somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গুহা জীবনের বৈচিত্রময় ইতিহাস

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গুহাচিত্র হল সেই সব চিত্র যা প্রাচীন গুহার দেওয়াল অথবা ছাদে আবিষ্কার করা হয়েছে। বিশেষ করে এই সকল চিত্রকর্ম যা প্রাগৈতিহাসিক কালে মানুষেরা প্রায় ৪০,০০০ হাজার বছর আগে আনুমানিক ভাবে ধরা হয় ৩৮,০০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দ অঙ্কন করা হয়েছিল। এশিয়া এবং ইউরোপে এই গুহা চিত্রগুলি পাওয়া গিয়েছে। পুরাতন প্রস্তরযুগের এই সকল চিত্রকর্ম ঠিক কি কারণে অঙ্কন করা হয়েছিল তা জানা যায়নি। সংগৃহিত প্রমাণাদি থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে নিছক গৃহসজ্জার জন্য এই চিত্রগুলো অঙ্কন করা হয়নি।তবে এই সকল গুহাগুলি বা তার আশেপাশে মানুষের কোন বসতি থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাছারা প্রায়ই সব গুহাই খুব দুর্গম এলাকায় অবস্থিত।

তবে কিছু মতবাদ অনুযায়ী গুহাচিত্র দ্বারা প্রগৈতিহাসিক মানুষেরা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করত। যদিও অনেকে আবার মনে করেন যে এগুলো সম্পূর্ণ ধর্মীয় বা আনুষ্ঠানিকতার কাজে ব্যবহৃত হত। প্রায় সবগুলো চিত্রই একই রকম যেখানে পশু হচ্ছে প্রধান উপজিব্য বিষয়। চিত্রকর্মের বিষয় হিসাবে মানুষ এসেছে মূলত তার হাতের ছাপ এর মধ্য দিয়ে। মানুষের হাতে রঙ মেখে গুহার দেওয়ালে এই হাতের ছাপগুলো তৈরী করা হয়েছিল। ২০১৪ সালের ঘোষণা অনুযায়ী ইন্দোনেশিয়ার মারকো দ্বীপে পাওয়া গুহাচিত্রটি এই পর্যন্ত প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন যার বয়স আনুমানিক ৩৫,০০০ বছর। তার আগে ধারণা করা হতো যে সবচেয়ে প্রাচীন গুহাচিত্রটি ইউরোপে আবস্থিত। ইউরোপে প্রাপ্ত Aurignacian যুগে অঙ্কিত অনিন্দ্য চিত্রকর্মটির বয়স আনুমানিক ৩০,০০০ থেকে ৩২,০০০ বছর। এটি পাওয়া গিয়েছিল ফ্রান্সের Chauvet গুহায় এবং রোমানিয়ার কোলিবোয়াই গুহায়।ফ্রান্স এবং স্পেনে এখনো পর্যন্ত প্রায় ৩৪০ এর কাছাকাছি গুহা আবিষ্কৃত হয়েছে যেগুলোতে প্রাগৈতিহাসিক কালে অঙ্কিত চিত্র পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে চিত্রগুলোর বয়স নিয়ে বিতর্ক আছে আর তার কারণ হচ্ছে রেডিওকার্বন ডেটিং এর মতো পদ্ধতি অনেক সময় ভুল তথ্য প্রদান করতে পারে।

