অদ্ভুত এক বন্ধা সময় পার করছি আমরা।
সমাজের অন্যায়, অত্যাচার বা শোষণের বিরুদ্ধে শিল্প সাহিত্য একটি বড় হাতিয়ার। সমাজে যখনই অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তখন তার বিরুদ্ধে সবার প্রথমে গর্জে ওঠে কবি বা সাহিত্যিকের কলম। সামাজিক বা রাজনৈতিক অত্যাচার এবং শোষণের বিরুদ্ধে মানুষ সচেতন হয়, প্রতিবাদী হয় একটি কবিতা বা গান শুনে। কখনোবা একটি নাটক বা একটি প্রতিবাদী সিনেমা দেখে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের হাজার বছরের ইতিহাসের দিকে তাকালে এমনটিই আমরা দেখতে পাই। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৯৯ সালে বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিসকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল সামাজিক মিথ্যাচার আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায়। বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম তার পুরো জীবন ব্যাপী সংগ্রাম করেছেন সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারের শোষণের বিরুদ্ধে। কবি নজরুল তার বিদ্রোহ কবিতায় লিখেছিলেন “বল বীর বল বীর বল উন্নত মাম শীর ।।” এদেশের জনগণের উপর তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে কলম যুদ্ধ করেছেন এদেশের বহু কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, চলচ্চিত্র পরিচালক ইত্যাদি। পটুয়া কামরুল হাসানের বিখ্যাত পোস্টারটি (এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে) শিল্পমানে বিশ্বসাহিত্যের অংশ হয়ে গেছে।
কখনও কখনও শোষক গোষ্ঠী কালো আইনের বেড়াজালে মানুষের কন্ঠ রোধ করার চেষ্টা করে। তখনও থেমে থাকে না শিল্পীর প্রতিবাদ। নজরুল ‘আমি হব’ কবিতায় (আমি হব সকাল বেলার পাখি, সবার আগে কুসম-বাগে উঠব আমি ডাকি! .. .. ..) মানুষকে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। মুনির চৌধুরী ভাষা আন্দোলনের কথা বলেছেন তার কবর নাটকে। কবি আল মাহমুদ নোলক কবিতায় (আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে, হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে। .. .. ..) এদেশের ভুলন্ঠিত স্বাধীনতা হারানোর বেদনার কথা বলেছেন প্রতীকী চিত্রের দ্বারা। এই কয়েক বছর আগেও কবি শামসুর রাহমান “অদ্ভুত উটের পিঠে চলছে স্বদেশ” কাব্যগ্রন্থ দিয়ে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন।
এরপর ৯০ এর দশকে বাংলাদেশের ‘গণতন্ত্র’ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হল। ২৫ বছর পর এখন গণতন্ত্রের পূর্ণ যৌবন চলছে। সে যুবক (অথবা যুবতী) আজ তার যৌবনের সকল শৌর্য বীর্য নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছে এদেশের জনগণের উপর। গণতন্ত্রের মুখোশের আড়ালে রাক্ষসের দল হিংস্র থাবায় রক্তাক্ত করছে আমার বাংলাদেশ। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোন কবিতা, গান, নাটক, সিনেমা, আলোকচিত্র বা অন্য কোন শিল্প মাধ্যমে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন প্রতিবাদ চোখে পরছেনা। খুব বিচ্ছিন্নভাবে যদি কিছু হয়েও থাকে তা সাধারন মানুষ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছেনা। বাংলাদেশের কবিতা আর গান এখন শধু চটুল প্রেম আর বিচ্ছেদের কথা বলে। সিনেমার অবস্থা তথৈবচ। টিভি নাটক নামে আজ যা চলে তার ৯৫ শতাংশকে ভাঁড়ামি বলতেও আমার লজ্জা করে। রাজনীতির নামে অপরাজনীতির তাণ্ডবের বিরুদ্ধে মাকসুদ, হানিফ সংকেত, সায়ান, মাহমুদুজ্জামান বাবু ইত্যাদি গুটি কয়েকজন কিছু প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু আজ প্রতিদিন যেভাবে মানুষ পোড়ান হচ্ছে তার বিরুদ্ধে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কোন শিল্প বা সাহিত্যকর্ম কেন তৈরি হচ্ছেনা? শিল্পীর মন কেন এতো অনুভূতি শুন্য হয়ে গেল?
দেশের শিল্পাঙ্গন কেন এই বন্ধা সময় পার করছে?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




