somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাবলীগ জামাতে জ্ঞানের চর্চা কেমন হওয়া চাই

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তাবলীগের সাথীগণ কর্তৃক দ্বীনের প্রচার, প্রসার ও আত্মত্যাগের কথা শুনলে বা দেখলে দিলে প্রশান্তি পাই, হৃদয় থেকে তাঁদের জন্য দোয়া আসে। কেনইবা দোয়া আসবে না, এটি তো প্রিয় নবীর পথ ও তাঁর অনুসারীদের পথ। "বলে দিনঃ এই আমার পথ। আমি আল্লাহর দিকে বুঝে সুঝে দাওয়াত দেই আমি এবং আমার অনুসারীরা।"[সূরা ইউসুফ, আয়াত: ১০৮, অনুবাদ: মাওলানা মহিউদ্দিন]। দাওয়াতি কাজ নিঃসন্দেহে সম্মানের ও মর্যাদার। কিন্তু আল্লাহ তাআলার বাণীতে "বাছিরা (অনুবাদ: বুঝে সুঝে)" কথাটি আমাকে বার বার ভাবিয়ে তোলে। দাওয়াত দানের ক্ষেত্রে এই শর্ত উতরিয়ে তাবলীগ জামাতের কয়জন সাথী দাওয়াত দিচ্ছেন- তা আমাকে চিন্তিত করে তোলে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: بلِّغوا عني ولو آية، وحَدِّثوا عن بني إسرائيل ولا حَرَج، ومن كذب علي متعمِّداً فَلْيَتَبَّوأْ مقعده من النار (তোমরা আমার নিকট হতে একটি আয়াত হলেও পৌঁছে দাও। বনি ইসরাঈলদের থেকেও বর্ণনা করতে পারো। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যা বলবে সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়।)[সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৩৪৬১] এই হাদিস একজন সত্যাশ্রয়ী আলেমের জিহ্বাকে টেনে ধরে। হাদিস বিশারদগণ অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল করার ভয়কে খোলাফায়ে রাশেদাগণ কর্তৃক হাদিস কম বর্ণনা করার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং এই হাদিস কি বর্তমান যামানার দায়িদের ব্যাপারে প্রযোজ্য নয়!!

তাবলীগের সাথে আমার অভিজ্ঞতার কথা বলি। একবার এক মসজিদে তাবলীগের আলোচনা শুনতে গেলাম। সেখানে শিক্ষিত, আধা-শিক্ষিত, আলেম, গর-আলেম মিলে প্রায় ২৫/৩০ জনের উপস্থিতি হবে। তাবলীগ জামাতের নিয়ম অনুযায়ী একজন গর-আলেমকে কথা বলার জন্য দেয়া হলো। তিনি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র দাওয়াত বুঝাচ্ছেন। তিনি বলছেন: এই কালেমার মানে হচ্ছে- "কিছু থেকে কিছু হয় না সব কিছু আল্লাহ থেকে"। এই যে, আমি কথা বলছি আমি বলছি না, আল্লাহ বলাচ্ছেন। এই যে আমি হাত নাড়ছি আমি নাড়ছি না, আল্লাহ নাড়াচ্ছেন। এইটুকু শুনে অন্তরে বলে উঠল, এটি কিভাবে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”র অর্থ হয়!! তাছাড়া এই উক্তিটি তো আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বিরুদ্ধবাদী জাবরিয়া সম্প্রদায় বলে থাকে। তারা তো বলে থাকে: আমি যিনা করি না- আল্লাহ করান, আমি চুরি করি না আল্লাহ করান। তাদের মতাদর্শীদের একটা গানও তো আছে- “যেমনে নাচাও তেমনি নাচি পুতুলের কি দোষ"। "কিছু থেকে কিছু হয় না সব কিছু আল্লাহ থেকে" এই উক্তিটি সেই আলোচক কাকতালীয়ভাবে বলেছেন নাকি এটা তাবলীগের আলোচকগণ সচরাচর বলে থাকেন তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভিন্ন ভিন্ন স্থানের একাধিক তাবলীগের সাথীর সাথে আমি কথা বলেছি। তাঁরা সকলে স্বীকার করেছেন- এই উক্তিটি তাবলীগের মজমাগুলোতে বলা হয়ে থাকে। আমি জানি না- এ বিষয়ে তাবলীগের আলেমগণের মতামত কী হবে?

তাবলীগের সাথীদেরকে যদি বলি ভাই আপনারা সরাসরি কুরআনের তরজমা, হাদিসের তরজমা বা নির্ভরযোগ্য ফিকাহর কিতাবের তরজমা পড়ুন। তাঁরা বলবেন: তাবলীগে শুধু ইলম অর্জনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়। ইলম অর্জন করতে হলে মাদ্রাসায় ভর্তি হতে হবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণ কি পদ্ধতিতে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। তাঁরা কি মসজিদে বসে ইলম হাছিল করেননি। তাঁদের কেউ কেউ সামান্য কয়েকটি হাদিস জানতেন এবং সেটাই প্রচার করতেন; কিন্তু না-জেনে ভুল কথা প্রচার করাকে মস্তবড় গুনাহ মনে করতেন। তাহলে তাবলীগের মজমাতে বসে কেউ আলেম না হোক, তালিবে ইলম হতে বাধা কোথায়।সরাসরি কুরআন-হাদিস-ফিকাহ পড়তে আপত্তি কোথায়। মাদ্রাসায় যে জ্ঞানগুলো পড়িয়ে একজন মানুষকে তালিবে ইলম হিসেবে গড়ে তোলা হয়, সেই সাধারণ জ্ঞানগুলো তাবলীগের মজলিসের সিলেবাসভুক্ত করতে আপত্তি কেন? ছোট ছোট সূরাগুলোর অনুবাদ, সহিহাইনের অনুবাদ, রিয়াদুস সালেহীনের অনুবাদ, কুদুরি কিতাবের অনুবাদ, আকিদায়ে তাহাবির অনুবাদ, সিরাতে ইবনে হিসাম, হায়াতুস সাহাবা ইত্যাদি নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ থেকে ইলম হাছিলের প্রক্রিয়া গ্রহণ করার উদ্যোগ কেন গ্রহণ করা হয় না। যে গ্রন্থগুলোর নির্ভরযোগ্যতার ব্যাপারে সারাবিশ্বের আলেমসমাজ স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন। তা না করে ইলম ছাড়া দাওয়াত দান অথবা যে কাউকে কথা বলার জন্য দাঁড় করিয়ে দেয়া- আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে স্পর্ধা নয় কি!! "যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।"[সূরা বনী ঈসরাঈল, আয়াত: ৩৬]
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×