কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ারার ট্রাফিক সিগন্যাল থেকে বাংলামোটরের দিকে যাওয়ার রাস্তাটা সবসময় একটু বেশিই ব্যস্ত। সন্ধ্যার পরেতো ফুটপাতে পা ফেলার যায়গা পর্যন্ত থাকে না। মেট্রোরেলের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে এসব রাস্তায় গাড়ির চাপ ভয়াবহ হারে বেড়েছে। তার উপর ঢাকা শহর এখন মোটর সাইকেলে শহরে পরিনত হয়েছে। ফুটপাত দিয়ে হাটতে গেলে সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়, না জানি কখন কোন অদক্ষ মোটর সাইকেল চালক ঘাড়ের উপর দিয়ে চালিয়ে দেয়। একসময় গ্রামের চেয়ারম্যানের ছেলেরা মোটর সাইকেল চালিয়ে সারা গ্রাম দাপিয়ে বেড়াতো আর গ্রামবাসীকে জানান দিতো
'দেখো আমার বাবা চেয়ারম্যান'।
গত ৪/৫ বছর আগেও ঢাকায় খুববেশি মোটরসাইকেল দেখা যেতো না। অসহ্য যানজটের হাত থেকে সময় বাচাতে কেউ কেউ মোটর সাইকেল চালান আবার কেউ কেউ দুটো টাকা রোজগারের আশায় মোবাইল এপসসের মাধ্যমে ভাড়ায় চালান। শিক্ষিত বেকার যুবক, রিকশাওয়ালা,হকার, মাদকসেবী থেকে শুরু করে কিছু চাকুরীজীবী ভদ্রলোকও ভাড়ায় বাইক চালনাকে পেশা হিসাবে নিয়েছেন।
কারওয়ান বাজারের ব্যস্ত রাস্তায় যেখানে পথচারীদের পা ফেলার যায়গা নেই সেখানে কিছু হকার ব্যস্ত ফুটপাতের একটা বড় অংশ দখল করে চিৎকার করে ৪টি টি-শার্ট ১০০ টাকায় বিক্রি করছে। মাঝে মাঝে অবাক হই কি করে এত সস্তায় ওরা এসব টি-শার্ট বিক্রি করে?
ফুটপাতের এক কোনে ময়লা জীর্ন শাড়ি পরা একজন রোগা মধ্যবয়সী মহিলা ভিক্ষা করছেন। পাশে বসে আছে তার হাড়জিরজিরে অপুষ্ট শিশু। শিশুটির গায়ে নোংরা স্যান্ডুগেঞ্জি তবে নিচের অংশটি উলঙ্গ। ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত মানুষদের কাছে মহিলাটি চিৎকার করে ভিক্ষা চাইছেন।
'গরিবেরে ভিক্ষা দ্যান বাবা, আল্লাহ আপনার ভাল করবো বাবা'
পথিকদের বেশিরভাগই দ্রুতপায়ে পাশ ঘেসে চলে যাচ্ছেন শতকরা এক থেকে দুইজন মহিলাটির সামনে রাখা টিনের প্লেটে একটাকা দু'টাকার কয়েন ফেলে আবার জনস্রোতে মিশে যাচ্ছেন। ট্রাফিক সিগন্যালে আটকে থাকা এক তরুনের মোটর সাইকেলে পিছনে বসে থাকা এক তরুণী খুব মনোযোগ দিয়ে সেই শিশুটিকে দেখছেন। হঠাৎ তরুণী বাইকের পিছন থেকে হেলমেট পরা অবস্থায় নেমে শিশুটির দিকে এগিয়ে গেল এবং নিজের হ্যান্ডব্যাগ খুলে একটা ডেইরি মিল্ক চকলেট শিশুটির দিকে বাড়িয়ে দিল। চকলেটটি পেয়ে শিশুটি রীতিমতো খুশিতে লাফাতে লাগলো,বাচ্চার খুশি দেখে তার ভিখারি মায়ের মুখেও অদ্ভুত এক প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো। শিক্ষিত মায়েদের মত খুশির হাসি চেপে রাখা এই ভিখারি মায়ের পক্ষে সম্ভব নয় তাই সেও তার বাচ্চার খুশিতে দাত বের করেই হাসছে। চকলেট দেওয়া তরুণী ইতিমধ্যে বাইকে ফিরে গেছেন এবং ওদের হাসি দেখে সেও হাসছে সঙ্গে তরুণীর বাইক ড্রাইভার বন্ধুটিও।
এ এক অপূর্ব দৃশ্য!!!
আমার ধারণা কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কারের পর যতটা না খুশি হয়েছিলেন এই শিশুটি চকলেট পেয়ে তার চেয়েও বেশি খুশি হয়েছিল। চলমান হাজার হাজার পথিকদের মধ্যে আমিসহ দু'একজন ভাগ্যবান পথিকের চোখেই এই অভুতপূর্ব দৃশ্যটি ধরা পড়েছিল। তরুণীটি সামান্য দশ টাকার একটা চকলেট দিয়ে শিশুটি এবং তার মায়ের মুখে যে হাসি ফোটাতে পেরেছিল আমার ধারণা কোটি টাকা দিয়েও এমন হাসি কেনা সম্ভব নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১১:১১