somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশী হিন্দুদের মানসিক সংকট ও উত্তরন

২১ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এদেশে ইসলাম এসেছে ১২০০/১৩০০ বছর যাবত। এর পূর্বে এদেশের মানুষ সনাতন এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান। মুসলমানদের তীর্থস্থান গুলি সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছে। ঐ অঞ্চলের সাথে আমাদের রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক বা সাংস্কৃতিক উল্লেখযোগ্য কোন বিরোধ নেই। এসব কারনে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অন্তরে মধ্যপ্রাচ্য একটি ভালোবাসার স্থান দখল করে রয়েছে। রাজনৈতিক, সামাজিক বা যেকোনো ক্রীড়া অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেও এদেশের মুসলমানরা মধ্যপ্রাচ্য বা যেকোনো মুসলিম দেশকে প্রকাশ্যেই সমর্থন দিয়ে থাকে। ব্যতিক্রম শুধুমাত্র পাকিস্তান। ১৯৭১ এর গণহত্যার পর সরকারিভাবে তারা এখন পর্যন্ত ক্ষমা না চাওয়ায় ২ দেশের তরুন জনগণই পরস্পরকে অপছন্দ করে। জনতার আদালত এর কার্যক্রম, মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার ইত্যাদি কার্যক্রমের প্রেক্ষিতে এই মনোভাব দিন দিন আরও বাড়ছে।

১৯৪৭ এর দেশভাগের সময় ভারতীয় উপমহাদেশে বিপুল পরিমান জনগোষ্ঠী ধর্মের ভিত্তিতে দেশত্যাগ করে। পাকিস্তানী (পূর্ব ও পশ্চিম) হিন্দুরা ভারতে গিয়ে বসবাস শুরু করে। ভারতীয় মুসলমানরা পাকিস্তানে তাদের নতুন বাসস্থান পত্তন করে। তবে শতভাগ জনগোষ্ঠী কিন্তু এই দেশান্তর করেনি বা মেনে নেয়নি। একারনে এখনো ভারত ও বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) উল্লেখযোগ্য পরিমান যথাক্রমে মুসলমান ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ বসবাস করে। সনাতন বা হিন্দু ধর্মের পত্তন ও প্রসার মূলত ভারতীয় উপমহাদেশে আরও স্পষ্ট করে বললে ভারতেই বেশি। হিন্দু ধর্মের প্রায় সব তীর্থস্থানও ভারতে অবস্থিত। এছাড়া দেশ ভাগের সময়ে বাংলাদেশের বেশির ভাগ হিন্দু পরিবারেরই কিছু না কিছু মানুষ ভারতে চলে গিয়েছে। একারনে বাংলাদেশের প্রায় সব হিন্দু পরিবারেরই কিছু না কিছু আত্মীয় ভারতে থাকে। আত্মীয়তার সম্পর্কও এখনো যথেষ্ট অটুট রয়েছে সীমান্তের উভয় পাশেই। একারনে ভারতের প্রতি বাংলাদেশের হিন্দু জনগোষ্ঠীর একটি আন্তরিক টান থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। একজন মুসলমান যদি শুধুমাত্র ধর্মের কারনে বিশ্বকাপ ফুটবলে সৌদি আরব বা ইরাকের সমর্থন করতে পারে, তাহলে একজন বাংলাদেশী হিন্দু বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতকে সমর্থন করতেই পারে। এখানে অন্যায় বা অযৌক্তিক কিছু নেই।

কিন্তু বিপত্তি টাও ঘটে ঠিক এখানেই। গত ৪৫ বছর যাবত ভারতের সাথে আমাদের স্বার্থের যে প্রবল বিরোধ তেমন বিরোধ মধ্যপ্রাচ্যের কোন মুসলিম দেশের সঙ্গে আমাদের নেই। উপরন্তু আরব দেশগুলি থেকে আমরা বড় অংকের ঋণ, অনুদান, রেমিটেন্স ইত্যাদি পেয়ে থাকি। এসব কারনে আরব দেশগুলির সাথে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও ব্যাক্তিগত সম্পর্ক বেশ উষ্ণ। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে শুধুমাত্র অসম পানি বণ্টনের কারনে ভারতের দ্বারা বাংলাদেশের যে পরিমানে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক পরিমান জানা না গেলেও বিশেষজ্ঞদের মতে এখাতেই আমাদের ক্ষতি বিলিওন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। ফারাক্কা বা তিস্তা ব্যারেজের উপর কোন বাংলাদেশীর পক্ষে যাওয়া সম্ভব না। তবে শুধু Google Earth থেকেও যদি কেউ বাঁধের ২ পাশের নদীর পানির প্রবাহ দেখে তবে সে নিঃসন্দেহে শিউরে উঠবে। চোরাচালান, সীমান্ত হত্যা, আঞ্চলিক রাজনৈতিক দাদাগিরি এসবের কথা না হয় বাদই দিলাম।

এসব কারনেই ধর্মীয় বা সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বাংলাদেশের একজন হিন্দুর যেকোনো প্রতিযোগিতা মূলক ক্ষেত্রে ভারতকে সমর্থন দেয়ার যৌক্তিক অধিকার থাকলেও বাস্তবে কেউ তা করতে পারেনা। ২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারতের দস্যুতামূলক আচরনের পর ভারতের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের বৈরিভাব আরও বেড়ে গেছে।

এখন প্রশ্ন হল তাহলে বাংলাদেশের হিন্দুদের কি কর্তব্য? আমার ব্যাক্তিগত মতামত হচ্ছে ধর্মীয় তীর্থস্থান পূজনীয় বিষয়, তা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই, সেখানে যেতেই হবে। সীমান্তের ওপারের আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করাটাও অযৌক্তিক। সেহেতু তীর্থস্থানেও যাওয়া বন্ধ করা যাবেনা, আত্মীয়তার সম্পর্কও ছিন্না করা যাবেনা, তবে বাংলাদেশের শত্রু রাষ্ট্র (অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সব দিক থেকে) ভারতকে (মূলত ভারতের আধিপত্ত আচরণকারী সরকারকে) কোন ক্ষেত্রেই মন থেকে সমর্থন করা উচিৎ হবেনা। ভারতকে সমর্থন করা উচিৎ হবেনা কোন খেলায় বা কোন বিশ্ব সভায়।

উপরের সব যুক্তি, তর্ক, গল্পের সাথে আপনি দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে বাংলাদেশের প্রকৃতি, পরিবেশ ও কৃষির উপর ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া বিশদভাবে জানার অনুরোধ করছি। আপনি হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বা যাই হোন না কেন, ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানার পরও যদি আপনার ভারত প্রেম না কমে তবে আপনি নির্বোধ, গর্দভ, দালাল বা জাতীয় বেঈমান।

জয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:২২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয় দিবসের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়ে । সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ২০২৫, ১৬ই ডিসেম্বর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৯




দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রানের এক সাগর রক্তের বিনিময়। দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারানো। লক্ষ শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত‍্যু। এক কোটি মানুষের বাস্তুহারা জিবন। লক্ষ কোটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×