বিশেষ করে যখন পুরাতন নমুনার সাথে নতুন নমুনা মিশে যাবার সম্ভবনা থাকে বহু বছরের জঞ্জালে গুহাগুলো ভর্তি হওয়ায় কার্বন পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা দুরূহ। কিন্তু ক্রমেই আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে গুহাচিত্রগুলোতে ব্যবহৃত রঙ এবং দেওয়াল ও ছাদে মশালের কালির দাগ থেকে তাদের বয়স নির্ধারণ সম্ভব হয়েছে।তাছাড়া ছবির বিষয়বস্তুও এর বয়সকাল নির্ধারণ করে। উদাহরণ স্বরূপ স্পেনের Cueva de las Monedas গুহায় প্রাপ্ত রেইন ডিয়ারের ছবি আঁকা হয়েছিল সর্বশেষ বরফ যুগে।ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপ Sulawesi তে প্রাপ্ত গুহাচিত্রটির বয়স ৩৫,০০০ বছর। ইন্দোনেশীয় অস্ট্রেলিয় বিজ্ঞানীরা অন্যান্য অনাড়ম্বরপূর্ণ গুহাচিত্রগুলো ৪০,০০০ বছর পুরাতন বলে মনে করেন। বয়স নির্ধারণের পদ্ধতি হিসাবে তারা চিত্রের উপরে লবন ‍চুঁইয়ে তৈরী হওয়া স্তম্ভগুলোর কার্বন ডেটিং পরীক্ষা করা হয়।দক্ষিণ আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে প্রাপ্ত সান প্রস্তর চিত্র দক্ষিণ আফ্রিকার uKhahlamba / Drakensberg Park তে প্রাপ্ত চিত্রগুলোর আনুমানিক বয়স ৩০০০ বছর। এগুলো ছিল স্যান জাতির মানুষদের আঁকা। এই স্যান জাতির মানুষ উক্ত অঞ্চলে ৮০০০ বছর আগে বসবাস করতেন। চিত্রগুলোতে পশু এবং মানুষের ছবি দেখা যায়। ধারনা করা হয় সেই সময়ের ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেই এই সব চিত্র আঁকা হয়েছিল। আফ্রিকায় পাওয়া গুহাচিত্রগুলোর বিষয়বস্তু হিসাবে মানুষের ব্যবহার ইউরোপে পাওয়া গুহাচিত্রগুলোর চেয়ে বেশী দেখা যায়।নামিবিয়ার এ্যপোলো ১১ গুহায় প্রাপ্ত গুহাচিত্রগুলো খ্রীস্টপূর্ব ২৩,০০০ থেকে ২৫,০০০ বছর আগে অঙ্কিত।


২০০২ সালে একদল ফরাসী প্রত্নতাত্বিক সোমালিয়ার সোমালিল্যান্ড এলাকার প্রান্তে গুহাচিত্রটি আবিষ্কার করে। প্রায় ৫০০০ বছর পুরাতন এই গুহাচিত্রটিতে বন্যপশু এবং সাজসজ্জা করা একটি গরুর ছবি দেখা যায়। তারা তাদের চিত্রে পশুপালনকারীদের ছবি অঙ্কন করেছিল। সম্ভবত তারাই এই গুহাচিত্রগুলো সৃষ্টি করেছিল। ২০০৮ সালে সোমালিয় প্রত্নতাত্বিকরা উত্তর সোমালিয়ার Dhambalin এলাকায় আর একটি গুহাচিত্র আবিষ্কার করে। গবেষকরা ধারণা করেন যে এটি প্রাচীন ঘোড়সওয়ার মানুষের চিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১০০০ থেকে ৩০০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দে অঙ্কিত প্রস্তর চিত্রটির অঙ্কনে ইথিউপিয়ান-আরবীয় রীতি অনুসরণ করা হয়েছিল।তাছাড়াও উত্তর সোমালিয়ার Las Khorey এবং El Ayo এর মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত Karinhegane অঞ্চলে বাস্তব ও পৌরাণিক পশুর প্রচুর চিত্রকর্ম পাওয়া গেছে। প্রতিটি চিত্রকর্মের নিচে উৎকীর্ণ লেখা থেকে জানা যায় সম্মিলিতভাবে ছবিগুলো ২৫০০ বছর পুরাতন। Karihegane এর চিত্রগুলোও Laas Geel এবং Dhambalin এ প্রাপ্ত গুহাচিত্রগুলোর মতো স্বতন্ত্র ইথোপিয়ান-আরবীয় রীতি অনুসরণ করে আঁকা। Las Khorey থেকে প্রায় ২৫ কিমি দূরে আবিষ্কৃত Gelweita নামক স্থানে আরো অনেক প্রস্তর চিত্র পাওয়া গেছে।
জিবুতিতে প্রাপ্ত প্রস্তর চিত্রে যে সব প্রাণীর ছবি পাওয়া যায় তা জিরাফ এবং এন্টিলোপ বলে মনে করা হয়।

