somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বুক ক্লাব

১০ ই জুলাই, ২০১০ দুপুর ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
সে এক শুক্রবার ছিলো বটে। আমি ঘুমোচ্ছিলাম ঘটা করে, গায়ে লেপ-কাঁথা জড়িয়ে। ঘড়ির দিকে না তাকিয়েও বলা সম্ভব যে সকাল পেরিয়ে বেলা তখন দ্বিপ্রহর। আচমকা সেলিম এসে চেঁচামেচি শুরু করে দিলো, ‘দোস্ত, ওঠ্। দোস্ত, তাড়াতাড়ি ওঠ্।’ সেলিমের কথাবার্তা আমরা কখনোই তেমন পাত্তা-টাত্তা দেই না। আমিও তাই বিরক্তমুখে পাশ ফিরলাম। কিন্তু ছাগলটা কি তাতে দমবার পাত্র?

-অই শালা, দ্যাখ, তিথির মোবাইল নম্বর যোগাড় করেছি।

এ-কথা শুনে আমি তড়াক করে উঠে বসলাম। তিথির মোবাইল নম্বর পাওয়ার জন্য অনেকদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছি আমি। বললাম, ‘কিভাবে পেলি? শিগগির দে’। এ-কথা শুনে সেলিমের মুখে যে ফিচেল হাসি দেখা গেল তাতেই বুঝলাম আজ আমার মানিব্যাগের ওপর দিয়ে ছোটোখাটো একটা টর্নেডো বয়ে যাবে।

-এমনি এমনি দিচ্ছি নাকি, চান্দু? কী খাওয়াবি?
-সিঙ্গারা, চা, সমুচা, যা চাস।
-অতো দামী খাবার খাবো না, দোস্ত। পোলাও উইথ ফ্রাইড বিরিয়ানি।
-সেটা আবার কি?
-মধুমতি রেস্টুরেন্টে চল্, দেখিয়ে দিচ্ছি।

লেখা বাহুল্য, তিথির মোবাইল নম্বর উদ্ধার করতে আমার মানিব্যাগ থেকে সেদিন পাক্কা সাড়ে পাঁচশো টাকা উড়ে গিয়েছিলো। তিথির পিছে আমি ঘুরছি প্রায় বছরখানেক হলো। সুন্দরীর কাছে কানাকড়িও পাত্তা পাই নি। একদিন তো আলাপ করতে গিয়ে পুরোপুরি বোল্ডআউট হলাম। সে কাহিনি থাক। কিন্তু তিথির ব্যাপারে আমি হাল ছাড়িনি এখনো।

২.
সেলিমের কাছ থেকে পাওয়া তিথির মোবাইল নম্বরটা অবশ্য আমার তেমন কাজে লাগে নি। কথা-টথা বলতে মহারানির ভারি অনিচ্ছা। দু-একটা নমুনা দেই:

-হ্যালো।
-কেমন আছেন, তিথি?
-আপনি কে?
-আমার নাম দীপ। আপনাদের বাড়িকে কেন্দ্র করে তিনশো হাত ব্যাসার্ধের একটা বৃত্ত আঁকলে যে এলাকা তৈরি হবে আমি সেখানেই থাকি।
-ধন্যবাদ।

কথার এখানেই ইতি, ঘ্যাঁট করে লাইন কেটে দেয় তিথি। আরেকদিনের আলাপচারিতা ছিলো এমন:

-হ্যালো, তিথি, ভালো আছেন? আমি দীপ।
- [নিশ্চুপ]
-হ্যালো, শুনতে পাচ্ছেন, তিথি?
- [নিশ্চুপ]
- কথা বলছেন না কেন?
- [নিশ্চুপ]

এই হচ্ছে তিথি! তিথির সাথে সামনা-সামনি কথা বলার কথা ভাবি মাঝে-মধ্যে, কিন্তু আগের মহাব্রিবতকর অভিজ্ঞতার কারণে সাহসে কুলায় না। রুমমেট সেলিম আর অর্ক অবশ্য আমাকে এ ব্যাপারে খুব উস্কায়। অর্ক বলে, ‘আরে ব্যাটা চিকেন, মেয়েদের এতো ভয় ক্যান? মেয়েরা হইলো নরম জাতি। গোলাপ ফুল হাতে কইরা সোজাসুজি কয়া দে আই লাভ ইউ। দেখবি পইটা গেছে’। শায়লার সাথে অর্কের প্রেমটাও নাকি এভাবেই হয়েছিলো!

৩.
তবে শেষ পর্যন্ত তিথির সাথে আমার সম্পর্ক তৈরি হলো বেশ নাটুকে একটা ভঙ্গিতে। তিথির সাথে একই ক্লাসে পড়ে এমন একটা ছেলের কাছ থেকে জানলাম তিথির নাকি প্রেম-প্রীতি-লাভ ইত্যাকার বিষয়ে মোটেও আগ্রহ নেই। সারাক্ষণই বই-পত্রে ডুবে থাকে সে। একটু ইন্টেলেকচুয়াল প্রকৃতির হওয়ায় ওর সাথে বাতচিত করাটা নাকি বেশ ঝক্কিরই। আর ব্রাড পিট-শাহরুখ-আমিরের পরিবর্তে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ই তার হার্টথ্রব। এসব শুনে-টুনে সঙ্গে সঙ্গে মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল একটা।

৪.
আমরা কয়েকজন মিলে গঠন করেছি ‘সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বুক ক্লাব’। দু-তিনটা বাদে সুনীলের প্রায় সব বই-ই সংগ্রহ করেছি আমরা। সদস্যরা বই ধার নিয়ে পড়ে, সাপ্তাহিক বৈঠকে কার কোন্ বই কেমন লাগলো তা জানায়। আর সবচেয়ে সুখের কথা হলো, তিথিও সানন্দে সদস্য হয়েছে এই বুক ক্লাবের। সেই সুবাদে তিথির সাথে আমার নিয়মিত দেখা হয়, কথা হয়। আমাকে ফোনও করে তিথি দু-একদিন পরপর! তিথি বলেছে, সুনীলের নীললোহিত চরিত্রটির সাথে আমার নাকি খুব মিল। এ-কথার মানে আমি বিলক্ষণ জানি!
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×