somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঠো চাঁদ আর মেঠো তারাদের গল্প

১০ ই জুলাই, ২০০৮ রাত ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনের অনেক বাস্তবতা জানা সত্ত্বেও একটা গাড়ি কেনার শখ খুব করে জমাট বেধে আছে। নিজের গাড়িতে করে ঘুরে ঘুরে দেখবো রাতের নগরী; খুব ইচ্ছা আমার। কোন রাতে হয়তো গাড়ির কাচ নামিয়ে উকি দিয়ে কথা বলবো পার্কের পাশে রাস্তায় ঘুমিয়ে থাকা মানুষগুলোর সাথে। তাদের সাময়িক হাসিমুখ দেখে আবার ফিরে আসবো.....কতো পরিকল্পনা.....
গাড়ি কেনার শখ আমার কখনোই ছিল না। স্কুলে পড়ার সময় হেটে হেটে যেতাম স্কুলে। দীর্ঘ পথ হাটতে হতো প্রতিদিন। সহপাঠীদের অনেকেই সাইকেলে করে স্কুলে আসতো। আমি তখন চেয়ে চেয়ে দেখতাম। তখনো সাইকেল চালানোর শখ হয় নি। উপরের ক্লাসে উঠে হঠাৎ করেই ইচ্ছা হলো সাইকেল চালাবো। একদিন সাইকেল চালিয়ে স্কুলে গিয়েছিলাম....কি যে আনন্দময় দিন আমার।
গ্রামের সেই ছেলেটার সাইকেল চালানো খুব বেশি হয়ে উঠে নি। স্বপ্নের পরিসীমাও সাইকেলের বাইরে কোথাও যায় নি। জেলাশহরে পড়তে এসেও হাটাহাটি...কিংবা রিক্সায় চলা.... অতঃপর ইট পাথরের নগরীতে এসে হিসাব গুনা বেশি হয়ে গেল। সেই গ্রামের ছেলেটির স্বপ্নের পরিসীমায় ধরা দিলো নিজের একটি গাড়ি। একটি লাল গাড়ি।
টাকা জমানো শুরু হলো। কি অদ্ভুত ইচ্ছা.....টাকা জমিয়ে জমিয়ে একটি গাড়ি কিনে ফেলা হবে। খুব বেশি যে টাকা জমে তা না। তারপরেও স্বপ্ন দেখা থামে না। লাল গাড়ির স্বপ্ন চলতেই থাকে....
উৎসব অনেক, ঈদ আসে...আসে নতুন বছর.... ছোট্ট বোনটা নিছক আগ্রহ করেই জানতে চায় ঈদে কি কিনে দিবো তাকে? আমি চকিত নয়নে তাকাই ছোট বোনটার দিকে। অদ্ভুত চাহনীর মুখটা দেখেই ভালো লাগায় ভরে যায়। কিছু একটা কিনে দিতেই হয়। সম্বল সেই জমানো টাকা। ছোট বোনের জন্য কিছু কিনবো....আব্বু আছে...আম্মু আছে তাদের জন্যও কিছু কিনে ফেলি......একসময় জমানো টাকার ছোট অংশের তেমন কিছুই বাকি থাকে না.......। ঈদ শেষে কিংবা উৎসব শেষে ফিরে আসি নগরীতে। ফেরার দিন হয়তো ছোট বোনটি নতুন কিনে দেওয়া জামাটি পড়ে থাকে.....হাসি মুখ দেখে মুগ্ধ হই আমি। নতুন কাপড় পড়ে হয়তো আম্মু তৈরি করে খাবার, ছেলেটির জন্য। আমি আবারো মুগ্ধ হই.....
ফিরে আসি নগরীতে হাসি মুখ নিয়ে। আবার শুরু হয় টাকা জমানো। লাল গাড়ি কেনার স্বপ্ন মনে। রাস্তায় কখনো হঠাৎ করেই চোখে পড়ে লাল গাড়ি...স্বপ্নের কথা মনে পড়ে পুনরায়.....বিপরীতে জমানো টাকা খুব বেশি হয় না।
আমি উপলব্ধি করি একজীবনে লাল গাড়ি না থাকলে কিছু হয় না। আমি আমার পুরোটা জীবন লাল গাড়ি ছাড়াই কাটিয়ে দিতে পারবো। ছোটবোনটার হাসি মুখ, আব্বু আর আম্মুর আনন্দিত মুখ আমার কাছে অনেক অনেক ভালো লাগার। এতোসব ভালো লাগার মাঝে টুপ করে কখন যে হারিয়ে যায় লাল গাড়ির ভাবনা....

