somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথোপকথন! (অনুগল্প)

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- কেমন আছো?
- কে?
-আমি!
‐আমি মানে?
‐চিনেত পারছো না ! নাকি চিনতে চাইছো না!
- হঠাৎ। কী মনে করে।
- এমনিই। কারন ছাড়া।
- তাই।
- হায়দার ভাইয়ের খবর পেলে?
- এ নিয়ে তোমার সাথে কথা বলতে চাই না।
- স্যরি।
- তোমার স্বভাবটা পাল্টালো না পূর্নেন্দু।
- স্বভাব তো! তাই।
- জরুরী কিছু বলার না থাকলে রাখতে চাই।
- সব কথাই তো জরুরী। জানতেও চাইলে না কেমন আছি!
- তোমার ভাল থাকবারই কথা।
- সব জেনে বসে আছো দেখি।
- আগের মতই রয়ে গেলে৷ রাখি।
- না। প্লিজ।
- বল।
- হায়দার ভাই আর আসবেন না৷
- তোমাকে কে বললো?
- আমি জানি।
- জানবাই তো।
- হায়দার ভাই-ই বলেছে।
- বিশ্বাস করি না।
- তোমার ব্যাপার সেটা।
- তবে, হায়দার ভাই-ই বলেছে।
- বেশ। জানলাম।
- খারাপ লাগছে?
- হাসালে।
- বাহ!
- রাখি।
- না। প্লিজ।
- হুম।
- আমি খবরটা বলতে চাইনি।
- ভাল করেছো।
- কী জানি।
- তুমি তো কিছুই জানোনা। কখনোই কিছু জানতে না৷
- এভাবে বল না। প্লিজ।
- আজ কেন আসছো এসব জানাতে। বলতে। তোমার সাথে আমার সব, সেই কবেই চুকে গ্যাছে। আর কখনোই কল করবে না পূর্নেন্দু। তুমি আমার কাছে সেই কবে থেকেই মৃত। আজ হায়দারও গেলো।
- শান্ত হও।
- আমি শান্তই আছি। পুরুষ মানুষ চিনেছি বহু আগেই।
- প্লিজ।
- বয়স তখন কতটুকুই বা ছিলো আমার! ছেড়ে চলে গেলে। কী দায়িত্ব বোধ। কী ভালবাসা!
- এ ছাড়া আর কিছু করার ছিলো না।
- খবরদার। একদম চুপ। একটা কথাও আর বলবে না।খবরদার।
- রাখি।
- রাখবাই তো এখন। কাপুরুষ কোথাকার। লজ্জা করে না আমাকে কল করতে!
- ভুলতে পারি না যে।
- হা হা হা। হাসালে।
- বিশ্বাস করলে না।
- যেদিন চলে গেলে সেদিন থেকে আর কাউকেই বিশ্বাস করি না। পুরুষ মানুষ কে তো একদমই না। তোমার কথা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বুঝতে পেরেছো নিশ্চয়।
- হুম।
- তোমার খবর দেয়া হয়ে থাকলে রাখি এখন। অনেক কাজ বাকি আমার।
- আমাকে ক্ষমা করেছো?
- আবার!
- মানে?
- এই এক ন্যাকামো আবার শুরু করলে৷
- খারাপ লাগে তো।
- তোমার আবার খারাপ লাগা! হাহ।
- আমি তবুও বলে কয়ে সরে গেছি। তোমার হায়দার কী করলো?
- জানাই ছিলো৷ তাই অবাক হইনি। কষ্ট পাওয়ার তো প্রশ্নই আসেনা।
- তুমি জানতে!
- বারে। জানবো না। যেদিন তুমি জীবনের সবচে কঠিন সংকটে ফেলেছিলে, সেদিন থেকেই জেনে গেছি পুরুষ মানুষ কী জিনিস। হায়দারের সাথে এটা আমার মিউচুয়াল। হায়দার আমার প্রকৃত বন্ধুই। কিন্তু তুমি একটা আস্ত অমানুষ।
- আস্তে। আস্তে। কথাগুলো বুঝে উঠতে দাও।
- কেনো। বাংলায় বলছি। বুঝতে পারছো না।
- হুম। বোঝার চেস্টা করছি।
- তুমি একটা অমানুষ। কী ভেবেছিলে? জলে হাবুডুবু খাবো!
