আমি এমন এক দেশে বাস করি যেখানে গত কয়েকশ বছরেও গণতন্ত্র ছিল না। একারনে আমরা এটিও জানি যে গণতন্ত্র আসলে ঠিক কেমন। বিভিন্ন জ্ঞানী মানুষের মুখে আমরা গণতন্ত্রের কথা শুনি, বোঝার চেষ্টা করি। কেউ কেউ বুঝেছেন বলেও ভ্রম হয়। কিন্তু সত্য হল, গণতন্ত্র ঠিক কিরকম তা আমাদের মধ্যে কেউই আসলে উপলব্ধি করতে পারি না। এর কারন হচ্ছে, আমরা যারা আশৈশব এ দেশে বাস করছি তারা তো কখন গণতন্ত্র দেখার সুযোগই পাইনি।
গত প্রায় ৩ দশক ধরে গণতন্ত্রের মুখোশে দেশে চলছে এক অদ্ভুত রকমের রাজতন্ত্র। গণতন্ত্র শব্দটিকে বিক্রি করে যারা এই রাজতন্ত্র চালিয়েছে তাদের কোন পক্ষকেই আমরা আর বিশ্বাস করতে পারছিনা। পারছিনা বলেই মুখোশ পরা রাজতন্ত্রের সবচেয়ে নগ্ন রূপটি গত কয়েক বছর যাবত প্রকাশিত হলেও আমাদের কেউই তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি না। প্রতিক্রিয়া না দেখানোর কারন একাধিক। গত ৩ দশকে গণতন্ত্রের মুখোশধারী মানুষেরা ক্রমাগত আঘাত করে করে দুর্বল গণতন্ত্রকে ততোধিক দুর্বলতর করে ফেলেছে। সুবিধা ভোগীরা সংখ্যায় এত বেড়ে গেছে যে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখানো সহজ কাজ নয়। দ্বিতীয়ত, এক পক্ষকে আঘাত করলে তার প্রতিপক্ষ শক্তিশালি হবে। কিন্তু অপর পক্ষের উপরও আস্থা আনা যায় না, তারাও মুদ্রার অপর পিঠ মাত্র। গুমগত মানের যেহেতু কোন পরিবর্তন হবে না সেহেতু শুধুমাত্র মুদ্রার পিঠ বদলানোর জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করার দরকার কি? একারনেই, এই একবিংশ শতাব্দিতে এসেও আমরা গণতন্ত্র নিয়ে সম্পূর্ণ রকম নিঃস্পৃহা প্রদর্শন করে যাচ্ছি। গত ৩ দশকে যে দেশটির জনগনের গড় আয়, গড় আয়ু, প্রসুতি মৃত্যু, শিশু মৃত্যু, পয়ঃনিষ্কাশন, শিক্ষার হার, বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রভৃতি প্রভুত উন্নতি করেছে তারাই গণতন্ত্রের ব্যাপারে চরম উন্নাসিক।
এই উন্নাসিকতার সুযোগে মুখোশধারীরা বিশেষ ক্ষমতা আইন পাস করে, সম্প্রচার নীতিমালার মত কালো আইন পাস করার উদ্যেগ নেয়ার সাহস করে। আর্থ-সামাজিক অন্যান্য সকল খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সত্ত্বেও রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আমরা প্রতিদিন পিছিয়ে যাচ্ছি। এ উন্নতিতে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার কোন অবকাশ আমাদের নেই। মুখোশধারী রাজতন্ত্রের কালো বিড়াল যখন আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতি ধংস করা শুরু করবে, তখন কিন্তু সে অপশক্তিকে বাধা দেবার মত শক্তি আমাদের আর নাও থাকতে পারে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




