somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্টেপ পেরেন্টস (Step parents)

০৩ রা মে, ২০১৫ রাত ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(সাত)
বিষাক্ত ছোবলে লাশের নগরী

হাবুদের কাঠাল রাঙা কাঠের বাক্সটি বুড়িয়ে পড়ে ছিল,রাস্তার পাশে। ধুলা জমে ছিল গায়ে,কেউ খবর রাখে নি তার।বিদেশ থেকে জরুরী খবর যে আসে না আর তাই প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছিল। সাদা রঙে ইংরেজী হরফে লেখা খঊঞঞঊজ ইঙঢ । তার নিচে ইংরেজীতে বাবার নাম,বাড়ীর হোল্ডিং নং,রাস্তার নাম, ওর্য়াড নং সব আছে ধুলা মাখা মলিন চেহারায় শুধু চিঠি আসে না ,খোজ নেয় না কেউ তার আজ। সাইকেলে চড়ে খাকি পোষাকধারী বৃদ্ধ পিয়ন মাহাবুব এসে ঘন্টা বাজায় না এখন। নিঃশব্দে বিনা তারে নীরবে খবর পৌছে দিচ্ছে ইন্টারনেট ঘরে ঘরে। অলস বসে থাকে মাহাবুব মিয়া। কত ঘরের সুখ-দঃখ, বিরহ-ব্যাথ্যা, গোপন কথা,আছে তার জানা। তার সাইকেলে জং ধরেছে। অনেক দিন দু’ চাক্কার সাইকেলে চড়ে না সে। অনেক দিনের অভ্যাস আনমনে সাইকেলের কাছে গিয়ে আবার ফিরে আসে। মন তার ফিস ফিস করে প্যাডেলে ধাক্কা দেওয়ার জন্য। রাস্তায় দেখা হলে আগে জিজ্ঞেস করতো হাবু,‘কেমন আছো মাহাবুব।’ মাহাবুব মিয়া হলুদ রঙের চিঠির উপর কালো অক্ষরের ঠিকানা পড়তে পড়তে হাসি মুখে জবাব দিতো, ‘ভালো ভাই’। এখন দেখা হলে হাবু শুকনা হাসি হাসে, দু’ ঠোটের কোনে চিকন দাগ পড়ে কিন্তু সাদা দাঁতগুলো বের হয় না আর। মাহাবুব মিয়া তার উত্তর কি দেবে খুজে পায় না নিরোত্তরই থাকে মাথার সাদা চুলের মাঝে হাতাতে হাতাতে সময় পার হয়ে যায়। বেলা গড়িয়ে গেছে। পোষ্ট আফিসের লাল সূর্য্য ঢলে পড়েছে পশ্চিমে।ইন্টারনেট দখল করে নিয়েছে মাহাবুব মিয়ার জায়গা। ওর্য়াল্ড অন ওয়েব। চাক্কা ছাড়া চলছে, হাওয়ায় দুলে দুলে। টিম বার্নার্স-লির ইন্টারনেটের দখলে ফুর ফুরে মেজাজে সূর্য্যমুখীর হাসি হাসছে মার্ক জাকারবর্কের ফেসবুক।আর কি চাই মুর্হূতে প্রিয়জনকে চোখের সামনে দেখা,কথা বলার স্বাদ যেন কলার খোসা ছুলে খাইয়ে দেয়ার মতো।

কালার বাবা মারা গেছে অনেক বছর। মা আগলে রেখেছিল কালাকে যক্ষের ধনের মতো।সবসময় চোখে চোখে রাখতো।বড় হয়েছে এখনো একই রকম।কোনো কমতি নাই।কালার ব্যবসার উন্নতি হয়েছিল।কর্মচারী গোটা দশজনা।এখন বড় পাইকার।বড় বড় গুদাম কিনেছিল।কালার মা এখনো বাজারের হিসেব দেখাশুনা করে ঘরে বসে।পাই পাই হিসাব করে রাখতো।কালা নিজে হিসাব করে মাকে দেখায় কোথাও কোনো ভুল হলো কিনা।মা হিসাব ঠিক করে দিলে তবে ঠিক হতো।কালা পড়া-লেখা জানতো না।কিন্তু ব্যবসার হিসাব জানতো ভালো।পাই পাই করে টাকা গুছিয়েছিল কালার মা।একখন্ড জমি কিনেছিল একতালা দালান তুলেছিল সেখানে।কালার জন্য সুন্দরী একটা বৌ ঘরে এনেছিল মা নিজে পছন্দ করে।পরীর মত সুন্দরী বৌ ঠিক কালার বিপরীত তার দেহাবরণ। মাঝে মাঝে কালা তার বৌ’র সামনে দাড়িয়ে মাথার চুল আচড়াতো আয়না ভেবে।কালার মার অনেক আনন্দ আজ।অনেক পরিশ্রমের পর সফলতায় যেমন আনন্দ উপলব্ধি হয় ঠিক তেমন উপলব্ধি হচ্ছিল কালার মার।নিজে ব্যবসা করেছে। কালাকে শিখিয়েছে।আজ কালা ও ব্যবসা দুটাই পরিণত।সবই কালার মার কৃতিত্ব।তারই সব পাওনা। তাই আনন্দটা আজ তার।একান্ত নিজের।এ উপলব্ধি অন্য কেউ অনুভব করতে পারবে না।