- তা হবে কেনো।
- তাই তো চেয়েছিলে।
- তা কেন চাইবো।
- চেয়েছিলেই তো।
- কখনোই না।
- তোমার লজ্জা করেনা আমার সাথে কথা বলতে।
- করে। তবুও বলি।
- তোমার আবার লজ্জা! হাসালে।
- প্লিজ।
- অনেক কথা হয়েছে। রাখতে হবে৷ আর কল দেবেনা কখনোই।
- ও।
- কোন কথাই তো রাখতে পারো না৷ তোমার মত ফালতুরা কখনোই কোন কথা রাখতে পারে না৷ কল দিতে মানা করলাম। এটা রাখার চেস্টা কর।
- রাখবো।
- ভরসা করিনা।
- এভাবে বলনা মায়মুনা।
- কিভাবে বলবো তাহলে!
- আর কখনোই কল পাবে না।
- তোমাকে বিশ্বাস করি না।
- ওকে। কর না।
- সেদিনের পর থেকে।
- হুম।
- রাখি।
- ভাল থেকো।
- সে নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না।
- ওহ।
- কথাটা মনে রেখো। দিন পাল্টেছে।
- হ্যালো। হ্যালো..... হ্যালো।
-হ্যালো হ্যালো করছো কেনো। শুনতে পাচ্ছি। বলো।
-তুমি সত্যিই পাল্টে গেছো।
-রাখতে চেয়ে আবার কী শুরু করলে। উফ!
-আরেকটু।
-বল।
-রেখো না। সময় দাও একটু।
-বল তো।
-জানি অনেক কস্ট অভিমান রাগ নিয়ে আছো আমার উপরে। কিন্তু...
-তোমার উপর রাগ। অভিমান। কস্ট। কেনো বলতো?
-হবারই তো কথা।
-তুমি পারোও বটে। ক্লাউন একটা।
-বল। যা খুশি বল।
-তোমাকে কিছু বলতেও চাইনা।
-আমি নিরুপায় ছিলাম। আমার ধারনা এখন তুমিও সেটা বোঝ।
-আমি কিছু বোঝাবুঝির মধ্যে নেই। আর অতীত নিয়ে একদমই ভাবতে চাই না আর।
-হায়দার ভাইয়ের ব্যাপারটা আমি বুঝি নাই। বোঝাবে একটু।
-না বোঝার কী আছে। আর তোমাকে এসব জানাতে বোঝাতে যাবো কেনো বলতো।
-ওহ।
-তোমার মাত্রা বোধ আগের মতই কম রয়ে গ্যাছে। বয়সটাই বাড়লো শুধু তোমার।
-তোমাকে সুখি না হোক, তোমার জীবনটা স্বস্তির হলেও নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম!
-আহ! আমাকে রাখতে হবে।
-প্লিজ।
-উফ!
-হায়দার ভাই এমন করলো কেনো। বল প্লিজ।
-হায়দার কিছুই করেনি। আমিই সেপারেশন চেয়েছিলাম। বিয়ের দিন থেকেই লোকটাকে দেখে আসছি। নিপাট ভদ্রলোক। আর এতো বেশি ফরমাল! বউয়ের সাথেও সব সময় ভদ্রতা করে৷ তাই আর সহ্য হল না৷
-কী!
- অদ্ভুত ব্যাপার হল, বিনা বাক্যে মেনেও নিলো। কী সব ব্যবস্থা করে জার্মানী চলে গেলো৷ বাচ্চাটার কথাও কিছু বললো না।
- তোমার, তোমাদের ভবিষ্যত ভাবলো না!
- তার আজীবনের সব অর্জন রেখে গ্যাছে আমাদের জন্য। তোমার মত না। অন্তত দায়িত্ব জ্ঞানহীন কাপুরুষ না। তবে সে নিপাট ভদ্রলোক। উত্তাপহীন। নির্জলা। তাই আর নিতে পারছিলাম না।
- ও।
- পারবে বাকী জীবনটা একা কাটাতে?
