somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাত্রির আধাঁর

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ক্লাস থ্রীতে পড়ুয়া একটি মেয়ে কি করে এত দায়িত্ববান আর বুদ্ধিমতি হয় কি জানি।হয়ত পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছে এত কম বয়সেই বড়দের খাতায় নাম লেখাতে।
স্কুল থেকে ফেরার পথে আজ রাত্রির খুব মন খারাপ। কারও সাথে কোন কথা বলছে না।স্কুলের একমাত্র বান্ধবী নিশি বারবার জিজ্ঞেস করার পরও কিছুই বলছে না।কি করে সে বলবে?বললে যে শুধু তার যন্ত্রনা বাড়বে, এর বেশি কিছু নয়।
আজ সকালে স্কুলে আসার পথে তার পাগলী মাকে ঘরে তালা আটকে এসেছে সে। কি জানি ঘরে গিয়ে মাকে কি অবস্থায় দেখে।ঘরে কাজের মেয়ে আছে মাকে দেখাশোনা করার জন্য। কিন্তু রাত্রি ছাড়া নিজের আশেপাশে কাউকে ঘেঁষতে দেন না তিনি।অল্প বয়সেই এই মহিলাটা জীবনের অর্থ হারিয়ে ফেলল। বয়স মাত্র ত্রিশের কাছাকাছি।
চোখের সামনে নিজের স্বামী আর পুত্রকে হারিয়ে মহিলাটির এ অবস্থা আজ ছয় মাস ধরে। নিয়তিও এক অদ্ভুত খেলা খেলেছে তাকে নিয়ে।
হঠাৎ তার স্বামী কঠিন কোন রগে আক্রান্ত হয়ে মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিল।দিনের পর দিন সেবা শুশ্রুষা,চিকিৎসা, প্রার্থনার পর অবশেষে তার স্বামী সুস্থ হলেন। রাত্রির মা জবার খুশিতো যেন আর ধরে না। আনন্দে আত্বহারা হয়ে পড়ল সে।চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকতে হয়েছিল তাদেরকে।জবা ভাবল দেশে ফিরে দুই ছেলেমেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে সুখের সংসার করবেন।কিন্তু এতো সুখ তো বিধাতা তার কপালে লিখে নি।
দেশে ফেরার পথে প্লেন এক্সিডেন্টে মারা গেল জবার স্বামী ও একমাত্র পুত্র রাজু।চোখের সামনে এভাবে পুত্র ও স্বামীকে হারানোর ব্যাথা আজও সামলাতে পারেনি জবা।সারাদিন ফ্রেমে বাঁধানো পরিবারের ছবিটি হাতে নিয়ে কি যেন বলতে থাকে নিজের মনে। আর রাত্রিকে দেখলেই ছুটে এসে বলে , তোর বাবাকে বল না জলদি বাড়িতে আসতে।ছেলেটাকে নিয়ে কবে যে বেড়াতে গেল!আসার নাম নেই।রাত্রি অনেকবার তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে রাজু ও তার বাবা কখনো ফিরবে না। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।বরং জবার শরীর আরও খারাপ হয়েছে এবং পাগলামিও আরও বেড়েছে।তাই আজকাল রাত্রি মাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে রাখে যে, তার বাবা ও ভাই ফিরে আসবে।

রাত্রির বাবার মৃত্যুর পর তার চাচাদের চেহারাও রাতারাতি পালটে গেল।তাদের দায়িত্ব নেওয়া তো দূরে থাক , বরং ভাইয়ের সম্পত্তি ও ব্যবসায়ে অধিকার জমিয়ে বসে পড়ল।আর ভাইয়ের পরিবারের জন্য অল্প কিছু খরচ মাসে করে যেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

আজ রাত্রির জন্মদিন।বাবা থাকলে এ দিনটা অনেক সুন্দর করে পালন করত।গত বছর তার জন্মদিনে আব্বু, আম্মু, ছোট ভাইকে নিয়ে কত মজাই না করেছে!অথচ এ বছর…..

