somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদি পুস্তক সম্পর্কে জানুন ! ( পাট-১ )

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আদি পুস্তক অনুকরণ বা লিপান্তরিত করা হয়েছে গ্রিক থেকে । হিব্রু বাইবেল (তানাখ) ও খ্রিস্টীয় পুরাতন নিয়মের প্রথম পুস্তক।একে দুইটি অংশে ভাগ করা যায় । প্রারম্ভিক ইতিহাস(অধ্যায় ১-১১) এবং বংশানুক্রমিক ইতিহাস (অধ্যায় ১২-৫০)।আদি ইতিহাসে স্রষ্টার সাথে দেবতা এবং মানবজাতির সম্পর্কের প্রকৃতি সম্বন্ধে লেখক(দের) ধারণা সজ্জিত হয়েছেঃ প্রভু জগত সৃষ্টি করেছেন যা মানবজাতির জন্য অনুকূল ও মানানসই, কিন্তু যখন মানুষ পাপের দ্বারা একে দূষিত করে ফেলে ,তখন প্রভু তার সৃষ্টিকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেন, কেবলমাত্র সত্যপন্থী নূহকে রক্ষা করেন, যাতে করে প্রভু ও মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করা যায়। বংশানুক্রমিক ইতিহাসে (অধ্যায় ১২-৫০) প্রাগৈতিহাসিক ইসরাইল ও প্রভুর বাছাইকৃত লোকদের কথা বলা হয়েছে।প্রভুর নির্দেশে নূহের বংশধর ইব্রাহিম নিজ আবাস থেকে কেনানে যাত্রা করেন। এটি প্রভুর পক্ষ থেকে তাকে দেওয়া হয়, যেখানে তিনি একজন বিদেশি হিসেবে বসবাস শুরু করেন, তদ্রুপ তার সন্তান ইসহাক ও পৌত্র ইয়াকুবও। ইয়াকুবের নাম পরিবর্তিত হয়ে ইসরাইল হয় এবং তার পুত্র ইউসুফের মাধ্যমে ইসরাইলের পুত্রগণ মিশরে প্রবেশ করেন, যারা স্বপরিবারে মোট সত্তর জন ছিলেন। প্রভু তাদেরকে মহান এক ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দেন। ইসরাইল মিশরে পৌঁছানোর মাধ্যমে আদি পুস্তকের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং মূসার আগমন এবং যাত্রাপুস্তকের প্রস্তুতি শুরু হয়।এই আখ্যানে প্রভূর সাথে কতগুলো অঙ্গীকার পরম্পরার উপর জোর দেয়া হয়েছে যা ক্রমান্বয়ে সমগ্র মানবজাতি (নূহের সাথে কৃত অঙ্গীকারনামা) থেকে সংকুচিত হয়ে একটিমাত্র সম্প্রদায়ে (ইব্রাহিম এবং ইসহাক,ইয়াকুবের মাধ্যমে তার বংশধরদের) সাথে বিশেষ সম্পর্কে পরিণত হয়।


ইহুদি ধর্মে আদিপুস্তকের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব অঙ্গীকারনামাগুলোকে কেন্দ্র করে যা প্রভুকে তার বাছাইকৃত এবং প্রতিশ্রুত ভূমির লোকদের সাথে সম্পর্কযুক্ত করে। খ্রিস্ট ধর্ম আদিপুস্তককে ব্যাখ্যা করেছে তাদের একান্ত খ্রিস্টীয় মৌলিক বিশ্বাসগুলোর পূর্বভিত্তি হিসেবে যেগুলোর মধ্যে প্রাথমিকভাবে রয়েছে পরিত্রাণের (সকল খ্রিস্টানের আশা এবং প্রতিশ্রুতি) প্রয়োজনীয়তা এবং ক্রুশের উপর খ্রিস্ট কর্তৃক সংঘটিত পুনরুদ্ধার কর্ম যাতে করে ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে অঙ্গীকারনামার প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়।ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্বাস করা হয় মূসা আদি পুস্তকের পাশাপাশি যাত্রা পুস্তক, লেবীয় পুস্তক, গণনা পুস্তক এবং দ্বিতীয় বিবরণের অধিকাংশ অংশের লেখক। তবে আধুনিক পণ্ডিতগণ দিন দিন এগুলোকে খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ ও ৫ম শতকের কাজ হিসেবে মনে করছেন।