আলজেরিয়ার Tassili n'Ajjer পর্বতমালায় অনেক গুহাচিত্র পাওয়া গেছে। ইউনেসকো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসাবে স্বীকৃত এই এলাকার ১৫০০০ এরও বেশি খোদাই করা প্রস্তর চিত্রগুলো ১৯৩৩ সালে প্রথম আবিষ্কৃত হয়। এই চিত্রগুলোতে খ্রীস্টপূর্ব ৬০০০ থেকে শুরু করে প্রয়াত ধ্রুপদি যুগ পর্যন্ত সাহারার এই অঞ্চলের দলবদ্ধ পশুর অভিবাসন জলবায়ুর পরিবর্তন এবং মানব বসতির পরিবর্তন চিত্রিত হয়েছে। লিবিয়ার Akakus, Mesak Settafet, Tadrart এবং সাহারা অঞ্চলের Ayr পর্বতমালা, নাইজার, Tibesti এবং সাদে আরো কিছু গুহাচিত্র পাওয়া গিয়েছে।১৯৩৩ সালে হাঙ্গেরিয় অনুসন্ধানকারী László Almásy সাঁতারুদের গুহা বা Cave of Swimmers আবিষ্কার করে। ১০,০০০ বছরের পুরাতন অর্থাৎ পৃথিবীর সর্বশেষ বরফ যুগের এই গুহাচিত্রগুলিতে দেখা যায় যে প্রগৈতিহাসিক মানুষ পানিতে সাঁতার কাটছে।


অস্ট্রেলিয়ায় প্রাপ্ত উল্লখযোগ্য গুহাচিত্রগুলো গিরিমাটির উপর অঙ্কিত। পাওয়া গেছে Kakadu তে। গিরিমাটি জৈব পদার্থ না হওয়ার এর কার্বন ডেটিং করে এর বয়স নির্ধারন করা সম্ভব হয়নি। এসব চিত্রের ক্ষেত্রে তাদের আঁকার বিষয়বস্তু বা ব্যবহৃত উপকরণ থেকে তাদের বয়স আন্দাজ করা যায় মাত্র। Arnhem Land মালভূমির মাঝে পাওয়া গেছে লোহিত বর্ণের গিরিমাটিতে আঁকা চিত্র যেখানে দেখা যায় ইমুর মতো দেখতে লম্বা গলাযুক্ত পাখির ছবিগুলো। জীবাশ্মবিদদের মতে এরকম বিশালাকার পাখিটির নাম Genyornis যেটি আজ থেকে প্রায় ৪০০০০ বছর আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে এই তথ্য ছবিগুলোর বয়স নির্ধারণের জন্য যথেষ্ট নয়। তবে এ থেকে অন্য একটি তথ্য বিরিয়ে আসে যা পূ্র্বের ধারনার চেয়ে পাখিটি আরো অনেক পরে বিলুপ্ত হয়েছিল। Whitsunday দ্বীপেও আশ্চর্য সংখ্যক গুহাচিত্রের হদিস পাওয়া গেছে।হুক দ্বীপে সমুদ্রজীবি আদিবাসী গোষ্ঠির আঁকা গুহাচিত্রর বিষয়বস্তু তুলনামূলকভাবে বিমূর্ত বিষয়ের উপর আঁকা। এসব ছবির তাৎপর্য রহস্যই রয়ে গেছে।ভীমবেটকা প্রস্তরক্ষেত্র (Rock Shelters of Bhimbetaka)। ভারতের মধ্য প্রদেশ রাজ্যের রায়সেন জেলার আবদুল্লাগঞ্জ শহরে অবস্থিত এই অঞ্চলটি ভারতের সবচেয়ে পুরনো মানব বসতির নিদর্শন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এখানকার কিছু কিছু বসতি ১০০০০ বছরেরও পুরান। এখানে প্রাপ্ত সবচেয়ে পুরাতন চিত্রটি ৩০০০০ বছর আগে মধ্য প্রস্তর যুগের আঁকা। জ্যামিতিক নঁকশা দিয়ে কাছাকাছি সময়ে আঁকা অন্য চিত্রটি মধ্যযুগের। চিত্রগুলোতে প্রধানত লাল ও সাদা রঙ ব্যবহার করা হয়েছে। মাঝে মাঝে সবুজ এবং হলুদের ব্যবহারও দেখা যায়। চিত্রগুলোর মূল উপজিব্য হল তৎকালীন সময়ের গুহাবাসী মানুষের জীবন যেখানে আছে মানব শিশু জন্ম নেবার দৃশ্য, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পানাহার, নৃত্য, ধর্মীয় আচার আর মৃতদের সৎকারের দৃশ্য। এছাড়াও আছে দেশীয় পশুর ছবি।


