মানবতাবিরোধী অপরাধী মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি জামায়াত-শিবির সারাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী যে পন্থা হাতে নিয়েছে তা নিয়ে দেশের সুশীল সমাজসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরণের মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ বলছেন সরকারের আদেশেই সহিংসতা ঠেকাতে গুলি চালিয়ে শত শত সাধারণ মানুষকে হত্য করা হচ্ছে। কিছু মিডিয়াতে খবরে বলা হচ্ছে সরকার নমনীয় না হয়ে এই অবস্থায় পুলিশ-র্যা ব সদস্যকে কাজে লাগিয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে।
প্রশ্ন হলো, সারাদেশে যখন পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে পুলিশ সদস্যদের হত্যা করা হয়, পুলিশের অস্ত্র দিয়ে শিবির পুলিশকেই পিটায়, সারাদেশে আগুন, ভাংচুড়, ককটেল বিস্ফোরণ চালানো হয়, সংখ্যালঘুদের উপর হামলা চালিয়ে তাদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে তান্ডত চালানো হয়, চাঁদে সাঈদীকে দেখার কথা বলে গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করা হয়, রেললাইনে নাশকতার ঘটনা ঘটানো হয় তখন কতটা সহিঞ্চু থাকতে পারে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী!!
নিশ্চয়ই পুলিশ-র্যাব সদস্যরা ইচ্ছাকৃতভাবে সাধারণ মানুষের উপর গুলি চালায়নি! উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত করতে তাদেরকে বাধ্য হয়েই গুলি চালাতে হয়েছে। অবশ্যই প্রাণহানির পক্ষে একথাগুলো লেখা হচ্ছে না। কথা হচ্ছে পরিস্থিতি নিয়ে। এমত অবস্থায় কী করলে পরে বিরাজমান পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হতো!!!
যে মিডিয়াগুলো বলছে পুলিশ মারমুখী তারা কিন্তু কিছুক্ষেত্রে শাহবাগ নিয়েও আপত্তিকর রিপোর্ট প্রকাশ করেছে! সরকারকে ব্যর্থ বলেছে এবং অনমনীয় বলেছে।
দেশের একটি দৈনিকে প্রকাশিত একটি সংবাদ: "দেশজুড়ে বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশের নির্বিচার গুলীর প্রতিবাদ এবং মাওলানা সাঈদীর মুক্তির দাবিতে তার ভক্ত ও দলটির লোকেরা হরতালে রাস্তায় নেমে এলে গতকালও পুলিশের গুলীতে নারী-শিশুসহ ২৫ জন নিহত হয়। আহত হয়েছে প্রায় দুই শতাধিক। নিহতদের মধ্যে রয়েছে বগুড়ায় ২ নারীসহ ১০ জন, রাজশাহীতে নারী-শিশুসহ ৪জন, জয়পুরহাটে ৭ জন, সাতক্ষীরায় ২জন, গাজীপুরে ১ জন, ঝিনাইদহে ১ জন পুলিশ কনস্টেবল নিহত হন। এসব সংঘর্ষের ঘটনায় আরও অন্তত ৫০ জন গুলীবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সকালে হরতাল সমর্থক জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় হামলা করলে থানা রক্ষায় সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। সেখানে ১৪৪ ধারা জারী করা হয়। পরে অবশ্য সেনা সদস্যদের উঠিয়ে নেয়া হয়। " ০৪ মার্চ , ২০১৩ 'অসহায় প্রশাসন' শিরোনামে দৈনিক ইনকিলাবের প্রকাশিত।
এদিকে আরেকটি দৈনিকে প্রকাশিত: 'দিনাজপুরে জামায়াত-শিবিরের মিছিলে পুলিশের গুলি আহত ২০, গ্রেফতার ৩' শিরোনামে দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত - " দিনাজপুরে জামায়াত ও শিবিরের মিছিলে গুলিবর্ষণ করেছে পুলিশ। এতে ২০ জন আহত হয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে তিন জামায়াত ও শিবিরকর্মীকে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা শহরের বড়বন্দর এলাকায় মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশ মিছিল লক্ষ্য করে তিন রাউন্ড গুলি ও ছয় রাউন্ড রাবার বুলেট নিপে করে। এছাড়া পুলিশ এক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশের হামলায় ২০ শিবিরকর্মী আহত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার জামায়াতের ডাকা হরতালে বগুড়াসহ সারাদেশে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় চার জামায়াত-শিবির কর্মীর হত্যার প্রতিবাদে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ শনিবার দিনাজপুর শহরে জামায়াত ও শিবির বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি বড়বন্দর মোড়ে এসে শেষ হলে পুলিশ পেছন থেকে ব্যাপক লাঠিচার্জসহ গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিপে করে। এতে এলাকায় মানুষজন আতঙ্কে দিগি¦দিক ছুটাছুটি শুরু করে। পুলিশের লাঠিচার্জে জামায়াত ও শিবির কর্মীসহ সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে।"
এসকল মিডয়িার সংবাদ দেখে পক্ষপাতিত্বমূলক বলেই মনে হচ্ছে। এবং এর সত্যতা নিয়েও যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু শেষে এটুকুই বলতে চাই যে কোনো মৃত্যূই আমাদের কাম্য নয় এখন তা যে পরিস্থিতিতেই ঘটুক না কেন। তবে পুলিশ সাধারণ মানুষের জন্যই তাদেরকে গুলি করার জন্য নয় কিন্তু পুলিশের দিকে অভিযোগের আর ব্যর্থতার আঙ্গুল তোলা হচ্ছে এবং এর সাথে পরোক্ষভাবে সমর্থন দেওয়া হচ্ছে কোন পক্ষকে তা নিশ্চয়ই আর লিখতে হবে না....