somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাকে কাজ দাও, আমি ভাত খাব

২৫ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখার শিরোনাম কেমন হলো আমি জানিনা। জানিনা কেউ এই লেখা পড়বে কিনা বা প্রকাশ হবে কিনা। তবে আজ আমাকে এই লেখা লিখতেই হবে। লিখতেই হবে আমরা বেকার যারা তারা কিভাবে বেঁচে আছি। আমি জানি কেউ কোন দিন আমার দরজায় নক করে কাজ দেবে না। তাই আই.বি.এ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম বি এ শেষ করেই ঢাকায় চলে এসেছিলাম। যখন এই লেখা লিখতে বসেছি তার আগে অর্থনীতিতে বেকারত্ব বলতে পুস্তকিয় ভাষায় আর কি কি বোঝায় তা জানার জন্য গুগলে সার্চ দিয়েছিলাম। সাথে সাথেই মনে হলো এই মূহুর্তে আমার চাইতে বেশী কেইবা জানবে বেকারত্ব কি? বিজনেসের ছাত্র হিসাবে যা জানি সে তো জানাই আছে। তবুও একটি সঙ্গা তুলে দিলাম এখানে, যেটা http://www.investopedia.com থেকে নেয়া ”Unemployment occurs when a person who is actively searching for employment is unable to find work. Unemployment is often used as a measure of the health of the economy. The most frequently cited measure of unemployment is the unemployment rate. This is the number of unemployed persons divided by the number of people in the labor force”