মধ্যপ্রদেশের ভীমবেটকায় বা ভীমবৈঠক যা প্রস্তর যুগের গুহাচিত্র আবিষ্কার হয়েছে। এটাই ভারতের সবচেয়ে পুরনো সভ্যতার নিদর্শন। এটি ২০০৩-এ অন্যতম ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে নির্বাচিত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে মানুষের পদার্পণের প্রথম চিহ্ন উদ্ধার করা গেছে এখান থেকে এবং সেই সূত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রস্তর যুগের সূচনার সময়কালও এই প্রস্তরক্ষেত্রে প্রাপ্ত নিদর্শন অনুযায়ীই নির্ণয় করা হয়। ভারতের মধ্য প্রদেশ রাজ্যের রায়সেন জেলার আবদুল্লাগঞ্জ শহরের কাছে রাতাপানি ব্যাঘ্র অভয়ারণ্যের মধ্যে এটি অবস্থিত। এর মধ্যে অন্তত কোনো কোনো গুহায় আজ থেকে আনুমানিক ১ লক্ষ বছর আগে হোমো ইরেক্টাসের বসতি ছিল।ভীমবেটকায় প্রাপ্ত কোনো কোনো গুহাচিত্রের বয়স আনুমানিক ৩০ ০০০ বছর।ভীমবেটকা নামটির সাথে মহাভারতের অন্যতম নায়ক ভীমের সম্বন্ধ আছে।এর অর্থ করা যায় ভীমের উপবেশন স্থল।


মধ্য প্রদেশের রায়সেন জেলায় ভোপাল শহরের ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণ ঢালে ভীমবেটকার অবস্থান। এর দক্ষিণ দিকে সাতপুরা পর্বতের একের পর এক শৈলশ্রেণী অবস্থিত।সমগ্র অঞ্চলটি ঘন বনাঞ্চলের অন্তর্গত, প্রাকৃতিক সম্পদে প্রাণী এবং উদ্ভিদ সমৃদ্ধ এবং অনেকাংশে অস্ট্রেলিয়ার কাকাড়ু জাতীয় উদ্যান, কালাহারি মরুভূমির বুশম্যান-দের গুহাচিত্র এবং ফ্রান্সের লাস্কো গুহাচিত্রের অনুরূপ।


ভীমবেটকাকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ঘোষণা করে প্রকাশিত ইউনেস্কোর প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের নথিতে এই স্থানটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৮৮৮ খ্রিঃ, একটি বৌদ্ধ মঠ জাতীয় কিছু হিসেবে। স্থানীয় আদিবাসীদের কাছ থেকে এই তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। পরবর্তীকালে ভি.এস.বাকঙ্কর ট্রেনে করে ভোপাল যাওয়ার পথে এই অঞ্চলে স্পেন ও ফ্রান্সে দেখা প্রস্তরক্ষেত্রের অনুরূপ গঠন দেখতে পান। ১৯৫৭ তে পুরাতাত্ত্বিকদের একটি দল নিয়ে ঐ অঞ্চলে উপস্থিত হন এবং অনেকগুলো প্রাগৈতিহাসিক গুহা-বসতি আবিষ্কার করেন।


সেই থেকে এই রকম ৭৫০ টির বেশি গুহা-বসতি আবিষ্কার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৪৩ টি ভীমবেটকা অঞ্চলে এবং ১৭৮ টি লাখা জুয়ার অঞ্চলে। পুরাতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে সমগ্র অঞ্চলটি থেকে প্রস্তর যুগের সংস্কৃতির ধারাবাহিকতার প্রমাণ মিলেছে যা অন্ত্য আশুলিয়ান থেকে মধ্য প্রস্তর যুগের শেষভাগ পর্যন্ত। বিশ্বের প্রাচীনতম পাথরের মেঝে এবং দেওয়ালও এখানেই দেখা গেছে।ভীমবেটকায় প্রাপ্ত বেশ কিছু নিদর্শনের কাঁচামাল নিকটবর্তী বারখেড়া অঞ্চল থেকে সংগৃহীত বলে নির্ণয় করা হয়েছে ।


