গতকাল সংসদ ভবনের সামনের সড়কে “আমরা বাঁচতে চাই” স্লোগানে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, ফেলানী হত্যা, বিশ্বজিৎ হত্যা, দুর্নীতি ইত্যাদির প্রতিবাদে মানববন্ধন এবং অবস্থান বিক্ষোভ (Sit in) অনুষ্ঠিত হয়। ফেইসবুকের মাধ্যমে আমিও এতে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ পাই এবং অংশগ্রহণ করার জন্যে মনস্তির করি। অসুস্থতার কারণে সকালে যেতে পারবোনা বলে চিন্তা করলাম সন্ধ্যায় যাবো যেহেতু সময় দেয়া আছে সকাল ৯ টা থেকে রাত ৯ টা। কিন্তু আমি সন্ধ্যায় গিয়ে দেখি প্রোগ্রামটি শেষ। তারপর হালকা বিষণ্ণ মনে বাসায় চলে আসি......
কিছু কথা বলার আগে প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই তাঁদেরকে যারা ফেইসবুকের মাধ্যমে এত সুন্দর একটি প্রোগ্রামের আয়োজন করেছে যদিও তাঁদের সাথে আমার এক বিশাল আদর্শিক মতপার্থক্য রয়েছে । অন্তত এটি দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, ফেইসবুক এখন আর শুধু ভার্চুয়াল জগতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ফেইসবুকের ছোট ছোট প্রতিবাদ গুলোকেই আমরা বড় প্রতিবাদে রূপান্তরিত করতে পারবো। ফেইসবুকের আন্দোলনগুলোকে আমরা রাজপথের আন্দোলনে রূপদান করতে পারবো। ফেইসবুক থেকেই একত্রিত হয়ে একদিন আমরা রাজপথে নেমে আসতে পারবো।
এবার যারা এই প্রোগ্রামটির আয়োজন করেছে তাঁদের আমার একটা প্রশ্ন-
আচ্ছা গতকালের প্রোগ্রামটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল-ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বন্ধ করা, তাইনা? খুব ভালো কথা। আচ্ছা গতকালের প্রোগ্রামে কি ২১+১১=৩২ জন পর্দানশীল মা বোনের কোন কথা ছিল যাদেরকে সরকার অন্যায়ভাবে কোন কারণ ছাড়া গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে, রিমান্ডে নিয়েছে যাদের মধ্যে একজন ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এখানেই শেষ নয়। একজন ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে পর্যন্ত জামিন তো দেয়নি বরং আদালতের ৮ তলা সিঁড়ি কোন লিফট ছাড়াই উঠানামা করিয়েছে। পরীক্ষার্থীদের তাঁদের পরীক্ষা পর্যন্ত দিতে দিচ্ছে না। এগুলো কি নারী নির্যাতন না???? এগুলো কি মানবাধিকার লঙ্ঘন না??? ওদের কোন কথা কি আপনাদের প্রোগ্রামে ছিল??? জানি ছিল না।
কেন ছিলনা??
-কারণ ওদের সাথে আপনাদের আদর্শিক মতপার্থক্য আছে। ওঁরা পর্দা করে আর আপনারা পর্দার ঘোর বিরোধী। ওঁরা ইসলামকে আঁকড়ে থাকতে চায় আর আপনারা ধর্মের(ইসলামের) ঘোর বিরোধী। ধর্ম(ইসলাম) আপনাদের কাছে সেকেলে, ধর্ম (ইসলাম) আপনাদের কাছে আফিম। তাই ওদের উপর যত নির্যাতন করুকনা কেন এগুলো নারী নির্যাতন না, তাইনা???
-আপনাদেরকে চ্যালেঞ্জ করে বলি, যতদিন না আপনাদের এই দুমুখো নীতির পরিবর্তন হবে ততদিন পর্যন্ত আপনাদের এইসব আন্দোলনে কোন সফলতা আসবেনা। সমাজে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন বাড়বেই বাড়বে।
-আপনারা যখন কোন ধর্ষণের প্রতিবাদ করেন তখন আমরাও (ইসলামপন্তীরা) কিন্তু সে ধর্ষণের প্রতিবাদ করি। আপনারা যখন নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ করেন তখন কিন্তু আমরাও সে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ করি। আপনারা যখন ফেলানী হত্যার প্রতিবাদ করেন তখন কিন্তু আমরাও ফেলানী হত্যার প্রতিবাদ করি। আপনারা যখন বিশ্বজিৎ হত্যার প্রতিবাদ করেন আমরাও তখন বিশ্বজিৎ হত্যার প্রতিবাদ করি। বরং আপনাদের থেকে বেশী করি, অনেক অনেক বেশী করি।
আপনাদের মিছিলে যখন সরকারের পুলিশ হামলা করে, আপনাদের বোনদেরকে যখন পুলিশ লাঞ্চিত করে তখন কিন্তু আমরাও প্রতিবাদ করি সে লাঞ্চনার।
- কিন্তু আমাদের বোনদেরকে যখন অন্যায়ভাবে লাঞ্চিত করে, হেনস্তা করে, পর্দা খুলে নেয় তখন কেন আপনাদের কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যায়??তখন কেন আপনাদের প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে যায়?? কেন আপনাদের এই দুমুখো নীতি?? কেন???কেন???
-আমাদেরকে যখন শুধুমাত্র ফেইসবুকে একটি লেখার কারণে মেরে হাত পা ভেঙ্গে দেয়া হয় তখন আপনারা উল্লাস প্রকাশ করে ফেইসবুকে নোংরা স্ট্যাটাস দেন। এই আপনাদের মানবতা তাইনা?? ছি মানবতা ছি!!!
যারা প্রোগ্রামটির আয়োজন করেছিলো তাঁদের অনেকের Religion ঘরে লেখা- Humanity (মানবতা)।
-খুব ভালো কথা। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল-মানবতায় কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ এই নিয়ে বইটা লিখছে কে?? মানবতায় ধর্ষণ হত্যাযোগ্য অপরাধ এইটা কোথায় লেখা আছে?? মানবতায় নারী নির্যাতন করা যাবে না এটা মানবতার কোন গ্রন্থে লেখা আছে???মানুষ হত্যা অপরাধ এটা মানবতার কোন গ্রন্থে লেখা আছে???এটা আমি একটু জানতে চাই।
কোনটা খারাপ আর কোনটা ভালো এটা একমাত্র ধর্মগ্রন্তেই লেখা আছে। ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, মানবহত্যা এগুলো জঘন্য অপরাধ-এই কথা একমাত্র ধর্মগ্রন্তেই লেখা আছে।
এমন হাজারো প্রশ্ন আছে যেগুলোর উত্তর আপনাদের মত লোক দেখানো মানবতাবাদীরা জীবনেও দিতে পারবেন না, জীবনেও না। এইসব লোক দেখানো মানবতার ধর্ম ছেড়ে ইসলামের ছায়াতলে আসুন, ইসলামকে বুঝুন না হলে আপনাদের এইসব লোক দেখানো আন্দোলন রাস্তাতেই পড়ে থাকবে কন্মিসকালেও সফলতার মুখ দেখবেনা, কন্মিসকালেও না!!!!