somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৮+ ( মিলেনিয়াম বেবী )

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৮+ ( মিলেনিয়াম বেবী )

(না গল্পটা ১৮উর্দ্ধদের জন্যই শুধু নয়, গল্পটা সার্বজনীন )

আজ ২০১৮ সালের ১লা জানুয়ারী । গল্পটা নীতি নামের এক সদ্য পদার্পিত যুবতীর, আজ যার বয়স ১৮ বছর ++ । গল্পটা নিতান্তই সাদামাটা, এবং আমাদের অনেকেরই পছন্দ হবার কথা নয় । কারন গল্পটা নীতি কে নিয়ে । আর আমরা এ যুগের মানুষেরা নীতি কথা বলতে পছন্দ করলেও, শুনতে তো একদমই পছন্দ করিনা ।

২০০০ সালের ১লা জানুয়ারীতে ঠিক প্রথম মিনিটেই জন্মেছিলো সে । ইউনিসেফের হিসেবে প্রতি মিনিটে গড়ে যে প্রায় ২৫৫জন শিশু জন্মায় নীতিও তার একজন । সত্যিকার অর্থে যাদেরকে মিলেনিয়াম বেবী বলা যায় নীতি তাদের মধ্যে একজন ।

নীতির পুরো নাম নীতি মিলেনিয়াম চৌধুরী, দাদু মারা যাওয়ার সময় নীতির বাবাকে বলেছিলেন "তোমরা তো সততা,ন্যায় নীতির ধার ধারোনা তাই তোমার মেয়ে হলে তার নাম রেখো নীতি ।"

দাদুর তেমন কোন কথাই রাখতে পারেনি নীতির বাবা । তাই মায়ের সাথে অনেক তর্কাতর্কী করে হলেও নীতি নামটা জুড়ে দিয়েছে নীতির বাবা । আর মায়ের দেওয়া নাম মিলেনিয়াম তো আছেই ।

নীতির জন্মানোর রাতেই মা জয়ী চৌধরী বাবাকে বলেছিলেন , " দেখো আমার মেয়ে মিলেনিয়া আমার মতই জীবন যুদ্ধে জয়ী হবে । আর তোমার মত ক্ষেত না হয়ে হবে স্মার্ট আর আধুনিকা "

নীতির বাবা একজন উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা, উনি সচীব পদে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে কাজ করছেন । নীতির মা একজন রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব এবং সমাজ সেবিকা ।

দুজনেই তাদের স্ব স্ব কর্মক্ষেত্র নিয়ে অনেক ব্যাস্ত । তাই একমাত্র সন্তান নীতিকে নিয়ে তাদের আশা অনেক হলেও । সময়টা অতটা বেশি দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনা । তাই ডে কেয়ার , বুয়ার কাছেই তার মেয়েবেলা পার করেছে নীতি ।

তবে সময় দেওয়া যাক বা না যাক, নীতির পড়াশুনার পেছনে খরচার কমতি রাখেননি বাবা মা কেউই । নীতিকে প্লে গ্রুপে ভর্তি করাতে দুলক্ষ টাকা ডোনেশান দিয়ে ভর্তি করিয়েছেন বাবা দেশের স্বনামধন্য স্কুলেই । সব আছে এই স্কুলে, প্রতি বছর দেশে ও দেশের বাইরের তারা শিক্ষাসফরে গিয়েছিলো । স্কুলটি ইংলিশ মিডিয়াম হওয়াতে খুব একটা ভালো বাংলা বলতে পারতনা নীতি । তবে যেহেতু সে জামিলা বুয়ার কাছেই মানুষ হয়েছে, তাই জামিলা বুয়ার মিশ্রিত ঢাকাইয়া ভাষায় কথা বলতে পারত । তবে জুনিয়ার সেকেন্ডারীতে মা দেশের আরেকটি দেশী অর্থাৎ বাংলা মিডিয়ামে ভর্তি করিয়ে দেন । ভর্তি পরীক্ষাতে অংশ নেয়নি নীতি, যদিও অন্যান্য অনেকেই ভর্তি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, কিন্তু নীতির ব্যাপারটা আলাদা ।

তবে সে রাতে নীতির বাবা সমাধান চৌধুরী মা জয়ী চৌধুরীকে বলছিলেন " বুঝলা জয়ী, আমার নাম হইলো সমাধান, সবকিছুর সমাধানই আমার কাছে আছে । দেখলাতো কেমনে কইরা নীতিকে স্কুলে বিনা ভর্তি পরীক্ষায় বসায়াই ঢুকায়া দিলাম ।"

