somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা কি বৃহৎ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে বাস করতে যাচ্ছি?

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজশাহী শহরে থেকেছি প্রায় নয় বছর।এই শহর নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর শহর।যারা সাম্প্রতিক কালে রাজশাহী গিয়েছেন তারা আমার এই দাবী মেনে নেবেন নিঃসন্দেহে, এটা নিশ্চিত।রাজশাহী আমার চেতনার জন্মভূমি। এই শহরে আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটিয়েছি কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। শহরের পাস দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদী আমার রক্তে মিশে আছে।কলেজ জীবনে নিউ ডিগ্রীর সামছুদ্দিন ছাত্রাবাসে থেকেছি। সেটাই শুরু ছিল রাজশাহীর জীবনের। সবে মফস্বল থেকে বিভাগীয় শহরে গিয়েছিলাম তখন। ৮-১০ দিন পরপর বাড়ীর টানে গ্রামে চলে যেতাম। বাড়ী ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হতো সে সময়। আর বাড়ী থেকে রাজশাহী গেলেই মন খারাপ লাগতো বাড়ীর জন্য। বিভাগ পরিবর্তন করে ব্যবসা শিক্ষা নিয়েছিলাম তাই প্রথম প্রথম বুঝতে কষ্ট হতো পড়াশোনা। একগাদা প্রাইভেট পড়তাম সে সময়, আর বিকালে সি এন্ড বি মোড় পার হয়ে পদ্মার পাড়ে মন খারাপ করে বসে থাকতাম। কখনো কখনো একদম একা,আবার কখনো হোস্টেলের কোনো বন্ধুর সাথে। হোস্টেল জীবনে পদ্মার পাড়ে একবার খুব বিপদে পড়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম। তখন প্রথম বর্ষ ছিল কলেজ জীবনের। ফার্স্ট ইয়ারে হোস্টেলে আমার রুমমেট ছিল বন্ধু নিরঞ্জন আর রবিউল। খুব সাধারণ পরিবার থেকে মফস্বল হতে রাজশাহী এসেছিলাম আমরা তাই অনেক কিছুতেই ভয় পেতাম। একদিন এক রাজনৈতিক দলের ছাত্রনেতা আমাদের রুমে এসে বললো আজ মিটিং আছে এই হোস্টেলে, তাই তোমাদের সবাইকে সেখানে উপস্থিত হতে হবে। যদি না আসো তবে আমরা রুম নাম্বার সহ নাম লিস্ট করে রাখবো।তারা সবার রুমে গিয়েই এটা বলছিল। না আসলে বিচার হবে পড়ে। এর কিছুক্ষণ পরে হোস্টেলে আরেক রাজনৈতিক দলের ছাত্রনেতা এসে বললো তোমরা যদি ওই মিটিং এ যাও তবে তোমাদের বিচার হবে। আমরা তো পড়ে গেলাম বিভীষিকায়। কি করি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ মনে হলো যাই করি হোস্টেলে থাকব না। তাহলে কোথায় যাওয়া যায়? শেষতক আমরা তিন বন্ধু সন্ধ্যা থেকে রাত এগারো টা পর্যন্ত পদ্মার পাড়ে বসে ছিলাম উনাদের ভয়ে। ফিরে ছিলাম সেই সভা শেষে।আমার রামেক থেকে পড়া ডাক্তার বন্ধু নিরঞ্জন আর বুয়েট থেকে পড়া ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু রবিউল এর সেই স্মৃতি নিশ্চয়ই মনে আছে।তারপর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শেষ করেছি। এর মাঝে কত বিকাল, সন্ধ্যা কেটেছে পদ্মার পাড়ে তার ইয়াত্তা নেই।মন খারাপে, ভাল লাগায়, আড্ডায় কত সময় গেছে পদ্মার পাড়ে! পরীক্ষার সময় সারাদিন পড়াশোনা করে নির্জনে একা একা কত বিকাল কাটিয়েছি পদ্মার পাড়ে, তা আজও অম্লান স্মৃতি পটে। আজ এখন জানলাম সেই পদ্মার পাড়ে দাড়াতেও টাকা লাগবে।রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন উঁচু কাটাতারের বেড়া দিচ্ছে পদ্মার পাড়ে।আর সেই জায়গা ফার্স্টফুড ব্যবসায়ীদের কাছে ইজারা দেয়ার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। সবকিছু টিকিট কাউন্টারে চলে যাবে। একটি রাষ্ট্র যখন ব্যবসায়ী হয়ে ওঠে তখন তা হয়ে যায় বৃহৎ ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। যেমন ইউরোপ, আমেরিকায় কিছু ডিপার্টমেন্টাল স্টোর আছে যেখানে আলু থেকে শুরু করে এরোপ্লেন কিনতে পাওয়া যায়।সেখানে পণ্য,বিনোদন সব পাওয়া যায়। কানাডা এক বড় ভাই থাকেন, উনি একদিন কিছু ছবি দিয়েছিলেন একটি শপিং মলের যেখানে কৃত্রিমভাবে নদী তৈরী করা হয়েছে। সেখানে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকাও চলে। কিন্তু দেখে একদম সত্য মনে হয় সব, কিছুতেই বোঝা যায় না যে সব কৃত্রিম। আমাদের দেশ এখন তেমনই একটা পর্যায়ে চলে গেছে বলে মনে হচ্ছে। পদ্মার হাওয়া এখন বিক্রি হবে, যেমন ঔষধ বিক্রি হয় ফার্মাসীতে। সকালে, বিকালে হেটে শরীর ঠিক রাখতে চান তাহলে চলে আসুন পদ্মার পাড়ে!আমরা এখন প্রকৃতিকে কৃত্রিমভাবে সাজাব ফার্স্টফুডের দোকান বসিয়ে ময়লা আবর্জনা সাজিয়ে!

সংসদে আইন প্রণেতা বা জনপ্রতিনিধিদের বেশীর ভাগই যখন শিল্পপতি হয় এবং তাদের দ্বারা দেশ পরিচালিত হয় তখন একটি দেশ ধীরে ধীরে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর হয়ে ওঠে। দেশপ্রেম, মৌলিক অধিকার, নদীর হাওয়া,পিয়াজ, মরিচ, কদু, গাড়ি, বাড়ি সবই তখন এক কাতারে পণ্য বলে বিবেচিত হয়। ভয় হচ্ছে কখন যেন পরিপত্র জারি হবে যে যারা ট্যাক্স দিতে পারবে তারাই শুধু রাস্তায় বেড় হতে পারবে আর অক্সিজেন থেকে শ্বাস নিতে পারবে। আমাদের নীতি নির্ধারকদের বোঝা উচিৎ শহরকে সুন্দরভাবে সাজানো মানে বাণিজ্যকরন নয়, শহরকে সুন্দরভাবে সাজানো মানে ইজারা দেয়া নয়।শহর সুন্দরভাবে গড়ে উঠুক, নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকুক কিন্তু দরজা খোলা থাক সাধারণ মানুষের জন্য।


তানজির খান
কবি, ব্লগার ও নাগরিক সাংবাদিক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা - ১৩ মে

লিখেছেন জোবাইর, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৩

১৩ মে ২০০৬


দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×