২৬.০৩.২০২০
আজ আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস। প্রতি বছর এই দিবসটা যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয়। দেশের মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। তবে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের আতংকে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবার অধিকাংশ রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানই বাতিল হয়ে গেছে। ২৫শে মার্চের সেই ভয়াল কালোরাতের কথা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে । কতটা নির্মম আর নিষ্ঠুর হলে এভাবে মানুষ মানুষকে হত্যা করতে পারে। প্রকৃতিতে মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা তাদের স্বজাতিকে হত্যা করে। আমার মতে মানুষ যেমন আশরাফুল মাখলুকাত আবার কখনো কখনো এই মানুষই সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রাণী।
চমৎকার একটি সকাল, মসজিদে ইমাম সাহেব ফজরের নামাজের সুরা কেরাত তেলোয়াত করছেন তারই শব্দ ভেসে আসছে। বেশিরভাগ মানুষই এখন মসজিদে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকেরই মসজিদে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও পরিবারের চাপ এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাসাতেই নামাজ আদায় করছেন। সম্ভবত ইমাম সাহেব দুই একজন মুসল্লিকে সঙ্গে নিয়ে নামাজ আদায় করছেন। গতকাল(২৫.০৩.২০২০) মসজিদের সামনে গিয়েছিলাম , তালাবদ্ধ মসজিদের সামনে লেখা "হাত ধুয়ে মসজিদে প্রবেশ করুন"। এখন চাইলেও মসজিদে প্রবেশ করা যাবে না, এমন দিন দেখতে হবে আমরা কি এটা কোনদিন ভেবেছি?
শুধু মসজিদ নয় বাসার পাশের ছোট্ট কাচাবাজারটির সামনেও সাবান পানি রাখা হয়েছে হাত ধোঁয়ার জন্য।
বাইরে থেকে কিছু চেনা পাখির ডাক ভেসে আসছে, এরা শহুরে পাখি। শব্দশুনেই বোঝা যাচ্ছে চড়ুই, শালিক, কাকসহ নাম না জানা কিছু পাখি। এরা মানুষের উচ্ছিষ্ট খেয়ে বেচে থাকে। মানুষের মত এদের জীবনযাত্রাও সম্ভবত কঠিন হয়ে পড়েছে মানুষ ঘর বের না হলে এদের খাবারেরও সমস্যা হবে। কাক হয়তো ময়লার ডাস্টবিন ঘেটে তার প্রয়োজনীয় খাবার সংগ্রহ করতে পারবে তবে অন্য পাখিদের জন্য সংগ্রহ করা কঠিন হবে। আমরা চাইলে এসব শহুরে পাখিদের জন্য নিজেদের বাসার সানসেটের উপর কিছু চাল ফেলে রাখতে পারি। তাছাড়া রাস্তার কুকুর বিড়ালদের কথাও ভাবা উচিত এরা হোটেল, মুদি দোকানের উচ্ছিষ্ট খেয়ে বেচে থাকে। গত দুই তিনদিনে খুববেশি কুকুরের ডাক কানে আসছে না কোথায় গেল কুকুরগুলো? এদের সামনেও মহাবিপদ।
বাজার করার জন্য গতকাল বাইরে গিয়েছিলাম । ফাঁকা রাস্তার পাশে রিকশাওয়ালাদের বিরাট লাইন দেখতে পেলাম। কৌতুহলী হয়ে এগিয়ে গেলাম জানতে, কিছুক্ষণের মধ্যেই বিষয়টা পরিস্কার হল। যেহেতু ঢাকার অধিকাংশ মানুষ ঘরে বন্দী তাই রিকশা ওয়ালাদের রোজগার নেই বললেই চলে এটা বিবেচনা করে রিকশাওয়ালাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন কিছু মানবিক মানুষ যারা চাল, ডাল,আলু,পিয়াজ বিতরণ করছেন। দুনিয়া এখনো পচে যায়নি এখানো কিছু মানুষ আছেন যাদের অন্তর মানুষের জন্য কাদে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন নামের একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন দরিদ্র মানুষের জন্য খারারের ব্যবস্থা করছেন। এদের পরিচালিত এক টাকার আহার ফেসবুক পেজের মাধ্যমে দেশের সব শ্রেণীর মানুষ অনুদান পাঠাচ্ছেন এটা সত্যি চমৎকার একটি বেসরকারি উদ্যোগ। ওরা নিজেরাই লিখেছেন কেউ কেউ বিকাশের মাধ্যমে ১০টাকা দিচ্ছেন আবার অনেক ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান ট্রাক ভর্তি করে খাবার পাঠাচ্ছেন। জানি না ওরা কিভাবে এগুলো বিতরণ করছেন,এতো বিরাট কঠিন কাজ! এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়া উচিত।
লাজ ফার্মায় গিয়েছিলাম কিছু প্রয়োজনীয় ঔষধ কেনার জন্য। লাজ ফার্মর কর্মীরা চাহিদামত ঔষধ দিতে রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছেন। প্যারাসিটামল গ্রুপের ঔষধের বিপুল চাহিদা এসব ঔষধ একপাতার বেশি বিক্রি করছেন না লাজ ফার্মার বিক্রয়কর্মীরা। তাছাড়া ডেটল, সেভলন, হ্যান্ডওয়াশ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার একেবারেই পাওয়া যাচ্ছে না ফার্মেসিগুলোতে। ফার্মেসির সামনে নোটিশ লাগানো
" প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঔষধ কেনা থেকে বিরত থাকুন সবাইকে ঔষধ কেনার সুযোগ দিন"
এই নোটিশ থেকেই অনুমান করা যায় ঔষধের চাহিদার ব্যাপারটা।
বাজারে মাছের দাম বেশ বেড়েছে । তবে শাকসবজির দাম আগের মতই আছে।ক্রেতাদের ভিতর প্রচুর তাড়া দামাদামি করার সময় কারো নেই, দোকানীরা দাম যা চাইছে তা দিয়েই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ডাক্তাররা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য লেবু খেতে বলছেন তাই লেবুর বিপুল চাহিদা, একহালি লেবুর দাম ৪০-৬০ টাকা পর্যন্ত যা স্বাভাবিক সময়ে ছিল ১৫-২৫ টাকা মধ্যে।
ইন্টারনেটে দেখলাম কলিকাতা পুলিশের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের দেশের পুলিশও রাস্তায় বের হওয়া সাধারণ মানুষকে পেটাচ্ছে। আমার ধারণা যাদের পেটানো হচ্ছে এরা চায়ের দোকানে আড্ডাবাজীর জন্য বের হননি পেটের দায়ে রাস্তায় বের হয়েছেন।
একটি ভাইরাস যাকে খালিচোখে দেখা যায় না সেটাই আমাদের দৈনন্দিন কর্মমুখর জীবনটাকে নিথর করে দিয়েছে। ইউরোপ আমেরিকার মত পরাশক্তিরা এই ক্ষুদ্র ভাইরাসের কাছে অসহায়। জানি না এর শেষ পরিণতি কি?
তারেক মাহমুদ
২৬.০৩.২০২০
সকাল ৭.৩০
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:১৭