হুজুর অলিয়ে কামেল হযরত মাওলানা আবদুর রাজ্জাক সাহেব আমার শ্রদ্ধেয় উস্তাদ এবং আত্মীয়। মঞ্জুর বলল, পরদিন সকালে ছুটির জন্য গেলে বড় হুজুর বললেন, সবক পড়ে যেও। হুজুরের কথামতো তাই করল। ইতিমধ্যে মাদরাসায় খবর এল যে, ইসহাক ওবায়দী নয়, ইসহাক ফরিদী সাহেব ইন্তেকাল করেছেন। তিনি গাড়িতে করে চট্টগ্রাম নানুপুর মাদরাসায় যাওয়ার সময় পথিমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেন। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
খবরের কাগজ না পড়ার কারণে বিষয়টি আমারও জানা ছিল না। মঞ্জুরের কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম। ঢাকায় আমার জামাতা মাওলানা বশীর মেছবাহকে টেলিফোন করলে সে বলল, আব্বা, ইনকিলাবে সংবাদ-শিরোনাম দেখে আমিও প্রথমে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছি। তারা ‘ইসহাক ওবায়দী-র ইন্তেকাল’ এভাবেই হেডলাইন করেছে। তবে খবরের মধ্যে গাড়ি দুর্ঘটনার কথা বলায় এবং সেখানে ইসহাক ফরিদী সাহেবের নাম লেখায় আমি কিছুটা স্বস্তিবোধ করলাম এবং বুঝতে পারলাম যে, দুজনের নাম এক হওয়াতে বুঝতে ভুল হয়েছে তাদের।
১৯৮১ তে আমি যখন হযরত হাফেজ্জী হুজুরের প্রেসসেক্রেটারী হয়ে হুজুরের নির্বাচনী সভা নিয়ে ব্যস্ত তখন মাওলানা ইসহাক ফরিদী সম্ভবত মেশকাত অথবা দাওরার ছাত্র ছিলেন। হজরত হাফেজ্জী হুজুরের নির্বাচনী প্রচারণায় ছাত্র হয়েও খুব অংশ নিয়েছিলেন তিনি। আমার স্পষ্ট মনে পড়ছে, হযরতের পুরা কাফেলাকে তার গ্রামের বাড়ি গজারিয়াতেও নিয়ে গিয়েছিলেন। আমিও তখন হযরতের সাথেই ছিলাম। বিজ্ঞ আলেমে দ্বীন বন্ধুবর জনাব মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সাহেবের খাস শীষ্যদের অন্যতম হওয়ায় তিনি নিজের নামের সাথে ফরিদী যোগ করতেন। আর মাওলানা ফরিদ সাহেবও তার এই শীষ্যের প্রতিভা বিকাশের জন্য আন্তরিক চেষ্টা করেছেন। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই তার সুপ্ত প্রতিভাগুলি বিকশিত হতে থাকে। তার স্মৃতিশক্তি যে এত প্রবল ছিল তা আমার তখন জানা ছিল না। মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে এক সেমিনারে তার বক্তব্য থেকে আমি তা অনুভব করতে সক্ষম হই। মাঝে-মধ্যে কোথাও দেখা হলে খুব সম্মান ও হাসি-খুশির সাথেই কথা বলতেন। আমার লেখালেখি ও প্রকাশিত বই সম্পর্কে ওয়াকেফহাল থাকাতে, শিশু মনস্তত্ত্বের ওপর আমার লেখা সিরিজ বইগুলো সম্পর্কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্ন করতেন। এই প্রতিভাবান আলেমের অকাল মৃত্যুতে মিডিয়া জগতসহ অনেকেই ওবায়দী আর ফরিদী-র মাঝে পার্থক্য করতে পারেনি। ফলে মাওলানা ইসহাক ওবায়দী-র মৃত্যু হয়েছে বলেই ভুল বোঝাবুঝি হয়ে যায়। এর কিছুদিন পর আমার শফীক উস্তাদ উস্তাযুল আছাতিযা চট্টগ্রাম পটিয়া মাদরাসার শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা ইসহাক গাজী সাহেব ইন্তেকাল করেন। আমি জামেয়া রশিদিয়ায় ওই মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা জনাব মাওলানা মুফতী শহীদুল্লাহ সাহেবের সাথে কথা বলছিলাম। ইতিমধ্যে একটি টেলিফোন এল। মুফতী সাহেব তা ধরলেন। অপর প্রান্ত থেকে বলা হল, হুজুর! ঢাকার মাওলানা ইসহাক ওবায়দী সাহেব ইন্তেকাল করেছেন। মুফতী সাহেব যেহেতু আমাকে এবং হজরত মাওলানা ইসহাক গাজী সাহেব হুজুরকে ভালোভাবে চেনেন এবং আমি তখন তার সম্মুখেই বসা ছিলাম, তাই তিনি বললেন, না, ইসহাক ওবায়দী সাহেব নয়, ইসহাক গাজী সাহেব ইন্তেকাল করেছেন। আর ইসহাক ওবায়দী সাহেব এখন আমার সামনেই বসে আছেন। বছর খানেক পর আমি যখন পটিয়ায় উস্তাদ মরহুম হযরত ইসহাক গাজী সাহেব হুজুরের যিয়ারতে যাই, তখন পটিয়ার উস্তাদদের মধ্যে অনেক বন্ধু-বান্ধবই আমাকে দেখে স্তম্ভিত হয়েছেন। তারা বললেন, আমরা তো মনে করেছি ইসহাক ওবায়দীরই মৃত্যু হয়েছে। কারণ ইসহাক ফরিদীকে তো আমরা জানি না বা চিনি না। আমি বললাম, ঈসালে ছওয়াব ও দুআয়ে মাগফিরাত ইত্যাদি করেছেন তো? তারা বলল, তাও করেছি।
আমার চিন্তার বিষয় শুধু এই যে, আমারও তো একদিন মৃত্যু হবে। আমার সঙ্গী ও স্বজনরা যখন একে একে চলে যাচ্ছেন তখন আমাকেও তো চলে যেতে হবে। তখন কি বন্ধু-বান্ধব ও শুভানুধ্যায়ীরা আমার জন্য দুআ ও মাগফিরাতের তোহফা নিয়ে এগিয়ে আসবেন? নাকি একেও একটা ভুল বোঝাবুঝি মনে করে চুপ থাকবেন?
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×