আজ ১৬ই ডিসেম্বর ২০১২ সারাদিন অফিস করলাম। গতকাল সন্ধায় এক বন্ধুকে যখন বললাম যে ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের ফ্যাক্টরি খোলা, ও বলছিল যে “ওরা (মালিক) রাজাকার নাকি?” আপনারাই বলেন তো আমাদের মালিক বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ রাজাকার নাকি? উত্তর দিতে বোধকরি কারো এক সেকেন্ড ও দেরি হবে না। তাহলে একটু শুনুন আরও কয়েকটি কথা।
আমরা সাধারণত যেসব দিনগুলোকে শিশুকাল থেকে সরকারি ছুটি হিসেবে জেনে আসছি, প্রথমে আসুন সেই তালিকাটার দিকে একটু চোখ বুলাই।
এখন আসি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের কল কারখানাগুলোর জন্য প্রযোজ্য আইনের ব্যপারে। বাংলাদেশ স্রম আইন ২০০৬ এর ১১৮ ধারা অনুসারে-
(১) প্রত্যেক স্রমিককে প্রতি পঞ্জিকা বছরে এগার (১১) দিনের মজুরি সহ উতসব ছুটি মঞ্জুর করিতে হইবে।
(২) বিধি দ্বারা নিরধারিত ভাবে মালিক উক্ত ছুটির দিন ও তারিখ নির্ধারণ করবেন।
(৩) কোন শ্রমিককে কোন উৎসব ছুটির দিনে কাজ করিতে বলা যাইতে পারিবে, তবে ইহার জন্য তাহাকে ২ দিনের মজুরি সহ ক্ষতিপূরণ ছুটি ও ১ টি বিকল্প ছুটি মঞ্জুর করিতে হইবে।
উপরের আইনে বলা আছে কোন কারখানায় স্রমিকদের কমপক্ষে ১১ দিন ছুটি দিলেই তা আইনসম্মত। মালিক যদি দয়া পরবশ হয়ে এর চেয়ে বেশি দেয় তা আলাদা কথা। কিন্তু ১১ দিন দিলেই আইন মানা হবে। যেহেতু ১১ দিনেই আইন মানা হয়, খুব কম মালিকই ১১ দিনের চেয়ে বেশি ছুটি দিতে চাইবে। আমরাই যখন বাস ভাড়া দেই চেষ্টা করি সরকারি রেট অনুসারে সর্বনিম্ন ভাড়া টা দিতে। পোস্ট অফিসে একটা খাম ২ টাকা। আপনি কি সেচ্ছায় কখন সেটা ২.৫০ টাকায় কিনবেন? নিশ্চয়ই না। এখন আপনারই বলেন উপরের ২২ দিন থেকে কোন ১১ দিনকে মালিক ছুটি হিসেবে বেছে নিবে। ২ ঈদে ৬ দিন, ১৫ই আগস্ট/ ৭ই নভেম্বর ছুটি না দিলে সরকার গলা কাটবে, দুর্গাপূজার দশমী, বড়দিন (এটা না দিলে Buyer Mind করবে), মে দিবস এই নিয়ে হল ১০ দিন।
এখন আপনাদের দায়িত্ব দিলাম, বাকি ১২ দিন থেকে কোন ছুটি টি আপনি বাংলাদেশের কারখানা (যার বেশিরভাগই পোশাক শিল্প) শ্রমিকদের জন্য তাদের ১১ তম ছুটির দিন হিসেবে নির্বাচিত করবেন? ১৬ই ডিসেম্বর? ২১শে ফেব্রুয়ারি? নাকি ২৬ শে মার্চ? শবে বরাত বা শবে কদর বা জন্মাষ্টমীর কথা না হয় বাদই দিলাম। আপনার কাজটি তাহলে আরও কঠিন হয়ে যাবে? শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা।
যে দেশে সরকারি কর্মকর্তা/ কর্মচারীরা ২ দিন পায় সাপ্তাহিক ছুটি, ২২ দিন উৎসব ছুটি; সে দেশে কারখানা শ্রমিকরা পাবে ১ সাপ্তাহিক ছুটি (তাও নিশ্চিত হয় না সবসময়) আর মাত্র ১১ দিন উৎসব ছুটি (তাও সামান্য কিছু বেশি টাকা দিলেই কাজ করানো যায়)।
এ কি বৈষম্য নয়? এটা কি মানবাধিকারের চরম লংঘন নয়? গার্মেন্টস শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে রাস্তায় নামলে, গাড়ি ভাংচুর করলে ওরা খারাপ/ উশৃঙ্খল। কিন্তু তারা পরিশ্রমের বিনিময়ে কি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে সেই প্রশ্নে আর উত্তর দেয়ার মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশ স্বাধীন আজ ৪১ বছর হল। আমাদের দেশের সরকার/ রাজনীতিবিদ/ নীতি নির্ধারক এমন বৈষম্য মূলক আইন করে তার নাগরিকদের জন্য। এখন বলুন আমাদের মালিক কি আসলে রাজাকার? সরকার আর আইন প্রনেতারা কি খুব দেশপ্রেমিক?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




