somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জহির রায়হানকে নিয়ে

১৩ ই আগস্ট, ২০০৮ রাত ৯:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ৩৭ বছর ধরেই মেজদার (জহির রায়হানকে এ নামেই ডাকতেন) প্রসঙ্গ উঠলেই তিনি আনমনা হয়ে পড়েন। রাজ্যের বেদনা এসে ভর করে তার চোখেমুখে। স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন শাহেনশা বেগম, জহির রায়হানের ছোড়দি। বয়সে তিনি বছর দেড়েকের ছোট ছিলেন জহির রায়হানের। কিন্তু পিঠাপিঠি ছিলেন বলে দু’জনের মধ্যে ছিল দারুণ অন্তরঙ্গতা।

মেজদার হাত ধরেই মঞ্চ নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। মায়ের অনীহা আর নিজের আগ্রহ না থাকায় প্রস্তাব পেয়েও ভাইয়ের ছবিতে অভিনয় করেননি। তবে মেজদার শুটিং ইউনিটের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছেন দিনের পর দিন। ছোটবেলা থেকেই জহির রায়হানের সান্নিধ্যে বড় হয়েছেন তিনি, তাই এই ভাইটিকে তিনি নিজের চেয়েও বেশি ভালোবেসেছেন।

খুব কাছ থেকেই তাকে দেখেছেন তিনি। দেখেছেন সাধারণ মানুষের জন্য তার ভাইটির দরদ ছিল অকৃত্রিম।

১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনে চাকুরী শুরু করেন শাহেনশা বেগম। ১৯৯৩ সালে বোনদের কাছে বেড়াতে যুক্তরাষ্ট্র যান এবং পরে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। কিন্তু একমুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারেননি প্রাণপ্রিয় ভাইকে। তার সঙ্গে হাজারো স্মৃতির আগুনে জ্বলেপুড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে হৃদয়।

যুক্তরাষ্ট্রে একটি কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা করছেন তিনি। ২০০৫ সালে দেশে এসে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় ছেলে সাব্বির আহমেদ শুভকে নিয়ে শুরু করেন জহির রায়হানের জীবনী অবলম্বনে ‘মেজদাকে খুঁজে ফেরা’ তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজ (এখনো পর্যন- প্রামাণ্যচিত্রের এই নামটিই রাখা হবে জানা গেছে, তবে এটি চুড়ান্ত নয়)। অনভিজ্ঞতা, নানা সীমাবদ্ধতা ও সর্বোপরি অর্থ সঙ্কটের কারণে বারবার থমকে গেছে নির্মাণ উদ্যোগ।

আবেগাপ্লুত কন্ঠে শাহেনশা বেগম বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকমকে বলেন, “আমার ভাই বলেই নয়, তার মতো একজন মানুষকে কর্মগুণেই মনে রাখা উচিত। কিন্তু তা হয়নি, কেন হয়নি আমি জানি না! অনেক মানুষ ছিলেন, মেজদাকে নিয়ে যাদের অনেক কিছুই করার ছিল, তারা করেননি। চলচ্চিত্রের কেউও তেমন কোন ভূমিকা রাখেননি। সরকারের দায়িত্ব ছিল তার জন্য, তার পরিবারের জন্য কিছু করার। অনেক কিছুই করা যেত। কিন্তু কোন সরকারই দায়িত্ব পালন করেননি। এই ‘না করা’টা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার।”

“দিন দিন মানুষের স্মৃতি থেকে বিলীন হয়ে যাচ্ছেন মেজদা। কেবল ৩০ জানুয়ারি এলেই দায়সারাভাবে তাকে স্মরণ করা হয়। এখন তিনি ৩০ জানুয়ারি দেশের প্রায় প্রতিটি সংবাদপত্রের ‘এক কলাম সংবাদ’-এ পরিণত হয়েছেন। এভাবে তাকে ভুলে যাওয়াটা আমাকে মর্মাহত করেছে। তারপর আরো দেখলাম, মেজদার কাছের মানুষেরা, যারা তার সম্পর্কে জানেন, যাদের নিয়ে তিনি কাজ করেছেন, তারা সবাই একে একে চলে যাচ্ছেন। খান আতা (খান আতাউর রহমান, অভিনেতা, পরিচালক) গেলেন। বড় ভাবী (সুমিতা দেবী, জহির রায়হানের প্রথম স্ত্রী ও চলচ্চিত্রাভিনেত্রী) গেলেন, গোলাম মোস্তফা ( অভিনেতা) গেলেন। ভাবলাম, মেজদা সম্পর্কে খবরের উৎস যারা- তারা আস্তে আস্তে চলে গেলে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। নতুন প্রজন্ম জানবে কিভাবে জহির রায়হান কে ছিলেন? তাই যারা বেঁচে আছেন, তার সঙ্গে যারা কাজ করেছেন, তাকে কাছ থেকে দেখেছেন, তাদের স্মৃতি, কথা ধারণ করে রাখার জন্য সিনেমার লোক না হয়েও আমি ফ্রেমে বন্দী করতে চাইলাম জহির রায়হায়নকে। ’০৫ সালে দেশে ফিরে পরিচিতদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলাম। সবাই-ই খুবই উৎসাহ দিলেন। সেবছরই নভেম্বরে কাজ শুরু হয় এই প্রামাণ্যচিত্রের”, বললেন শাহেনশা বেগম।

