তিনি ছিলেন দেশের ফার্স্ট লেডি, তাই আমিও ছিলাম তার ব্যাপারে অতি আগ্রহী। আমি তখন পড়ি ক্লাস টু-তে। তার হাসবেন্ড এরশাদ ছিলো আমার হিরো। তার মতো সুদর্শন ও অমায়িক একজন রাষ্ট্রপতি, আমাদের চৌদ্দ ইঞ্চি সাদা-কালো টিভিতে তো সারাক্ষণই তার মুখ, প্রতিদিনের ইত্তেফাকে তার হাস্যোজ্জ্বল ছবি। আমি জানতাম যে হু. মু. এরশাদও আমার মতো একজন কবি। এরশাদের কবিতা আমি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তাম বিচিত্রায়, ডিটেকটিভে। তখন তো জানতাম না টাকার বিনিময়ে এ-সব কবিতা লিখে দিতো সুবিধালোভী বাঞ্চোতরা।
তো, ফার্স্ট লেডি একদিন এলেন আমাদের লোনামাটির দেশে, আশাশুনিতে। সেখানে জল নুনের মতো আর আকাশ পাখির মতো, সেখানে রাস্তা শেষ হয় না আর দিগন্ত দেখা যায় না, যেন এই রাস্তা ধরে দিনের পর দিন আর রাতের পর রাত হাঁটতে থাকলে তুমি পৌঁছে যাবে পৃথিবীর শেষ প্রান্তে।
আমি কোত্থেকে শুনেছিলাম রওশন এরশাদ আসবেন কলেজের মাঠে কী এক অনুষ্ঠানে। এ-খবর শুনে আমার কী প্রবল উত্তেজনা, কী অপরিসীম খুশি! একদৌঁড়ে গেলাম মাঠে। গিয়ে দেখি মাঠে জনসমুদ্র। তারপর অপেক্ষা আর অপেক্ষা কখন আসবেন তিনি। তারপর একসময় এলেন, দেখলেন, জয়ও করলেন। আমি কেবল একফোঁটা দেখতে পেরেছিলাম। আমি ছোট তখন। অতো ভিড় ঠেলে কি ভাবে সামনে যাবো? সে এক সুখের দিন, আনন্দের দিন। কিন্তু দুঃখের কাঁটা হয়ে আছে যে একটি কালো পাথর, একটি প্রিয় কালো পাথর!
সে-দিন আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম আমার প্রিয় কালো পাথরটাকে। কী সুন্দর সে-পাথরটি! কুচকুচে কালো। গোল। বলের মতো গোল নয়, ডিমের মতো গোল। তার শরীরে কোনো খুঁত নেই, খাদ নেই, ভাষা নেই। নিরেট আর শীতল তার দেহ-মন। কোথায় পেয়েছিলাম তাকে তা আর মনে নেই, কোথায় হারিয়েছিলাম সেটাও ঠাহর করতে পারি নি। ফার্স্ট লেডিকে দেখতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলো পকেট থেকে? অন্যমনস্ক হয়ে আমি ফেলে এসেছিলাম কোথাও? কতোদিন আমার মন খারাপ ছিলো, তোমার জন্য, কালো পাথর। কতোদিন তোমার কথা আমার ভেতরে বিষাদের মতো বেজেছে। যেখানেই থাকো ভালো থেকো, প্রিয় কালো পাথর।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১০ দুপুর ১:৪৬