যখন লিখতে বসেছি তখন রাত ১ টা বেজে ২৬ মিনিট। তথাকথিত বাঙালী মধ্যবিত্তদের জীবন-যাপন থেকে তেমন কোনো আলাদা বৈশিষ্ট্য নেই আমার জীবনের মধ্যে। রাতে বেহায়া মশাদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে আমার ঘরের জানালার সাথে মশারির চার কোনা কোনো রকম বেঁধে তার ভিতরে বিছানার উপর গা এলিয়ে দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ঘুম আসছিল না।
হঠাৎ দেখি মাথার কাছে বালিশের উপরে এক চিলতে আলো এসে বেশ কিছুক্ষণ ধরে উঁকি দিচ্ছে। আলোর উৎস খুজতে গিয়ে বিছানা থেকে নামলাম। এরপর জানালার পর্দা সরিয়ে আকাশের দিকে তাকাতেই দেখি, বেশ সুন্দর এক ফালি চাঁদ রাতের বিশাল আকাশের মধ্যমণি হয়ে হাসছে।
চাঁদের হাসির আলো পুরো আকাশ জুরে আভা ছড়াচ্ছে। আর তার কিছু অংশ আমার মশারির ভিতর দিয়ে বিছানা বালিশের উপর খেলা করছিলো আপন মনে।
যাই হোক, এমন অতি সুন্দর মুহুর্তকে খুব ইচ্ছা করল আমার ভাঙ্গাচুড়া লেখা দিয়ে ধরে রাখতে। তাই দেরি না করে টেবিলের উপর ল্যাপটপটি অন করে লিখতে বসে গেলাম।
চাঁদের এই সুন্দর রূপ দেখে মনে হচ্ছিল যে কী সরলাতাই না এর সৌন্দর্যে! এর মধ্যে নেই কোনো অহংকার কিংবা কার্পন্য। নিজের রূপের আলো কেমন অকপটে চারদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
কিন্তু আমরা মানুষরা কি এতটা সরল কখনো হতে পারি। সবসময় তো সবকিছুর মধ্যে শুধু স্বার্থ আর লাভ-ক্ষতির হিসাব খুজি।
ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে নিশি রাতে মাথার উপরে এমন চাঁদ দেখার সৌভাগ্য চিরপরিচিত শহুরে জীবনে খুব কম মানুষের কপালেই হয়। ইট, বালু, সিমেন্ট আর রডের তৈরি বিশাল আকাশ ছোঁয়া এক একটি দালান। আকাশ আর চাঁদের সৌন্দর্য ঢেকে ফেলা দমবন্ধ করা অবস্থার মধ্যে অমন অপরূপ দৃশ্য দেখতে পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছে।
যদিও আমাদের মতো মধ্যবিত্তের জীবনে শুধু চাওয়া আর পাওয়ার হিসাব মিলাতেই সারা জীবন পার হয়ে যায়। একটি মোটামুটি বেতনের চাকরি, মেয়ের ভালো বিয়ে আর শেষ জীবনে জমানো কিছু টাকা দিয়ে শহর থেকে অদূরে এক চিলতে নিজের একটা ঠিকানাই কেবল সারা জীবনের সাধনা। এর মধ্যে আবার রাতের আকাশের চাঁদের আলোর মহিমা দেখার সময় কোথায়!
কিন্তু এটাই জীবন। এর মাঝেই প্রকৃতির এই সৌন্দর্য দেখার সৌভাগ্য হলে, নিজেকে মুগ্ধ করার সুযোগটি হাতছাড়া করতে চায় না অনেকেই। আমি হয়তো তাদেরই দলের একজন...