এক বছর আগেও আমার সমবয়সী অন্য সব ছেলেদের মত আমিও নিজের জীবনটাকে শুধুমাত্র উপভোগ করতাম।আমার কাছে পড়ালেখা করে জীবনে সফল হওয়াটাই মূল লক্ষ্য ছিল।কিন্তু যখন থেকে ইসলামের সংস্পর্শে এসেছি তখন থেকেই জীবনের মানেটা অনেকটাই পাল্টে গেছে।এরপর থেকে শুধু জীবনের মানে নয়,পাল্টে গেছে জীবনের অনেক কিছু।এই অনেক কিছুর মধ্যে “বন্ধুত্ব” বিষয়টাও একটি।আমি যখন থেকে ইসলাম নিয়ে জানা শুরু করলাম,বুঝতে পারলাম কত ভুল কত পাপ নিজের অজান্তেই করে ফেলেছি।কত খারাপ কাজে হয়ত বন্ধুদের হেল্প করেছি না বুঝেই।বন্ধুদের জন্য কিছু করতে পারাটা আমাদের সবার জন্যই একটা বড় ব্যাপার।তাই আমরা মাঝে মধ্যেই বন্ধুত্বের খাতিরে হয়ত খারাপ কাজও করে ফেলি,এটা ভেবে খুশি হই যে বন্ধুর জন্য কিছু অন্তত করতে পেরেছি।তাই যখন বুঝলাম আমার এই সকল পাপ আর খারাপ কাজের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই,তখন আমি সেই চেষ্টাই করতে থাকলাম,এখনোও করছি,জানিনা আমি ক্ষমা পেয়েছি বা আমি ক্ষমার যোগ্য কি না??
ইসলাম Study করতে করতে আমি বুঝলাম শুধু নিজে ইসলাম জানলাম কিন্তু আমার বন্ধুরা জানল না এটা তো হতে পারে না।তাই বন্ধুদের জন্য কিছু করার সংকল্প নিয়ে আমি শুরু করলাম আমার ক্ষুদ্র ইসলামিক জ্ঞান দিয়ে তাদের দ্বীন সম্পর্কে জানাতে আগ্রহী হলাম।জানাতে চাইলাম আমাদের অতীতে আমরা কি ভুল করেছি আর তা শোধরানোর জন্য আমাদের কি করতে হবে।কিন্তু আমি খুব অবাক হলাম যাদের আমি খুব কাছের,খুব ভালো বন্ধু ছিলাম তারাই সর্বপ্রথম আমাকে প্রত্যাখ্যান করলো।সবচেয়ে খারাপ লেগেছিল যখন একজন আমায় ঠাট্টা করে বলেছিল,“তোদের ভার্সিটিতে কি এগুলাও শিখায়???”
আমার কিছু মেয়ে বন্ধু ছিল যাদের আমি সবসময় বোনের মত সম্মান করতাম,এখন করি।একটা পর্যায়ে যখন আর তাদের সাথে নিয়মিত দেখা করা বা কথা বলা বন্ধ করে দিলাম তখন হয়ত তারা খুব কষ্ট পেয়েছে।কিন্তু আমি তাদের কিভাবে বুঝাই ইসলাম তো এটা Allow করে না????
শুধু দাঁড়ি আর তাখনুর উপর কাপড় দেখে আমার বন্ধুদের কেউ আমাকে জামায়াত ভাবে,কেউ হিযবুত তাহরির ভাবে,কেউ মাদ্রাসার ছাত্র বলে হাসাহাসি করে,কেউ হেফাজত বলে ঠাট্টা করে।তখন খুবই কষ্ট লাগে,তবু মনে মনে বলি তোরা যা মনে করিস আমি তার কোনটাই নই।আমি তোদের মতই একজন যাকে আল্লাহপাক তার কুদরতি হিদায়াত দান করেছেন।
যখন ইসলাম বুঝিনি তখনও আমি ভালো কিছু করতে না পারলেও বন্ধুদের খারাপ চাইনি,আর এখন যখন ইসলাম বুঝি,এখন তো নিঃসন্দেহে তাদের খারাপ চাওয়া সম্ভব না।বরং আমি তাদের সবার জন্য মন থেকে দোয়া করি আল্লাহ যেন তাদের হিদায়াত দান করেন,তারা যেন দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হতে পারে।
অনেক পুরোনো বন্ধুর সাথে দূরত্ব তৈরি হলেও ইসলামের সংস্পর্শে থেকে অনেক নতুন বন্ধু আমি পেয়েছি।দ্বীনের ব্যাপারে তাদের অনেকের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখছি,শিখেছি।আল্লাহ তাদের সকলকে উত্তম প্রতিদান নসিব করুন।
আজ লিখতে বসলাম মুলত কুরআনের একটি আয়াত দেখে,“সেদিন(কিয়ামতের দিন)দুনিয়ার সব বন্ধুরা পরস্পরের দুশমন হয়ে যাবে,অবশ্য যারা আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করেছে তাদের কথা আলাদা” সুরা যুখরুফ ৬৭
আমাদের তরুন প্রজন্মের সিংহভাগই আমাদের মাঝে কাউকে দ্বীনের পথে দেখলেই তার ব্যাপারে Negative Attitude Show করে তাদের ছিদ্রান্বেষণে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।তার সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনেই ‘ছাগু’ ‘রাজাকার’ বলে হেও করে।তাকে Unsmart, Uncultured হিসেবে ঘোষণা দিতেও দ্বিধা করে না।কিন্তু কুরআনের আয়াতটা দেখলে এটা পানির মতস্বচ্ছ হয়ে যায় যে শেষ বিচারের দিন সেই So Called Smart বন্ধুরা যারা আবেগের জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিয়ে হালাল ও হারামের পার্থক্য ভুলে গেছে তারা পরস্পরের কোন উপকারই করতে পারবে না,বরং সেই দিন তারা পরস্পরের শত্রু হয়ে যাবে।আর যাদের Unsmart,Uncultured বলা হচ্ছে সেই দ্বীনী ভাইরাই,যারা আল্লাহকে ভয় করে নিজেদের আবেগের জোয়ারে ভাসিয়ে দেয় নি,হালাল ও হারামের পার্থক্য করতে শিখেছে,নিজেদের সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছার কাছে সমর্পণ করে Unsmart,Uncultured রয়ে গেছে,তারা ও তাদের বন্ধুরা সেইদিন পরস্পরের সাহায্য করতে পারবে।এখন Decision টা আমাদের নিতে হবে যে আমরা কাদের Choose করবো।সময় এসেছে প্রকৃত বন্ধুদের চিনে নেবার।
The ball is in our court now………….
April 23, 2013 at 4:55pm
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৫