মিল বন্ধের শব্দগুলো চারদিকে চাউর হতে লাগলো।শ্রমিকের মুখ মলিন হয়ে আসলো। কাজে মন বসতো না।পত্রিকার প্রথম পাতায় বড় বড় হেড লাইন ও ব্যানারে প্রকাশিত‘মিল বন্ধের ঘোষণা’ ‘শ্রমিকদের কি হবে?’ হায়! হায়! পড়ছিল মিলের কলোনীগুলোতে। শিল্পনগরী খুলনার আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। সেদিন চোখের অশ্রুতে শিক্ত হয়েছিল এ মাটি। আকাশ ভেঙ্গে পড়ছিল এক একজনের মাথায়। সাজানো-গোছানো ঘর ভেঙ্গে চৌচির।কি করবে,কোথায় যাবে শ্রমিকরা।দেশের সব বড় বড় মিল-কারখানা বন্ধ ঘোষণা।বিকল্প ব্যাবস্থা কিছু ছিল না। খুলনার লাখ লাখ শ্রমিক বেকার। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি বেকার।বেকারত্বের বোঝা মাথায় নিয়ে নিরুদ্দ্যেশে যাত্রা।দিন আনা শ্রমিকের ঘরের দিন বুজে গেলো।

রাজ্জাকের কাজ-কর্ম নাই,সারাদিন রূপসা টু ফুলতলার লোকাল বাসে এদিক সেদিক ছোটা ছুটি করছিল কাজের সন্ধানে।মাথায় চিন্তা,ঘর ভাড়া দেবে কিভাবে,ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে,ঘরে বাজার নাই,খাবার নাই।এ শহরের মায়া ত্যাগ করতে পারছিল না। অন্য কোথাও যাওয়ার পথ নাই। অভাবের সংসারে কোনো দিশা না পেয়ে তিন চাকার রিক্সার হ্যান্ডেল ধরে ঘুরছিল এ শহরের অলি-গলি। রাজ্জাকের কপালে সুখ সইল না।মিল বন্ধ হল,রিক্সার হাতল ধরে তিন চাক্কার চালক হতে গিয়ে র্দুঘটনায় দু’পা হারাল সে।