শাহেনশা বেগম বলেন, “স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তাকে বড় বেশি প্রয়োজন ছিল। তিনি বেঁচে থাকলে আজ আমরা অন্য বাংলাদেশ দেখতাম। তার মত বিশাল মাপের মানুষকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করা কঠিন কাজ। তাছাড়া সে কাজ করার যোগ্যতাও আমার নেই। নানা সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। তবু করছি কারণ, তাকে ভুলে থাকা যায় না।”

‘মেজদাকে খুঁজে ফেরা’ নামের তথ্যচিত্রের বেশিরভাগ চিত্রধারণের কাজই করা হয়েছে ২০০৫ সালে, জানালেন তিনি। আরো জানালেন যে, তার ইচ্ছে ছিল, সে বছরই জহির রায়হানের অন্তর্ধান দিবস (৩০ জানুয়ারি)-এ এটি প্রদর্শন করার। কিন্তু ফেরার সময় ঘনিয়ে আসায় একরাশ দুঃখ নিয়ে কাজটি অসম্পূর্ণ রেখেই সেবার তিনি নিউইর্য়কে ফিরে যান। তারপর অর্থ সঙ্কটের কারণে থমকে যায় সব কাজ।

এই বছর দেশে ফিরে আবারও অসমাপ্ত কাজটিতে হাত দিয়েছেন শাহেনশা বেগম। ইতোমধ্যে নায়করাজ রাজ্জাক, খলিল, আনোয়ার হোসেন, রাণী সরকার, ওয়াহিদুল হক, মৃনাল সেন, পান্না কায়সার, গাজী সাহাব উদ্দিন আহমেদ, আফজাল চৌধুরী, মতুর্জা বশীর, শাহরিয়ার কবীরসহ অনেকেরই সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে। ধারণ করা হয়েছে নোয়াখালির মজুপুর গ্রাম ও তার স্মৃতিবিজড়িত কায়েতটুলির (ঢাকায় জহির রায়হানের পৈত্রিক বাসভবন) কয়েকটি দৃশ্যও। বিএফডিসিতে আরও কিছু দৃশ্যধারণ শেষে অচিরেই তারা সম্পাদনার কাজ শুরু করবেন।

শাহেনশা জানিয়েছেন, বিএফডিসির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকে সম্ভাব্য প্রয়োজনীয় সব ধরণের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ফলে আমলাতন্ত্রের দৌরাত্ম্য সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাটি ভেঙ্গে গেছে তার। আর সবার কাছে তিনি অনুরোধ করেছেন, “কারো কাছ জহির রায়হানের স্মৃতিবিজড়িত কোন স্মারক, ভিডিওচিত্র, চিঠি বা এ জাতীয় কোনোকিছু থাকলে, দয়া করে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কারণ সেগুলোও প্রামাণ্যচিত্রে ব্যবহার করতে পারব আমরা।”

৫ আগস্ট বিএফডিসি আয়োজিত জহির রায়হানের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তথ্যচিত্রটির কিছু অংশ প্রদর্শন করা হবে বলে জানিয়েছেন জহির রায়হানের ছোট বোন ও তথ্যচিত্রের নির্মাতা শাহেনশা বেগম। তিনি আশা করছেন, আগামী বছরের ৩০ জানুয়ারি তথ্যচিত্রটি সারা পৃথিবীর সব শ্রেণীর মানুষ দেখতে পারবেন। জানতে পারবেন এমন একজন মানুষকে যাকে দিনবদলের স্বপ্ন ভালোবাসার কারণে অকালেই চলে যেতে হয়েছে।

এই তথ্যচিত্র নির্মাণের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, “এ ধরণের কাজের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না আমার। তবে সবাই আমাকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। জানি না কাজটি কেমন হবে। তবে আমার চাওয়া, মেজদাকে জানার একটা প্রচেষ্টার শুরু হোক এই কাজটি থেকে। নতুন প্রজন্মের মধ্য থেকে আরও আরও জহির রায়হান বেরিয়ে আসুক।”

৫ আগস্ট জহির রায়হানের জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমীর এক্সপেরিমেন্টাল হলে সকাল ১১টায় ‘মেজদাকে খুঁজে ফেরা’ প্রামান্যচিত্রটি প্রদর্শন করা হবে।

১০টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×