কোনদিন হঠাৎ করেই মনে পড়ে "লাল গাড়ি আর লাল বালিকার গল্প " এর কথা। মনে পড়ে তার লেখক নিধিরাম সর্দারের কথা। মিস করি খুব একজন নিধিরাম সর্দারের এইরকম লাল গাড়ি আর লাল বালিকার গল্পকে.....। (আমি জানি উনি এখন কি নামে লিখছেন। কিন্তু আমি নিধিরাম সর্দারের লালগাড়ি টাইপ লেখাকে মিস করি)


অনেক রকমের ভাবনা অহর্নিশি খেলা করে মনে। ভাবনাগুলো নিয়েই বয়ে চলছি জীবন। দিন শেষে ছোট্ট বাসায় ফিরে আসি। সেখানে এসেও নতুন করে ভাবনা শুরু। বাড়িওয়ালা বলে দিয়েছে বাসা ভাড়া বেশি দিতে হবে....বুয়া তার বিল বাড়ানোর কথা বলছে ....বাজারে দ্রব্যমুল্যের দাম হাতের নাগালের বাইরে...কখনো আবার দেশ নিয়েই ভাবতে বসি। মধ্যরাত হলে চারপাশ নিশ্চুপ হয়ে উঠি। কোন রাতে পঞ্চমীর চাঁদ ডুবে গেলে আমি একাকি ভাবতে বসি। মনের ভিতরটা কেমন যেন হু হু করে উঠে। খুলে বসি ভিন্ন এক উইন্ডো। আমি সারারত জাগি....জেগে জেগে কথা বলি নিস্তব্ধ সময়ের সাথে। মনের অনুভুতিগুলো কিবোর্ড গলে গলে পড়ে আর্ন্তজালিক খাতায়......

রাতটা আমার নির্ঘুমই কাটে। কোন নির্ঘুম রাতে হঠাৎ করেই মনে পড়ে যায় ব্লগার সামী মিয়াদাদের লেখা “যে রাতটি আমার নির্ঘুম কাটে ” লেখাটার কথা। আমি আবার ভাবতে বসি নির্ঘুম রাতটিতে.....


কখনো কোন উদাস করা একাকী রাতের শেষ গ্রহরে....নিস্তব্ধ সময়ের মাঝে মনে হয় কাউকে খুব মিস করছি। অনুভুতি গুলো জামাট বেধে বেধে আমাকেই তাড়িত করে যায়। হয়তো প্রিয় কারো কথা ভাবতে খুব করে ইচ্ছা হয় তখন। কিংবা এমন কারো কথা যে আমার জন্য প্রতীক্ষা করবে....
চাঁদ তখন হয়তো ডুবতে বসে......। এমন উদাস করা কোন কোন রাতে মনে পড়ে যায় “একটি চন্দ্রবালিকার গল্প ”। হৃদিতাকে খুব বেশি মিস করি তখন। হুদিতাকে তখন কেবল গল্পের চরিত্র মনে হয় না। কিংবা মনে হয় না সে কেবল মৃদুলের জন্য প্রতীক্ষ করছে। খুব ভাবতে ইচ্ছে হয় হৃদিতা আমার জন্যও প্রতীক্ষা করছে। আর তখনই মনে পড়ে “একটি চন্দ্রবালিকার কথা” গল্পের লেখক ব্লগার নাদান এর কথা।


প্রতিরাতে চাঁদ দেখা হয় না। হিসাব করা হয়ে উঠে না কখন চাঁদটি উঠলো....কখন টুপ করে ডুবে গেল। চন্দ্রগ্রহণ হলে গভীর করে উপলব্ধি.....আহা চাঁদ কতো মিস করি......

ব্লগের বাইরে সবারই একটা ব্যক্তিগত জীবন আছে। অনেকই এখানে আসবে...আবার অনেকেই যাবে। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। অনেকটা যেমন এরকম- রাজা আসে, রাজা যায়, নেতা যায়, নেতা নির্বাচিত হয়ে আসে। তারপরেও কোন ব্লগার অনেকদিন না লেখলে মনটা জানি কেমন করে উঠে। ভাবি কি হলো তার। আমি এই ব্লগের অনেক ব্লগারকেই মিস করি। এই লেখায় হয়তো মাত্র তিনজন ব্লগারের কথা উঠে আসলো।

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০০৮ রাত ১১:৪০
৭১টি মন্তব্য ৬৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×