স্কুলে ঢুকেই ভালোফলের কেমিষ্ট্রিটা বুঝতে পারে নীতি, স্যাররাই সব । উনারা খুশী থাকলেই সব সম্ভব ।

তবে স্কুলে যাই হোক বাসায় একা একাই থাকতো নীতি, তাই ক্লাশ সেভেনে পড়ার সময়ই একাকীত্ব দুর করার জন্য বন্ধু অভিযানের সাথে ইয়াবা নেওয়া শুরু করে নীতি । ব্যাপারটা ধীরে ধীরে গ্রাস করে তার সবকিছুই । তবে সেযাত্রায় রক্ষে করেন নীতির স্কুল শিক্ষক কাম গৃহ শিক্ষক বিমল তরফদার । স্যার যে তাকে ইয়াবা থেকে বাঁচান তাইনা স্যার তার স্কুল ক্লাশ পরীক্ষাতেও উত্তরণের সিঁড়ি হিসাবে কাজ করেন ।

বিনিময়ে স্যারের বেশী কিছু চাওয়ার ছিলনা, তবে স্যার একদিন বললেন ," নীতি আমি দেখি তুমি পাশ করতে পারবানা, পারার কোন চান্সই নাই ।"
নীতি যে কিনা কেবল ক্লাশ এইটে পড়তো, স্যারকে বললো, "তো স্যার কি করতে হবে আমাকে পাশ করতে হলে ?"

নীতির বুদ্ধিমত্তায় স্যার খুশী হলেন । আরও খুশী হলেন.......সে রাতেই ভার্জিনিটি হারালো নীতি ।

দেশের ইতিহাস নিয়েও মাথা চক্কর খায় নীতির । সে জানে তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু ছোট দাদুর কথা সে যতটা বুঝেছে তার অর্থ দাঁড়ায় সমাধান চৌধুরীর মত ভীতু, উপরন্তু যার বয়স যুদ্ধের সময় মাত্র ১২ বছর ছিল তার মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কোনই সম্ভাবনা নেই ।

ছোট বেলায় সে একবার বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিলো, " বাবা তুমি কি মুক্তিযোদ্ধা ?" বাবা অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে কোন একটা সনদপত্র দেখিয়েছিল ।

তার মা জয়ী চৌধুরীও কম জাননা । নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য দুদুবার দল পরিবর্তন করেছেন । সেই সাথে তার কাছ থেকে শোনা দেশের ইতিহাসেরও পরিবর্তিত রুপ শুনতে পেয়েছে নীতি । একই মুখে দুরকম ইতিহাস শুনে মিলেনিয়াম বেবী নীতি বেশ কনফিউজড ।

তবে দেশ নিয়ে খুব বেশী মাথাব্যাথা নেই নীতির । তার বাবা তাকে বলেছিল " মা তুই কোন রকমে হাইয়ার সেকেন্ডারী পাশ করলেই তোকে ম্যারিকায় পাঠিয়ে দেবো" । তাই দেশের ব্যাপারে খুব বেশী চিন্তা করেনা সে ।

গেলো কয়েক বছর হলো সোশ্যাল মিডিয়ার পাগলামী ঢুকেছে নীতির মাথায়, সেলফি, ফেইসবুক, স্ট্যাটাস আপডেট, ইমো, ভাইবার, ইনষ্টাগ্রাম, টুইটার ....উফ্ফ সময় কোথায় নীতির ।

আর কে বলেছে এসব সোশ্যাল মিডিয়া পড়াশুনার ব্যাঘাত ঘ্টায় । "আরে বেকুবের দল, নিয়মিত ঘাটাঘাটি করি দেখেই তো এস,এস,সি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তো এখান থেকেই পেলাম ।" ভাবে নীতি ।

নীতি বড় হয়েছে একটা অতি আধুনিক মিলেনিয়ামে । সে বড় হয়েছে মোবাইল, ডিজিটালাইজেশান, সোশ্যাল মিডিয়া, সেলফি, পর্ণ, ইয়াবার মত নেশার যুগে । তবে মিলেনিয়াম বেবী নীতিরা আরো যে বড় মরনঘাতী নেশার মধ্যে দিয়ে বড় হচ্ছে সেটা হলো নীতিহীনতার প্রাবল্য, কারুর মাঝেই নীতি, নীতি দেখতে পায়না । না তার সার্টিফিকেট বানিয়ে ফেলা মুক্তিযোদ্ধা বাবার মধ্যে, তার দলবদল করে ভোলপাল্টানো গর্ভধারিণী মায়ের মাঝে, না তার অতি আধুনিক বন্ধু অভিযানের মধ্যে, না তার শিক্ষক বিমলের মধ্যে, এমনকি ডোনেশান আর দুই নাম্বারী করে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সে ঢুকেছিল সেগুলোতে সব ফ্যাসিলিটি থাকলেও প্রকৃত নীতিকে খুঁজে পায়নি সে | অথচ তার মত মিলেনিয়াম বেবীদের কাছে দেশ পরবর্তী লিডারশীপ আশা করে । নীতি এই বয়সেই ভাবে আর হাসে ।

