মাথার উপর গনগনে সূর্য নিয়ে সবাই একটা তিন
রাস্তার মোড়ে অপেক্ষা করছে।
একটি রাস্তা এসে দুইভাগ হয়ে গেছে এখানে।
ডানপাশের রাস্তাটি গেছে স্বর্গের দিকে আর
বামপাশেরটি গেছে নরকের দিকে। সবাই
লাইনে দাঁড়ানো। লাইনগুলো করা হয়েছে মৃত্যু
তারিখ হিসেবে। যেমন কেউ যদি ৩০৫০ সালের
জানুয়ারিতে মারা যায় তাহলে সে লাইনের
সামনে থাকবে আর ডিসেম্বরে যারা মারা গেছেন
তারা থাকবেন পেছনে। ঈশ্বর সবার হিসেব নিচ্ছেন।
দুনিয়াতে কৃতকর্মের উপর নির্ধারিত
হচ্ছে কে ডানপাশের রাস্তায় যাবে আর
কে যাবে বামপাশেরটায়। ২০১৪ সালের লাইনটার
মাঝামাঝি মৃদু গুঞ্জনের মত শোনা যাচ্ছে। মূলত
জুন-জুলাইয়ের
দিকে যারা পরকালে পাড়ি জমিয়েছেন তারাই
এখানে দাঁড়ানো। তাদেরকে টুকটাক গল্প
করতে দেখা গেল। গল্পের বিষয় কে কিভাবে/কেন
মারা গেছেন এইসব। ন্যাশনাল জিওগ্রাফির এক
ফটোগ্রাফারকে কথা বলতে দেখা যায়।
তিনি জানান দূর্লভ এক চিতাবাঘের
ছবি তুলতে গিয়ে তিনি চিতাবাঘটির
ব্রেকফাস্টে পরিনত হন। সবাই তার জন্য অনেক
আহা-উহু করে। তাকে এই বলে সান্ত্বনা দেয়া হল
যে তিনি না থাকলে আমরা প্রকৃতি সম্পর্কে অনেক
কিছুই জানতে পারতাম না।
ফটোগ্রাফারের পরেই দাঁড়ানো এক
ফিলিস্তিনি ভদ্রমহিলা। তিনি বলেন
যে ইজরায়লী বিমান হামলায় তিনি ও তার
পরিবারের সবাই মারা যান। লাইনে তার
আশে পাশে তার পরিবারের সদস্যরাও দাঁড়িয়ে।
একটা দু-তিন বছরের বাচ্চাকেও দেখা গেল। সবাই
ইজরায়েলীদের বর্বরতায় ছি ছি করলো।
ভদ্রমহিলাকে বলা হল উনার মত মানুষ
না থাকলে আমরা জানতাম না দেশপ্রেম কি।
এরপরেই দাঁড়ানো ১৫-১৬ বছরের এক কিশোরী।
গায়ের রঙ
দেখে ফিলিস্তিনী মহিলা তাকে জিজ্ঞেস করেন, "এই
খুকি! তুমি ইন্ডিয়ান?"
মেয়েটি বলে, "না আমি বাংলাদেশী। তবে ইন্ডিয়ান
হলেই ভাল হত।" তার কথায়
ফিলিস্তিনি মহিলা কিছুটা কনফিউজড হয়ে যান,
"বুঝলাম না। তুমি উশখুশ করছো কেন?
কিভাবে মারা গিয়েছিলে তুমি?" মেয়েটি উত্তর দেয়,
"পাখির জন্য।" পাখি কানে যেতেই ন্যাটজিওর
ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার ভীড়
ঠেলে সামনে এলেন। মনে মনে তিনি বলছিলেন
"পাইলাম আমি ইহাকে পাইলাম।" সামনে এসেই
তিনি প্রশ্ন করেন "আমি যেমন একটা পশুর
ছবি তুলতে গিয়ে মারা গেছি ঠিক তেমনি তুমি কোন
পাখির ছবি তুলতে গিয়ে মারা গেছ? ওয়াও। গিভ
মি ইউর নাম্বার।" মেয়েটি এবার লাজুক হেসে বলে,
"না। আমি পাখি থ্রিপিসের জন্য
আত্মহত্যা করেছিলাম।"
ফিলিস্তিনী মহিলা আরো কনফিউজড হয়ে যান
এবার, "তোমার পোষা পাখিকে কেউ তিন
টুকরা করে ফেলেছে এই জন্য তুমি আত্মহত্যা করেছ?
আহারে!" মেয়েটি এবার কিছুটা রেগে যায়। মহিলার
দিকে তাকিয়ে বলে, "আরে বোকা! পাখি হল
সিরিয়ালের নায়িকা। ও যে ড্রেস পরে তার নাম
পাখি ড্রেস। ওইটা না কিনে দেয়ায় আমি সুইসাইড
করি।" ফিলিস্তিনী মহিলা এই কথা শুনে চুপ
হয়ে গেলেন। ফটোগ্রাফার ভদ্রলোক তবুও দমবার
পাত্র নয়, "তোমার মত মানুষ
না থাকলে আমরা জানতাম না আবেগ কি জিনিস।
আই স্টিল ওয়ান্ট ইউর নাম্বার।" মেয়েটি খুব যত্নের
সাথে ফটোগ্রাফারকে তার বাসার বুয়ার
নাম্বার লিখে দিল। এটাও সে সিরিয়াল
থেকে শিখেছে।
বাই দা রাস্তা ঈদ মোবারক সবাই কে © তন্ময় দেবনাথ
।