আদি পুস্তককে আবৃত্ত বাক্যাংশকে ঘিরে গড়ে উঠতে দেখা যায়,অর্থঃ "এ হল সৃষ্টিকাহিনী", প্রথম এই বাক্যাংশ, যা নির্দেশ করে "আকাশ এবং পৃথিবীর উদ্ভব"ব্যবহারের মাধ্যমে এবং অবশিষ্টাংশ ব্যক্তিদের লিপিবদ্ধকরণের মাধ্যমে-নূহ, নূহের পুত্রগণ, সাম প্রভৃতি, নিচের দিকে ইয়াকুব পর্যন্ত। যাহোক,এটা স্পষ্ট নয় যে, মূল লেখকদের কাছে এর অর্থ কি, এবং অধিকাংশ আধুনিক ভাষ্যকার একে বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে দুই ভাগে ভাগ করেন, একটা "প্রারম্ভিক ইতিহাস"(অধ্যায় ১-১১) এবং একটা "নবীদের কাহিনী"(অধ্যায় ১২-৫০)।যদিও প্রথমাংশ দ্বিতীয়াংশের তুলনায় অত্যধিক সংক্ষিপ্ত, এতে মৌলিক বিষয়গুলো সাজানো আছে এবং এটা সমগ্র পুস্তক বোঝার ক্ষেত্রে একটা ব্যাখ্যামূলক সমাধান প্রদান করে। "প্রারম্ভিক ইতিহাস" এর একটা প্রতিসম কাঠামো আছে যা অধ্যায় ৬-৯ এ সংযুক্ত রয়েছে, প্লাবনের কাহিনী, প্লাবনের পূর্ববর্তী ঘটনাগুলোকে পরবর্তী ঘটনাগুলো দ্বারা প্রতিফলিত করার মাধ্যমে "বংশানুক্রমিক ইতিহাস" গঠিত হয় তিনজন নবী ইব্রাহিম,ইয়াকুব ও ইউসুফকে ঘিরে।(ইসহাকের আখ্যানগুলো সুসংগত একটি কাহিনীবৃত্ত গঠন করেনা বরং ইব্রাহিম এবং ইয়াকুবের সময়কালের মাঝে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে)।


ঈশ্বর জগত সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে এবং সপ্তম দিবসকে পবিত্র করেছেন বিশ্রাম দিবস (সাব্বাথ) হিসেবে। ঈশ্বর প্রথম মানব মানবী আদম এবং ইভ (ইসলামেঃ বিবি হাওয়া) কে সৃষ্টি করেন এবং স্বর্গের বাগানে সকল প্রকার প্রাণী সৃষ্টি করেন, কিন্তু নির্দেশনা দেন যেন তারা ভাল মন্দের জ্ঞানবৃক্ষের ফল না খায়। একটি বাকসম্পন্ন সরীসৃপ, যা বিভ্রান্তিকর জীব বা প্রতারক হিসেবে বর্ণিত, ইভকে যেকোনো মূল্যে ফল খেতে প্রলোভন দেখায় এবং সে (ইভ) আদমকে প্রলোভিত করেন যার ফলে ঈশ্বর তাদেরকে স্বর্গ থেকে বের করে দেন এবং তাদেরকে অভিসম্পাত করেন,আদমকে কেবল ঘাম এবং কায়িক পরিশ্রমের দ্বারা তার প্রয়োজন মেটাতে এবং ইভকে প্রসব বেদনা সহ্য করতে হবে। খ্রিস্টানগণ একে মানবজাতির পতন হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। ইভ দুটি পুত্রসন্তান ধারণ করেন,কাইন যাকে (ইসলামেঃ কাবিল) এবং আবেল(ইসলামেঃ হাবিল)। কাইন আবেলকে হত্যা করেন।যখন ঈশ্বর কাইনের নৈবেদ্য মঞ্জুর না করে আবেলেরটা মঞ্জুর করেন। ইভ আরো একটি পুত্রের জন্ম দেন,সেথ (ইসলামেঃ শীস), আবেলের প্রতিস্থাপন হিসাবে।আদমের মৃত্যুর পর কাইন এবং সেথের বংশধারা চলেছে বহু প্রজন্ম, মানুষের পাপ ও দিব্যপুরুষ বা দেবপুত্রদের দ্বারা পৃথিবী দূষিত হয়ে পড়ে, এবং ঈশ্বর মানবজাতিকে মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে তিনি সত্যপন্থী নূহ এবং তার পরিবারকে একটি বিশাল নৌকা তৈরির ও তাতে সকল প্রজাতির প্রাণীর নমুনা রাখার নির্দেশনা দেন। অতঃপর ঈশ্বর সারা বিশ্ব ধ্বংসকারী এক মহাপ্লাবন পাঠান। পানি সরে গেলে,ঈশ্বর প্রতিশ্রুতি দেন যে, তিনি দ্বিতীয়বার কখনো পানি দ্বারা পৃথিবী ধ্বংস করবেন না এবং রংধনুকে তার প্রতিশ্রুতির নিদর্শন বানান। কিন্তু মানুষকে একটি বিশাল উঁচু মিনারওয়ালা শহর, বাবেল মিনার তৈরিতে পরস্পর সহায়তা করতে দেখে, ঈশ্বর মানবজাতিকে বহু ভাষায় বিভক্ত করে দিলেন এবং তাদেরকে দ্বিধান্বিত অবস্থায় ছড়িয়ে দিলেন।