- সে তোমায় ভাবতে হবে না।
- ভাবছি না। বোঝার চেস্টা করছি।
- তোমাকে বুঝতেও হবে না।
- কী জানি।
- হায়দারের নাগাল তুমি কোথায় পেলে?
- হায়দায় ভাইয়ের সাথে তোমার বিয়ের আগে থেকেই আমার জানাশোনা ছিলো। আমাদের ব্যাপারটা জানতো কী না, তা জানি না।
- হায়দার তোমাকে কী জানিয়েছে?
- জার্মানীতে সেটেল করতেছে। একা। এটুকুই।
- সেটা জেনেই তোমার পুরনো প্রেম উথলে উঠা শুরু করলো।
- এভাবে বল না।
- হায়দারের অনুপস্থিতির সুযোগ নিচ্ছো। ছি!
- হায়দার ভাই থাকাতে তোমাকে কল দিই নি আমি?
- কেন দিতে?
- তুমি ধরতে কেনো?
- বাহ। বাহ।
- আমাকে তো ভোল নি এখনো। পারবেও না ভুলতে।
- হা হা। ঘৃণার বস্তু কে ভোলা এতো সহজ?
- মায়মুনা!
- এর চেয়েও বেশি অপমান, ঘৃণা তোমার প্রাপ্য।
- ওহ।
- তাই-ই।
- ঘৃণা করতে হলেও অনুভুতিতে রাখতে হয়। উল্টো করে হলেও। যাক, ঘৃণা হয়ে হলেও বেঁচে তো আছি।
- লজ্জা করে না এসব ন্যাকামো করতে!
- ন্যাকামো কেন হবে? ভুলে তো আর যাও নি। কাউকে ভুলে যাওয়া আর নিজের কাছে সেই মানুষটিকে মেরে ফেলা একই কথা। সেটা তো আর হয়নি। কাউকে ভুলে যাওয়া মানে নিজের কাছে সেই মানুষটি নাই হয়ে যাওয়া। মৃত্যুর চাইতেও বেশি বেদনার কাউকে ভুলে যাওয়া। তোমার কাছে বেঁচে তো আছি।
- আবার শুরু করলে!
- ভুল কী বললাম।
- সঠিক বেঠিক বুঝি না। তোমার এসব ফালতু আতলামো আর নিতে চাই না।
- এক সময় এসবই ভালো লাগতো তোমার।
- সেই দিন আছে? লজ্জা করে না সেসব দিনের কথা তুলতে?
- চাইলেও অতীত পাল্টাতে পারবে না। এটাই ট্রাজেডি মানুষের। তোমারও। আমাকেও ভুলতে পারবে না।
- ঘৃণা তো করতে পারি।
- ঘৃণা করতে হলেও তো মনে রাখতে হয়।
- আবার! সেই খুশি নিয়েই থাকো।
- তোমার কাছে বেঁচে আছি। সেটাই বা কম কী।
- হাহ
- ঢাকায় আসছি সামনের মাসে।
- তো?
- তো কিছু না।
- রাখি।
- প্লিজ
- ছেলেটা পড়তে বসছে। দেখাতে হবে।
- ছেলের বয়স কত?
- জেনে কী করবে? আর জানাবোই বা কেন?
- এমনিই।
- এসব আর ভাল লাগছে না। রাখি তো।
- না।
- আর নিজের কথাটা রেখো।
- কোন কথাটা?
- কল দেবে না আর। সেটা।
- হুম। কল আর দেবো না। ঢাকায় এসে নেই।
- ঢাকা আসার সাথে কলের কী সম্পর্ক। প্লিজ আমাকে আমার মত থাকতে দাও।
- তুমি তো তোমার মতই আছো। আগেও তাই ছিলে।
- আগেও তাই ছিলাম মানে!
- আমি না হয় কাপুরুষ। তুমি কী ছিলে? তুমি কোন চেস্টা করেছিলে সম্পর্কটা রাখতে?
- তোমার নির্লজ্জতায় স্তম্ভিত । এসবের সাথে আমার আমার মত থাকতে চাওয়ার কী সম্পর্ক?
- আছে। আগে বল তুমি চেস্টা করেছিলে সম্পর্কটা রাখতে?
- তুমি ভুলে যাচ্ছো পূর্ণেন্দু তুমি কাকে কী বলছো!
