somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্টালিন গ্রাদের যুদ্ধঃ মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রতিরোধের লড়াই।

১১ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
[img|http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/tawfiqtuhin_1318318718_1-Cujkov.jpg

কয়দিন আগে আমি জানার চেস্টা করছিলাম মানব ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধ লড়াই কোনটি ছিল?সবরকম তথ্য উপাত্ত অনুযায়ী দেখা যায় স্টালিনগ্রাদের প্রতিরোধ লড়াই এক্ষেত্রে শীর্ষে।অবশ্যই সাম্রাজ্যবাদি মিডিয়া ওপুজিবাদি বিশ্ব বরাবরই তা উপেক্ষা করে আসছে।কারন এরা কখনো মানবতা ও মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করেনি।স্টালিনগ্রাদ যুদ্ধের তাতপর্য বুঝতে গেলে আধুনিক রাশিয়ান ফেডারেশনের ইতিহাস জানা জরুরী।যদিও আজ সোভিয়েত রাশিয়া পৃথিবীর মানচিত্র থেকে বিলুপ্ত হয়ে রাশিয়ান ফেডারেশনে পরিনত হয়েছে।আজ অনেকেই জানেনা অগনিত সোভিয়েত বীর যোদ্ধার কথা,যারা ফ্যাসিবাদের কবল হতে শুধু রাশিয়াকেই নয়,সমগ্র পৃথিবীকে রক্ষা করেছে।

স্টালিনগ্রাদের অবস্হান বর্তমান রাশিয়ার ভল্গগ্রাদ নগরীতে।মস্কোর উপকন্ঠের লড়াইয়ে জার্মানীর সেন্টার গ্রুপের চুড়ান্ত পরাজয়ের পর রুশ-জার্মান রনাংগনে সাময়িক স্বস্তি নেমে আসে।কিন্তু অবকাশকালিন সময় দীর্ঘ হতে থাকে।সোভিয়েত সমরবিভাগ জানতো অবকাশকালিন সময় যত দীর্ঘ হবে শত্রুর আক্রমন ও লড়াই তত ভয়ন্কর হবে।তাদের আশন্কা সত্য হয়েছিলো।পশ্চিমদিক থেকে মস্কো অভিমুখে আক্রমন ব্যর্থ হওয়ায় জার্মান ফৌজ যে এবার দক্ষিনে কোন জায়গা থেকে মস্কো অভিমুখে আক্রমন শুরু করবে তা যেমন সোভিয়েত সেনামন্ডলী জানতো,তেমনি জার্মানী সেনাপতি মন্ডলী ও জানতো।ফলে শুরু হয় গোপনে ব্যাপক সেন্যযোজন।

কোন পক্ষই সরাসরি শহরের নাম উল্লেখ করতো না।সোভিয়েতরা বলতো দক্ষিনের সেই মহান শহর,যেখানে সংঘটিত হচ্ছিল তাদের সেরা সেরা সব পেশাদার লড়াকু ডিভিসন গুলো।সাথে সাথে সোভিয়েত ফৌজের সবচেয়ে শক্তিশালী রিজার্ভ ফ্রন্টগুলো জড়ো হচ্ছিল স্টালিনগ্রাদে।

লড়াই শুরু হয়েছিলো ১৭ জুলাই১৯৪২ এ,শেষ হয়েছিলো ২রা ফেব্রুয়ারীতে১৯৪৩।লড়াই চলছিলো ২টি পর্যায়ে।প্রথমটি হলো প্রতিরোধের যুদ্ধ,এটি চলে ১৭ জুলাই থেকে ১৮ নভেম্বর ১৯৪২ পর্যন্ত।২য় পর্যায়ের লড়াই চলে ১৯ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে সোভিয়েত বাহিনীর প্রচন্ড কাউন্টার আক্রমনের মাধ্যমে,যা জার্মান ফৌজের চুড়ান্ত পরাজয়ের মাধ্যমে শেষ হয় ২রা ফেব্রুয়ারী ১৯৪৩ এ।

১৯৪২ সালের জুলাই থেকেই নাৎসিবাহিনী স্টালিন গ্রাদের শহর অন্চল গুলোতে বিমান আক্রমন শুরু করে ।পযার্য়ক্রমে শহরের ভিতরের দিকে প্রবেশ করে রেলস্টেসন ও গুরুত্বপূর্ন অবকাঠামো দখল করে ফেলে।লড়াই এমন আকার ধারন করেছিলো যে একদিনে ১১ বার রেলস্টেশন পরস্পরের হাতছাড়া হয়েছিলো।

লড়াই কঠোর রাস্তার লড়াইয়ে পরিনত হয়,সোভিয়েত ফৌজ লড়ছিল প্রতিটি অক্ষত বাড়ির জন্য।প্রধান আক্রমনটি চালাচ্ছিলো নাৎসিবাহিনির ষস্ঠ আর্মি গ্রুপটি নেতৃত্বে ফিল্ডমার্সাল পাউলুস,এ বাহিনির ডান ও বাম বাহু রক্ষা করছিলো যথাক্রমে রোমানিয়ান ও ইটালিয়ান বাহিনিগুলো।মুলত নাৎসিবাহিনি স্টালিন গ্রাদ এ উপস্হিত হওয়ায় সোভিয়েত রাশিয়া শুধু দক্ষিন দিক হতে আক্রমনেরই সম্মুখিন হয়নি,বরং ককেশাসের সমগ্র তেলসমৃদ্ব এলাকা যেমন-দন নদী অঞ্চল,গ্রোজনি,আজারবাইজান হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।ফলে সোভিয়েত বাহিনী তার সবচেয়ে বাছাই করা রিজার্ভ ও পোড়খাওয়া বাহিনীগুলো নিয়ে রুখে দাড়ায়।শুরু হয়ে যায় ভল্গা পাড়ে ইতিহাসের সবচেয়ে রত্তক্ষয়ী এক মহাকাব্যিক লড়াই।