ঈশ্বর আব্রামকে মেসোপটেমিয়ায় তার নিবাস ছেড়ে কেনানে গমনের নির্দেশ দেন। সেখানে ঈশ্বর আব্রামের সাথে অঙ্গীকার করেন, এই প্রতিশ্রুতি যে তার বংশধরেরা সংখ্যায় তারকারাজির ন্যায় হবে তবে এই লোকেরা ভিনদেশে চারশত বছর নির্যাতন ভোগ করবে, যার পরে তারা মিশরের নদী থেকে শুরু করে মহানদী ফোরাত(ইউফ্রেটিস) পর্যন্ত সমগ্র ভূভাগের উত্তরাধিকারী হবে। আব্রামের নাম পরিবর্তিত হয়ে আব্রাহাম(ইসলামেঃ ইব্রাহিম) হয় এবং স্ত্রীর নাম সারাই থেকে সারাহ হয়,এবং সকল পুরুষের লিঙ্গাগ্রচর্মচ্ছেদন (খৎনা)-কে প্রবর্তন করা হয় অঙ্গীকারনামার নিদর্শন হিসেবে। নিজের বার্ধক্যের কারণে, সারাহ ইব্রাহিমকে তার মিশরীয় দাসী, হাজেরাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে বলে। হাজেরার মাধ্যমে ইব্রাহিম ইসমাইলের পিতা হন।সদোম এবং গমোরা নগরীর লোকদের পাপাচারের দরুণ ঈশ্বর নগরীদুটি ধ্বংসের স্বংকল্প করেন। ইব্রাহিম এর প্রতিবাদ করেন এবং ঈশ্বরের এই সম্মতি পান যে যদি ১০জন সত্যপন্থী মানুষ পাওয়া যায় তবে নগরীদ্বয় ধংস করা হবে না। ফেরেশতাগণ ইব্রাহিমের ভাতিজা লূত এবং তার পরিবারকে রক্ষা করেন কিন্তু লূতের স্ত্রী তাদের আদেশ অমান্য করে পেছনের ধ্বংসযজ্ঞের দিকে ফিরে তাকালো এবং লবণের স্তম্ভে পরিণত হল। লূতের কন্যাগণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল এই ভেবে যে তারা পলাতক কাজেই তারা আর কখনোই স্বামী পাবেনা। তারা লূতকে নেশাগ্রস্ত করল যাতে তার দ্বারা গর্ভধারণ করতে পারে এবং জন্ম দিতে পারে মোয়াবীয় এবং আমোনীয় পূর্বপুরুষদের।

তথ্যসূত্র; ও ছবি, ইন্টারনেট এবং উইকি ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫৫
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×