- একদম ভুলিনি।
- ভুলেছো। না হলে তোমার মাথা গ্যাছে। অবশ্য যাবারই কথা। অভিশাপ তো কম মানুষের পাওনি আর।
- এসব বলে নিজের দায়টুকুও এড়িও না।
- দায় এড়াবে কে? আমি? তোমার মাথা ঠিক আছে? আমার দায়ের প্রশ্ন আসছেই বা কেনো?
- তোমার কোন দায় নেই? আমি তো একটা মানুষ নাকি?
- অমানুষ।
- সব দায় আমার। সব চেস্টা আমাকেই করতে হতো?
- তাই তো হয়। তাই তো করার কথা তোমার। দায় না নাও। চেস্টা না কর। কিন্তু না পালালেও পারতে!
- পালিয়েছি। আমি?
- তো কে?
- মায়মুনা! পারছো এভাবে বলতে!
- মিথ্যে বলছি?
- সত্যটা তুমি জানো না?
- সত্য জানি জন্যই তোমাকে চিনেছি।
- চাইলেও আমরা সম্পর্কটা রাখার মত বাস্তবতায় ছিলাম না। এই সত্যটুকু তুমি জানতে?
- আমাকে ছেড়ে চলে গ্যাছো তুমি। এই সত্যিটা জানি আমি।
-আর কিছু জানো না?
-নাহ।
-তা আর জানবে কেন এখোন!
-আর কী জানার কথা আমার?
-আমি কী চেস্টা করিনি?
-জানি না।
-কেন জানবে না?
-আমি শুধু জানি যে, তুমি পালিয়েছিলে। কাপুরুষের মত।
-ধ্যাৎ!
-সত্য সব সময়ই সর্বাবস্থাতেই তিতো লাগে।
-বাজে বকো না।
-আমি বাজে বকছি! কোন মুখে আমাকে এভাবে বলছো!
-বাজেই তো বকছো।
-একদম চুপ। আমি রাখবো। আর না।
-সত্য সব সময়ই সত্য। আর তোমার স্বভাব অভিযোগ করে যাওয়া। আগেও তাই ছিলে।
-আর না। একটা কথাও আর না। রাখি।
-দাড়াও। তোমার মা আমাকে কী বলেছিলো মনে আছে তোমার?
-মা তো অনেক কথাই বলেছিলো। বিশেষ একটা কথা তোমায় পালাতে সুযোগ করে দিয়েছে জন্য সেটা আলাদা করে বলছো এখন?
-আর কোন বাধা ছিলো না?
-সেসব আগেই ভাবা উচিত ছিলো তোমার।
-তুমিও ভাবতে পারতে।
-তুমি উস্কে দিয়ে বিপথে এনেছিলে আমায়। আমার বয়সই বা কত ছিলো।
-ছিঃ
-ছিঃ মানে?
-আঠারো হয়নি তখন তোমার?
-আঠারো হলেই সব হয়?
-হয় না?
-প্রথম হবার সুযোগে যা খুশি করেছো। কিস্যু বুঝে উঠতে দাও নি।
-তোমার প্রথম প্রেমে পড়ার দায় নিশ্চয় আমার না।
-তুমি সেই সময় মিসগাইড করছো আসলে। এখন বুঝি। তোমার মত লোকের খপ্পরে পড়াই উচিত হয় নি।
-চমৎকার।
-বিদঘুটে! জীবনটা অসহনীয় করে দিছো একেবারে।
-আর আমার?
-তোমার আবার কী! আরেকজন কে জুটিয়েছো। মজায় আছো। তোমার কাছে সব কিছুই তো মজা।
-এখনো একাই আছি।
-একা নয়। বল দোকলা হবার উপায় তোমার নাই। তাই একা আছো। আর এটা তো ফ্যান্টাসি তোমার কাছে।
-বেশ ভাল বুঝছো দেখি।
-এই বোঝাটাই যদি সেই সময় বুঝতাম!
-অনুতাপ হয়?
-আফসোস হয়। নিজের উপর রাগ হয়। নিজের উপর ঘেন্না হয়।
-ওহ।
-হুম। সুযোগ পেলে অতীত পাল্টে নিতাম। পারছি না। অসহায় লাগে।
-এতো বিতৃষ্ণা!
