দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহী, উপদেষ্টা, মন্ত্রী, আমলারা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, আলেম, ওলামা, পুরোহিত, সাংবাদিক, লেখক, ছাত্র, রাজনীতিবিদ, বিশেষ করে মতিউর রহমানের সাবেক রাজনৈতিক সহকর্মীরা সহ বিভিন্ন পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মীরা, প্রথম আলোয় কর্মরতরা এবং এমনকি প্রথম আলোর পাঠকেরা পর্যন্ত প্রথম আলোর উপর অসন্তুষ্ট। নাখোশ।
আলাদা করে বললে বিচার বিভাগও। বিচার বিভাগ নিয়ে মিজানুর রহমান খানের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের কারনে মিজানুর রহমান ও সম্পাদক সহ পত্রিকাটির বেশ কয়েকজনকে কাঠগড়ায় দাড়াতে হয়েছিল। মিজানুর রহমানের প্রতিবেদন কমতে শুরু করে এরপর থেকে। নাই হয়ে যায়।
প্রথম আলোর বিরুদ্ধে প্রায় সবারই অসন্তুষ্টির কারন কী? একই মাত্রার অসন্তুষ্টি আছে ডেইলী স্টার নিয়ে।
সরকারের চাইতেও প্রথম আলোর উপর বেশি ক্ষ্যাপা পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমানের সাবেক রাজনৈতিক সহকর্মীরা, এমনটাই মনে হয়েছে। তবে, সরকারের হাত লম্বা সেহেতু সরকারের অসন্তুষ্টির খবর প্রকাশ পায় ঘনঘন।
প্রথম আলো নিয়ে আরো মজা আছে। জানামতে, প্রথম আলোর ঝাঝালো বিরুদ্ধাচারণ করেন এমন অনেকেই পেশাগতভাবে প্রথম আলোর সাথে সম্পর্কিত। মতিউর রহমানকে রাজনৈতিকভাবে যেভাবে বিবেচনা করা হয়, তাঁর বিরুদ্ধ মতের লোকেরাও প্রথম আলোয় দিব্যি চাকরি করেন। আবার অনেকে নিয়মিত কলাম লেখে। লেখার সম্মানীও না কি নিয়মিত পায়।
একবার, বাংলাদেশের পতাকা যথাযথ রংয়ে পত্রিকায় না ছাপানোর কারনে বহু সচেতনকে স্পষ্ট উষ্মা, প্রতিবাদ করতে দেখেছিলাম।
প্রথম আলো ও ডেইলী স্টারকে মালিক পক্ষের প্রতিষ্ঠান ট্রান্সকম নিয়ে নেতিবাচক খবর প্রকাশ করতে দেখা যায় না বলে অভিযোগ আছে। ট্রান্সকম ও প্রথম আলো ডেইলী স্টার নিয়ে সবচে নেতিবাচক খবর প্রকাশ করে সম্ভবত বসুন্ধরার কালের কন্ঠ। যমুনার যুগান্তরও।
প্রথম আলোর সম্পাদকীয় নীতি কী ও কেমন। এটা মতিউর রহমানই ভাল বলতে পারবে। প্রথম আলো নিয়ে গাল গপ্পোও চালু আছে। বেশ ক বছর আগে এক সাংবাদিক বন্ধুর কাছে শুনেছিলাম একটানা ১২ বছর একটি খবর না ছাপানোর জন্য প্রথম আলোকে প্রতি মাসে কে বা কাহারা না কি মাসেহারা দেয়! কী বিচিত্র! প্রথম আলোর সেই সময়ের সিএ ভবনের অফিসের সামনে দাড়িয়েই শুনতে হয়েছিল এ কথা। প্রথম আলোকে তার কাজের জন্য দেশের আলেম ওলামাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল। কাওরান বাজারের আম্বরশাহী মসজিদে প্রতি বছরই রোজায় ইফতার মিলাদ মাহফিল করায় প্রথম আলো।
এতো সব ঘটনা ও প্রায় সবার অসন্তুষ্টির মধ্যেও প্রথম আলোয় লেখা ও খবর প্রকাশে সবাই ব্যাকুল, নিশ্চিত করেই বলা যায়। শাহবাগে জ না দুয়েকের হাত ধরাধরি করে দাড়ানো সমাবেশে প্রথম আলো ও সম্পাদকের বাপ মা তুলে গালাগালি করা লোকজনকেও প্রথম আলোয় সেই খবর ছাপা হলো কি না সেটা খুঁজতে দেখি! দেশের একমাত্র প্রথম আলোর ই পেপারই টাকা খরচ করে পড়তে হয়। প্রথম আলোর নামটাও ধার করা। সুনীলের প্রথম আলো থেকে।
প্রথম আলোর প্রতি সবার অসন্তুষ্টি বাড়ুক। প্রথম আলোর নিজের প্রতি অসন্তুষ্টি আছে কি না জানা যায় না, থাকলে সেটা কীরকম ও কোন মাত্রার?
রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে মিথ্য অভিযোগ করার দরকার হয় না। সত্য ও বাস্তব সম্মত অভিযোগই ভুরি ভুরি। প্রথম আলোর যা দোষ সেই সেই দোষের বিচার হতেই পারে। হওয়া উচিতও। যে কারো বা যে কোন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য কথাটি। কিন্তু সকলের কাছে অগ্রহণযোগ্য ও বাস্তব সম্মত নয় এমন অভিযোগে প্রথম আলোকে সাইজ করতে চাইবার হেতু কী? আর সম্ভবও কী?
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:২৬