লড়াইয়ের চুড়ান্ত পর্যায়ে সোভিয়েত ফৌজ থেকে অংশ নেয় ১১,৪৩,৫০০ জন ও নাৎসি পক্ষে ১০,১১,০০০জন।নাৎসিরা ভলগার পশ্চিম পাড়ে মামায়েভ টিলার অবস্হান বাদে সব দখলে নেয়।ঐ অবস্হান এর ভার দেয়া হয় জেনারেল ভাসিলি চুইকভের উপর।দায়িত্ব নেয়ার পুর্বে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়,এ দায়িত্বকে আপনি কিভাবে মুল্যায়ন করবেন।তার উত্তর ছিলো সংক্ষিপ্ত-আমরা শহরটিকে রক্ষা করবো অথবা মড়বো।নদী পাড় হয়ে এসে কমান্ড পোস্টে পৌছে তিনি সর্বপ্রথম আদেশ দেন নদী পাড় হওয়ার সমস্ত উপকরন ধবংশ করার।তিনি তার সেন্যদের বলেন,আমাদের জন্য ভলগার ওপাড়ে কোনো জায়গা নেই।আজ থেকে যে নদী পাড় হওয়ার চেস্টা করবে,কোটমার্সাল তৎক্ষনাৎ কার্যকরি হবে,তার পাশের সংগী তাকে গুলি করে মারবে।২৭জুলাই জারি করা হয় প্রতিরক্ষা বিষয়ক ২২৭ নং আদেশ(এক পা ও পিছু হঠা চলবেনা)।লড়াই চলাকালে তা খুব কাজে এসেছিল।

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৪২ সবচেয়ে প্রবল আঘাত হেনেছিলো নাৎসিবাহিনি।সেদিন এমন কঠিন পণ করা চূইকভ পর্যন্ত টিকতে না পেরে সর্বোচ্চ হাই কমান্ডের কাছে তার সেন্যদের বাচানোর জন্য নদী পার হবার আদেশ চান।কিন্তু হাইকমান্ড তার দাবী অগ্রাহ্য করে তাকে সেখানেই সেন্যদের সাথে থেকে প্রানত্যাগ করার জন্য আদেশ দেন।সমগ্র জার্মান ফৌজ সেদিন চুড়ান্ত শক্তি নিয়োগ করে চুইকভের ডিভিসনকে নদীতে ফেলে দেওয়ার জন্য।চুইকভের ডিভিসনকে রক্ষার্থে এগিয়ে আসে ভল্গা ফ্লোটিলার সোভিয়েত নৌসেনারা,তাদের সমর্থনে আরো এগিয়ে আসে সোভিয়েত বিমান বাহিনী। সোভিয়েত বিমান বাহিনী সেদিন চুইকভের ডিভিসনকে রক্ষা করতে তার সমগ্র রিজার্ভ বাহিনীকে নিয়োগ করে।ফলে আক্ষরিক অর্থেই লড়াই জল,স্থল ও আকাশে ছড়িয়ে পড়ে।চুইকভ সেদিন মন্তব্য করে ছিলো,এ রকম আরেকটা আঘাত এলে আমরা ভলগাতে গিয়ে পড়বো।পরে পরাজিত জেনারেল পাউলুশ স্বীকার করেছিলো,চুইকভের ডিভিসনের ঐদিন টিকে যাওয়া তার বাহিনীর আক্রমনাত্বক মনোভাবের দারুন ক্ষতি করেছিলো।

২রা ফেব্রুয়ারি,১৯৪৩ নাৎসিবাহিনি সাড়ে ছয় লাখ সেন্য নিয়ে ধবংশ হয়ে যায়,মাত্র ৯১০০০জন জীবিত থাকে।৯১ হাজারের মধ্যে শেষ পর্যন্ত মাত্র ৬হাজার জন জীবিত থাকে।যুদ্ধ চলেছিল বরাবর ২০০ দিন,দুই সেনাপতির উপরেই ২০০ দিনের চাপের ফল দেখা দিয়েছিল,ভাসিলী চুইকভ তীব্র উত্তেজনার ফল অনুযায়ী কঠিন একজিমায় আক্রান্ত হয়েছিলেন আর পাউল্যুস মুখের পেশিতে পক্ষাগাত আক্রান্ত হয়েছিলেন।

চুইকভের ডিভিসনের প্রতিরোধের সেই স্থানটি যা মামায়েভ কুরগান টিলা নামে পরিচিত ১৯৬৭ সালে সেখানে লড়াইয়ের স্মৃতিতে ১টি ভার্স্কয নির্মিত হয়,যা ৮৫মিটার উচ্চতা নিয়ে পৃথিবীতে সেরা,এটির নাম দি মাদারলেন্ড কলিং।


ভাসিলী চুইকভ।


পরাজিত জেনারেল পাউলুস।


আত্নসমর্পনের জন্য পাউলুস তার টু আই সি নিয়ে রাশানদের কাছে যাচ্ছেন।




রাশান সেন্যরা ভল্গার পাড়ে নামছে।

[img|http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/tawfiqtuhin_1318319235_6-StalingradRus.jpg


ভল্গার পাড়ে মামায়েব কুরগানে নির্মিত দ্য মাদার ল্যান্ড কলিং।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১:২১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×