-তোমাকে ঘৃণা করি যে। তাই জীবনের উপরই বিতৃষ্ণা চলে আসছে।
-আমার আর করার কিছু ছিলো না মায়মুনা।
-ভুল স্বপ্ন না দেখালেও পারতে।
-তোমায় ভালবেসে ফেলেছিলাম যে।
-তুমি কাউকে ভালবাসতে পারো?
-পারি না?
-তুমি সেসব বোঝ?
-বুঝিনা?
-কিশোরীর প্রথম প্রেমের মত অমূল্য প্রেম আর কী আছে পৃথিবীতে! সেটার এতো অনাদর করলে?
-অনাদর করেছি!
-করেইছো তো।
-আমার বুঝি কস্ট হয় না?
-তোমার আবার কস্ট! হাহ।
-একটানা রাগ ঝেড়েই যাচ্ছো। আমার জায়গা থেকে নিজেকে কখনো দেখেছো?
-এসব বলে কী বোঝাতে চাও পূর্নেন্দু। কী হবে আর কথা বাড়িয়ে!!
-হয়ত কিছুই হবে না। মনের সান্ত্বনা। ক্ষণিকের। তোমার খবরটা অন্তত পাচ্ছি। এটাই সুখের বড় পাওয়া এখন।
-আমি ভালই আছি। তোমাকে ছাড়া যেমন ভাল থাকা যায়। সেই কবে থেকে। আম্মু, বিশেষ করে আব্বুর কথা ভেবে হায়দারের সাথে বিয়েতে আর অমত করতে পারিনি। বিয়েটা করতে না হলে, হয়ত ভাল থাকতাম। এ যে কী লড়াই নিজের সাথে, নিজের অনূভূতির সাথে তুমি বুঝবে না। মরমে মরে যেতে হয় প্রতি মুহুর্তে। তুমি কেন, পৃথিবীর কোন পুরুষই এটা বুঝবে না। নারীর কতটা কী এরকম পরিস্থিতি! আমি খুব ভাল আছি পূর্ণেন্দু। সেই সেদিন থেকে।
-মায়মুনা!
-ভাল আছি পূর্ণেন্দু। এটাই তো জানতে চাইছিলে৷ জেনে রাখো। ভাল আছি।
-আমি জানি পৃথিবীতে আমার মত অপাঙতেয় আর কেউ নেই। কোন বিচারেই আমি কাউকে আমার কথা, কস্ট বোঝানো দূরের কথা বলতেও পারবো না। আমার অবস্থাটা তবুও একবার ভাবো।
-আর ভেবে কী হবে বল।
- আম্মু মানে তোমার মা, আমাকে তাঁকে আম্মু ডাকতে নিষেধ করেছিলো। মনে আছে তোমার।
- হুম।
- তখন থেকেই আমি মনের জোর হারাচ্ছিলাম।
- বুঝতে দাও নি তো। বলওনি কিছু এ বিষয়ে!
- হুম। তারপর যেদিন ডেকে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় শান্ত ভাবে বোঝাতে চাইলো, সেদিন থেকে মনটা ছোট হয়ে ছিলো৷ জানি না তুমি বুঝতে পেরেছিলে, কি না৷ আম্মু কত অসহায়ভাবে আমাকে সরে যেতে বললো, আমি হতবাক হয়ে গেছিলাম সেদিন। আমার হাত ধরে কড়জোড়ে মিনতি করার মত। নিজের কাছে ছোট হয়ে গেছি। অপরাধী হয়ে গেছি নিজের কাছে সেই মুহুর্ত থেকে।
- দুই পরিবার থেকেই এরকম বা এরচেয়েও ভয়ংকর প্রতিক্রিয়া পাবো আমরা। সেটা কী তুমি জানতে না?
- জানতাম। কিন্তু মানতে চাইতাম না হয়ত। কোথাও না কোথাও, কোন ভাবে কোন একটা সমাধান আমরা পেতাম এই আশা ছিলো মনে সব সময়ই।
- সেই ভরসাতেই ছিলাম।
- সেই ভরসা আর রাখতে পারলাম কোথায় বল।
- তোমার তখনকার সব বড় বড় কথা এখনো আমার কানে বাজে। উফ। কী বোকা ছিলাম আমি।
- বড় বড় কথা!
