somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

তারেক_মাহমুদ
আমি লেখক নই, মাঝে মাঝে নিজের মনের ভাবনাগুলো লিখতে ভাল লাগে। যা মনে আসে তাই লিখি,নিজের ভাললাগার জন্য লিখি। বর্তমানের এই ভাবনাগুলোর সাথে ভবিষ্যতের আমাকে মেলানোর জন্যই এই টুকটাক লেখালেখি।

হোম কোয়ারেন্টাইনের প্রথম দিন( ব্যক্তিগত ডাইরি)

২৫ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





২৪শে মার্চ ২০২০

মিরপুরে বাসা, দুই তিনবার গাড়ি বদল করে তবেই অফিসে পৌছাতে হয় এটা উপলব্ধি করে আমার বস গতকালই(২৩.০৩.২০২০) আমাকে ছুটি দিয়েছেন। আগামী মাসের চার তারিখ পর্যন্ত হাতে লম্বা ছুটি, হয়তো এ ছুটি আরও বাড়তে পারে। সিদ্ধান্ত নিয়েছি খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হবো না। বাসায় ছেলেমেয়েদের সময় দেওয়া, মাঝে টিভিতে করোনা ভাইরাসের আপডেট নিউজ শোনা,ফেসবুকিং এবং বইমেলায় কেনা নতুন বইগুলো পড়ে কাটছে অফুরন্ত ছুটির অবসর।

গতকালই হকারকে বলে দিয়েছিলাম পত্রিকা দেওয়ার দরকার নেই, যেহেতু নানা হাত ঘুরে দৈনিক পত্রিকা বাসায় পৌছায়, পত্রিকার মাধ্যমেও জীবাণু ঘরে ঢুকতে পারে তাই এই ব্যবস্থা।এ সংগ্রাম জীবাণুর বিরুদ্ধে তাই সেধে জীবাণুকে ঘরে ডেকে আনার মানে হয় না। যদিও তার বিল পরিশোধ করে দিয়েছি কিন্তু ভাবছি এই দরিদ্র মানুষটার সামনের দিনগুলো কিভাবে চলবে?

গতকাল একজন দিনমুজুরের একটা কথা আমাকে খুব স্পর্শ করেছে

"আমরা করোনায় মরবো না, আমরা ক্ষুধায় মারা যাবো"

আসলেইতো এই লোকগুলো কি করবে? সব আয়ের পথ বন্ধ কিভাবে চলবে তাদের সংসার?


দুইতিন দিন আগে বাসে অফিসে যাওয়ার পথে দেখলাম একজন হকার যষ্টিমধু বিক্রির পাশাপাশি টিস্যুপেপার দিয়ে নিজের তৈরি মাস্ক গাড়ির যাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিলি করছেন। সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও লোকটা চেষ্টা করছেন মানুষের জন্য কিছু করার আর আপনি আমি কি করছি? বাজার থেকে অতিরিক্ত পণ্য কিনে জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছি। জানিনা সামনের দিনগুলোতে আমাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে? কতদিন আমাদেরকে এভাবে ঘরে কাটাতে হবে?

এতদিন পাবলিক বাসে অফিসে যেতে হতো তাই প্রতিমুহূর্তে আতংকের মধ্যে থাকতাম আমার দ্বারা এই বুঝি জীবাণু ঘরে প্রবেশ করছে। আজ কিছুটা হলেও ভাল লাগছে। গত কয়েকদিন বারবার হাত ধোঁয়া এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের ফলে হাতের চামড়া কুচকে গিয়েছিল তবে বাসায় থাকায় আজ অত বেশি হাত ধোঁয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না।

আজ (২৫/০৩/২০২০) থেকে গোটা বাংলাদেশ লকডাউন হতে যাচ্ছে,এটা যত কম দীর্ঘ হবে জাতির জন্য ততই মঙ্গল। বাংলাদেশের মত একটা উন্নয়নশীল দেশ কিভাবে কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়ে ঘরে বসে থাকবে? সত্যি উভয় সংকট, এই সংকট তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ হবে।দেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ার আশংকা রয়েছে। মাসের পর মাস এটা চলতে থাকলে তার পরিণতি ভাবতেই গা শিউরে উঠছে।

আজও(২৪.০৩.২০২০) একজনের মৃত্যু সংবাদ এবং ৬ জন নতুন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ দিয়েছেন সাব্রিনা ম্যাডাম। অনেকেই উনাকে যাচ্ছেতাই গালিগালাজ করছেন দৈনিক নতুন নতুন শাড়ি পরা নাকি অপরাধ? তিনি একজন সফল মানুষ, তিনি মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এই বিপদের দিনে তার শাড়ির দিকে তাকানোর আপনার দরকার কি সেটাইতো বুঝলাম না। আর তিনি যদি মৃত্যের সংখ্যা সত্যি গোপন করে থাকেন তবে সেটা স্বইচ্ছায় নয় সরকারি নির্দেশে।

প্রথম কয়েকদিন ঘন্টার পর ঘন্টা টিভি দেখেছি আর আতংকিত হয়েছি আজ থেকে টিভি দেখা কমিয়ে দিয়েছি তবে মাঝে মাঝে আপডেট নিউজ দেখে নিচ্ছি। দীর্ঘসময় খারাপ খবর মনের উপর বিরুপ ফেলে তাই এই ব্যবস্থা।

টিভিতে দেখলাম হাজার হাজার মানুষ লম্বা ছুটি পেয়ে গ্রামের দিকে ছুটছে। শুধু নিন্ম আয়ের মানুষই নয় লম্বা ছুটি পেয়ে মধ্যবিত্তরাও গ্রামে যাচ্ছেন এটা সত্যি আত্মঘাতী হতে পারে আমাদের জন্য। বাসে ট্রেনে এভাবে গাদাগাদি করে গ্রামে ফেরা করোনার বিস্তার আরও বেশি ঘটাতে পারে। এইসব মানুষেরাই কিছুদিন আগে প্রবাসীদের গালিগালাজ করেছিলেন করোনার বিস্তার ঘটানোর জন্য আজ তারাই গ্রামে যাচ্ছেন সারাদেশে করোনা ছাড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে। হায়রে বাঙালী! বলার বেলায় নীতিকথা বলতে আমরা কেউ কম যাই না কিন্তু কাজের বেলায় করি উল্টোটা।

মহান সৃষ্টিকর্তা সকলকে ভাল রাখুন এবং এই বিপদ মোকাবেলা করার সামর্থ্য দান করুন।

তারেক মাহমুদ
২৫/০৩/২০২০ সকাল ৭.০০ টা।



সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:০৭
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×