তবে রিসেন্টলী ফেইসবুকে একটা লেখা দেখে মিলেনিয়াম বেবী নীতির বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে, লেখাটার নাম ছিলো ১৮+ । জীবনে ১৮ বছর বয়স পূর্তি হওয়ার আগেই ১৮+ অনেক ছবি দেখেছে নীতি । এমনকি গৃহশিক্ষকের সাথেও দেখেছে ১৮+ মুভি । কিন্তু ১৮+ লেখাটা তার চিন্তাধারায় সত্যিকারের ১৮+ কনসেপ্ট ঢুকিয়েছে ।

নীতি তার জীবনে করে আসা ভুলগুলোকে পজিটিভলি নিয়েছে, সে ভাবতে চায় "দোজ আর মিসটেকস, এন্ড শী ওয়ান্টস টু টেক লার্নিং ফ্রম দোজ মিসটেকস ।"
তার বয়স এখন আঠারো তাই নিজের ডিসিশান নিজেই নিতে চায় নীতি । ২০১৮ সালের ১লা জানুয়ারীতে মিলেনিয়াম বেবীদের উদ্দেশ্যে নীতি বলতে চায় । আজ মিলেনিয়াম বেবীদের ১৮ বছর পূর্ন হলো । তারাই এই পৃথিবীকে আসছে শতকের জন্য প্রস্তুত করতে চায় ।

লেখাটা ছিলো সত্যিকারের ১৮+, কারন এটি তাকে বুঝতে সাহায্য করেছে একজন সত্যিকারের ১৮+ বয়সী মানুষের দেশকে দেওয়ার আছে অনেক কিছু । এমনকি সবাই ও যদি ভুল পথে যায়, মিলেনিয়াম বেবী নীতি দের ভূল করা যাবেনা ।

সে আর সোশ্যাল মিডিয়া তাকে কি বলতে চায় সেটা না যাচাই করে সেটা দ্বারা আবিষ্ট হতে চায়না, সে সঠিক ইতিহাস জানতে চায়, ওদের শেখানো ইতিহাস তাকে টানেনা, সে চিৎকার করে বলতে চায়

"আমি ১৮+, আমি অন্যের চোখে দুনিয়া দেখা ছেড়ে দিয়েছি ।"
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৪৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগ কি শিখিয়েছে?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৬






অপমান, অপদস্থ থেকে বাঁচার উপায় শিখাইনি? ওস্তাদ মগা শ্যামী পাহাড়ে বসেও এসবের সমাধান করতে পারে, আপনি সামান্য অসুস্থতার জন্যও ব্লগে মিলাদ দেননি, দোয়া করেছেন কার জন্য? খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন হাদিসই যদি মানতে হবে তবে আল্লাহ ফিকাহ মানতে বললেন কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৪৬




সূরাঃ ৫ মায়িদা, ৬৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬৭। হে রাসূল! তোমার রবের নিকট থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা’ প্রচার কর। যদি না কর তবে তো তুমি তাঁর... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ধর্ম অবমাননার ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:২৯


ঢাকায় এসে প্রথম যে স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম, সেটা ছিল মিরপুরের একটা নামকরা প্রতিষ্ঠান। লটারির যুগ তখনো আসেনি, এডমিশন টেস্ট দিয়ে ঢুকতে হতো। ছোট্ট বয়সে বুঝিনি যে স্কুলের টিচাররা কোন মতাদর্শের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এডমিন সাহেব আমাকে নিয়ে অনেক বক্তব্য দিতেন এক সময়।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৯



আমার "চাঁদগাজী" নিকটাকে উনি কি জন্য ব্যান করেছিলেন, সেটা উনি জানেন; আসল ব্যাপার কখনো আমি বুঝতে পারিনি; আমার ধারণা, তিনি হয়তো নিজের দুর্বলতাগুলো নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকতেন; মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×