- বড় বড়ই তো।
- বড় বড়ই হয়ত।
- এখন কাকে শোনাও সেরকম বড় বড় কথা!
- ব্রাহ্ম্যচর্য্য পালন করি এখন আমি মায়মুনা।
- আমার সাথে কথা বলেই যাচ্ছো৷ এই তোমার ব্রাহ্ম্যচর্য্য!
- দায় শোধের আশা থেকে এই বিচ্যুতি।
- আবার সেই উদ্ধত্য দেখাচ্ছো পূর্ণেন্দু।
- মানে!
- তোমার বড় বড় কথার অভ্যাসটা গেলো না। কীসের দায় কী দিয়ে শোধ করতে চাও।
- দেখি।
- পারবে জীবনটা স্বাভাবিক করে দিতে?
- আমার নিজের জীবনটাও স্বাভাবিক নেই।
- তাহলে!
- দেখি! কী থেকে কী করা যায়!
- তোমার কথা বলা শেষ নিশ্চয়? রাখি তাহলে।
- শেষ হলো কই! কোন কথাই তো শুরু করতে পারলাম না।
- সেই পুরনো কৌশল তোমার! কথা বারাবার। হাহ।
- কেনো কল করেছি সেটাই তো জানতে চাইলে না।
- কারন ছাড়াই দিয়েছো। তোমার কারন লাগে?
- নাহ তো
- কথা তো হলই। আর কী।
- ঢাকা আসছি সামনের মাসে।
- শুনলাম তো আগেই।
- দেখা করতে চাই।
- হাহাহা
- হাসার মত কিছু বললাম?
- নিজের কাছে আর ছোট হতে চাই না।
- এভাবে বলছো কেনো।
- তোমার জ্বালায় এই বয়সে নাম্বার পাল্টাতে হবে দেখছি এখন!
- মানে!
- তোমার আচরণে আমি আগের মতই স্তম্ভিত।
- কী করলাম।
- দেখা করার কথা তুমি ভাবছো কী করে পূর্ণেন্দু!
- দেখা করা যায় না?
- তোমার সাথে কথা বলাই উচিত না।
- তাই!
- হ্যা তাই।
- কথা বলছো কেন তাহলে?
- তুমি বলাচ্ছো। রাখতে চাইছি বেশ ক বার।
- রাখতে পারলেই স্বস্তি পাবে?
- সেটা তো ভিন্ন প্রশ্ন। আর পাবো না কেন?
- পাবে?
- তোমার আমার সম্পর্ক এসবের উর্দ্ধে এখন।
- আসলেই?
- উফ!
-তোমার নিজেরও মন চেয়েছে জন্যই এতোক্ষণ কথা বলছো। সেটা স্বীকার করতে এতো কুন্ঠা!
-কী প্রমাণ করতে চাও এ কথা বলে।
-আদতে ভালবাসো। সেই আগের মতই।
-বাসলেও কী যায় আসে!
-যায় আসে।
-তোমার কাছে সেটা হয়ত।
- তোমার কাছে না?
- নাহ।
- তাই।
- পূর্ণেন্দু আমি এই জীবনটাতে মানিয়ে নিয়েছি। প্লিজ আর বিরক্ত করো না।
- বিরক্ত করছি! আজব।
- প্লিজ।
- বিরক্ত হচ্ছো? না ভয় পাচ্ছো?
- ভয় পাবার কী আছে? ধূর।
- আবার যদি ঝড় উঠে।
- উফ। রাখি তো।
- দেখা করছো তাহলে?
- হুম।
- ধন্যবাদ।
- কবে আসছো?
- তুমি ফার্মগেটে থেকো বিকেল ৩ টা থেকে।
- কিন্তু কবে?
- আসছে ১৬ ডিসেম্বরে। সায়রকে সাথে এনো।
- ফার্মগেটে কোথায়?
- আমাদের প্রথম দেখা যেখানটাতে।
- সায়রকে আনবো?
- আনাই তো উচিত।
- রাখলাম।
- রাখো!

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:০৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×