স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে একটি অর্থনীতি কতটা শক্ত অবস্থানে আছে তা বোঝা যায় বেকারত্বের হার দেখে।এই মূহুর্তে যে কথাটা বারবার শুনছি সেটা হলো আমাদের প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ছয় হয়েছে।তার মানে অতীতের চাইতে অনেক ভাল আছি অর্থনৈতিক ভাবে। কিন্তু যখন নিজের দিকে তাকাই,যখন বাসা ভাড়া নেবার জন্য বাড়িওয়ালা আসে,যখন বাজারে যাই তখন বুঝি অর্থনীতি কোথায় আছে! এমন হতে পারে আমি একাই অপদার্থ তাই হয়ত জীবনের সব দাবী মেটাতে ব্যার্থ হচ্ছি। কিন্তু যখন চারপাশে চোখ বুলাই তখন বুঝতে পারি একজন নই আরো আছে ভুড়ি ভুড়ি।যখন চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে যাই তখনও বুঝতে পারি আমি একাই বেকারত্ব নামক গ্রহের বাসিন্দা না। তাহলে কি এত সব আদম সন্তান এই পৃথিবীতে বাচবে না? আমাদের কি বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিয়ে আসতে হবে? মাননীয় রাষ্ট্র যন্ত্র তাই করুন দয়া করে আমাদের কাজ দিন নয়তো বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিয়ে আসেন।
ঢাকা আসার পরে জীবন নিয়ে যখন অথৈ সাগরে তখন বুঝতে শুরু করলাম কেন নজরুল বলেছিল ”হে দারিদ্র তুমি মোরে করেছ মহান”। বাসা ভাড়া আর ক্ষুধার জ্বালায় এই সান্ত্বনা বাক্য বলা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। হে মহান কবি আপনি এই কবিতা না লিখলে আমি সান্ত্বনা পাবার জায়গাটাও হারাতাম। অনেক কিছু হতে চেয়েছিলাম কিন্তু কিছুই হতে পারি নাই।এম বি এ শেষ করে ঢাকায় এসে চাকরীর প্রস্তুতি নিয়ে চলেছি। সরকারি ব্যাংক ও বেশ কয়েকটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়েছিলাম কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয় নাই। সাক্ষাতকারের পর ফলাফল সিটে নিজের নাম না দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত হয়ে পরেছি।
বিজনেসের ছাত্র হওয়ায় ব্যবসার প্রতি কিছুটা ঝোঁক ছিল কিন্তু উপযুক্ত পরিবেশ ও মূলধনের অভাবে করতে পারছি না। আমার খুব ইচ্ছে ছিল শিক্ষকতা পেশায় থাকার তাই কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতাম।বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম। তার কয়েকটিতে খুব কাছে যেয়েও নিয়োগ পাই নাই। শেষ পর্যন্ত একটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে চাকরী নিয়েছিলাম লিখিত পরীক্ষায় প্রথম হয়ে।ভেবেছিলাম লেখালেখি আর আর শিক্ষকতা করেই জীবন পার করে দিব। এক বছর চাকরী করার পর যখন সিনিয়র হলাম,অনেক দায়িত্ব পেতে শুরু করলাম। সকল ছাত্রছাত্রীর কাছে ইতিমধ্যে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছি। আমার খুব ভাল লাগছিল দায়িত্ব পালন করতে। তখন সেই সাথে কিছু অসঙ্গতি চোখে পরেছিল যা জুনিয়র থাকা অবস্থায় বোঝা সম্ভব ছিল না।অনেক চেষ্টা করেছিলাম সেগুলো ঠিক করতে। শেষ পর্যন্ত নীতির সাথে আপস করি নাই। চাকরি ছেড়ে দিলাম। সবাই বললো ভুল করলে, আমি বললা করলাম না হয় একটা ভুল।আমার প্রয়াত বাবা বলতেন সৎ ও সত্যকে আকরে থাকবে। সে কথা আমি রেখে চলেছি এখনও পর্যন্ত তাই যখন ব্যাংকে ভাইবা দিলাম, আমার সাথের বন্ধুরা আরো অনেক কিছুর পেছনে ছুটেছে চাকরী নিশ্চিত করবার জন্য আমি তখন বি বি এ,এম বি এ এর বই সহ নানান বই হাতে বসে ছিলাম ছোট্ট রুমে ইট পাথরের ঢাকায়।বেশ কয়েক মাস হলো কর্মহীন হয়ে বসে আছি।শিক্ষকতা পেশাতেই থাকতে চাই তাই এখনও চেষ্টা করছি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢোকার। তবে সে লক্ষ্য বাস্তবায়ন হওয়া কঠিন বুঝে গেছি এই কিছু দিনেই। দিন দিন প্রদীপের তেল শেষ হয়ে আসছে,আর বড় জোর কয়েকদিন তারপরেই সব বিলীন হবে আমার।
আমি যদি এই লেখাটা বিভিন্ন পত্রিকা অফিসে মেইল করে আত্নহত্যা করি তবে আগামীকালই বিভিন্ন পত্রিকায় ফলাও করে খবর আসবে। শিরোনাম হয়তো হবে ”বেকারত্বের কষ্টে যুবকের আত্নহত্যা”।ফেইসবুকে প্রথম সারির পত্রিকা ও ভুইফোড় পত্রিকার খবরের অনলাইন এডিসন শেয়ারের পর শেয়ার হবে। কিন্তু বেঁচে থাকতে চাকরী পাব না আমি। না আমি আত্নহত্যা করছি না। আমি একজন যোদ্ধা। আমি সব শেষ দেখতে চাই,শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাব। মাঝে মাঝে মনে হয় চিৎকার করে বলি ”জিডিপি এর প্রবৃদ্ধির কি হবে আমি জানিনা,ঢাকার শহরের যানজট কমাতে আর কয়টা ওভার ব্রীজ লাগবে আমি জানিনা,আর কয়টা বাংলাওয়াস হলে রেকর্ড হতো আমি জানিনা। আমি কাজ চাই যোগ্যতা অনুযায়ী,আমি ভাত খাব।”

লেখকঃ তানজির খান
কবি,ব্লগার ও উচ্চ শিক্ষিত বেকার
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:০১
১৭টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×