২৪শে মার্চ ২০২০
মিরপুরে বাসা, দুই তিনবার গাড়ি বদল করে তবেই অফিসে পৌছাতে হয় এটা উপলব্ধি করে আমার বস গতকালই(২৩.০৩.২০২০) আমাকে ছুটি দিয়েছেন। আগামী মাসের চার তারিখ পর্যন্ত হাতে লম্বা ছুটি, হয়তো এ ছুটি আরও বাড়তে পারে। সিদ্ধান্ত নিয়েছি খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হবো না। বাসায় ছেলেমেয়েদের সময় দেওয়া, মাঝে টিভিতে করোনা ভাইরাসের আপডেট নিউজ শোনা,ফেসবুকিং এবং বইমেলায় কেনা নতুন বইগুলো পড়ে কাটছে অফুরন্ত ছুটির অবসর।
গতকালই হকারকে বলে দিয়েছিলাম পত্রিকা দেওয়ার দরকার নেই, যেহেতু নানা হাত ঘুরে দৈনিক পত্রিকা বাসায় পৌছায়, পত্রিকার মাধ্যমেও জীবাণু ঘরে ঢুকতে পারে তাই এই ব্যবস্থা।এ সংগ্রাম জীবাণুর বিরুদ্ধে তাই সেধে জীবাণুকে ঘরে ডেকে আনার মানে হয় না। যদিও তার বিল পরিশোধ করে দিয়েছি কিন্তু ভাবছি এই দরিদ্র মানুষটার সামনের দিনগুলো কিভাবে চলবে?
গতকাল একজন দিনমুজুরের একটা কথা আমাকে খুব স্পর্শ করেছে
"আমরা করোনায় মরবো না, আমরা ক্ষুধায় মারা যাবো"
আসলেইতো এই লোকগুলো কি করবে? সব আয়ের পথ বন্ধ কিভাবে চলবে তাদের সংসার?
দুইতিন দিন আগে বাসে অফিসে যাওয়ার পথে দেখলাম একজন হকার যষ্টিমধু বিক্রির পাশাপাশি টিস্যুপেপার দিয়ে নিজের তৈরি মাস্ক গাড়ির যাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিলি করছেন। সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও লোকটা চেষ্টা করছেন মানুষের জন্য কিছু করার আর আপনি আমি কি করছি? বাজার থেকে অতিরিক্ত পণ্য কিনে জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছি। জানিনা সামনের দিনগুলোতে আমাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে? কতদিন আমাদেরকে এভাবে ঘরে কাটাতে হবে?
এতদিন পাবলিক বাসে অফিসে যেতে হতো তাই প্রতিমুহূর্তে আতংকের মধ্যে থাকতাম আমার দ্বারা এই বুঝি জীবাণু ঘরে প্রবেশ করছে। আজ কিছুটা হলেও ভাল লাগছে। গত কয়েকদিন বারবার হাত ধোঁয়া এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের ফলে হাতের চামড়া কুচকে গিয়েছিল তবে বাসায় থাকায় আজ অত বেশি হাত ধোঁয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না।
আজ (২৫/০৩/২০২০) থেকে গোটা বাংলাদেশ লকডাউন হতে যাচ্ছে,এটা যত কম দীর্ঘ হবে জাতির জন্য ততই মঙ্গল। বাংলাদেশের মত একটা উন্নয়নশীল দেশ কিভাবে কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়ে ঘরে বসে থাকবে? সত্যি উভয় সংকট, এই সংকট তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ হবে।দেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ার আশংকা রয়েছে। মাসের পর মাস এটা চলতে থাকলে তার পরিণতি ভাবতেই গা শিউরে উঠছে।
আজও(২৪.০৩.২০২০) একজনের মৃত্যু সংবাদ এবং ৬ জন নতুন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ দিয়েছেন সাব্রিনা ম্যাডাম। অনেকেই উনাকে যাচ্ছেতাই গালিগালাজ করছেন দৈনিক নতুন নতুন শাড়ি পরা নাকি অপরাধ? তিনি একজন সফল মানুষ, তিনি মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এই বিপদের দিনে তার শাড়ির দিকে তাকানোর আপনার দরকার কি সেটাইতো বুঝলাম না। আর তিনি যদি মৃত্যের সংখ্যা সত্যি গোপন করে থাকেন তবে সেটা স্বইচ্ছায় নয় সরকারি নির্দেশে।
প্রথম কয়েকদিন ঘন্টার পর ঘন্টা টিভি দেখেছি আর আতংকিত হয়েছি আজ থেকে টিভি দেখা কমিয়ে দিয়েছি তবে মাঝে মাঝে আপডেট নিউজ দেখে নিচ্ছি। দীর্ঘসময় খারাপ খবর মনের উপর বিরুপ ফেলে তাই এই ব্যবস্থা।
টিভিতে দেখলাম হাজার হাজার মানুষ লম্বা ছুটি পেয়ে গ্রামের দিকে ছুটছে। শুধু নিন্ম আয়ের মানুষই নয় লম্বা ছুটি পেয়ে মধ্যবিত্তরাও গ্রামে যাচ্ছেন এটা সত্যি আত্মঘাতী হতে পারে আমাদের জন্য। বাসে ট্রেনে এভাবে গাদাগাদি করে গ্রামে ফেরা করোনার বিস্তার আরও বেশি ঘটাতে পারে। এইসব মানুষেরাই কিছুদিন আগে প্রবাসীদের গালিগালাজ করেছিলেন করোনার বিস্তার ঘটানোর জন্য আজ তারাই গ্রামে যাচ্ছেন সারাদেশে করোনা ছাড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে। হায়রে বাঙালী! বলার বেলায় নীতিকথা বলতে আমরা কেউ কম যাই না কিন্তু কাজের বেলায় করি উল্টোটা।
মহান সৃষ্টিকর্তা সকলকে ভাল রাখুন এবং এই বিপদ মোকাবেলা করার সামর্থ্য দান করুন।
তারেক মাহমুদ
২৫/০৩/২০২০ সকাল ৭.০০ টা।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:০৭