ভীমবেটকার গুহা-বসতি এবং গুহাগুলোয় বহুসংখ্যক ছবি পাওয়া গেছে। সবচেয়ে প্রাচীন ছবিগুলো আনুমানিক ৩০০০০ বছর প্রাচীন কিন্তু নতুন কয়েকটা মধ্যযুগেও আঁকা হয়েছে। আঁকায় ব্যবহৃত রঙ উদ্ভিজ্জ, এবং সময়ের সাথে সাথে এই রঙ ক্ষয় না পাওয়ার কারণ হল এই যে ছবিগুলো আঁকা হত গুহার গভীর অংশের দেওয়ালের গায়ে। প্রাপ্ত ছবিগুলোকে সময় অনুযায়ী সাত ভাগে ভাগ করা যায়।




প্রথম যুগ- (উচ্চ প্যালিওলিথিক): সবুজ এবং গাঢ় লাল রেখাচিত্র, বিষয়বস্তু বৃহদাকার পশু, যেমন বাইসন, বাঘ, গণ্ডার ইত্যাদি।


দ্বিতীয় যুগ- (মধ্য প্রস্তর যুগ): অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের ছবি, ছবির মধ্যে রেখার নকশা। জীবজন্তু ছাড়াও আছে মানুষের ছবি এবং শিকারের ছবি। শিকারের দৃশ্যে তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রের পরিষ্কার ছবি দেখা যায়: কাঁটাওয়ালা বর্শা, ছুঁচলো লাঠি ও ধনুর্বাণ। গোষ্ঠীগত নাচ, পাখি, বাজনা, মা ও শিশু, গর্ভবতী মহিলা, মৃত পশু কাঁধে পুরুষ, পানভোজন ও মৃতের সমাহিতকরণের ছবি সমঞ্জসভাবে অঙ্কিত আছে।


তৃতীয় যুগ- (তাম্র যুগ): অন্যান্য স্থানে প্রাপ্ত তাম্র যুগের ছবির সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই সময়ের ছবি থেকে বোঝা যায় সমসাময়িক গুহাবাসীরা মালওয়া সমভূমির কৃষিজীবীদের সাথে বিনিময় প্রথায় যোগাযোগ রাখত।


চতুর্থ ও পঞ্চম যুগ- (প্রাথমিক ঐতিহাসিক): এই সময়কার ছবিতে স্পষ্ট নান্দনিক সামঞ্জস্যের চিহ্ন পাওয়া যায়। ব্যবহৃত রঙ প্রধানত লাল, সাদা ও হলুদ। ঘোড়সওয়ার, ধর্মচিহ্ন, আলখাল্লা-সদৃশ পোশাক এবং বিভিন্ন সময়ের লিপির নিদর্শন এখান থেকে পাওয়া যায়। যক্ষ মূর্তি, বৃক্ষদেবতা এবং আকাশ-রথের ছবি থেকে ধর্মবিশ্বাসের প্রমাণ মেলে।


ষষ্ঠ ও সপ্তম যুগ- (মধ্যযুগ): এই ছবিগুলো জ্যামিতিক ও সুসংবদ্ধ হলেও শৈল্পিক উৎকর্ষের অবক্ষয়ের পরিচয় দেয়। ব্যবহৃত রঙ প্রস্তুত হত ম্যাঙ্গানিজ, হেমাটাইট ও কাঠকয়লার সংমিশ্রণে।


চিড়িয়াখানা পাথর বলে পরিচিত একটা পাথরে হাতি, সম্বর হরিণ, বাইসন ও হরিণের ছবি পাওয়া গেছে। আর একটা পাথরে একটা ময়ূর, একটা সাপ, একটা হরিণ আর সূর্যের ছবি পাওয়া গেছে। আরও একটা পাথরে দাঁতওয়ালা দুটো হাতি পাওয়া গেছে। প্রাগৈতিহাসিক ছবির মধ্যে ধনুর্বাণ ও ঢাল-তলোয়ার ব্যবহারকারী শিকারীদের দেখা যায়।



তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট।
পরের পোস্টে আমরা গুহমানব ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো। :) ধন্যবাদ সবাইকে এতক্ষণ কষ্ট করে পোস্টের সাথে থাকার
জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৯
১০টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×