রাজ্জাকের ছেলে রিপন ও মেয়ে রুকসানা অষ্টম শ্রেণী প্রর্যন্ত লেখাপড়ার পাট চুক্তা করল। বাবার চিকিৎসার খরচ যোগাড় হয় না। শিউলি টাকার জন্য অনেকের কাছে হাত পেতে শূণ্য হস্তে ফিরে আসতো। শিউলি খুদের চাল রান্না করে রাজ্জাককে খাইয়ে দিতো।রাজ্জাক বিছানায় শুয়ে থাকতো সারা দিন।
রাজ্জাক জিঞ্জাসা করল,‘চাল পেলে কোথায়?’
শিউলি,‘বাড়িওয়ালী দিদি চাল দিয়েছে।’
রাজ্জাক,‘ঘর ভাড়া চাইছে, ছয় মাসের ভাড়া তো বাকী।’
শিউলি,‘এখনো কিছু বলেনি, কিন্তু আর কত মাস?’
শিউলি অভাবের যন্ত্রণায় থাকতে না পেরে, পরের দিন সকালে কাজের খোজে বাড়ী বাড়ী গেলো। সেখানে পরিচয় হল সুন্দরী কুসুমকলির সাথে। কুসুমকলি নিজের পরিচয় দিল। সে বড় প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে মাঝে মাঝে দেশের বাহিরে যেতো। প্রতিষ্ঠানে আরো মেয়েরা ছিল সবার ভাগ্যে বিদেশ জোটে না। শিউলি তার দুঃখের কথা কুসুমকলিকে বলল, একটা চাকরীর জন্য কাকুতি মিনতি করল। সুন্দরী কুসুমকলি বলল,‘ তুমি তো সব কাজ করতে পারবা না।শিক্ষিতও না যে টেবিল চেয়ারে বসাবো।কি কাজ করবা ?’
শিউলি,‘আপা যে কাজ দেন তাই করবো।’
কুসুমকলি,‘পারবা তো,পরে না বলবা না।সুন্দরী আছো,টাকা পাবা অনেক টাকা।অন্য মেয়েরা করে তুমিও পারবা,কেউ তো দেখবে না।সমস্যা কেথায়।শামসুর ম্যাইয়া তোমাগো পাশের পাড়ায় থাকে চেনো। ওতো আছে এখানে। পরিচয় করায় দেবো। ওকে আমি আনছি এ লাইনে। ম্যাইয়াডা ভালো কথা শোনে।প্রথম দিন মালিকের কাছে নিয়ে গেছি মালিক খুশি হয়ে ওরে পাঁচশ টাকা দিয়েছিল। এক সপ্তাহের মধ্যে ওরে দুবাই পাঠায় দিয়েছে। শুনছো না ও বিদেশ যায়, মালিক পাঠায়।’
কুসুমকলি,‘রাতে অফিসে থাকতে হয় মাঝে মাঝে,পারবা তো।’
শিউলি চিন্তা করল কি বলবে। নিজের অজান্তে বলে উঠলো,‘পারবো।’
‘বাড়ী যাও করলে কাল সকাল এগারোটায় আসবা আমি আফিসে নিয়ে যাবো।’বলল কুসুমকলি
শিউলির মাথায় শুধু টাকার চিন্তা আর কিছু নাই।

পরের দিন সকালে কুসুমকলির ঘরে হাজির হল শিউলি।কুসুমকলি,শিউলিকে সাজিয়ে নিয়ে গেলো। মালিকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। মালিক মতি মিয়া,এ শহরে তার আরো ব্যাবসা ছিল।এটা গোপন ব্যবসা।শেয়ার বিজনেস। নিউ হোটেল। শহরের মধ্যমনি। শহরের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সোলেয়মান ভাই পঞ্চাশ শতাংশের মালিক নিউ হোটেলের।মিছিল মিটিংয়ে গলা ফাটায় সে।শহরের মানুষ তাকে রাজনীতিবিদ বলে জানতো। বাকী অংশ মতি মিয়ার।মতি মিয়া শিউলিকে বলে,‘তোমার ভাগ্য ভালো। আজ একজন নতুন মেহমান আসবে ভালো করে যতœ করো,ঠিক আছে।’
শিউলি কিছু না বুঝে মাথা নাড়াল,এর মানে হ্যা সূচক সংকেত দিয়েছিল। সুন্দরী কুলসুমকলি সব বুঝিয়ে দিল শিউলিকে।অভাবের কাছে শিউলি হার মেনেছিল সেদিন।বাজারে বিক্রি করল তার পবিত্রদেহ। সে নিরুপায়, অসহায় আজ! তার কপালে এ লেখা ছিল। দু’চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না।সুন্দরী কুসুমকলি বলল,‘মেয়ে হয়ে জন্মালে সংসারের জন্য অনেক কিছু করতে হয়।এ শহরে এমন কাজ অনেকে করে। সবাই বাধ্য হয়ে,নিরুপায় হয়ে এ কাজ করছে। আমাকে দেখ আমি কি ইচ্ছা করে এ কাজ করছি। কিসে কম ছিল আমাদের।বাবা চাকরী করতো নিউজপ্রিন্ট মিলে।তিন বোন এক ভাই আমরা। আমি সবার বড়। মিল বন্ধ হওয়ায় বৃদ্ধ বাবার কিছু করার ছিল না। সারাদিন চিন্তা করতো আমাদের জন্য। পেনশনের টাকা সব শেষ। মা অসুস্থ।অনেক সন্ধান করেও চাকরী পাই না কোথাও। আর চাকরী দিলে কুপ্রস্তাব দিতো। প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা এ দেহের উপর নজর দিতো। আর সংসার চলছিল না।শেষে এ কাজ করতে বাধ্য হলাম আমি। আজ আমি এ শহরের কুসুমকলি,এ আমার ছদ¥ নাম। ছোট্ট ভাই-বোনেরা বড় হচ্ছে এ টাকায়।’বলে কেদে ওঠলো কুসুমকলিও । চলবে
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৫ সকাল ১১:২৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×