একুশে ফেব্রুয়ারি মানে কী? খুশী খুশী মন। আগের দিন কেনা সাদা কালো পাঞ্জাবী পরে স্কুলে যাওয়া। সাঝ সকালে স্কুলে র্যাুলি হবে, র্যা লিতে যোগ দেওয়া। শাহ্বাগ মোড় থেকে কিংবা বাসার টব থেকে কিছু ফুল এনে স্কুল ভবনের গ্যারেজে শহিদ মিনার সম্বলিত যে বিশাল ব্যানারটা টাঙানো হয়েছে, ওটার সামনে ফুল দেওয়া। এরপর স্যার এবং মিসদের সাথে কিছু গ্রুপ ছবি তোলা। বন্ধুদের সাথে হইহুল্লর। দুপুর ১.০০ টায় বাসায় ফেরা। পিসি অন করে কিছু ছবি ফেসবুকে পোস্ট করা। যেহেতু ছুটির দিন, বিকেলে একটু ঘুরতে যাওয়া। ব্যাস, শহিদ দিবস পালন হয়ে গেল।
আমাদের নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের এর থেকে অবশ্য বেশি কিছু করার থাকে না। এই যে কালো পাঞ্জাবী পরেছে, কিছু ফুল কিনে ব্যানারের সামনে রেখেছে এটাই অনেক বড় কিছু। অবশ্য এর থেকে বেশি কিছু আমরা প্রত্যাশা করিনা। এর দায়ভার আমাদেরই।
ওর মাথায় ঢুকেছে শহিদ দিবস মানে উৎসব। কারণ ও যবে থেকে স্কুলে ভর্তি হয়েছে তবে থেকে জেনে আসছে শহিদ দিবস মানে উৎসব। ও দেখেছে ওর স্যার মিসরা একটু বাড়তি সেজেগুজে শহিদ মিনারের সামনে হেসে হেসে ফুল দিচ্ছে। নিজের মোবাইলটা অন্য কাউকে ধরিয়ে দিয়ে বলেছে ফুল দেয়ার সময় যাতে ছবি তোলে। ও দেখেছে কেউ কেউ বাম হাত থেকে ফুল দিচ্ছে কিংবা এক হাত থেকে ফুল দিচ্ছে। ব্যানারের সামনে ফুল দেয়ার সময় কারো কারো পায়ে স্যান্ডেল দেখেছে। ও আর কী শিখবে? ওই কালো পাঞ্জাবীর জন্যই ও ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
ওর কচি মনে যদি একবার গেঁথে দেয়া হতো ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস কিংবা তাৎপর্য হলফ করে বলতে পারি ও হেসে হেসে আর ফুল দিবে না। ও ঠিকই মুখ ভার করে এক হাত থেকে নয়, আজলা ভরে ফুল দিবে। ও আর বন্ধুদের সাথে হই হুল্লরে মেতে উঠবে না। ওর মাথার ভেতর ঘুরপাক খাবে শুধু বরকতের রক্ত মাখা শার্ট। শহিদ মিনারের সামনে ও আর হেসে কিংবা মাথা বাঁকা জিহ্বা বের করে সেলফি তুলবে না। ও বাংলা বলতে না পারার জন্য হাসবে না বরং লজ্জায় লাল হয়ে উঠবে। ও তো জানেই না ভাষা আন্দোলন কী? ও কেন ওর ক’জন টিচারই বা জানে? হয়তো জানে, পাকিস্তানী শাসকরা এদেশের উপর উর্দু ভাষা চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল এর প্রতিবাদে যে আন্দোলন হয়েছিলো তাই ভাষা আন্দোলন। কিন্তু তারা জানেন কি, ভাষা আন্দোলনে রিকশাওলার যে ছেলেটি শহিদ হয়েছিলো তাঁর নাম কি? মিসিল কোথা থেকে শুরু হয়ে কোথায় শেষ হয়েছিলো? পুলিশ ব্যারিকেড দিয়েছিলো কোথায়? কে প্রথম ব্যারিকেড ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নেন? বরকত কোন স্থানে শহিদ হন? ক’জন জানেন কয়েকজন জীবিত অথবা পরলোকগত নারী ভাষা যোদ্ধার নাম?
বড় আফসোস? আজকাল শোকের দিনগুলোও উৎসবে পরিনত হয়েছে। অথচ লাল সবুজ কিংবা কালো পোশাকের কিন্তু কদর বহুগুণে বেড়েছে। শুধু অভাব আমাদের চেতনার আর মূল্যবোধের।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৫৭