somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Article 15

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাশের দেশ ভারতের সিনেমার বাজার দুনিয়াব্যাপী। রাজনৈতিক বা স্রেফ ধর্মের কারনে চরম ভারত বিদ্বেষী এদেশের মানুষেরা ভারতীয় হিন্দি, বাংলা এবং গত দশক থেকে দক্ষিণি সিনেমা দেখতে দেখতে বেড়ে উঠে!
ভারতীয় সিনেমা দেখার ইস্যুতে এদেশের বাম ডান সকলকেই একাট্টা পাই আমরা। অভিযোগ আছে হিন্দিভাষী সিনেমাগুলো বাইরের সিনেমার নকল বা দক্ষিণের সিনেমার রিমেক মাত্র। এক সময় কলকাতার বাংলা ভাষী সিনেমা হিন্দিতে রিমেক হত, এখন যেমন দক্ষিণের সিনেমাগুলো হিন্দিতে হয়।

বাংলাদেশ ভারতের বাজার বটে। আলাদা করে শারীরীক দখল এ যুগে অচল চিন্তা। বাজার দখল তো দেশ দখল! সেই অর্থে বাংলাদেশ ভারতের দখলে।

ভারতের চাঁদে নামার সফলতা ব্যর্থতায় যেমন প্রতিক্রিয়াই দেখাই না কেনো ভারতের সিনেমা গান দেখা চাই চাই। আর সব কিছুর মত এ জায়গাতেও ভারতকে অক্ষম গালাগালি করা ছাড়া নিজেদের সক্ষমতা বাড়াবার কোন চেষ্টাই আমাদের নেই, হালের দু একটি ব্যতিক্রম ছাড়া।

ধর্মাশ্রয়ী বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর হিন্দি সিনেমাও ধর্মাশ্রয়ী বা উগ্র জাতীয়তাবাদে আক্রান্ত। বিজেপির আগের আমলেও এমনটা দেখেছি। ফ্যান্টম, রাজী, পোখরান, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকসহ আরো অনেক সিনেমা কথিত ভারতীয় শৌর্য্য বীর্য্য দেখাবার সিনেমার। জঙ্গী জেহাদী মারতে পাকিস্তানের ভিতরে গোপন সফল মিশন বা মিলিটারি অপারেশন দেখানো আরো বহু সিনেমা এখন ভারতে তৈরি হচ্ছে এবং ধারনা করা যায় বিজেপি যদ্দিন ক্ষমতায় আছে, এই প্রবনতা চলতেই থাকবে বলিউডে। বলাবাহুল্য এসব সিনেমার প্রত্যেকটাই আরোপিত বা ফরমায়েশকৃত।

আমাদের ছোটবেলায় আমরা বিটিভিতে দেখানো 'ম্যাকগাইভার' এর দারুন ভক্ত ছিলাম। কোনভাবেই মিস করতে চাইতাম না ম্যাকগাইভার। ম্যাকগাইভার পরে বাংলা ডাবিং করেও দেখানো হইছে। ম্যাকগাইভার আসলে স্নায়ুযুদ্ধের আমলের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে বানানো মার্কিন প্রোপাগান্ডার অংশ ছিলো মাত্র। ম্যাকগাইভারের প্রত্যেকটা অপারেশন প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ছিলো এবং ম্যাকগাইভারে দেখানো বয়ান মোতাবেক অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই ছিলো সেটা আর সেই গোপন ও রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে স্বভাবতই শুভ শক্তি অর্থাৎ এক্ষেত্রে মার্কিনীদের জয় হত। মার্কিন জনগন বা বিশ্বের দু ভাগে ভাগ হওয়া মানুষদের একভাগকে উজ্জীবিত রাখতে মার্কিনীরা এভাবে টিভি পর্দাও দখলে রাখতো। ভারতের উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বানানো ইদানীংকার সিনেমাগুলোও তাই। বিজেপির ফরমায়েশে বানানো এই সিনেমাগুলো নির্জলা পাকিস্তান বিরোধীতা ও উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদকে প্রমোট করে আদতে। কারন ও উপযোগীতা ভিন্ন হলেও বলাবাহুল্য, আপাদমস্তক জেহাদী রাষ্ট্র পাকিস্তান এদিক দিয়েও পিছিয়ে ভারতের কাছে যেমনটা পিছিয়ে ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়ন।