রাত্রির মা আজ সকাল থেকে একটু চিৎকার, চেঁচামেচি করছিল।ভাংচুর ও করেছে ঘরে।তাই রাত্রির আজ খুব মন খারাপ।
যাই হোক, ঘরে ফিরে তার মন কিছুটা ভাল হল।কারন সে দেখল তার মা শান্ত ভঙ্গিতে বসে আছে।মাকে দেখে রাত্রি হাসিমুখে মায়ের কাছে এসে বসল।মায়ের সাথে একটু কথা বলার চেষ্টা করল।
মা, তুমি দুপুরে খেয়েছ?
হুম, খেয়েছি।
আচ্ছা মা, আমি হাত মুখ ধুয়ে পোশাক বদলে আসি। তারপর তোমার সাথে কথা বলব।
সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর ঘটল এক আজব কাহিনী।
হঠাৎ কলিংবেলের শব্দ হল।রাত্রি দরজা খুলতে ভয় পাচ্ছিল।তবুও সাহস করে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, কে?
কেউ কথা বলল না।
কয়েকবার শব্দ হল কলিংবেলের।
তবুও জিজ্ঞেস করার পর কোন শব্দ নেই।
প্রায় দশ মিনিট পর রাত্রি দরজা খুলল।ভাবল কেউ হয়ত এখন নেই। যে কেউ এসেছিল চলে গেছে।
কিন্তু দরজা খোলার সাথে সাথে অনেকগুলো কণ্ঠে একসাথে শোনা গেল ‘‘HapPy Birthday to you’’
Happy Birthday to you….
Happy birthday dear Ratree…
Happy birthday to you…
রাত্রির ক্লাসের সব বন্ধুরা অকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছে।সাথে রাত্রির পছন্দের চকলেট কেকও নিয়ে এসেছে।
আনন্দে রাত্রির চোখে পানি চলে এল।সবাই মিলে কেক কাটল। বন্ধুরা ওর জন্য অনেক সুন্দর সুন্দর উপহার আনল।
হঠাৎ এরকম শোরগোলে রাত্রির মায়ের ঘুম ভেঙ্গে গেল।
নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখল রাত্রির বন্ধুরা ওকে নিয়ে খুব আনন্দ করছে।
তিনি কাছে এসে বলতে লাগলেন, কিরে তোর বাবা এখনো ফেরে নি?মানুষটা কবে যে মানুষ হবে? এতক্ষণ লাগে একটা উপহার আনতে!... আর রাজু কোথায়? ওকে দেখছি না যে?
মা, রাজু আছে।এইতো এখানে ছিল। হয়ত নিজের ঘরে গেছে।আর বাবা ফোন করেছে।এক্ষুণি এসে পড়বে।আমার বন্ধুরা চলে যাবে তো তাই কেক কেটে ফেলেছি। সরি মা।
রাত্রি নিজের হাতে মাকে কেক খাইয়ে দিল।আস্তে আস্তে সব বন্ধুরা নিজ নিজ ঘরে চলে গেল।তারা আজকাল রাত্রির মায়ের কথায় কিছু মনে করে না…


রাতে ঘুমানোর সময় রাত্রি বিছানায় শুয়ে শুয়ে আজকের সারা দিনের কথা ভাবছিল।দিনটা ভালই কাটলো তার।হঠাৎ তার মনে পড়ল ছোট চাচার কথা।আমেরিকায় থাকেন তিনি।বাবা মারা যাওয়ার পর ২/৩ বার মাত্র কথা হয়েছিল ছোট চাচার সাথে।কেন যেন এরপর আর ছোট চাচা ফোন করেনি।আজ খুব মনে পড়ছে রাত্রির তার কথা। পুরনো ডায়েরী থেকে খুঁজে খুঁজে ছোট চাচার নম্বরে ফোন করল।কিন্তু কেউ ফোন উঠালো না।মন খারাপ করে রাত্রি ঘুমিয়ে পড়ল।
রাত্রির চোখে ঘুম নেমে আসছে এমন সময় মোবাইল ফোন বেজে উঠলো।রাত্রি দেখল তার ছোট চাচার নম্বর।
হ্যালো চাচ্চু!
কে?রাত্রি! মা, তুই কেমন আছিস?এতদিন কোথায় ছিলি? তুই কেন চাচ্চুর সাথে এতদিন কথা বলিস নি?


রাত্রির চাচা সোহেলোকে রাত্রির অন্য দুই চাচা এতদিন অন্ধকারে রেখেছে।তাঁকে তারা বলেছে রাত্রি ও তার মাকে তারা খুব যত্নে রেখেছে।রাত্রির মায়ের মানসিক অবস্থাও বিন্দু পরিমাণ জানায়নি। কিছুদিন পর বলল রাত্রির মা অন্য জায়গায় বিয়ে করে নতুন পরিবার ও রাত্রিকে নিয়ে খুব সুখে আছে এবং সে সোহেলের সাথে কোন যোগাযোগ করতে চায় না।এদিকে রাত্রিদের বাসার টিএন্ডটি লাইন ও তারা কাটিয়ে দিয়েছে।রাত্রির মায়ের ফোন নম্বরও পালটে দিল যাতে সোহেল রাত্রি ও তার মায়ের সাথে কোন যোগাযোগ করতে না পারে।
কিন্তু আজ রাত্রির সাথে কথা বলে সোহেলের কাছে সব পরিষ্কার হয়ে গেল।
চারদিন পরই দেশে ফিরল সোহেল।রাত্রিদের অবশা দেখে সে খুবই কষ্ট পেলেন।ভাইদের কাছে সে সবকিছুর জবাব চাইল।তাদের কাছে কন উত্তর ছিল না। থাকার কথাও না।

প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেল।এই এক বছরে ভাইয়ের ব্যাবসাকে সে একটি ভাল পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।ভাবিকেও সেবা শুশ্রুষা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন।


রাত্রির মা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।তিনি এখন স্বাভাবিকভাবেই সবকিছু মেনে নিয়েছেন।রাত্রির প্রতি তিনি এখন অনেক খেয়াল ও আদর যত্ন করেন।এতদিন ধরে রাত্রির কাটানো কষ্টের দিনগুলোর কথা ভেবে তার খুব খারাপ লাগতে লাগল।তিনি সুস্থ থাকলে হয়ত এত কিছু হত না।

রাত ১১টা বাজে।রাত্রির মা ঘুমোতে যাবেন।এমন সময় তার ফোনে একটি ম্যাসেজ এলো।
ভাবী, দেশে আমার কাজ শেষ।তুমি এখন সুস্থ। আশা করি রাত্রিকে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ তুমি দিতে পারবে। সেই বিশ্বাস আমার আছে তোমার প্রতি।
এক্ষুণি প্লেন ছাড়বে।ভাল থেকো।আবার এলে যেন তোমাদের হাসিমাখা মুখটি দেখতে পাই…
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×