চাঁদে যান পাঠানো যদি ভারতের উন্নতির মাপকাঠি হয় তাহলে Article 15 এ দেখানো চিত্র ভারতের সমাজের হাজার বছর পিছনে আটকে থাকার যথাযথ উদাহরণ।
জাত পাতে বিভক্ত ভারতের সমাজের বস্তিনিষ্ঠ বয়ান এই সিনেমাতে পাই। জাত পাত নিয়ে রাজনীতি, প্রশাসণযন্ত্রের ভূমিকা, হাজার বছরের লালিত অমানবিক অভ্যাস যে কত নৃশংস হতে পারে তা বেশ ভাল করেই উঠে এসেছে এই Article 15 তে।

Article 15 তে যেমনটা দেখানো হয়েছে তাতে সিনেমাটা তৈরিতে এর নির্মাতারা শতভাগ নির্মোহ ও সৎ থাকার চেষ্টা করেছে বলেই মনে হয়। কিছু জায়গা ছাড়া।

সিনেমাতে দেখানো রাজনীতিকের মুখে নমঃশুদ্র ও ব্রাহ্মণকে এক কাতারে আসতে বলার রাজনৈতিক বয়ানটা বেশ উদ্দেশ্য প্রণোদিতই হয়তবা। হিন্দুত্বের স্বার্থে জাত পাত ভুলে উঁচু নিচু সব হিন্দুকে সমান হতে বা একাট্টা হতে বলা হচ্ছে যবন মানে মুসলমান ঠেকাতে? না কি সত্যিকার অর্থেই ধর্মের পরিচয়ের উর্দ্ধে উঠে মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার চেষ্টায়? তরুণ আইপিএস অফিসার লোক দেখানো না, মনে প্রাণে ভারতের সংবিধান ধারন করে সমাজে অন্তত ধর্মীয় জাত পাতের উর্দ্ধে উঠে স্বীয় দায়িত্ব পালনে আন্তরিক থাকার চেষ্টা করতে দেখি আমরা। তরুণ আইপিএস অফিসার ব্যক্তি জীবনে খুবই আধুনিক মনস্ক। দুটো কাজ হয়েছে এতে, ভারতের সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্ব ও আধুনিকতা দেখানো হয় আবার ভদ্র ভারত নির্মাণে রাষ্ট্রযন্ত্র আন্তরিক সেটাও দেখানো হয়। তবে, সমস্যা থেকেই যায়। ভারতের রাষ্ট্রযন্ত্রে বর্তমানে কথিত হিন্দুত্ববাদী শক্তি ক্ষমতায়। যারা আবার ফরমায়েশি সিনেমা বানায় নেয় বলিউড থেকে।

Article 15 তে দেখানো পথে হোক বা যেভাবেই হোক চাঁদে যান পাঠানো ভারতের সমাজ কলুষ মুক্ত হোক। হাজার বছরের নির্মম অপ্রয়োজনীয় নৃশংস প্রথা থেকে ভারতের মুক্তি ঘটুক। ভারত সভ্য ও আধুনিক হয়ে উঠুক। আর প্রতিবেশি যত সৎ ভদ্র সভ্য হবে পাশাপাশি বসবাস করে ততই শান্তি স্বস্তি।

আমরাও উদ্বুদ্ধ হয়ে আশরাফ আতরাফের কাতার করা থেকে মুক্ত হই। মানুষ হয়ে উঠি।

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৪৪
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×